সিলেট নগরীর ঐতিহ্যবাহী কিনব্রিজ সংস্কারে প্রায় তিন কোটি টাকা বরাদ্দ হলেও দরপত্র প্রক্রিয়ায় বছর পার করেছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। ইতোমধ্যে বৃষ্টিপাত শুরু হওয়ায় সুরমা নদীতে পানি বেড়েছে। তাই বর্ষা মৌসুমে ব্রিজের সংস্কার কাজ শুরুর সম্ভাবনা দেখছেন না সংশ্নিষ্টরা। ব্রিজটি কবে পুরোদমে যানবাহন চলাচলের উপযুক্ত হবে, তা নিয়ে চরম অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। লোহার তৈরি ব্রিজটি চার দশকেরও বেশি সময় ধরে সংস্কারের অভাবে ঝুঁকিপূর্ণ। রেলওয়ে, সড়ক ও জনপথ বিভাগ এবং সিলেট সিটি করপোরেশনের ত্রিমুখী রশি টানাটানিতে সংস্কারের উদ্যোগ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
২০১৯ সালের ১ সেপ্টেম্বর কিনব্রিজ দিয়ে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয় সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক)। সওজের আওতাধীন হলেও সংস্কারের অভাবে ঝুঁকিপূর্ণ বিবেচনায় ব্রিজটি শুধু পায়ে হাঁটার জন্য উন্মুক্ত রাখার পক্ষে অবস্থান নেয় সিসিক। এরপর সুরমা নদীর দক্ষিণ অংশের মানুষের আন্দোলনের মুখে এই সিদ্ধান্ত থেকে সিসিক সরে এলেও ব্রিজ দিয়ে পুরোদমে যানবাহন চলাচল সম্ভব হয়নি। বর্তমানে অটোরিকশা, রিকশা, ভ্যান, ঠেলাগাড়ি, মোটরসাইকেল, বাইসাইকেলের মতো হালকা যান চলাচলের অনুমতি রয়েছে। এই অবস্থায় বাকি যানবাহনগুলোকে শাহজালাল ও কাজিরবাজার ব্রিজ দিয়ে খানিকটা ঘুরে নগরীতে আসা-যাওয়া করতে হয়। সময় বাঁচাতে অনেকে নজরদারি এড়িয়ে ঝুঁকি নিয়ে কিনব্রিজ দিয়ে প্রাইভেটকার-মাইক্রোবাসের মতো যানবাহনে আসা-যাওয়া করেন।
প্রতিদিন সুরমা নদীর উভয় পাড়ের হাজারো মানুষ নগরীর ভেতর নির্মিত তিনটি ব্রিজ ব্যবহার করেন। নদীর দক্ষিণ পাড়ে রেলওয়ে স্টেশন, বাস টার্মিনালসহ সরকারি-বেসরকারি গুরুত্বপূর্ণ অফিস রয়েছে। এ ছাড়া স্কুল-কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, চাকরিজীবী, ব্যবসায়ীরা প্রতিদিন উভয় পাড়ে আসা-যাওয়া করেন। শাহজালাল ও কাজিরবাজার ব্রিজ নগরীর দুই প্রান্তে। দ্রুত আসা-যাওয়ার জন্য কিনব্রিজ সবার কাছে আকর্ষণীয়। বিশেষ করে কিনব্রিজের দক্ষিণ প্রান্তে কয়েকশ গজের ভেতরে রেলস্টেশন ও বাস টার্মিনাল। অন্যদিকে, উত্তর পাড়ে ব্রিজ থেকে নামার পর আদালত, রেজিস্ট্রি অফিস, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, পুলিশ সুপারের কার্যালয় কয়েকশ গজের মধ্যে হওয়ায় কিনব্রিজ পুরোদমে চালু থাকা জরুরি।
সিলেটে সুরমা নদী, কিনব্রিজ, আলী আমজাদের ঘড়ি ঘিরে পর্যটকদের আনাগোনা থাকে। তাই পুরো এলাকা পর্যটকবান্ধব হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনার অংশ হিসেবে যান চলাচল কমিয়ে সৌন্দর্যবর্ধনের উদ্যোগ নেওয়া হয় বলে জানান সিসিক কর্মকর্তারা। এর অংশ হিসেবে ব্রিজের দুই প্রান্তে লোহার বেষ্টনী দিয়ে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। তখন সিসিকের পরিকল্পনায় সওজের সায় ছিল বলে দাবি করা হয়। তবে ব্রিজ দিয়ে যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়ার পর নদীর দক্ষিণ পাড়ের বাসিন্দারা বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। কিছুদিন পর লোহার বেষ্টনী ভেঙে রিকশা চলাচল শুরু হয়; এক পর্যায়ে পুরো বেষ্টনীই গায়েব হয়ে যায়। সিসিকের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান জানিয়েছেন, সংস্কার কাজ শেষ হলে ব্রিজ দিয়ে যান চলাচলের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে।
২০২১ সালের মার্চ মাসে ব্রিজ মেরামতের জন্য ২ কোটি ৮১ লাখ বরাদ্দ দেয় মন্ত্রণালয়। অতীতে রেলওয়ে ব্রিজ নির্মাণ ও সংস্কার কাজ করায় এবারও তাদের মাধ্যমে সংস্কারের সিদ্ধান্ত হয় বলে জানান সওজ সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি বলেন, অর্থ বরাদ্দ পাওয়ার পরপর তা রেলওয়েকে হস্তান্তর করা হয়। এরপর কয়েকবার তাগাদা দেওয়া হলেও তারা কাজ শুরু করতে পারেনি।
গত অর্থবছরে সংস্কার কাজের জন্য বরাদ্দ পেলেও সুরমা নদীতে তখন পানি বেশি থাকাসহ নানা কারণে সংস্কার কাজ শুরু করা সম্ভব হয়নি বলে দাবি করেন রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের প্রকৌশলী (সেতু) আবরার হোসেন। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। তবে এখনও কার্যাদেশ দেওয়া হয়নি। অচিরেই তা হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। এদিকে সুরমা নদীতে পানি বাড়তে থাকায় বর্ষা মৌসুমে ব্রিজের কাজ শুরু করতে সমস্যা হবে বলে রেলওয়ের সংশ্নিষ্টরা স্বীকার করেছেন।