করোনা মহামারির সংক্রমণ কমে আসায় কিছু দেশ ভ্রমণের বিধিনিষেধ শিথিলের সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। গত ১৮ মার্চ এ পথে পা বাড়ায় যুক্তরাজ্য। ব্রিটিশ সরকার ভ্রমণের ক্ষেত্রে করোনাভাইরাস সংক্রান্ত সকল বিধিমালা শিথিলের ঘোষণা দেয়। এরপর আরও ৬টি ইউরোপীয় দেশ একইপথ বেছে নিয়েছে। মহামারির প্রাদুর্ভাব সর্বোচ্চ থাকার সময়ের তুলনায় ইউরোপের অনেক দেশে এখন নিয়মনীতি শিথিল হয়েছে। ভ্রমণকারী টিকা নিয়েছেন কি নেননি- তা নিয়ে এখন এ অঞ্চলের বেশিরভাগ গন্তব্যে কড়াকড়ি নেই। অনেকস্থানে পর্যটকদের আসার আগে বা পড়ে বাধ্যতামূলক কোভিড-১৯ টেস্ট করার নিয়মও উঠে গেছে। নেই পৌঁছানোর পর কোয়ারেন্টিন পালনের নিয়ম।
বেশিরভাগ আন্তর্জাতিক ভ্রমণকারীর জন্য আগাম ভিসা নেওয়ার বিষয়টি অবশ্য আগের মতোই আছে। এটি বাদ দিলে বলা যায়, এখন প্রতিটি মহাদেশেই এমন কোনো না কোনো দেশ রয়েছে যারা ভ্রমণের ক্ষেত্রে মহামারি পরবর্তী নীতিমালা বেছে নিচ্ছে। কোনো কোনো দেশ তাদের ভূখণ্ডে অনেকের মাস্ক না পরাকে মেনে নিচ্ছে, এমনকী কোভিড-১৯ পজিটিভ শনাক্ত কাউকে কোয়ারেন্টিন পালন ছাড়াই চলতে-ফিরতে দেওয়া হচ্ছে। মহামারিকালের দুই বছর টানা ব্যাহত হয় বৈশ্বিক পর্যটন খাত। বিধিনিষেধের সাম্প্রতিক এই উদার ছাড় একদিকে কঠোর ভ্রমণ নীতি ও সীমান্ত বন্ধের মতো ঘটনা কমে আসার ইঙ্গিত দেয়। একইসাথে, তা আবার সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকিও বাড়াচ্ছে। তাছাড়া, যেসব পর্যটক সতর্ক বা যারা নিরাপদে আসা-যাওয়া করতে চান, এতে তারাও বেশ উদ্বিগ্ন।
বিলাসবহুল ভ্রমণ পরামর্শক সংস্থা লোকাল ফরেনারের অংশীদার ব্রোক ল্যাভেরি বলেন, আমাদের অধিকাংশ গ্রাহক জানেন না, বর্তমানে কোন গন্তব্যে কোন ধরনের বিধিনিষেধ চালু রয়েছে। না জানার কারণ অবশ্য দ্রুত পরিবর্তনশীল নীতি। যেমন সম্প্রতি থাইল্যান্ড সরকার জানিয়েছে, আগামী ১ মে থেকে তারা পর্যটকদের জন্য সেদেশে আসার পর বাধ্যতামূলক কোভিড পরীক্ষার নিয়ম বাতিল করবে। পর্যটনের ওপর অনেকাংশে নির্ভরশীল আরেকটি দেশ গ্রিস আসন্ন গ্রীষ্ম মৌসুমের আগে একই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের কথা জানিয়েছে।
এসব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ব্রোক লেভারি বলেছেন, "পর্যটকরা এত এত তথ্যের ভিড়ে খেই হারিয়ে ফেলছেন। কারণ আন্তর্জাতিক ভ্রমণের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয়ভাবে একক উৎস থেকে তথ্য পাওয়ার সুযোগের যথেষ্ট অভাব রয়েছে। ভিন দেশে বিনোদন বা কাজের ক্ষেত্রে যাওয়ার ক্ষেত্রে এখন সুখবর হলো বিশ্বব্যাপী করোনার গণ-টিকাদান এখন বেশ সফল। তবে টিকাদানের হার কম এমন কয়েকটি দেশেও অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বা অন্য কারণে ভ্রমণ বিধিনিষেধ শিথিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে।
এসব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে আসুন জেনে নেওয়া যাক কোন দেশগুলোয় করোনার টিকা না নিয়ে বা স্বাস্থ্য পরীক্ষা ছাড়া ভ্রমণ করা যাচ্ছে:
আর্জেন্টিনা: দেশটিতে ভ্রমণ করতে হলে বিমা করাতে হবে এবং একটি বিবৃতিতে স্বাক্ষর করতে হবে, গত ৭ এপ্রিল পর্যন্ত এছাড়া অন্য কোনো কড়াকড়ি শর্ত দেয়নি দেশটির অভিবাসন কর্তৃপক্ষ। আরুবা: ক্যারিবিয় দ্বীপপুঞ্জের এ গন্তব্যে যাওয়ার সকল কোভিড-১৯ বিধিনিষেধ গত ১৯ মার্চ থেকে প্রত্যাহার করা হয়। বাহরাইন: মধ্যপ্রাচ্যের দেশটিতে গত ২০ ফেব্রুয়ারি থেকে কোনো প্রকার করোনা টেস্ট বা টিকা না নিয়েই ভ্রমণ করা যাচ্ছে। বোনাইরে: গত ২০ এপ্রিল থেকে দ্বীপাঞ্চলটি মহামারির আগের সময়ের ভ্রমণ নীতিমালায় ফিরেছে। তবে করোনা নেগেটিভ ঘোষণা দিয়ে আসার নিয়মটি এখনও কার্যকর রয়েছে। চিলি: সকল পর্যটক দেশটিতে প্রবেশের অনুমতি পাচ্ছেন ১৪ এপ্রিল থেকে। তবে এজন্য একটি বিমা করানো বাধ্যতামূলক এবং আসার পর করোনা টেস্ট করাতে হবে। কোস্টারিকা: গত ১ এপ্রিল থেকে এমনকী টিকা না নেওয়াদের জন্যও চূড়ান্ত স্বাস্থ্য পরিক্ষা ও ভ্রমণ বিমার নিয়ম বাতিল করা হয়েছে। কিউবা: দেশটিতে আসার পর পিসিআর টেস্ট করাবেন এমন একটি ফর্ম পূরণ করে যেকোনো ভ্রমণকারী সেখানে যাওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন গত ৬ এপ্রিল থেকেই। চেক রিপাবলিক: ৯ এপ্রিল থেকে নিজ সীমান্ত পুরোপুরি ভ্রমণের জন্য উন্মুক্ত করেছে ইউরোপীয় দেশটি। ডেনমার্ক (গ্রিনল্যান্ড ছাড়া): ২৯ মার্চ থেকে সকল করোনা বিধিনিষেধ তুলে নিয়েছে ডেনমার্ক। টিকা নেওয়া ও না নেওয়া উভয় ধরনের ব্যক্তির ক্ষেত্রে এটি কার্যকর করেছে। এল সালভেদর: ২৪ ফেব্রুয়ারি করোনাজনিত সব বিধিনিষেধ ঊঠিয়ে নেওয়া হয়। গ্যাবন: আফ্রিকা মহাদেশের প্রথম দেশ হিসেবে গত ১৬ মার্চ থেকে সকল করোনা বিধিনিষেধ তুলে নিয়েছে। গ্রানাডা: ক্যারিবিয় এই দ্বীপ দেশ একই সিদ্ধান্ত কার্যকর করেছে ৪ এপ্রিল থেকে। হাঙ্গেরি: ৭ মার্চ থেকে করনাভাইরাস জনিত ভ্রমণ বিধিনিষেধ প্রত্যাহার করা হয়। আইসল্যান্ড: ২৫ ফেব্রুয়ারি এমন সিদ্ধান্ত নেয় দেশটি। আয়ারল্যান্ড: ৬ মার্চ থেকে দেশটিতে ভ্রমণ আর কোনো বিধিনিষেধ নেই।জ্যামাইকা: গত ১৬ এপ্রিল বাধ্যতামূলক মাস্ক পরা ও করোনা পরীক্ষার নিয়ম বাতিল করেছে। জর্ডান: ১ মার্চ দেশটি জানায়, এখন থেকে ভ্রমণকারীদের করোনা পরীক্ষার কোনো সনদ দেখাতে হবে না। লাটভিয়া: সংক্রমণের উচ্চ-ঝুঁকির তালিকায় বর্তমানে কোনো দেশকেই রাখেনি লাটভীয় সরকার, সকলের ক্ষেত্রেও করোনা টেস্টের নিয়ম তুলে দেওয়া হয়েছে। মালদ্বীপ: ১৩ এপ্রিল নিজেদের গণস্বাস্থ্য জরুরি অবস্থা প্রত্যাহার করে সরকার সকল বিদেশিকে ভ্রমণের অনুমতি দিয়েছে। মেক্সিকো: মহামারির অধিকাংশ সময়েই সেদেশে কোনো ভ্রমণ বিধিনিষেধ ছিল না, তবে এখনও যাওয়ারপর স্বাস্থ্য পরীক্ষা বাধ্যতামূলক রয়েছে। মলদোভা: ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে দেশটিতে ভ্রমণ বিধিনিষেধ পরিবর্তন হয়েছে। এর আগে গত ১৬ মার্চ দেশটি ভ্রমণের সকল কোভিড বাধ্যবাধকতা তুলে দেয়। মঙ্গোলিয়া: গত ১৪ এপ্রিল এশিয়ার মূল ভূখণ্ডের প্রথম দেশ হিসেবে সকল আন্তর্জাতিক ভ্রমণকারীর জন্য নিজ সীমান্তকে উন্মুক্ত করে দেয়। মন্টিনিগ্রো: টিকা না নিয়েও যাওয়া যাবে, টেস্ট করানোও বাধ্যতামূলক নয়। গত ১০ মার্চ থেকে এ সিদ্ধান্ত কার্যকর রয়েছে।উত্তর মেসেডোনিয়া: বলকান অঞ্চলের দেশটিতে ২১ এপ্রিল থেকে সব করোনাজনিত শর্ত বাতিল করা হয়। নরওয়ে: ১২ ফেব্রুয়ারি থেকেই নেই টেস্টিং, কোয়ারেন্টাইন বা নিবন্ধনের বাধ্যবাধকতা।
আরও যেসব দেশ শর্ত শিথিল করেছে তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে: পোল্যান্ড, রোমানিয়া, সৌদি আরব, স্লোভেনিয়া, স্লোভাকিয়া, সুইডেন, সুইজারল্যান্ড, যুক্তরাজ্য এবং ইয়েমেন।