বাংলাদেশ প্রকৌশল
বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের দাবি পুরোপুরি না মেনে একাডেমিক কার্যক্রম
চালু রাখার সিদ্ধান্তকে উপেক্ষা করে সকল দাবি আদায়ের লক্ষ্যে একাডেমিক কার্যক্রম ও
টার্ম ফাইনাল পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দিয়ে ফের অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেছেন শিক্ষার্থীরা।
শনিবার (৩০
মার্চ) সকাল ৭টা থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারে শিক্ষার্থীরা জড়ো হতে থাকেন এবং
দাবি আদায়ে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন।
এর আগে, গত
২৭ মার্চ রাতে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতাসহ অন্য নেতাকর্মীরা বুয়েট ক্যাম্পাসে
প্রবেশের মাধ্যমে নিষিদ্ধ রাজনীতি ফের শুরু করার অভিযোগ তুলে এর প্রতিবাদে গতকাল শুক্রবার
আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা। এতে ছাত্রলীগকে প্রবেশে সহযোগিতাকারী শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে
ব্যবস্থা নেওয়া ও ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধকরণসহ ৬ দফা দাবি জানালে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন
তাদের কিছু দাবি মেনে নেয়। কিন্তু শিক্ষার্থীরা বলছেন, তাদের সকল দাবিই মানতে হবে।
ছাত্ররাজনীতি
প্রতিরোধে তাদের ৬ দফা দাবিগুলো হলো- বিশ্ববিদ্যালয়ের সুস্পষ্ট বিধিমালা লঙ্ঘনের দায়ে
আমরা বুয়েটের সকল ব্যাচের শিক্ষার্থীরা ২৭ মার্চের মধ্যরাতে রাজনৈতিক সমাগমের মূল সংগঠক
ইমতিয়াজ রাব্বির বুয়েট থেকে স্থায়ী বহিষ্কার এবং হল বাতিল; উক্ত ঘটনায় ইমতিয়াজ রাব্বির
সঙ্গে বুয়েটের বাকি যেসব শিক্ষার্থী জড়িত ছিল তাদের বিভিন্ন মেয়াদে হল এবং টার্ম বহিষ্কার;
বহিরাগত রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ যারা ক্যাম্পাসে প্রবেশ করল তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা
নেওয়া হবে কি না, তারা কেন, কীভাবে প্রবেশ করার অনুমতি পেল এই ব্যাপারে সুস্পষ্ট সদুত্তর
এবং জবাবদিহিতা বুয়েট প্রশাসন কর্তৃক আসতে হবে; প্রথম ও দ্বিতীয় দাবি শনিবার সকাল ৯টার
মধ্যে বাস্তবায়ন করা না হলে সকল ডিএসডাবলুর পদত্যাগ করতে হবে; ক্যাম্পাসে মধ্যরাতে
বহিরাগতদের প্রবেশের কারণে নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত হওয়াত এর প্রতিবাদ হিসেবে ৩০ ও ৩১
মার্চের টার্ম ফাইনালসহ সকল একাডেমিক কার্যক্রম বর্জন এবং আন্দোলনরত বুয়েটের সাধারণ
শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে কোনোরকম হয়রানিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া যাবে না- এই মর্মে লিখিত
প্রতিশ্রুতি প্রদান।
তাছাড়া শিক্ষার্থীরা
বলছেন, নিরাপদ ক্যাম্পাসের নিশ্চয়তা, রাজনীতিবিহীন পরিবেশ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধিমালা
বজায় রাখা সম্পূর্ণরূপে বিঘ্নিত হয়েছে ২৭ মার্চ মধ্যরাতে ছাত্রলীগের প্রবেশের অনুমতি
পাওয়ার মাধ্যমে। সাধারণ শিক্ষার্থীরা এমন ন্যক্কারজনক ঘটনার সর্বদা বিরোধী।
এদিকে, গত শুক্রবার
রাতে বুয়েট উপাচার্যের নির্দেশক্রমে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. মো. ফোরকান
উদ্দিন স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে ছাত্রলীগকে সহযোগিতায় অভিযুক্ত শিক্ষার্থী ইমতিয়াজ হোসেন
রাহিম রাব্বির হলের সিট বাতিল, তদন্ত কমিটি গঠন ও তদন্ত অনুযায়ী সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং
পরীক্ষাসহ সব একাডেমিক কার্যক্রম চলমান থাকার কথা জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে
বলা হয়, ২৭ মার্চ রাত ১টার দিকে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সংঘটিত
ঘটনার প্রেক্ষিতে কর্তৃপক্ষ নিম্নোক্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে-
১. বিশ্ববিদ্যালয়ের
২১ ব্যাচের পুরকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থী ইমতিয়াজ হোসেন রাহিমের (স্টুডেন্ট নম্বর ২১০৪১৪১)
হলের সিট বাতিল করা হলো।
২. এ ছাড়া সার্বিক
বিষয়ে তদন্তপূর্বক সুপারিশ প্রদান করার জন্য একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। তদন্ত কমিটির
রিপোর্ট পাওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মানুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
৩. বিশ্ববিদ্যালয়ের
স্নাতক ও স্নাতকোত্তর টার্ম/সেমিস্টার ফাইনালসহ সব একাডেমিক কার্যক্রম চলমান থাকবে।
এর আগে, উপাচার্য
অধ্যাপক ড. সত্যপ্রসাদ মজুমদার আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় তিনি
শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, তোমাদের দাবির প্রেক্ষিতে ইমতিয়াজ রাব্বির হলের সিট বাতিল
করা হবে। আর তাকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করতে হলে সেটা ডিসিপ্লিন কমিটিতে যাবে।
সেখান থেকে তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হবে এবং তখন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তাকে বহিষ্কারের
পথ সুগম হবে।
প্রসঙ্গত, গত
২৭ মার্চ রাতে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি, দপ্তর সম্পাদকসহ অনেকেই বিশাল বহর নিয়ে
বুয়েট ক্যাম্পাসে প্রবেশ করেন। তাদের ক্যাম্পাসে প্রবেশ করাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা
রাখেন বুয়েট শিক্ষার্থী ইমতিয়াজ রাব্বি। ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ হওয়ার পরও বুয়েটে এ ধরনের
কর্মকাণ্ডকে নতুন করে রাজনীতি শুরুর পাঁয়তারা হিসেবে দেখছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। যার
প্রেক্ষিতে, ক্যাম্পাসে পুনরায় রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড শুরু হওয়া ও নিরাপত্তাহীনতার আশঙ্কায়
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে প্রশ্নবিদ্ধ করে আন্দোলন শুরু করেন তারা।