লক্ষ্মীপুরের দত্তপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য খোরশেদ আলম মিরন হত্যা মামলায় ১১ আসামীর যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডের রায় দিয়েছেন আদালত। একই সাথে তাদের প্রত্যেকের ২০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও এক বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এ মামলায় আরও ১১ জনকে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার (২২ আগস্ট) বেলা সাড়ে ১১ টার দিকে জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. রহিবুল ইসলাম এ রায় দেন।
জেলা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর মো. জসিম উদ্দিন রায়ের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন, মো. জামাল হোসেন (৩৯), মো. জসিম উদ্দিন (৩৪), মো. শাহজাহান (২৯), মো. ফয়সাল খান জয় (২৯), মো. মিলন ওরফে সিএনজি মিলন (৩৩), আল আমিন (৩৯), বরকত (২৬), নিশান (২৬), লোকমান (৩৫), রুবেল (২৯), সুমন (৩৬)। রায়ের সময় দণ্ডপ্রাপ্ত মো. মিলন ওরফে সিএনজি মিলন এবং রুবেল আদালতে উপস্থিত ছিল। তাদেরকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। বাকীরা পলাতক রয়েছে।
খালাসপ্রাপ্তরা হলেন, মো. রিপন (৩৯), মো. জুয়েল হোসেন (৩২), মামুন (৩২), কাউছার হোসেন রাজন (২৬), শাহ আলম পাটওয়ারী ওরফে সোহাগ (৪২), মাহফুজ আলম সুমন ওরফে বেরাইজ্যা সুমন (৪২), সামছুদ্দিন ওরফে সামু (৫৬), আলাউদ্দিন সুমন ওরফে চুল্লা সুমন (৩৭), মো. আলমগীর (৩৯), কামাল খান ওরফে চুল কামাল (৩২), কাউছার (৪৮)।
এরা সকলে জেলার সদর উপজেলার বশিকপুর এবং দত্তপাড়া ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের বাসিন্দা।
ঘটনা সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯ সালের ৯ সেপ্টেম্বর রাত সাড়ে ৮ টার দিকে সদর উপজেলার দত্তপাড়া ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য (মেম্বার) ও ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি খোরশেদ আলম মিরনকে (৪২) গুলি করে হত্যা করে অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা। ঘটনার সময় তিনি দত্তপাড়া-বটতলী আঞ্চলিক সড়কের পূর্ব আলাদাদপুর গ্রামের জনৈক লিটনের মুদি দোকানে বসে ছিলেন।
হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মিরনের স্ত্রী তাহমিনা আক্তার বাদি হয়ে ৩০ সেপ্টেম্বর চন্দ্রগঞ্জ থানায় অজ্ঞাতনামা আসামীদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেন।
এ ঘটনায় পুলিশ ২০২০ সালের ২৩ মার্চ মিলন নামে সন্দেহভাজন এক আসামীকে গ্রেপ্তার করে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদে মেম্বার মিরন হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত অস্ত্র উদ্ধার করা হয়।
হত্যা মামলাটি তদন্ত করেন চন্দ্রগঞ্জ থানার পুলিশ পরিদর্শক মো. হাসান জাহাঙ্গীর হোসেন। তিনি ২৫ জন আসামীর বিরুদ্ধে ২০২১ সালের ২৪ মার্চ আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন৷ এদের মধ্যে খোরশেদ আলম, কালা শাহাদাত ও ইলিয়াস কোবরা বিভিন্ন সময়ে সন্ত্রাসীদের সাথে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়।
পুলিশের তদন্তে উঠে আসে, এলাকায় আধিপত্য বিস্তার ও পূর্ব শত্রুতার জেরে মিরন মেম্বারকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়। ঘটনার সাথে যুক্ত সন্ত্রাসীরা আসামী লোকমানের নির্দেশে আসামী খোরশেদ আলমের ঘরে হত্যাকাণ্ড নিয়ে একাধিক বৈঠক করে। বিভিন্ন বৈঠকে অভিযুক্তরা একাধিক বৈঠক করে হত্যার পরিকল্পনা চূড়ান্ত করে। তারা মিরন মেম্বারের গতিবিধিও লক্ষ্য রাখে। মিরন পূর্ব আলাদাদপুর গ্রামের লিটনের দোকানে প্রতিনিয়ত আড্ডা দিত। ঘটনার সময় ২৪ জন সন্ত্রাসী লিটনের মুদি দোকানের আশেপাশে অবস্থান নেয়। এদের মধ্যে ৫ জনের অস্ত্রধারী একটি দল সিএনজি অটোরিকশা যোগে দোকানের সামনে উপস্থিত হয়ে মিরন মেম্বারকে লক্ষ্য করে এলোপাতাড়ি গুলি করে। হত্যাকাণ্ড নিশ্চিত করে ২৪ জন যে যার মতো ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। ঘটনায় ব্যবহৃত চারটি অস্ত্র চরচামিতা এলাকার একটি মক্তবের মাটির নীচে পুঁতে রাখা হয়। পুলিশ জসিম নামে এক আসামীকে গ্রেপ্তারের পর তাকে জিজ্ঞাসাবাদে অস্ত্র ও গুলিগুলো উদ্ধার করে। এ ঘটনায় মোট ১০ জন আসামীদের গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছে পুলিশ। এরা বিভিন্ন সময়ে জামিনে বের হয়।
আদালত সাক্ষ্য প্রমান শেষে ঘটনার প্রায় ৪ বছর পর এ হত্যা মামলার রায় দিয়েছেন।