আজঃ শনিবার ২০ এপ্রিল ২০24
শিরোনাম

কম্বোডিয়ায় সাইবার দাসত্বের শিকার বাংলাদেশিরা

প্রকাশিত:বুধবার ১৯ অক্টোবর ২০২২ | হালনাগাদ:বুধবার ১৯ অক্টোবর ২০২২ | অনলাইন সংস্করণ
ফিরোজ মাহমুদ

Image

ভাই, আমার বাড়ি পিরোজপুরের নাজিরপুরে, আমি কম্বোডিয়া থেকে বলছি। আমার এলাকার মাসুম খান আমাকে কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে ভালো বেতনে চাকরি দেয়ার কথা বলে চাঁদপুরের জাহাঙ্গীর আলম নামে এক দালালের মাধ্যমে ২০২০ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি কম্বোডিয়ায় পাঠায়। কম্বোডিয়ায় পৌঁছানোর পরপরই অফিসিয়াল প্রয়োজনের কথা বলে আমার কাছ থেকে রেখে দেয়া হয় পাসপোর্ট। পরে এক চাইনিজ এজেন্টের কাছে আমাকে বিক্রি করে দিয়েছে। এখন বাড়ি থেকে পাঁচ হাজার ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় পাঁচ লাখ টাকা) এনে না দিলে বের হতে দেবে না। এছাড়া তাদের কথা অনুযায়ী কাজ না করলে অনেক নির্যাতন করে। কালও অনেক মারধর করেছে। ভাই, আপনি কি সাহায্য করতে পারবেন? একটু চেষ্টা করেন, বের করতে পারেন কি-না। যদি পারেন আমার অনেক উপকার হয়।

গত শুক্রবার (১৪ অক্টোবর) রাত ১টা ২২ মিনিটে কম্বোডিয়া থেকে সেখানকার এক চীনা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত বাংলাদেশি এক কর্মীর পাঠানো বার্তাটি আসে এ প্রতিবেদকের হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে। ওই বার্তার সূত্র ধরে কথা হয় ওই কর্মীর সঙ্গে। উঠে আসে কম্বোডিয়ায় কর্মরত বাংলাদেশিদের ওপর নির্যাতনের রোমহর্ষক চিত্র।

বাংলাদেশ থেকে অদক্ষ শ্রমিক নিয়ে বিদেশে জিম্মি করা, নির্যাতন করার ঘটনা নতুন নয়। তবে এখন প্রযুক্তিগতভাবে দক্ষ কর্মীদের মোটা অঙ্কের বেতনের কথা বলে নেয়া হচ্ছে কম্বোডিয়ায়। সেখানে গিয়ে সাইবার দাসত্বের শিকার হচ্ছেন বাংলাদেশিরা। একেক জনকে ১ থেকে ৫ হাজার ডলারে বিক্রি করা হচ্ছে চাইনিজ ব্যক্তিমালিকানাধীন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে। প্রযুক্তিগত দক্ষ বাংলাদেশিদের নানারকম সাইবার ক্রাইমের কাজ করতে বাধ্য করা হচ্ছে। কেউ প্রতিবাদ করলে কিংবা চলে আসতে চাইলেই করা হচ্ছে নির্যাতন। কম্বোডিয়া বিক্রি হয়ে সাইবার দাসত্বের শিকার বাংলাদেশিরা আজকের দর্পণকে জানিয়েছেন তাদের নির্মম নির্যাতন ও করুণ পরিণতির কথা।

আইওএম বাংলাদেশের তথ্যমতে, প্রতি বছর বাংলাদেশ থেকে প্রায় ১০ লাখ মানুষ বিদেশ যান। যাদের মধ্যে অনেকেই পাচারকারীদের লক্ষ্যবস্তু হন। কোনো কোনো অভিবাসী ঋণ, জোরপূর্বক শ্রম, যৌন শোষণ, জোরপূর্বক বিয়ে এবং দাসত্বের শিকার হন।

জানা গেছে, বাংলাদেশ ও কম্বোডিয়া দুই প্রান্তেই রয়েছে বাংলাদেশি মানবপাচারকারী চক্রের সদস্যরা। বাংলাদেশ থেকে মোটা অঙ্কের বেতনে চাকরির কথা বলে বাংলাদেশিদের কম্বোডিয়ায় পাঠানো হয়। কাজের কথা বলা হলেও তাদের নেয়া হয় কম্বোডিয়ায় ভ্রমণ ভিসায়। কম্বোডিয়াতে চক্রের বাংলাদেশি সদস্যরা চাইনিজ ব্যক্তিমালিকানাধীন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে তাদের বিক্রি করে দেয়। কখনো কখনো একজনকে কয়েক দফায় একাধিক প্রতিষ্ঠানে বিক্রি করা হয়। কাজের দক্ষতার ভিত্তিতে একেক জনকে ১ থেকে ৫ হাজার ডলারে বিক্রি করা হয়। কম্বোডিয়ায় পৌঁছানোর পর পরই অফিসিয়াল প্রয়োজনের কথা বলে বাংলাদেশিদের কাছ থেকে রেখে দেয়া হয় পাসপোর্ট। বিক্রি করা ছাড়াও পাসপোর্ট জিম্মি করেও অনেকের কাছ থেকে আদায় করা হয় লাখ টাকা। কেউ প্রতিবাদ করলে করা হয় নির্যাতন।

করুণ পরিস্থিতির কথা তুলে ধরেছেন কম্বোডিয়ায় নির্যাতনের শিকার বাংলাদেশিরা। তবে পরিচয় প্রকাশ পেলে আরো বেশি নির্যাতনের শিকার হতে পারে, এই শঙ্কায় তারা নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ করেছেন।

ভুক্তভোগী ওই যুবক আরো বলেন, এ বিষয়ে তার পরিবার, তার এলাকার দালাল মাসুম খানের সাথে যোগাযোগ করলে সে খুব খারাপ ব্যবহার করে এবং নানা ভয়ভীতি ও হুমকি দেয়।

মুঠোফোনে কথা হয় ভুক্তভোগী ওই যুবকের মায়ে সাথে, তিনি আজকের দর্পণকে বলেন, তার ছেলে এইচএসসি পাস করে কম্পিউটার প্রশিক্ষণ নিয়েছে। কম্পিউটার অপারেটর পদে উচ্চ বেতনে চাকরির আশ্বাস দিয়ে তাদের এলাকার মাসুম খান তার ছেলেকে কম্বোডিয়ায় পাঠায়। সেখানে পাঠানোর জন্য মাসুম খান তাদের কাছে ৮ লাখ টাকা নিয়েছে। কম্বোডিয়ায় পৌঁছানোর পর আমার ছেলে বিপদের কথা শুনে এলাকার লোকজন নিয়ে মাসুম খানকে চাপ দিলে সে আমার ছেলেকে দেশে ফিরিয়ে আনার কথা বলে আরো ২ লাখ টাকা নেয়। আমি গরু বিক্রি করে ওই ২ লাখ টাকা দিয়েছি, কিন্তু আমার ছেলেকে ফিরে পাইনি।

এক পর্যায়ে এ ঘটনায় নাজিরপুর থানায় অভিযোগ করলে মাসুম খানকে পুলিশ থানায় নিয়ে আসে। পরে স্থানীয়দের উপস্থিতিতে মাসুম আমার ছেলেকে দেশে এনে দেয়ার জন্য এক মাসের সময় নেয়। তাও এক বছর আগের কথা। এখন মাসুমের সাথে যোগাযোগ করলে আমার নানা ভয়ভীতিসহ হুমকি দেয়।

মুঠোফোনে নাজিরপুর থানার উপ-পুলিশ পরিদর্শক (এসআই) সাইফুল ইসলামের সাথে কথা হলে তিনি অভিযোগের বিষয় স্বীকার করে বলেন, উভয়পক্ষকে থানায় ডাকা হয়েছিলো। স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে মাসুম ওই ছেলেকে দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য সময় নিয়েছে। এরপর আর কোনো পক্ষ যোগাযোগ করেনি।

অভিযোগের বিষয়ে মাসুম খানের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি সাংবাদিক পরিচয় পাওয়া পর ফোন কেটে দিয়ে বন্ধ করে রাখেন। ফলে তার মন্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।

ভুক্তভোগী ওই যুবকের পাশাপাশি কম্বোডিয়ায় থাকা আরো কয়েকজন বাংলাদেশির সঙ্গে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। তারা জানান, বাংলাদেশ থেকে কম্বোডিয়ায় এনে বিক্রি করা হয় তাদের। এসব ঘটনার সঙ্গে জড়িত বাংলাদেশি দালাল ফারুক (আব্দুল্লাহ আল ফারুক), অপু (আব্দুল্লাহ আল মামুন) এবং আলমসহ অনেকেই। চীনা প্রতিষ্ঠানগুলো কেনার পর তাদের ‘দাস’ বানিয়ে রাখে। বাধ্য করা হয় নানা অপকর্ম করতে। তাদের কথামতো সবকিছু করতে হয়। না করলে চলে নির্যাতন।

দালাল চক্র নিরীহ বাংলাদেশিদের কম্পিউটার অপারেটর পদে উচ্চ বেতনে চাকরির আশ্বাস দিয়ে কম্বোডিয়া পাচার করে চাইনিজদের কাছে ৪ থেকে ৫ লাখ টাকায় বিক্রি করেন এবং বাংলাদেশের স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের টার্গেট করে কম্বোডিয়া থেকে বেশ কয়েকটি জুয়ার বা বেটিং ওয়েবসাইট এবং অ্যাপস পরিচালনা করে, টাকা কম্বোডিয়াতে পাচার করেন।

তারা আরো জানান, প্রথমে বাংলাদেশি গ্রাম্য দালাল এবং অনলাইনে চটকদার বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে তরুণ যুবকদের টার্গেট করে তাদের উচ্চ বেতনের চাকরির স্বপ্ন দেখিয়ে ফাঁদে ফেলে ফারুক, আলম এবং অপু। বিশেষ করে তাদের মূল টার্গেট সদ্য ভার্সিটি পাসকৃত বেকার যুবকরা। এরপর তাদের নানারকম প্রলোভন দেখিয়ে জনপ্রতি ৪ থেকে ৫ লাখ টাকা নেয়া হয় বিদেশে (কম্বোডিয়া) যাওয়ার খরচ বাবদ। উচ্চ বেতন এবং ভালো চাকরির আশায় যুবকদের পরিবারও রাজি হয়ে যায় সহজেই, এটাই এই প্রতারকদের মূল পুঁজি।

সম্প্রতি কম্বোডিয়ায় বাংলাদেশিদের পাচার করে নির্যাতনের অভিযোগে তিনজনকে গ্রেফতার করে র‌্যাব।

গ্রেফতারকৃতরা হলো- চক্রের মূলহোতা নাজমুল ইসলাম, তার সহযোগী নূর ইসলাম সাজ্জাদ ও সিরাজুল ইসলাম পঞ্চায়েত। তাদের জিজ্ঞাসাবাদে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছে সংস্থাটি। র‌্যাব জানতে পেরেছে, বাংলাদেশিদের কম্বোডিয়ায় নিয়ে সাইবার দাস বানিয়ে মেয়েদের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক করতে বাধ্য করা হচ্ছে। মেয়েদের ভিডিও কল দিয়ে আপত্তিকর অঙ্গভঙ্গি ও কথাবার্তা রেকর্ড করা হচ্ছে। এরপর সেগুলো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়ার ভয় দেখিয়ে টাকা আত্মসাতে বাধ্য করানো হচ্ছে।

র‌্যাব-৩ এর স্টাফ অফিসার এএসপি ফারজানা হক জানান, মানব পাচার চক্রের মূলহোতা কম্বোডিয়া প্রবাসী নাজমুল ইসলাম। তিনি বাংলাদেশ থেকে উচ্চ বেতনে কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে চাকরি দেয়ার নামে ভুক্তভোগীদের প্রলুব্ধ করেন। দালালদের মাধ্যমে শিক্ষিত, কম্পিউটার বিষয়ে পারদর্শী বেকার তরুণ-তরুণীদের এ ফাঁদে ফেলা হয়। কম্বোডিয়ায় পাঠানোর খরচ বাবদ প্রাথমিকভাবে তারা ৪-৫ লাখ টাকা নেন। আগ্রহীদের প্রথমে কম্পিউটার বিষয়ে পরীক্ষা নেয়া হয়। পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে কম্বোডিয়া প্রবাসী আলীম ও শরিফুলের সহায়তায় ট্যুরিস্ট ই-ভিসা করে তাদের পাঠানো হয়। সেখানে নাজমুল তার সহযোগী রাকিব ও রফিকের সহায়তায় চাকরিপ্রত্যাশীদের আরিফের হোটেলে নিয়ে যান এবং তাদের পাসপোর্ট ছিনিয়ে নেন। হোটেলে কিছুদিন অবস্থানের পর তাদের কম্পিউটার বিষয়ে প্রশিক্ষণের জন্য কম্বোডিয়া প্রবাসী কামাল ওরফে লায়ন কামাল ও আতিকের সহায়তায় একটি বিদেশি সংস্থায় নিয়ে যাওয়া হয়।

ফারজানা হক জানান, বিদেশি প্রশিক্ষকরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছদ্মনামে অ্যাকাউন্ট পরিচালনা করে প্রতারণা, ভুয়া ও ক্লোন ওয়েবসাইট ব্যবহার করে ক্রেডিট কার্ড থেকে টাকা আত্মসাতের কৌশল, ভুয়া নম্বর থেকে ফোন দিয়ে বা চ্যাট করে স্বল্প সুদে ঋণ দেয়ার নামে কৌশলে ডিপোজিট হাতিয়ে নেয়া, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভয়েস কল ও ভিডিও কল রেকর্ড করে পরে ব্ল্যাকমেইল করে অর্থ আত্মসাতের কৌশল শেখান। প্রশিক্ষণ শেষে তাদের একটি বিদেশি কোম্পানির কাছে দুই-তিন হাজার ডলারে বিক্রি করে দেয়া হয়। এর পর তাদের একটি সুরক্ষিত ভবনে নিয়ে তল্লাশি করে সব রকম ইলেকট্রনিক ডিভাইস কেড়ে নেয়া হয়। পরে তাদের কম্পিউটার ল্যাবে নিয়ে যাওয়া হয়। একটি বড় ঘরে তিন-চারশ ডেস্কটপ কম্পিউটার সাজানো থাকে। সেখানে ভুক্তভোগীদের ফেসবুকে ছদ্মপরিচয়ে অ্যাকাউন্ট খুলে নারীদের সঙ্গে পুরুষ এবং পুরুষদের সঙ্গে নারী হিসেবে বন্ধুত্ব গড়তে বলা হয়। এরপর সেই নারী-পুরুষদের ফাঁদে ফেলে অর্থ হাতিয়ে নিতে বাধ্য করা হয়।

র‌্যাব-৩ এর স্টাফ অফিসার জানান, কেউ টার্গেট সংগ্রহ করতে ব্যর্থ হলে বা কাজ করতে অস্বীকৃতি জানালে তাকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা হয়। তার খাওয়া-দাওয়া বন্ধ করে দেয়া হয়। কেউ কাজ থেকে অব্যাহতি চাইলে তাকে কিনতে যে পরিমাণ ডলার ব্যয় হয়েছে, তার দ্বিগুণ ফেরত দিতে হয়। তখন ভুক্তভোগী বাধ্য হয়ে বাংলাদেশ থেকে টাকা সংগ্রহ করে ওই প্রতিষ্ঠানে দিয়ে কম্বোডিয়া প্রবাসী বাংলাদেশি দালালদের আশ্রয়ে যান। দালালরা আবারো তাদের আরেকটি সাইবার প্রতারক কোম্পানিতে বিক্রি করে দেন। কেউ দেশে ফিরে আসতে চাইলে দেশে ফেরত যাওয়ার শর্ত হিসেবে আরো গ্রাহক সংগ্রহ করে দেয়ার শর্তজুড়ে দেয়া হয়। তখন ভুক্তভোগী নিরুপায় হয়ে নিজে মুক্তি পাওয়ার জন্য তার পরিচিত অপর বাংলাদেশিদের কম্বোডিয়ায় আসতে প্ররোচিত করেন। তবে র‌্যাব ছাড়া আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অন্য কোনো সংস্থা বা প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় কলোম্বিয়ায় প্রবাসী বাংলাদেশিদের নির্যাতনের তথ্য জানে না।

প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করা হলে দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা বলেন, ‘এ বিষয়ে কোনো প্রবাসী আমাদের কাছে অভিযোগ করেননি। তারা হয়তো থানায় মামলা করতে পারে।’

তবে প্রবাসীরা বলছেন, প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ করতে হলে ম্যানপাওয়ার কার্ড লাগে। দালালরা কম্বোডিয়া থেকে দেশে ফেরার সময় ম্যানপাওয়ার কার্ড রেখে দেয়। তাই অভিযোগ করা যায় না।

পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম বিভাগের মধ্যে ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট মানবপাচারের বিষয়টি দেখে। সংশ্লিষ্ট বিভাগের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানান, এ বিষয়ে কোনো তথ্য নেই তাদের কাছে।

‘অধিকাংশ লোকজন (ভুক্তভোগী) নিজের আত্মীয়স্বজনসহ এলাকার পরিচিতদের মাধ্যমে কম্বোডিয়া যান এবং প্রতারিত হন। দেশে ফিরে এসে কেউ সমঝোতা করে ফেলেন, আবার কেউ ভয়ে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করেন না। এ কারণে অনেকে দিনের পর দিন অপরাধ করে পার পেয়ে যাচ্ছেন। আমরা চাই সবাই সচেতন হয়ে মামলা করুন, পুলিশকে সহযোগিতা করুন’, বলেন ওই কর্মকর্তা।

কম্বোডিয়ায় কতজন বাংলাদেশি সাইবার দাসত্বের শিকার তার সঠিক কোনো পরিসংখ্যান নেই। নির্যাতনের শিকার হয়ে অনেকই আহত হচ্ছেন। তবে কেউ মারা গেছে কিনা তার নিশ্চিত কোনো সূত্রে জানা যায়নি। কম্বোডিয়ার প্রভাবশালীদের সঙ্গে চাইনিজ এসব প্রতিষ্ঠানের সম্পর্ক থাকায় মৃত্যুর পর দুর্ঘটনাজনিত বা আত্মহত্যা হিসেবে দেখানো হয়। হত্যার ঘটনা আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হয় না।

কম্বোডিয়ায় বাংলাদেশের কোনো দূতাবাস নেই। তবে দেশটির প্রতিবেশী থাইল্যান্ডে বাংলাদেশ দূতাবাস কূটনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনা করছে। দূতাবাসের প্রথম সচিব (শ্রমকল্যাণ উইং) মো. ফাহাদ পারভেজ বসুনিয়া বলেন, কম্বোডিয়ায় এসে যারা বিপদে পড়েছেন, অনেকেই আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। আমরা তাদের আউট পাসে দেশে ফেরানোর ব্যবস্থা করছি। তবে তারা কম্বোডিয়ায় আসার আগে খোঁজ নিয়ে এলে এমন পরিস্থিতিতে পড়তো না। বিপদে পড়ে তারপর দূতাবাসে যোগাযোগ করছেন।


আরও খবর



অর্ধেকের বেশি শিশুর জন্ম অস্ত্রোপচারে, পল্লীর তুলনায় এগিয়ে শহর

প্রকাশিত:সোমবার ২৫ মার্চ ২০২৪ | হালনাগাদ:সোমবার ২৫ মার্চ ২০২৪ | অনলাইন সংস্করণ
স্বাস্থ্য ডেস্ক

Image

পল্লী এলাকার তুলনায় শহরে অস্ত্রপচারের মাধ্যমে সন্তান জন্মদানের হার বেশি। এছাড়া সরকারি প্রতিষ্ঠানের চেয়ে বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে সন্তান জন্ম হয় বেশি। এমন তথ্য জানিয়েছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুারো (বিবিএস)। সম্প্রতি বিবিএসসের পক্ষ থেকে প্রকাশ করা হয়েছে বাংলাদেশ স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিসটিকস-২০২৩।

পরিসংখ্যানে দেখা যায়, বাংলাদেশে অস্ত্রপচারের মাধ্যমে বেড়েছে সন্তান জন্মদানের হার। দেশে স্বাভাবিকভাবে সন্তান জন্ম হয় ৪৯ দশমিক ৩ শতাংশ, যা ২০২২ সালে ছিলো ৫৮ দশমিক ৬ শতাংশ। আর অস্ত্রপচারের মাধ্যমে সন্তান জন্ম হয় ৫০ দশমিক ৭ শতাংশ, যা ২০২২ সালে ছিলো ৪১ দশমিক ৪ শতাংশ।

পরিসংখ্যানে অনুযায়ী, পল্লী এলাকার চেয়ে শহর এলাকায় অস্ত্রপচারের মাধ্যমে সন্তান জন্ম হয় বেশি। ২০২২ সালের তুলনায় ২০২৩ সালে পল্লী এলাকায় স্বাভাবিকভাবে সন্তান জন্মদানের হার কমেছে। ২০২২ সালে ছিলো ৬১ দশমিক ৫ শতাংশ আর ২০২৩ সালে এই হার কমে হয়েছে ৫১ দশমিক ৬ শতাংশ। পক্ষান্তরে ২০২২ সালের তুলনায় বেড়েছে অস্ত্রপচারের হার। পল্লী এলাকায় ২০২২ সালে অস্ত্রপচারের মাধ্যমে সন্তান জন্ম হয়েছে ৩৮ দশমিক ৫ শতাংশ, ২০২৩ সালে বেড়ে হয়েছে ৪৮ দশমিক ৪ শতাংশ।

পল্লী এলাকার চেয়ে শহর এলাকার চিত্র ঠিক বিপরীত। শহর এলাকায় ২০২২ সালে স্বাভাবিকভাবে সন্তান জন্ম হয়েছে ৪৭ শতাংশ। ২০২৩ সালে এই হার কমে হয়েছে ৪০ দশমিক ৯ শতাংশ। শহর এলাকায় ২০২২ সালে যেখানে অস্ত্রপচারের মাধ্যমে সন্তান জন্ম হয়েছে ৫৩ শতাংশ, ২০২৩ সালে বেড়ে এই হার হয়েছে ৫৯ দশমিক ১ শতাংশ।

পরিসংখ্যান বলছে, দেশে বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে সন্তান জন্মদানের হার বেশি। ২০২২ সালে ছিলো ৩২ দশমিক ৯৩ শতাংশ, ২০২৩ সালে বেড়ে এই হার হয়েছে ৩৯ দশমিক ৭৬ শতাংশ। এর বিপরীতে সরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে সন্তান জন্ম হয় ২৬ দশমিক ৪৩ শতাংশ, ২০২২ সালে এই হার ছিলো ২৪ দশমিক ৩ শতাংশ। আর বাসাবাড়িতে সন্তান জন্মদানের হার ২০২২ সালের চেয়ে কমে হয়েছে ৩২ দশমিক ৭৭ শতাংশ।

পল্লী এবং শহর এলাকাতেও বেড়েছে বেসরকারি স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠানে সন্তান জন্মদানের হার। পল্লী এলাকায় এই হার ৩৮ দশমিক ৮৪ শতাংশ আর শহর এলাকায় এই হার ৪৩ দশমিক ২৭ শতাংশ। এছাড়া এই পরিসংখ্যান অনুযায়ি দেশে ২০২২ সালের তুলনায় ২০২৩ সালে বেড়েছে জীবিত সন্তান জন্মদানের হার। ২০২২ সালে এই হার ছিলো ৮৭ দশমিক ০৫ শতাংশ, ২০২৩ সালে বেড়ে হয়েছে ৮৮ দশমিক ৭৯ শতাংশ।


আরও খবর
বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস আজ

রবিবার ০৭ এপ্রিল ২০২৪




আমিরাতে পৌঁছাতে এক সপ্তাহ লাগতে পারে এমভি আবদুল্লাহর

প্রকাশিত:সোমবার ১৫ এপ্রিল ২০২৪ | হালনাগাদ:সোমবার ১৫ এপ্রিল ২০২৪ | অনলাইন সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদক

Image

সোমালিয়ার জলদস্যুদের কবল থেকে গতকাল ভোরে মুক্তি পেয়ে এখন আরব আমিরাতের দিকে যাচ্ছে বাংলাদেশের পতাকাবাহী জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ।

সোমবার (১৫ এপ্রিল) দুপুর পর্যন্ত জাহাজটি সোমালিয়া উপকূল থেকে ২০০ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত দূরত্ব অতিক্রম করতে পেরেছে।

এখনো উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ নৌ সীমানার মধ্যে থাকায় জাহাজটির জন্য সতর্কতামূলক নিরাপত্তা ব্যবস্থা বহাল আছে। ইতালির নৌ-বাহিনীর একটি ফ্রিগেট জাহাজটিকে পাহারা দিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।

জাহাজটির মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান কেএসআরএম গ্রুপের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মেহেরুল করিম এসব তথ্য জানান।

তিনি বলেন, জাহাজটি এখনো উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা দিয়ে যাচ্ছে। এ কারণে বেশ কিছু সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

জাহাজের রেলিংয়ে কাঁটাতার দেওয়া হয়েছে, ডেকে উচ্চ চাপের ফায়ার হোস, সিটাডেল, জরুরি ফায়ার পাম্প, সাউন্ড সিগন্যাল প্রস্তুত আছে। এছাড়া, নাবিকদের থাকার জায়গা এবং ইঞ্জিন রুমের দরজা ও ঢোকার পথ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।

জাহাজের সবচেয়ে সুরক্ষিত জায়গা হিসেবে সিটাডেল প্রস্তুত করা হয়। এর মোটা স্টিলের পাত ভেদ করে ঢোকা প্রায় অসম্ভব। নাবিকরা এর ভেতরে প্রবেশ করে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত নিজেদের সুরক্ষিত করে রাখতে পারেন। জাহাজটি বর্তমানে প্রতি ঘণ্টায় ৮ নটিক্যাল মাইল গতিতে চলছে।

মেহেরুল করিম বলেন, আমিরাতের আল হামরিয়াহ বন্দরে পৌঁছাতে জাহাজটির আরও এক সপ্তাহ সময় লাগবে।

গত ১২ মার্চ ভারত মহাসাগরে সোমালি জলদস্যুর কবলে পড়ে এমভি আবদুল্লাহ। মোজাম্বিক থেকে কয়লা পরিবহন করে জাহাজটি আমিরাত যাচ্ছিল। ৩২ দিন জিম্মি থাকার পর রবিবার ভোরে ২৩ নাবিকসহ মুক্তি পায় এমভি আবদুল্লাহ।


আরও খবর



গরম বেড়ে শুরু হতে পারে তাপপ্রবাহ

প্রকাশিত:বুধবার ২৭ মার্চ ২০২৪ | হালনাগাদ:বুধবার ২৭ মার্চ ২০২৪ | অনলাইন সংস্করণ
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক

Image

ঝড়-বৃষ্টির প্রবণতা অনেকটাই কমে গেছে। বুধবার দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে দিনের তাপমাত্রা বেড়ে মৃদু তাপপ্রবাহ শুরু হতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। তবে আজও দেশের ৫ বিভাগের দুএক জায়গায় হালকা বৃষ্টি হতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া বিভাগ।

গত ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশেই দিন ও রাতের তাপমাত্রা কিছুটা বেড়েছে। বুধবার সকালে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছিল সিলেটে। ঢাকায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ২৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

অন্যদিকে, মঙ্গলবার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছিল রাঙ্গামাটিতে। বুধবার সকাল থেকে ঢাকার আকাশ কিছুটা মেঘলা। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বাড়ছে ভ্যাপসা গরম।

বুধবার সকাল ৯টা থেকে আগামী ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে আবহাওয়াবিদ মো. ওমর ফারুক জানান, রংপুর, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের দু'এক জায়গায় অস্থায়ী দমকা বা ঝোড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে।

এ সময়ে সারাদেশে দিনের তাপমাত্রা ১ থেকে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়তে পারে এবং রাতের তাপমাত্রা সামান্য বাড়তে পারে বলেও জানান এ আবহাওয়াবিদ।

আবহাওয়া অধিদপ্তর পূর্বাভাসে জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার কুমিল্লা ও নোয়াখালী অঞ্চলসহ ঢাকা, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের দুএক জায়গায় অস্থায়ী দমকা বা ঝোড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সারাদেশে দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে এবং রাতের তাপমাত্রা সামান্য বাড়তে পারে।

শুক্রবার ঢাকা, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের দুএক জায়গায় অস্থায়ী দমকা বা ঝোড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সারাদেশে দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে এবং রাতের তাপমাত্রা সামান্য বাড়তে পারে। পরবর্তী পাঁচদিনে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে বলেও জানিয়েছে আবহাওয়া বিভাগ।


আরও খবর



ডেঙ্গু প্রতিরোধে জোরালো উদ্যোগ হাতে নিয়েছে সরকার: স্বাস্থ্যমন্ত্রী

প্রকাশিত:শনিবার ১৩ এপ্রিল ২০২৪ | হালনাগাদ:শনিবার ১৩ এপ্রিল ২০২৪ | অনলাইন সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদক

Image

ডেঙ্গু প্রতিরোধে সরকার জোরালো ভূমিকা নিয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে মন্ত্রণালয়ের মিটিং হয়েছে। ডেঙ্গু প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় ওষুধ ও চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে কাজ চলছে।

শনিবার (১৩ এপ্রিল) সকালে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ কথা বলেন মন্ত্রী।

ডা. সামন্ত লাল সেন বলেন, কেউ ডেঙ্গু আক্রান্ত হলে চিকিৎসা নেওয়া জরুরি। চিকিৎসা সামগ্রী ও ওষুধের ঘাটতি যেন না থাকে, তা নিয়ে আরও কাজ করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, ডেঙ্গু প্রতিরোধে এবার স্যালাইনের কোনো অভাব হবে না। পাশাপাশি কেউ যাতে বিনা চিকিৎসায় মারা না যায়, সেদিকে খেয়াল রাখবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল জনবল সংকটে ভুগছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে জনবল সংকটের সমস্যা অতি দ্রুত সমাধানের জন্য কাজ করা হবে। এতে ঢাকা মেডিকেলসহ অন্যান্য হাসপাতালের চাপ কমবে।


আরও খবর



আজ পহেলা বৈশাখ, বর্ণিল উৎসবে মাতোয়ারা সারাদেশ

প্রকাশিত:রবিবার ১৪ এপ্রিল ২০২৪ | হালনাগাদ:রবিবার ১৪ এপ্রিল ২০২৪ | অনলাইন সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদক

Image

আজ পহেলা বৈশাখ। পুরোনোকে বিদায় দিয়ে বাংলা বর্ষপঞ্জিতে যুক্ত হলো নতুন বর্ষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ। সব সঙ্কীর্ণতা, কুপমণ্ডকতা পরিহার করে উদারনৈতিক জীবন-ব্যবস্থা গড়তে উদ্বুদ্ধ করে পহেলা বৈশাখ। মনের ভেতরের সব ক্লেদ, জীর্ণতা দূর করে নতুন উদ্যমে বাঁচার অনুপ্রেরণা জোগায়।

পহেলা বৈশাখ বাঙালির সার্বজনীন লোকজ উৎসব। এদিন আনন্দঘন পরিবেশে বরণ করে নেয়া হয় বাংলা নতুন বছরকে। কল্যাণ ও নতুন জীবনের প্রতীক হলো নববর্ষ। অতীতের ভুলত্রুটি ও ব্যর্থতার গ্লানি ভুলে নতুন করে সুখ-শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনায় উদযাপিত হয় নববর্ষ।

দিবসটিকে ঘিরে আজ বর্ণিল উৎসবে মাতবে সারাদেশ। ভোরের প্রথম আলো রাঙিয়ে দেবে নতুন স্বপ্ন, প্রত্যাশা আর সম্ভাবনাকে। রাজধানী ও দেশজুড়ে থাকবে বর্ষবরণের নানা আয়োজন। বাংলা নববর্ষ ১৪৩১ জাঁকজমকপূর্ণভাবে উদযাপনের লক্ষ্যে জাতীয় পর্যায়ে নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে সরকার। দিনটি সরকারি ছুটির দিন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ মঙ্গল শোভাযাত্রা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করবে। ছায়ানট রমনা বটমূলে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করবে।

এছাড়া বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন যথাযোগ্য মর্যাদায় বাংলা নববর্ষ উদযাপন করবে। বাংলা নববর্ষের অনুষ্ঠান আবশ্যিকভাবে জাতীয় সংগীত এবং এসো হে বৈশাখ গান পরিবেশনের মাধ্যমে শুরু হবে। বাংলা নববর্ষের তাৎপর্য, মঙ্গল শোভাযাত্রার ইতিহাস ও ইউনেস্কো একে বিশ্ব সংস্কৃতির ঐতিহ্য হিসেবে অন্তর্ভুক্তির বিষয়টি তুলে ধরে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং বাংলা একাডেমির উদ্যোগে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে।

এদিকে, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করবে। বাংলা নববর্ষে সব কারাগার, হাসপাতাল ও শিশু পরিবারে (এতিমখানা) উন্নতমানের ঐতিহ্যবাহী বাঙালি খাবারের আয়োজন করা হবে। একসময় নববর্ষ উদযাপিত হতো আর্তব বা ঋতুধর্মী উৎসব হিসেবে। তখন এর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল কৃষির। কারণ কৃষিকাজ ছিল ঋতুনির্ভর। পরে কৃষিকাজ ও খাজনা আদায়ের সুবিধার জন্য মোঘল সম্রাট আকবরের সময়ে বাংলা সন গণনা শুরু হয়। হিজরি চান্দ্রসন ও বাংলা সৌর সনের ওপর ভিত্তি করে প্রবর্তিত হয় নতুন এই সন।

অতীতে বাংলা নববর্ষের মূল উৎসব ছিল হালখাতা। এটি পুরোপুরিই একটি অর্থনৈতিক ব্যাপার। গ্রামে-গঞ্জে-নগরে ব্যবসায়ীরা নববর্ষের প্রারম্ভে পুরোনো হিসাব-নিকাশ সম্পন্ন করে নতুন খাতা খুলতেন। এ উপলক্ষে তারা নতুন-পুরাতন খদ্দেরদের আমন্ত্রণ জানিয়ে মিষ্টি বিতরণ এবং নতুনভাবে তাদের সঙ্গে ব্যবসায়িক যোগসূত্র স্থাপন করতেন। চিরাচরিত এই অনুষ্ঠান আজও উদযাপিত হয়।

মূলত, ১৫৫৬ সালে কার্যকর হওয়া বাংলা সন প্রথমদিকে পরিচিত ছিল ফসলি নামে। পরে তা পরিচিত হয় বঙ্গাব্দ নামে। কৃষিভিত্তিক গ্রামীণ সমাজের সঙ্গে বাংলা বর্ষের ইতিহাস জড়িয়ে রয়েছে। তবে এর সঙ্গে রাজনৈতিক ইতিহাসেরও সংযোগ ঘটেছে। পাকিস্তান শাসনামলে বাঙালি জাতীয়তাবাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি হয় বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের। আর ষাটের দশকের শেষে তা বিশেষ মাত্রা পায় রমনা বটমূলে ছায়ানটের আয়োজনের মাধ্যমে। এসময় ঢাকায় নাগরিক পর্যায়ে ছায়ানটের উদ্যোগে সীমিত আকারে বর্ষবরণ শুরু হয়।


আরও খবর