কুমিল্লায় অনলাইনে ভুয়া পেজ খুলে মোবাইল বিক্রি ও প্রতারণা চক্রের ৩ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এসময় তাদের কাছ থেকে আইফোন, স্যামসাংসহ বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ৮টি মোবাইল জব্দ করা হয়। লাকসাম উপজেলার দক্ষিণ বাইপাস সংলগ্ন এলাকা থেকে তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়।
বুধবার (৩১ মে) দুপুরে জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য নিশ্চিত করেন পুলিশ সুপার আব্দুল মান্নান।
গ্রেফতারকৃতরা হলো- জেলার নাঙ্গলকোট উপজেলার পশ্চিম বেতাগাঁও মজুমদার বাড়ির ওয়াশিম মজুমদারের ছেলে সৌরভ আলী মজুমদার শুভ (২২), একই এলাকার ইব্রাহিমের ছেলে আনিসুল হক শাহীন (১৯) এবং লাঙ্গলকোট মক্রবপুর ইউনিয়নের ২ নং ওয়ার্ড এলাকার বজলুর রহমানের বাড়ির সহিদুল ইসলামের ছেলে সাকিব (১৯)।
পুলিশ সুপার জানায়, মোবাইল ফোন প্রতারণা চক্রটি দীর্ঘদিন যাবত ফেসবুকে ভুয়া পেজ খুলে কম টাকায় পুরাতন মোবাইল বিক্রয় ও এক্সচেঞ্জ করার লোভনীয় বিজ্ঞাপন দিত। এতে আকৃষ্ট হয়ে ক্রেতারা যোগাযোগ করলে সুকৌশলে তাদেরকে ইনবক্সে নিয়ে মোবাইল নাম্বার ও হোয়াটসঅ্যাপ নাম্বার সংগ্রহ করত চক্রটি। পরে তাদের কাছে মোবাইল বিক্রির কয়েকদিন পর পুলিশের পোশাক পরিহিত ছবি ব্যবহার করে হোয়াটসঅ্যাপ নাম্বার থেকে পুলিশ পরিচয়ে কল দিত। পুলিশ সেজে ক্রেতাদেরকে চুরির মোবাইল বা মার্ডার মামলার আসামির মোবাইল বলে তাদের কাছে ফোনটি প্রেরণ করার জন্য বলত। ক্রেতা কোনটি প্রেরণ করে দিলে তার কিছুদিন পর আবারো ফোন করে মামলা দেওয়ার ভয় দেখিয়ে টাকা চাইতো এবং আর কোন সমস্যা হবে না বলে আশ্বাস দিত। এভাবেই অনলাইন থেকে মোবাইল ক্রয় করে মোবাইল এবং টাকা উভয়ই প্রতারণার মাধ্যমে হাতিয়ে নিতেন চক্রটি।
পুলিশ সুপার আরও জানান, সম্প্রতি এমনই এক প্রতারণার শিকার হন চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার নজিম উদ্দিন আরশাদ নামে এক যুবক। প্রতারকরা তাকে লাকসাম থানার এসআই তারেক পরিচয়ে ফোন করে জানায় তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি মার্ডার মামলার নিহত ব্যক্তির মোবাইল ফোন। চক্রটি তার কাছে থাকা ফোনটি আলামত হিসেবে দিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি ১৫ হাজার টাকা দাবি করে। অন্যথায় তাকে মার্ডার মামলার আসামী করা হবে বলে জানায়। ভিকটিম ভয় পেয়ে প্রতারকদের দেওয়া বিকাশ নাম্বারে টাকা এবং কুরিয়ারে মোবাইল ফোনটি প্রেরণ করে। কিন্তু একই দিনে প্রতারক চক্রটি আবারো টাকা দাবি করলে ভিকটিমের সন্দেহ হয়। সে বিষয়টি লাকসাম থানা ওসিকে ফোন করে অবগত করে।
পুলিশ সুপার আরও জানান, লাকসাম থানার ওসি বিষয়টি আমাকে জানালে আমি তাৎক্ষণিক তাদেরকে খুঁজে বের করার নির্দেশনা প্রদান করি। লাকসাম থানা পুলিশ প্রযুক্তির সহায়তায় প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ ও বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে প্রতারক চক্রটির উপর নজরদারি অব্যাহত রাখে। এরই ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবার তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়। জব্দ করা হয় আটটি বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মোবাইল ফোন। এই মোবাইলগুলো তারা অনলাইন প্রতারণার মাধ্যমে আত্মসাৎ করে বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছে। গ্রেফতার আসামিদের আদালতে হাজির করে রিমান্ড আবেদন করা হবে বলেও জানান জেলা পুলিশ সুপার।
সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) আফজাল হোসেন, লাকসাম সার্কেল এএসপি (অতিরিক্ত দায়িত্বে) জাহিদুল ইসলাম ও লাকসাম থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মাহফুজসহ অন্যান্য কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।