কক্সবাজারে গত কয়েকদিনের ব্যবধানে মাছ-ডিম সবজিসহ বেশকিছুর দাম বেড়েছে। মুরগির দাম স্থিতিশীল থাকলেও বেড়েছে পেঁয়াজের দাম। যদিও আগে থেকে চড়া ছিল মাছের দাম। তবে গত দুই সপ্তাহ ধরে বাজারে কমেছিল মুরগি ও সবজির দর। এক সপ্তাহের ব্যবধানে এসব ভোগ্যপণ্যের দাম কেজিতে ২০ থেকে ৫০ টাকা বাড়তে দেখা যায়।
ভোগ্যপণ্যের এমন ঊর্ধ্বমুখী দামের জন্য ব্যবসায়ীরা বলছেন, চট্টগ্রামসহ জেলার বিভিন্ন স্থানে ভয়াবহ বন্যার সৃষ্টি হয়েছে। এতে শহরের সাথে জেলা উপজেলাগুলোর যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। এছাড়া সবজি ক্ষেতের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ৮০ শতাংশ সবজি ক্ষেত নষ্ট হয়ে গেছে। এ কারণে সবজিসহ বিভিন্ন ভোগ্যপণ্যের দাম বেড়ে গেছে।
এদিকে হঠাৎ পণ্যের দাম বাড়ায় ক্ষুব্ধ ক্রেতারা বলছেন, ‘প্রতিটি পণ্যের দাম কেজিতে ২০ থেকে ৪০ টাকা বেড়েছে। মাসের প্রথম সপ্তাহে মাসিক বাজার করা হয়। কিন্তু অতি বৃষ্টির কারণে ঘর থেকে বের হওয়া সম্ভব হয়নি। এখন বাজারে এসে দেকে সবকিছুর দাম বাড়তি। এতে আয়ের সাথে ব্যয়ের হিসেব মেলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাঁদের'।
সোমবার (১৪ আগস্ট) শহরের বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, বাজারে ডিম প্রতি ডজন ১৬০ থেকে ১৬৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যা পাঁচ দিন আগেও বিক্রি হয়েছিল ১৪০-১৪৫ টাকায়। মুরগির দাম ১৭০ থেকে বেড়ে ১৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সোনালি মুরগি কেজিতে ২০ টাকা দাম বেড়ে ৩২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যা গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছিল ৩০০ টাকায়। তবে অপরিবর্তিত রয়েছে লেয়ার মুরগির দাম। এ মুরগি এখনো ৩৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
বড় বাজারের নিঝুম পোল্ট্রি ফার্মের স্বত্বাধিকারী মো: কিসমত উল্লাহ বলেন, ‘টানা কয়েক দিনের বৃষ্টির কারণে, উপজেলাগুলো থেকে গাড়ি আসতে পারছে না। এতে শহরে মুরগি ও ডিমের সংকট দেখা দেয়।
জেলা পোলট্রি ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আবদুল হক জানান, ‘অতিবৃষ্টির কারণে জেলায় অনেক খামারের ক্ষতি হয়েছে। সড়কে ভাঙ্গণ ও জমে থাকা পানির কারণে গাড়ি আসা যাওয়া করতে পারেনি। এছাড়া মানুষ বৃষ্টির কারণে ভারী কিছু না করে ডিম, মুরগি বেশি কিনেছেন। তাই দাম বেড়েছে। সরবরাহ স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত দাম এমনই থাকবে আগামী কয়েক দিন। মুরগির দাম আরো বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
এদিকে ৫০ টাকার নিচে কোনো সবজি পাওয়া যাচ্ছে না। বরবটি ১০০ টাকা, পটল ৮০ টাকা, চিচিঙ্গা ৫০ টাকা, কচুর মুখী ৮০ টাকা, দেশি আলু ৭০ টাকা, ললিতা আলু ৪০ টাকা, লাউ প্রতি কেজি ৪০ টাকা, মিষ্টিকুমড়া ৫০ টাকা, বেগুন ৬০ টাকা, গাজর ১৪০ টাকা, কাঁকরোল ৬০ টাকা, মুলা ১০০ টাকা, তিত করলা ৮০ টাকা, ঝিঙ্গা ৬০, কচুর লতি ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কাঁচা মরিচ ২৭০ থেকে ২৮০ টাকায়। টমেটো কেজিতে দাম বেড়েছে ৩০ থেকে ৪০ টাকা। দাম বেড়ে এখন বিক্রি হচ্ছে ২৭০ থেকে ২৮০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা যায়। এসব সবজি মান ভেদে ৪০ থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত কেজিতে বেড়েছে।
এছাড়া আদা, রসুন ও সয়াবিন তেলের দাম এখনো অপরিবর্তিত রয়েছে। তবে কেজিতে ১০ থেকে ১৫ টাকা দাম বেড়েছে পেঁয়াজের। ৪০ থেকে ৪৫ টাকা দামের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকায়।
এদিকে মাছের দাম আগে থেকেই চড়া ছিল। গতকাল সেই দামের উপর আবারো বেড়েছে। রুই মাছ আকারভেদে বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ থেকে ৫০০ টাকায়, কাতল ৩৮০ থেকে ৫৫০ টাকায়, মৃগেল আকারভেদে ২৫০ থেকে ৩৫০ টাকায়, তেলাপিয়া আকার ভেদে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকায়, পাঙ্গাস ১৬০ থেকে ১৮০ টাকা দাম বেড়েছে। এসব মাছে কেজিতে ৩০ থেকে ৫০ টাকা দাম বেড়েছে। এদিকে সামুদ্রিক মাছের মধ্যে সব চেয়ে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে ইলিশ। আকারভেদে ইলিশের কেজি ৭০০ থেকে ২৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এক কেজির উপরে ইলিশের দাম ২৫০০ টাকা। ৭০০ গ্রাম ইলিশের দাম ১২০০ টাকা, ৮০০-৯০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের দাম চাওয়া হচ্ছে ১৪০০ টাকা। আবার লইট্যা ১৮০- ২০০ টাকা, সামুদ্রিক বাইলা আকার ভেদে ৪০০ থেকে ৬০০ টাকার, রূপচাঁদা ৮০০-১২০০ টাকায়, পোপা ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকায় এবং চিংড়ি আকারভেদে (দেশি এবং সামুদ্রিক) ৬০০ থেকে ১২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
ক্রেতা সোনা মিয়া বলেন, বাজারে সবচেয়ে মাছের দাম বেশি। সাগরে মিশালো মাছের দাম সর্বনিম্ন ৩০০ টাকা। বেতন পেয়ে বাজারে আসলাম। গত কয়েকদিনের ব্যবধানে বাড়তি ১২০০ টাকা খরচ হয়েছে।
বাজার করতে আসা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী মো. হোসাইন বলেন, হঠাৎ করে ব্যবসায়ীরা জলাবদ্ধতার অযুহাত দেখিয়ে সব পণ্যের দাম বাড়তি নিচ্ছে। নানা ইস্যুতে ব্যবসায়ীরা দাম বাড়াচ্ছে। তাঁদের তদারকি করার কি কেউ নেই?
মজিবুর রহমান নামে আরেক ক্রেতা বলেন, ব্যবসায়িক সিন্ডিকেটের দখলে নিত্যপণ্যের বাজার। জলাবদ্ধতা ও সরবরাহ সংকট একটি অজুহাত মাত্র। ব্যবসায়ীরা কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে ক্রেতাদের কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে। মানুষ কষ্ট পাচ্ছে প্রশাসন কি করছে?
সমিতি পাড়া বাজারের সবজি বিক্রেতা মনু বলেন, বৃষ্টির কারণে জমির ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। আড়ৎদার থেকে প্রতিটি সবজি কেজিতে ২০-৩০ টাকা বাড়তি গুনতে হয়েছে। আরও দাম বাড়তে পারে বলে জানান তিনি।
এ ব্যাপারে জেলা মার্কেটিং অফিসার জানান, খোঁজ খবর নিয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে।