ব্রয়লার ও সোনালি মুরগির দাম সপ্তাহের ব্যবধানে বেড়েছে কেজিতে ২০ থেকে ৩০ টাকা। নির্বাচন উপলক্ষে আয়োজিত বিভিন্ন অনুষ্ঠানে মুরগির চাহিদা বাড়ার কারণে এই দাম বৃদ্ধি হয়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, এক সপ্তাহ আগে ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হয়েছে ১৮০ থেকে ১৯০ টাকায়। সোনালি মুরগির কেজি ছিল ৩০০ থেকে ৩১০ টাকা। আজ শুক্রবার বাজারভেদে প্রতি কেজি ব্রয়লার ১৯৫ থেকে ২১০ টাকা ও সোনালি ৩৩০ থেকে ৩৪০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। তা ছাড়া এক মাসের ব্যবধানে মুগডাল কেজিতে ২০ টাকা বেড়ে বর্তমানে ১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
রাজধানীর কারওয়ান বাজার, তেজগাঁওয়ের কলমিলতা কাঁচাবাজার, বাড্ডা, জোয়ার সাহারা বাজারসহ বিভিন্ন বাজার ঘুরে এ চিত্র দেখা গেছে।
কারওয়ান বাজারের মুরগির বিক্রেতা জাফর হোসেন বলেন, বর্তমানে ব্রয়লার মুরগি ১৯৫ থেকে ২১০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। সোনালি ৩৩০ থেকে ৩৪০ টাকা কেজি। তিনি জানান, সারা দেশেই নির্বাচনী সভা-সমাবেশসহ নানা ধরনের অনুষ্ঠানের কারণে মুরগির চাহিদা বেড়ে গেছে। ঢাকায় আগের চেয়ে মুরগির চালান কমেছে। গ্রাম পর্যায়েই বেশিরভাগ মুরগি বিক্রি হয়ে যাচ্ছে।
বাড্ডা কাঁচাবাজারের মুরগি ব্যবসায়ী সফিকুর রহমান বলেন, বাজারে মুরগির সরবরাহ এখন কম। শীতে সারা দেশেই অনুষ্ঠান বেড়ে যায়। এবার যুক্ত হয়েছে নির্বাচন। প্রার্থীদের প্রচার উপলক্ষে অনুষ্ঠানের সংখ্যা বেড়ে গিয়ে ব্যাপকভাবে মুরগির চাহিদা বাড়ছে। রামপুরা বাজারের আমানুল্লাহ বলেন, এক সপ্তাহের ব্যবধানে ব্রয়লার মুরগির দাম কেজিতে ৩০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। সোনালি মুরগির দাম ২০ টাকা বেড়ে ৩৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
শুধু কি নির্বাচন না অন্য কোনো কারণও আছে মুরগির দাম বাড়ার ক্ষেত্রে, তা জানতে চাইলে বাংলাদেশ পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের (বিপিএ) সভাপতি সুমন হাওলাদার বলেন, এক মাস ধরে প্রতি কেজি মুরগির খাবারের দাম ৩ থেকে সাড়ে ৩ টাকা বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। ২ হাজার ৫০০ টাকার ৫০ কেজির খাদ্যের বস্তা বর্তমানে ২ হাজার ৬৫০ থেকে ২ হাজার ৭০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। খাদ্যের দাম বাড়লে এমনিতেই মুরগির দাম বেড়ে যায়।
তিনি আরও বলেন, মুরগির দাম বাড়ার কারণ শুধু নির্বাচন নয়, এবারও সিন্ডিকেটের কারসাজি রয়েছে। কেননা তারা প্রান্তিক খামারিদের বাজার থেকে বিতাড়িত করে পুরো বাজার নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিতে চায়। ফেব্রুয়ারিতে মুরগির দাম আরও বেড়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।
তবে মুরগির দাম বাড়লেও ফার্মের মুরগির ডিমের দাম হালিতে ২-৩ টাকা কমেছে। গত সপ্তাহে ৪৫ টাকা হালিতে বিক্রি হওয়া ডিম গতকাল ৪২ থেকে ৪৩ টাকায় বিক্রি হতে দেখা যায়। কারওয়ান বাজারের ডিম বিক্রেতা শিপন হাসান বলেন, বর্তমানে ডিমের চাহিদা কিছুটা কম। নতুন সবজি বাজারে আসায় ডিমের দামও কিছুটা কমেছে। বর্তমানে ফার্মের ডিম প্রতি হালি ৪২-৪৩ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে বাজারে শীতের সবজির সরবরাহ পর্যাপ্ত থাকলেও দাম তেমন কমেনি। আলুর দাম এখনও চড়া। তবে দুই দিন আগে ৮০ টাকা কেজিতে বিক্রি হওয়া পুরান আলু কেজিতে ৩-৪ টাকা কমেছে। নতুন আলু প্রতি কেজি ৬০ থেকে ৮০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে।
দেশি পুরান পেঁয়াজের সরবরাহ বাজারে কম। নতুন মুড়িকাটা পেঁয়াজ ৯০ থেকে ১২০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। ভারতীয় পেঁয়াজের সরবরাহ বেশি একটা নেই। মসলাজাতীয় পণ্যের বিক্রেতা রবিউল ইসলাম ও সুজন হোসেন জানান, দেশি পেঁয়াজ ৯০-১২০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। দেশি রসুন ২৪০-২৫০, আমদানি করা রসুন ২২০ এবং আদা ১৮০-২২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
আলুর আড়তদার মো. জালাল হোসেন বলেন, নতুন আলু ৩০০ টাকা পাল্লা (৫ কেজি) ও পুরান আলু ৩৮০-৩৯০ টাকা পাল্লা দরে বিক্রি হচ্ছে। আলুর বাজারে ৫-৬ দিন ধরে এ অবস্থা চলছে। দাম বাড়ার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, এ মৌসুমে যে পরিমাণ আলু বাজারে ওঠার কথা তা নেই। মাসের প্রথম সপ্তাহের বৃষ্টিতে বেশিরভাগ ক্ষেতের আলু নষ্ট হয়ে গেছে।
জালাল হোসেন বলেন, আলুর দাম এক মাস আগে যখন ৫০ টাকা কেজি ছিল তখন দৈনিক দেড়শ বস্তা বিক্রি হতো। বর্তমানে ৭৬-৮০ টাকা হওয়ায় বিক্রি প্রায় অর্ধেকে নেমে গেছে। দাম বেশি শুনে কাস্টমাররা চলে যায়।
কলমিলতা বাজারের সবজি বিক্রেতা ইয়াসিন হোসেন বলেন, প্রতি কেজি শিম ৬০ টাকা, কাঁচা টমেটো ৩৫, পাকা টমেটো ৬০, গোল বেগুন ৪০-৫০, মুলা ও গাজর ৫০, পেঁপে ৩০, কাঁচা মরিচ ৬০-৯০, করলা ৮০, মিষ্টিকুমড়া ৪০-৫০ টাকা কেজি এবং প্রতি পিস লাউ ৭০-৯০, ফুলকপি ও বাঁধাকপি ৪০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে।