
কেরানীগঞ্জের
চুনকুটিয়ার বাসিন্দা মোঃ আজগর আলী। সাত তলা বাড়ির মালিক তিনি। অনেক বছর আগে এখানে বাড়ি
করেছেন। বাড়ির প্রতিটি ফ্ল্যাটে তিতাস গ্যাসের
দুই চুলার সংযোগ আছে। তবু প্রতিটি ফ্ল্যাটের বাসিন্দাদের আলাদা সিলিন্ডার কিনতে হয়।
দিনের বেশির ভাগ সময় বাসায় গ্যাস থাকে না। মধ্যরাতে অল্প গ্যাস পাওয়া যায়। এখানে এ
সংকট দীর্ঘদিনের।
শুধু চুনকুটিয়ার বাসিন্দা মোঃ আজগর আলীর বাড়ি নয়, ঢাকার অধিকাংশ এলাকায়ই গ্যাসের কম-বেশি সংকট রয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে
জানা গেছে, দেশে ২০ থেকে ৩০ বছর আগের তুলনায় বাসা বাড়িতে রান্নার গ্যাসের চাহিদা কয়েকগুণ
বেড়েছে। সেই সঙ্গে যোগ হয়েছে শিল্প-কারখানার চাহিদা। এখন চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম
থাকায় সংকট দিন দিন প্রকট হচ্ছে।
কেরানীগঞ্জের
পানগাঁও থেকে হযরতপুর পর্যন্ত ২৭ কিলোমিটার জুড়ে ৭০ এলাকায় তিন মাস ধরে তীব্র গ্যাস
সংকটে হাজার হাজার গ্রাহক চরম বিপাকে। বেশি ভোগান্তির শিকার নিম্ন আয়ের মানুষ। তিতাস
গ্যাসের ভুক্তভোগী গ্রাহকদের অভিযোগ, দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার হাসনাবাদ, ইকুরিয়া, মীরেরবাগ,
খেজুরবাগ, চর কালীগঞ্জ, কালীগঞ্জ, আমিন পাড়া, কৈবর্ত পাড়া, চুনকুটিয়া, হিজল তলা, শুভাঢ্যা,
আগানগর ও কেরানীগঞ্জ মডেল থানার জিঞ্জিরা চড়াইল, ডাকপাড়া কালিন্দী, নেকরোজবাগ ও মান্দাইলসহ
৭০ এলাকায় তীব্র গ্যাস সংকট চলছে। গ্যাস ব্যবহার না করেই মাসের পর মাস বিল পরিশোধ করে
আসছে কয়েক হাজার পরিবার। তাদের রান্নাসহ দৈনন্দিন বিভিন্ন কাজে বাধ্য হয়ে এলপি গ্যাস
কিনতে হচ্ছে। কেউ-বা আবার অর্থ সংকটের কারণে লাকড়ির চুলা ব্যবহার করতে বাধ্য হচ্ছে।
এদিকে, গ্যাস
সংকট দেখা দেওয়ায় ব্যবসায়ীরা এলপি গ্যাসের বোতলের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। এ কারণে আরো ভোগান্তিতে
পড়েছে গ্রাহক। স্থানীয় দোকানগুলোতে ১ হাজার ২০০ টাকার গ্যাসের বোতল ব্যাপক চাহিদার
সুযোগ নিয়ে ১ হাজার ৫০০ টাকা করে গ্রাহকদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে। নেকরোজবাগ এলাকার
বাসিন্দা রাজিব আহমেদ বলেন, তারা গত দুই বছর ধরে গ্যাস সংকটে ভুগছেন। একাধিক বার অভিযোগ
দিয়েও কোনো সুফল পাননি। গ্যাস না ব্যবহার করেও প্রতি মাসে গ্যাস বিল জমা দিচ্ছেন। ইতিমধ্যে
উপজেলায় গ্যাস সংকটের কারণে মাঝারি ও ছোট আকারের ৮৫টি কারখানায় উত্পাদন ব্যাহত হয়েছে।
ফলে ঋণ পরিশোধ করতে পারছেন না। কেউ কেউ এরই মধ্যে দেউলিয়া হয়ে পড়েছেন।
এলাকার গ্রাহকদের
অভিযোগের ব্যাপারে ঢাকা দক্ষিণের কেরানীগঞ্জ সাবস্টেশন, জোন-৫ এর ম্যানেজার প্রকৌশলী
বিধান চন্দ্র মৈত্র জানান, কেরানীগঞ্জে প্রতিদিন গ্যাসের চাহিদা ১৪০ পিএসআইজি এবং সঞ্চালন
লাইনে গ্যাসের চাপ থাকা দরকার ১৫০ পিএসআইজি। শীত মৌসুমে সরবরাহ লাইনে গ্যাস জমাট বাঁধা
ও পলি পড়ার কারণে ১৪০ পিএসআইজি স্থলে মাত্র ১০ পিএসআইজি গ্যাস থাকায় চাহিদা অনুযায়ী
গ্রাহকরা গ্যাস পাচ্ছে না।
বর্তমান সংকট
কাটিয়ে কোনো প্রকার গ্যাসের চাপ বাড়ানো সম্ভব কি না এ বিষয় নিয়ে তিতাসের এমডির সঙ্গে
যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে ঢাকা-৩ আসনের স্থানীয়
সংসদ সদস্য, বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু জানান, কেরানীগঞ্জের
গ্যাস সংকট নিরসনে নারায়ণগঞ্জ থেকে মূল সঞ্চালন লাইনের ২০ ইঞ্চি ব্যাসের নতুন গ্যাসলাইন
পোস্তগোলা হয়ে রোহিতপুর বিসিক শিল্পনগরী পর্যন্ত কাজ সমাপ্তর পথে। শিগিগরই এ নতুন লাইন
চালু হলে এলাকার শিল্পকারখানাসহ আবাসিক গ্যাস সংকট আর থাকবে না।