পাবনায় নতুন প্রযুক্তিতে বাহারি মাছ চাষের প্রচলন শুরু হয়েছে। সেই সঙ্গে সৃষ্টি হচ্ছে বেকার তরুণদের কর্মসংস্থান। দেশে রঙিন মাছ চাষ করে নিজেদের ভাগ্যবদল করেছেন অনেক মাছ চাষি পিছিয়ে নেই পাবনার চাষিরাও। বাসাবাড়ি, অফিস কিংবা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে শোভাবর্ধনের জন্য অ্যাকুরিয়ামে রাখা হয় রঙিন মাছ।
শখের বসে অনেকে রঙিন মাছ কিনে চাষ করলেও এখন বাণিজ্যিক ভাবে চাষ করা হচ্ছে হ্যাচারী ও জলাশয়ে। দাম ভাল ও লাভজনক হওয়ায় বৃদ্ধি পাচ্ছে রঙিন মাছের চাষ। রঙিন মাছ চাষে ভাগ্য বদলে দিয়েছে পাবনার বেকার যুবকদের। শখের খামারের বাণিজ্যিক সফলতায় এখন তারা প্রতিষ্ঠিত খামারী। অল্প পুঁজিতে, লাভবাজনক হওয়ায় রঙিন মাছ চাষে আগ্রহী হচ্ছে তরুণরা। পাবনায় রঙিন মাছ চাষে সফল হয়েছেন অনেক তরুণ উদ্যোক্তা তেমনি একজন পাবনা বেড়া উপজেলার আলহেরা নগরের অনার্স শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী আল আমিন হোসেন। ২০২০ সালে করোনাকালীন সময়ে ঘরবন্দী জীবন কাটছিলো তার। একঘেঁয়েমি কাটাতে ১০০ টাকায় দুটি গাপ্পি মাছ কেনেন। শখের অ্যাকুরিয়ামে অল্প দিনেই অনেকগুলো পোনা জন্মালে, বিক্রি শুরু করেন আল আমিন। বাজারে ভালো চাহিদা থাকায় বাবার উৎসাহে বাড়ির ছাদে ট্যাংক বানিয়ে নেমে পড়েন রঙিন মাছের বাণিজ্যিক চাষে। আর তাতেই বাজিমাৎ। বানিজ্যিক সফলতায় মাত্র তিন বছরেই বেড়েছে আল আমিনের খামারের পরিসর। উৎপাদন করছেন মালি, গাপ্পি, প্লাটি, সোর্ডটেইল, বাটারফ্লাই কইকার্প, গোন্ডফিশ, ফাইটার, এ্যাঞ্জেলসহ প্রায় ৩০ প্রজাতির মাছ। স্থাপন করেছেন বানিজ্যিক বিক্রয়কেন্দ্র। এখন প্রতিমাসে তার গড় আয় ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা। এছাড়াও আল আমিন বেড়া বাজারে গড়ে তুলেছেন, মাড়িয়া এ্যাকুয়া হাউজ এন্ড ফিশ ফার্ম।
আল আমিন আরও জানান, অর্থনৈতিক ভাবে স্বাবলম্বী হতে পড়াশোনার পাশাপাশি বেকার যুবকেরা এ পেশায় আসতে পারে।
এবিষয়ে পাবনা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ বলেন, পাবনা মাছ চাষের একটি অগ্রগামী জেলা। এ জেলায় বিভিন্ন মাছের চাষ হয়, সাদা মাছ, চিংড়ি মাছসহ নানা প্রজাতির মাছ। তবে এখন অ্যাকুরিয়ামের মাছ বা বাহারি মাছ চাষও বেড়েছে এবং বেশ বিপণনও হচ্ছে।
তিনি জানান, প্রায় প্রতিটি উপজেলায় বাহারি মাছ চাষে উদ্যোক্তা এগিয়ে আসছে। আমরা বিভিন্ন উদ্যোক্তা সৃষ্টি করাসহ তাদেরকে সচেতন করেছি এবং তাদেরকে প্রশিক্ষণ দিয়েছি। সেক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে ঈশ্বরদী, আটঘরিয়া, চাটমোহর, পাবনা সদর এবং বেড়া উপজেলায় বেশ কিছু উদ্যোক্তা সৃষ্টি হয়েছে। প্রতিদিন পাবনা থেকে ঢাকাসহ সারাদেশে বাহারি মাছ বা অ্যাকুরিয়াম মাছ তারা বিপণন করছে এবং বেশ লাভবান হচ্ছে। তিনি জানান, বাহারি মাছ চাষে তারা প্রতিমাসে ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা আয় করছে।
তিনি আরও জানান, শুধু বাহারি মাছ চাষের মাধ্যমে পাবনায় ১ বছরে প্রায় অর্ধকোটি টাকা আয় করছে চাষিরা। বাহারি মাছের কার্যক্রমটি আরও এগিয়ে নিতে চাষিদের বিভিন্ন পরার্মশ এবং বিভিন্ন প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। বাহারি মাছের মাধ্যমে পাবনায় এক নতুন দিগন্ত পাচ্ছে বলে জানান তিনি।