
পরবর্তী প্রেসিডেন্ট
নির্বাচনে আজ রোববার (২৮ মে) আবারও ভোট দেবেন তুরস্কের নাগরিকেরা। দেশটির জনগণের ভোটে
যিনি বিজয়ী হবেন, আগামী পাঁচ বছর তুরস্ককে নেতৃত্ব দেবেন তিনি।
প্রথম পর্বের ভোটে এগিয়ে থাকলেও নির্বাচিত হতে পারেননি তুরস্কের বর্তমান প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান। তুরস্কের নির্বাচনের নিয়ম অনুযায়ী প্রেসিডেন্টকে ৫০ শতাংশ সমর্থন পেতে হয়। গত ১৪ মে অনুষ্ঠিত হয় তুরস্কের প্রথম দফা নির্বাচন। সেই নির্বাচনে এরদোয়ান পেয়েছিলেন ৪৯ দশমিক ৫২ শতাংশ ভোট। অল্পের জন্য ঝুলে যায় তার ভাগ্য।
আরও পড়ুন: শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের ৪৭তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ
অন্যদিকে, এই
নির্বাচনে এরদোয়ানের প্রধান প্রতিপক্ষ কিলিচদারোলু পেয়েছিলেন ৪৪ দশমিক ৮৮ শতাংশ ভোট।
ফলে দেশটির নিয়ম অনুযায়ী রোববার ফের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হবে।
ওই একই ভোটে
তৃতীয় স্থান পেয়েছিলেন সিনান ওগান। তিনি পেয়েছিলেন পাঁচ দশমিক ২০ ভাগ ভোট। গত ২২ মে
এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে দ্বিতীয় দফা ভোটে এরদোয়ানকে সমর্থনের কথা জানিয়েছেন তিনি।
প্রথম পর্বের ভোটের এরদোয়ানের দল পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে। ওগানের বক্তব্য, তার দল মনে করে, পার্লামেন্টে যে দল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে, প্রেসিডেন্টও সেই দল থেকেই হওয়া উচিত। আর তাই এরদোয়ানকে সমর্থনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি।
আরও পড়ুন: স্বর্ণপাম জিতলেন ফ্রান্সের নির্মাতা জাস্টিন ত্রিয়েত
সিনান ওগান
বলেন, রাজনৈতিক মতানৈক্য থাকতে পারে। কিন্তু সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে।
আর সে কারণেই আমি এরদোয়ানকে সমর্থন করছি।
তার যুক্তি,
এরদোয়ানের প্রধান প্রতিপক্ষ কিলিচদারোলু তেমনই এক বিরোধী জোটের প্রতিনিধি যে জোটকে
কোনোভাবেই সমর্থন করা যায় না।
এই সমর্থনের
কারণে এরদোয়ানের জয়কে সময়ের অপেক্ষা হিসেবে দেখছেন নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা। তবে অনেকের
দাবি, এটাই শেষ কথা নয়। ভোটের দিন দেশটির জনগণই সিদ্ধান্ত নেবেন, কার ওপর তারা আস্থা
রাখতে চান।
দেশটির ভোটাররা
এমন একটা সময়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন, যার তিন মাস আগেই ভয়ঙ্কর ভূমিকম্পে
তছনছ হয়ে গেছে দেশটি।
প্রথম পর্বে
বিভিন্ন জরিপে ধর্মনিরপেক্ষ রিপাবলিকান পিপলস পার্টির নেতা (সিএইচপি) কেমাল কিরিচদারোলুকে
বর্তমান প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের থেকে সামান্য এগিয়ে রেখেছিলেন। কিন্তু নিজের রাজনৈতিক
জীবনে প্রথমবারের মতো তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে পড়লেও এসব জরিপকে ভুল প্রমাণ করেছেন
এরদোয়ান।
এবার নানা হিসাবেই বেশ গুরুত্বপূর্ণ তুরস্ক নির্বাচন। শেষ পর্যন্ত যিনি জয়ী হবেন, তিনি শুধু ন্যাটোভুক্ত দেশটির প্রায় বিরাশি কোটি মানুষের নেতৃত্বই দেবেন না, বরং গভীর খাদে পড়া অর্থনীতিকে টেনে তোলা হবে বড় চ্যালেঞ্জ। পরবর্তী নির্বচনের ওপর নির্ভর করবে দেশটির পররাষ্ট্র নীতি।
আরও পড়ুন: সীমান্তে সংঘর্ষ: ইরানের নিহত ২, আফগানিস্তানের ১
তুরস্কের অর্থনীতিও
এই নির্বাচনের একটি বড় ফ্যাক্টর। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, গত বছর মূল্যস্ফীতি ৮৫ শতাংশে
পৌঁছেছে। গত এক দশকে ডলারের বিপরীতে দেশটির মুদ্রা লিরার মান তার মূল্যের এক দশমাংশে
নেমে এসেছে। বিপরীতে, প্রচলিত অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় ফিরে যাওয়া এবং দেশটির কেন্দ্রীয়
ব্যাংকের স্বাধীনতা পুনরুদ্ধারে জনগণের প্রতি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন কিলিচদারোলু।
এরদোয়ানের বিরুদ্ধে
সবচেয়ে বড় সমালোচনা হচ্ছে, তার সরকার ভিন্নমতকে স্তব্ধ করে দিয়েছেন, তাদের অধিকারকে
ক্ষুণ্ণ করছেন। এমনকি দেশের বিচার ব্যবস্থাকে কুক্ষিগত করে রেখেছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে
তার বিরুদ্ধে। যদিও এসব অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে তার প্রশাসন।
পররাষ্ট্র ইস্যুর
মধ্যে, এরদোয়ানের নেতৃত্বে মধ্যপ্রাচ্য এবং তার বাইরেও সামরিক শক্তিতেও কিছুটা পিছু
হটেছে তুরস্ক। অন্যদিকে, রাশিয়ার সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের কারণে পশ্চিমা বিশ্বেও
বিরাগভাজন হয়েছেন এরদোয়ান। ফলে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে
সম্পর্ক ক্রমশ অবনতির দিকে যাচ্ছে।