সিলেট সিটি
করপোরেশনের এক ডজন ওয়ার্ড কাউন্সিলের হদিস পাচ্ছেন না সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডবাসী। এদের বেশিরভাগই
আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের প্রভাবশালী নেতা। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকার
পতনের পর নগর ভবনে পা বাড়াননি তাঁরা।এমনকি বাসা-বাড়িতে মিলছে না তাঁদের। জনপ্রতিনিধিরা
না থাকায় বেকায়দায় পড়ছেন সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের নাগরিকরা। জন্ম সনদ, জাতীয়তা, ওয়ারিশ সনদসহ
বিভিন্ন ধরনের প্রয়োজনে কাউকে পাচ্ছে না তারা। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে নাগরিকরা।
আওয়ামী লীগের
প্রভাবশালী এই জনপ্রতিনিধিরা কোথায় আছেন-তাও নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না তাদের ঘনিষ্টজনরাও।
যদিও এসব কাউন্সিলরদের অধিকাংশের বিরুদ্ধে হত্যাসহ নাশকতার মামলা হয়েছে সাম্প্রতিক
সময়ে।
স্থানীয় লোকজনের
সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নগরীর দাপুটে এই জনপ্রতিনিধিরা জনরোষে আক্রান্ত হওয়ার ভয়
আর গ্রেফতার আতঙ্কে গা ঢাকা দিয়েছেন। দেশ ছেড়েছেন তাদের অনেকেই।
৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার
অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকার পতনের হঠাৎ নিখোঁজ হওয়া সিলেট সিটি করপোরেশনের ওয়ার্ড
কাউন্সিলরদের মধ্যে রয়েছেন ২নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর বিক্রম কর সম্রাট, ৩নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর
একে এ লায়েক, ৪নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর শেখ তোফায়েল আহমদ সেপুল, ৮নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর
জগদীশ চন্দ্র দাশ, ১০নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর তারেক উদ্দিন তাজ, ২০নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর
মো. আজাদুর রহমান আজাদ, ২৫নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর তাকবির ইসলাম পিন্টু, ৩২নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর
মো. রুহেল আহমদ ও ৩৫নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর জাহাঙ্গীর আলম।
৫ আগস্টের পর
এলাকায় অববস্থান ও সামাজিক অনুষ্টানে ৯নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র মো. মখলিছুর
রহমান কামরান এবং ১৯ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর এস এম শওকত আমীন তৌহিদকে দেখা গেলেও সাম্প্রতিক
সময়ে তাঁদেরও দেখা মিলছে না।
এছাড়া একটি
মামলায় কারাগারে আছেন ৩৬নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর হিরন মাহমুদ নিপু। খোঁজ মিলছে না ২৬ নং
ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোহাম্মদ তৌফিক বকস লিপনেরও। কয়েকজন কাউন্সিলর বিএনপির প্রভাবশালী
নেতাদের পরামর্শে এলাকায় থাকার চেষ্টা করেন। সম্প্রতি এক সামাজিক অনুষ্টানেও আওয়ামী
লীগের দাপুটে কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র মখলিছুর রহমান কামরানকে বিএনপির প্রভাবশালী
এক নেতার সঙ্গে ফটোসেশনে অংশ নিতে দেখা গেছে। কিন্তু এর পর তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা
হওয়ার পর থেকে কামরানের খোঁজ মিলছে না।
ইতোধ্যে হত্যা,
নাশকতাসহ একাধিক মামলার আসামি হয়েছেন ২০নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও সিলেট মহানগর আওয়ামী
লীগের যুগ্ম সম্পাদক মো. আজাদুর রহমান আজাদ, ৮নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও মহানগর আওয়ামী
লীগের সহসভাপতি জগদীশ চন্দ্র দাশ, ৯নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র এবং মহানগর
আওয়ামী লীগ নেতা মো. মখলিছুর রহমান কামরান, জেলা যুবলীগের যুগ্ম সম্পাদক ও ৩৫নং ওয়ার্ড
কাউন্সিলর জাহাঙ্গীর আলম, যুবলীগ নেতা ও ৩২নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. রুহেল আহমদ, আওয়ামী
লীগ নেতা ও ২নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর বিক্রম কর সম্রাট, ৩নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর একে এ লায়েক,
৪নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর শেখ তোফায়েল আহমদ সেপুল, ১০নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর তারেক উদ্দিন
তাজ ও ২৫নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর তাকবির ইসলাম পিন্টুর বিরুদ্ধে।
একাধিক সূত্র
জানিয়েছে, প্রভাবশালী ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের মধ্যে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন
জগদীশ চন্দ্র দাশ, আজাদুর রহমান আজাদ, জাহাঙ্গীর আলম ও মো. রুহেল আহমদ। তারা ভারতের
মেঘালয় রাজ্যের শিলংয়ে অবস্থান করছেন। দেশ ছাড়ার অপেক্ষায় আছেন আরও কয়েকজন কাউন্সিলর।
সুযোগ পেলেই তারা সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ভারত পালাবেন।
সিলেট করপোরেশনের
প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী বলেন, নগরভবনে প্রতিদিন উপস্থিত
হওয়ার কাউন্সিলরদের জন্য বাধ্যতামূলক নয়। তবে সেবা দিতে হবে, এটি বাধ্যতামূলক। কয়েকজন
সাধারণ কাউন্সিলরকে পাচ্ছেন না নাগরিকরা, এটি সত্যি। তবে সংরক্ষিত ওয়ার্ড (নারী) কাউন্সিলরদের
দ্বারা তাদের কাজ পূরণ হয়ে যাচ্ছে। দীর্ঘদিন কোনো কাউন্সিলরের সেবা না দেওয়ার বিষয়
প্রমাণিত হলে স্থানীয়র সরকার আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে তাদের বিরুদ্ধে।