লবণের দাম বাড়ানোর
‘আবদার’ জানিয়েছে উৎপাদনকারী শীর্ষ পাঁচ
প্রতিষ্ঠান। সম্প্রতি শিল্প সচিবের কাছে দাম বাড়ানোর আবেদন জানায় এসব প্রতিষ্ঠান। তাদের
দাবি, প্রতিকেজি লবণে তাদের ৫ টাকা লোকসান হচ্ছে, এ কারণে লবণের যৌক্তিক মূল্য নির্ধারণ
করতে হবে। পাঁচ প্রতিষ্ঠান হলো এসিআই সল্ট লিমিটেড, মোল্লা সল্ট, কনফিডেন্স লিমিটেড,
মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ এবং সিটি গ্রুপ।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানিয়েছে, পাঁচ প্রতিষ্ঠানের আবেদনটি শিল্প মন্ত্রণালয় থেকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। এর আগে গত ৩১ অক্টোবর বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন (বিটিটিসি) প্রতি কেজি লবণের দাম ৪২ টাকা নির্ধারণ করে।
আরও পড়ুন: এফএওর সদর দপ্তরে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব কক্ষ’ উদ্বোধন
লবণ কোম্পানিগুলো
শিল্প মন্ত্রণালয়কে দেওয়া এক চিঠিতে বলেছে, ‘বিটিটিসি কর্তৃক মূল্য নির্ধারণের পর বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেল এবং প্রয়োজনীয়
পণ্যের দাম বৃদ্ধির কারণে মূল্যস্ফীতি ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পায়। দেশে সার্বিক মূল্যস্ফীতি
১০ শতাংশের ওপরে। এমন পরিস্থিতিতে লোকসানের মধ্যে লবণ উৎপাদন করে যাচ্ছি। মাঠপর্যায়ে
৮০ কেজি লবণের বস্তার গড় দাম ১ হাজার ৭০ টাকা।’ চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, ‘লবণ প্রক্রিয়াকরণে ৫০ শতাংশ ক্ষতি হয়। এ ছাড়া অফ-পিক আওয়ারে বিদ্যুতের
দাম আগের বছরের ৭ টাকা ৭০ পয়সা থেকে বেড়ে প্রতি ইউনিট ৮ টাকা ৯১ পয়সায় দাঁড়িয়েছে। পিক
আওয়ারে এটি আগের বছরের ১০ টাকা ৬৯ পয়সা থেকে বেড়ে ১২ টাকা ৯১ পয়সা হয়েছে, যার ফলে উৎপাদন
খরচ ১৬ শতাংশ বেড়েছে। গ্যাসের দামও আগের বছরের ১৪ টাকা থেকে বেড়ে প্রতি ইউনিট ৩০ টাকা
হয়েছে, সেখানে উৎপাদন খরচ বেড়েছে। পাশাপাশি ফ্যাক্টরি ওভারহেড খরচ প্রতি কেজিতে প্রায়
৩ থেকে ৪ টাকা বেড়েছে। আগের বছরের তুলনায় জ্বালানির দাম ৩৭ শতাংশ বৃদ্ধির কারণে পণ্যটির
পরিবহন খরচ প্রায় বেড়েছে ৭১ শতাংশ। এসব খরচ বিবেচনায় নিলে প্রতি কেজি লবণের উৎপাদন
খরচ দাঁড়ায় ৪২ টাকা। ফলে প্রতি কেজি লবণের ক্ষতি হচ্ছে ৫ টাকা।
টিসিবি জানিয়েছে,
বর্তমানে শহরের বাজারে ভোজ্য লবণ বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৩৮ থেকে ৪০ টাকায়। সূত্র
জানায়, সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের কারণে এ বছর ব্যাপক লবণ উৎপাদন সম্ভব হয়েছে।
বাংলাদেশ ক্ষুদ্র
ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের তুলনায় চলতি মৌসুমে লবণ
উৎপাদনকারী ও লবণ ভোগের পরিমাণ বেড়েছে।
বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) তথ্যমতে, সদ্য বিদায়ী মৌসুমে দেশে ২২ লাখ ৩৩ হাজার টন লবণ উৎপাদন হয়েছে, যা বিগত ৬২ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।
আরও পড়ুন: আলজেরিয়ায় ভয়াবহ দাবানল, নিহত ৩৪
জাতীয় লবণনীতি (২০২২) অনুযায়ী, শিল্প মন্ত্রণালয়ের দিকনির্দেশনায় বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) লবণশিল্পের পৃষ্ঠপোষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে থাকে। ১৯৬১ সাল থেকে বিসিকের মাধ্যমেই দেশে পরিকল্পিতভাবে লবণ উৎপাদন শুরু হয়। বর্তমানে কক্সবাজারে অবস্থিত বিসিকের লবণশিল্পের উন্নয়ন কর্মসূচি কার্যালয়ের আওতাধীন ১২টি লবণকেন্দ্রের মাধ্যমে কক্সবাজার জেলার সব উপজেলায় এবং চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে লবণ চাষের জন্য লবণচাষিদের প্রশিক্ষণ, ঋণ প্রদান এবং প্রযুক্তি সম্প্রসারণসহ সার্বিক সহায়তা প্রদান করা হয়।
আরও পড়ুন: যুক্তরাষ্ট্রে বিস্তৃত হচ্ছে তীব্র তাপদাহ
বিসিক বলছে,
লবণ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের লক্ষ্যে স্বল্পমেয়াদি (১ বছর), মধ্যমেয়াদি (১-৫
বছর) এবং দীর্ঘমেয়াদি (৫ বছরের ঊর্ধ্বে) কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। কর্মপরিকল্পনার
মধ্যে রয়ছে আধুনিক পদ্ধতিতে লবণচাষিদের অগ্রিম লবণ চাষে উদ্বুদ্ধকরণ ও প্রশিক্ষণ, লবণ
চাষের নতুন এলাকা চিহ্নিতকরণ এবং সম্প্রসারণ, সহজশর্তে লবণচাষিদের ঋণ প্রদান, একরপ্রতি
লবণ উৎপাদন বাড়ানো, লবণ চাষের জমির লিজ মূল্য নির্ধারণ, লবণ চাষের জমি সংরক্ষণ, আধুনিক
পদ্ধতিতে লবণ উৎপাদনে প্রদর্শনী ও লবণের মান নিয়ন্ত্রণে কারিগরি সহায়তা প্রদান, জরিপ
পরিচালনা, লবণ চাষ এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ এবং লবণ উৎপাদন, মজুদ ও মূল্য নিয়ন্ত্রণে নিয়মিতভাবে
মনিটরিং কার্যক্রম পরিচালনা করা।