আজঃ শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪
শিরোনাম

কবিদের চোখে ‘বঙ্গবন্ধু’

প্রকাশিত:শুক্রবার ২৬ আগস্ট ২০২২ | হালনাগাদ:শুক্রবার ২৬ আগস্ট ২০২২ | অনলাইন সংস্করণ
দর্পণ নিউজ ডেস্ক

Image

শরীফ মাহমুদ চিশতী

কবি শামসুর রাহমানকে দিয়ে শুরু করা যাক। অভিশাপ কবিতায় তিনি বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের অভিশাপ দিয়েছেন। হত্যাকারীদের নেকড়ের চেয়েও অধিক হিংস্র হিসেবে উল্লেখ করে তাদেরকে বুলেট-বৃষ্টিতে একবারে হত্যা করতে চান না। তিনি চান ঘাতকরা চিরদিন গলিত মৃতদেহ নিয়ে বয়ে বেড়াবে। তারা যখন রুটি চাইবে তখন তাদের থাবা থেকে রুটি দশ হাত দূরে থাকবে, ওদের পানপাত্র কানায় কানায় ভরে উঠবে রক্তে। ওরা আকণ্ঠ বিষ্ঠায় ডুবে থাকবে; নিজের সন্তানও মুখ ফিরিয়ে নেবে; আশ্রয়ের আশায় ওরা যখন ঘুরবে, পৃথিবীর প্রতিটি কপাট ওদের জন্য বন্ধ থাকবে। এভাবে তিনি তাদেরকে তিলে তিলে দগ্ধ করে হত্যা করতে চান। কারণ, ওরা কবিকে জনক-জননীর রক্তে পা ডুবিয়ে এগিয়ে যেতে বাধ্য করেছে

আমাকে করেছে বাধ্য যারা

আমার জনক জননীর রক্তে পা ডুবিয়ে দ্রুত সিঁড়ি ভেঙে যেতে

ভাসতে নদীতে আর বনবাদাড়ে শয্যা পেতে নিতে

অভিশাপ দিচ্ছি আজ সেইখানে দজ্জালদের।

জসীমউদ্দীন বঙ্গবন্ধু কবিতায় মুজিবুর রহমান নামটিকে বিসুভিয়াসের অগ্নি উগারী বান-এর সঙ্গে তুলনা করেছেন। বিসুভিয়াসের অগ্ন্যুৎপাতের কারণে যেভাবে রোমান শহর পম্পেই এবং হারকিউলানিয়াম লাভার নিচে চাপা পড়ে ধ্বংস হয়েছে; তেমনি মুজিবুর রহমান নামটিও জ¦লন্ত-শিখা রূপ ধারণ করে চারদিকে ছড়িয়ে পড়েছে অন্যায়-অত্যাচারকে বিনাশ করার জন্য। পীড়িত মানুষের নিশ্বাস তাঁকে দিয়েছে চলার গতি, বুলেটে নিহত শহিদেরা তাঁর অঙ্গে দিয়েছে জ্যোতি, দুর্ভিক্ষের দানব তাঁর দেহে দিয়েছে শক্তি। তাঁর হুকুম পালন করার জন্য লাখ লাখ সেনা তাঁর সঙ্গে চলছে। বঙ্গবন্ধুর হুকুমে জীবনকে তুচ্ছ করে বাঙালী চলছে জয় ছিনিয়ে আনতে-

তোমার হুকুমে তুচ্ছ করিয়া শাসন ত্রাসন ভয়

আবারো বাঙালি মৃত্যুর পথে চলিছে আনিতে জয়।

আধুনিক বাংলা কাব্যে কবি সুফিয়া কামাল একটি উজ্জ্বল ও উচ্চকিত উচ্চারণ। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর কবি রচনা করেন ডাকিছে তোমারে কবিতা। জীবন-যৌবন কারাবাসে কাটিয়ে বাংলার মানুষকে তিনি মুক্ত করেছেন। অথচ মুষ্টিমেয় কিছু ঘাতকের হাতে তাঁকে প্রাণ দিতে হয়েছে। কিন্তু বাংলার মানুষের হৃদয়ে তাঁর আসন এখনও অম্লান। বাংলার মানুষ বঙ্গবন্ধুর ফিরে আসার অপেক্ষায় আছে। অসহায় মানুষ দেখছে বঙ্গবন্ধুর দেশে কারা যেন ঝেঁকে বসেছে। বঙ্গবন্ধু নেই বলে মূষিকের দল আবার বাংলায় হানা দিয়েছে। বেইমানগুলো বাংলাকে ছারখার করে ফেলেছে। বঙ্গবন্ধুর রক্তে রঞ্জিত এ মাটি তাঁকে আবার কেঁদে কেঁদে ডাকছে-

তোমার শোণিতে রাঙানো এ মাটি কাঁদিতেছে নিরবধি।

তাইত তোমারে ডাকে বাংলার কানন, গিরি ও নদী।

মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানে বন্দি ছিলেন। জান্তা-সরকার বিচার করে বঙ্গবন্ধুকে মৃত্যুদন্ডাদেশ দিলে বিশ^ নেতৃবৃন্দ তার প্রতিবাদে সোচ্চার হয়। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বরে হানাদার দখলদাররা পরাজিত হয়ে বঙ্গবন্ধুকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। বঙ্গবন্ধুর মুক্তির সংবাদে সারাদেশ আনন্দ ও উচ্ছ্বাসের জোয়ারে ভেসে যায়। নতুন দেশের নেতৃত্বকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের ভবিষ্যত নিয়ে যে অনিশ্চয়তার কালোমেঘ জমে তা দূর হয় বঙ্গবন্ধুর মুক্তিতে। উচ্ছ্বসিত জনগণ অপেক্ষায় থাকেন বঙ্গবন্ধুর ফেরার প্রহর গুণে। বঙ্গবন্ধুর ফিরে আসার সংবাদে কবি সিকান্দার আবু জাফর রচনা করেন ফিরে আসছেন শেখ মুজিব কবিতা।

সাড়ে সাত কোটি বাঙালির কান্নার পাথরে গড়া

সুমসৃণ পথে ফিরে আসছেন তিনি

ফিরে আসছেন বঙ্গ-ভারতের

সম্মিলিত রক্তস্রোত মহাপুণ্য পথে

বাংলাদেশের মরণ-বিজয়ী মুক্তিসেনানী।

১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু লন্ডন হয়ে বিজয়ীর বেশে মুক্ত স্বদেশে ফিরে আসেন। সর্বস্তরের জনতা বঙ্গবন্ধুকে বীরোচিত অর্ভ্যথনা জানায়। ১০ জানুয়ারি গার্ডিয়ান পত্রিকার সম্পাদকীয়তে বলা হয়েছিল, শেখ মুজিব ঢাকা বিমানবন্দরে পদার্পণ করা মাত্র নতুন প্রজাতন্ত্র এক সুদৃঢ় বাস্তবতা লাভ করে।

পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে যুগে-যুগে অনেক বিপ্লব হয়েছে। জাতির কান্ডারি রূপে নেতৃত্ব দিয়ে তাঁরা স্মরণীয় হয়ে আছেন। বাঙালীর বুকে স্বাধীনতার বীজমন্ত্র পুঁতে দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। একটি নিরস্ত্র জাতির মধ্যে যে গণঅভ্যুত্থান তিনি সৃষ্টি করলেন, তা তুলনারহিত। রণেশ দাশগুপ্ত জাগরূক কবিতায় বাঙালী জাতির কা-ারি হিসেবে বঙ্গবন্ধু কীভাবে নেতৃত্ব দিয়ে বাংলাদেশকে মুক্ত করেছেন সে বিষয়ে তুলে ধরেছেন

সে তাগিদই নিয়ে জাগরূক কান্ডারিরা দেশে-দেশান্তরে

একান্তভাবে সাম্প্রতিক শহিদেরা লুমুম্বারা জাগরূক

যেমন জাগরূক সালভাদর আলেন্দে চিলিতে

ওলাফ পালমে সুইডেনে

সামোয়া মাচেল মোজাম্বিকে

বাংলাদেশে শেখ মুজিবুর।

বাঙালীর কান্না-হাসি, দুঃখ-বিলাস সবকিছুতেই বঙ্গবন্ধু। স্বাধীনতার স্বাদ গ্রহণের আগেই তাঁকে হারাতে হয়েছে। তিনি আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন। কবি আবুল হোসেন বিশ্বাস করেন- আমাদের নায়ক আমাদের ছেড়ে চলে যেতে পারেন না। কারণ, তিনি চলে গেলে আমাদেরতো আর কিছুই থাকবে না। আমরা কার ডাকে মিছিলে স্লোগান দিব; হাসতে হাসতে জেলে আস্তানা গাঁড়ব; কে আমাদের দুস্তর রাতে পথ দেখাবে; কার হাত ধরে আমরা পাহাড়ের চূড়ায় উঠব? তাই কবি থাকো, আরো কিছুদিন থাকো কবিতায় আকুতি জানিয়েছেন-

চিরকাল যদি না-ই থাকো, আরও

কিছুদিন থাকো আমাদের সঙ্গে,

দিয়ে যাও আলো আর কিছু গান,

হাসিখুশিহীন এ স্বাধীন বঙ্গে।

বাংলাদেশের মুক্তিআন্দেলন এবং স্বাধীনতা-সংগ্রামে শক্তির প্রধান উৎস বঙ্গবন্ধু। ঔপনিবেশিক শাসন থেকে শুরু করে প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামে তিনি কখনো কর্মীর ভূমিকায়, কখনো নেতার ভূমিকায় দায়িত্ব পালন করেছেন। অধিকার বিষয়টা যে আদায় করে নিতে হয়- এই বোধ তাঁর স্কুল জীবনেই হয়েছিল। তাই দেখা যায় গোপালগঞ্জ মিশনারি স্কুলের ছাত্র থাকা অবস্থায় তিনি মুখ্যমন্ত্রী এ কে ফজলুল হকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে বাঙালীর প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামের সঙ্গে বঙ্গবন্ধু নামটি মিশে আছে। তাঁর ঘোষিত ছয় দফা ছিল বাঙালীর মুক্তির সনদ এবং স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার প্রধান হাতিয়ার ও মূলমন্ত্র। এ দাবিকে কেন্দ্র করে দানা বেঁধে উঠে দুর্বার আন্দোলন। এই আন্দোলনের সূত্র ধরেই ৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান, ৭০-এর নির্বাচন এবং ৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধ ও চূড়ান্ত পরিণতি স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ অর্জিত হয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষায়Ñ ৬ দফা বাংলার শ্রমিক-কৃষক, মজুরÑমধ্যবিত্ত তথা আপামর মানুষের মুক্তির সনদ। ৬ দফা শোষকের হাত থেকে শোষিতের অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক অধিকার ছিনিয়ে আনার হাতিয়ার, ৬ দফা মুসলিম-হিন্দু-খ্রিস্টান-বৌদ্ধদের নিয়ে গঠিত বাঙালি জাতির স্বকীয় মহিমায় আত্মপ্রকাশ আর আত্মনির্ভরশীলতা অর্জনের চাবিকাঠি...৬ দফার সংগ্রাম আমাদের জীবন মরণের সংগ্রাম। কবিদের কবিতায়ও উঠে এসেছে তার বিবরণ।

কবি রুবী রহমান তাঁর পঁচাত্তরে বিরান বাংলাদেশ কবিতায় বঙ্গবন্ধুকে প্রমিথিউস বলে সম্বোধন করেছেন। প্রমিথিউস মানুষকে সৃষ্টিশীল গুণাবলী দিয়ে সৃষ্টি করেন। মানুষের প্রতি দুর্বল প্রমিথিউসের মনে হলো মানব জাতির জন্য পৃথিবীকে উপযোগী করতে হলে আগুনের প্রয়োজন। তিনি দেবতার কাছে আগুন উপহার চাইলেন কিন্তু দেবতার প্রত্যাখ্যানের পর তিনি স্বর্গ থেকে আগুন চুরি করেন। ফলে, তিনি দেবতাদের রোষানলে পড়েছিলেন। দেবতার নির্দেশে তাঁর দেহ পাহাড়ের গায়ে বেঁধে রাখা হয় এবং একটি ঈগল প্রতিদিন এসে তাঁর কলিজা ঠোক্রে ঠোক্রে খেতে থাকে। বঙ্গবন্ধুর ক্ষেত্রেও দেখা যায় তিনি বাঙালীর অধিকার প্রতিষ্ঠায় শোষক শ্রেণীর সঙ্গে সংগ্রাম করে অধিকার আদায় করছেন; পরবর্তীতে স্বাধীন রাষ্ট্র উপহার দিয়ে বিশ^াসঘাতকদের কোপানলে পড়েছিলেন। প্রমিথিউসকে দেবতার রোষ থেকে রক্ষা করে হারকিউলিস কিন্তু বঙ্গবন্ধুকে কেউ রক্ষা করতে পারেনি। কবি বিশ^াস করেন- বঙ্গবন্ধু যে আগুন ছিনিয়ে এনেছেন তার স্ফুলিঙ্গ থেকে আবার আগুন জ্বলে উঠবে

যে অগ্নি একদিন তুমি ছিনিয়ে এনেছ

প্রতিটি স্ফুলিঙ্গ তার জ¦লে উঠবার গূঢ় মন্ত্রগুলি দাও।

কৃপণ হৃদয় নিয়ে ঘাড় গুঁজে বসে আছে বামন সময়।

সত্য ও ন্যায় পথের সারথি বঙ্গবন্ধু। শত অত্যাচার ও ভীতির মুখেও তিনি তাঁর পথ থেকে বিচ্যুত হননি। মানুষের অধিকার আদায়ে ছিলেন সোচ্চার। ফলে, শোষক শ্রেণীকে সবসময় তটস্থ থাকতে হতো। তাঁর বাক্রুদ্ধ করতে না পারলেও তারা বঙ্গবন্ধুকে শারীরিকভাবে রুদ্ধ করে রাখে। কিন্তু মুজিব এমন একটি শব্দ- যা উচ্চারণে বাঙালীর প্রাণে তোলে ঢেউ, মৃতপ্রাণে জাগে সাড়া। কবি আবদুস সাত্তার তার একটি অমিয় নাম কবিতায় বঙ্গবন্ধুকে এভাবে তুলে ধরেছেন-

অমিয় একটি নাম চেতনায় ঢেউ তোলে, রুধিরে জাগায় আলোড়ন

সে নামে প্রাণের সাড়া, মৃত ঘাসে জেগে ওঠে উদ্দাম সজীব যৌবন

সে নামে সতত ভীত মদমত্ত স্বৈরাচার, গর্বোদ্ধত আস্ফালনকারী

ধুলায় লুটায়ে পড়ে রাইফেল, স্টেন আর এজিদের তীক্ষ তরবারি

বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর বাঙালী জাতি নিশ্চুপ ছিল। প্রতিবাদ করতে পারেনি এই অকৃতজ্ঞ জাতি। কবি অন্নদা শঙ্কর রায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মরণে কবিতায় লিখেছেন- নরহত্যা মহাপাপ। কিন্তু সন্তান হয়ে পিতাকে হত্যা আরো বড়ো পাপ। আর সেটা যদি হয় সবংশে নিহত- তার মতো গুরুতর পাপ আর কিছু হতে পারে না। আবার সন্তান পিতাকে হত্যা করে যদি ক্ষমা পেয়ে যায় এবং সঙ্গে পায় সাধুবাদ, তবে একসময় পিতা হত্যার এই পাপ তার উপর অভিশাপ হয়ে বর্ষিত হয়। তাই কবি হত্যাকারীদের শাস্তি দানে নীরব না থেকে প্রতিবাদে মুখর হতে বলেছেন।

বাংলাদেশ! বাংলাদেশ! থেকো নাকো নীরব দর্শক

ধিক্কারে মুখর হও। হাত ধুয়ে এড়াও নরক।

কবি হিমেল বরকত লিখেছেন বিস্মরণের পাপ। আজকের বাঙালী জাতিসত্তার রয়েছে এক গৌরবম-িত ঐতিহ্য। সংগ্রাম করেই টিকে থাকতে হয়েছে এই জাতিকে। কিন্তু আজ আমাদের স্মৃতি বিস্মরণের মোহে আত্মবিনাশী ব্যাধিতে আক্রান্ত। তাই চিনতে পারছি না প্রিয় মাতৃভূমি; ভুলেছি পাখিদের স্বরলিপি, মেধাবীদের রক্তদান, একাত্তরের স্মৃতি। আমাদের মগজের নিচে প্রতারকরা ঘুণপোকার চাষ করছে। তাই-

আমরা চিনি না পিতার হত্যাকারী

আমরা ভুলেছি হত্যার প্রতিশোধ

অক্ষমতার পাপেরা বাড়ায় বাহু

আমাদের ঘৃণা নিষ্প্রভ নিরাকার

বঙ্গবন্ধু শুধু বাংলাদেশের নেতা নন, তিনি সমগ্র বিশে^ই একজন অবিসংবাদিত নেতা হিসেবে স্বীকৃত। কারণ, তিনি শোষিত মানুষের পক্ষে সারাজীবন লড়াই করেছেন। বঙ্গবন্ধুর ভাষায়- বিশ্ব আজ দুই ভাগে বিভক্ত, এক পক্ষে শোষক, আরেক পক্ষে শোষিত। আমি শোষিতের পক্ষে। কবি বিমল গুহ বঙ্গবন্ধুকে শতাব্দীর বরপুত্র বলে অভিহিত করেছেন। শতাব্দীর বরপুত্র কবিতায়

শতাব্দীর বরপুত্র শেখ মুজিবুর-

আঙ্গুলি হেলনে যাঁর দুলে ওঠে আকাশ বাতাস

কেঁপে ওঠে নক্ষত্রমন্ডল-দশদিক;

তর্জনী উঁচিয়ে সেই শতাব্দী পুরুষ

জাগিয়ে তোলেন এই বাংলার তৃণ মাটি এবং মানুষ।

কবি ফারুক নওয়াজ বঙ্গবন্ধুকে মহাশিশু বলে আখ্যায়িত করেছেন। কারণ, বাঙালীর স্বাধীনতা সংগ্রামের রয়েছে দীর্ঘ ইতিহাস। সেই ইতিহাসে মিশে আছে ক্ষোভ আর পরাধীনতার যন্ত্রণা। মুঘল, পাঠান আর ইংরেজদের মালিকানায় ছিল বাংলা। তিতুমীর, ক্ষুদিরাম, সূর্যসেন, প্রীতিলতা, সুভাষ বোসসহ অসংখ্য স্বাধীনতাকামী প্রাণপুরুষরা স্বাধীনতা ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু অধিকার আদায়ে তাঁরা কেউই সফল হতে পারেননি। বাঙালীকে শোষক শ্রেণীর হাত থেকে মুক্ত করে স্বাধিকার দিয়েছেন মহাশিশু বঙ্গবন্ধু। সেই মহাশিশু কবিতায়-

হাজার বছর, দীর্ঘজীবন কাল মহাকাল পরে

জন্ম নিলেন মহাশিশু এক বাঙালির গেঁয়ো ঘরে।

তিনি বললেন, সবই আমাদের, সবই আমাদের, তবে

আমাদের এ অধিকার পেতে লড়াই করতে হবে।

যুগে যুগে কবিতা মানুষকে আন্দোলন-সংগ্রামে উদ্বুদ্ধ করেছে। শোষক-শ্রেণী তাই কবি-সাহিত্যিকদের বাক্রুদ্ধ করতে চেয়েছেন। কিন্তু কবিদের বাক্রুদ্ধ করা সম্ভব হয়নি। জেল-জুলুম সহ্য করেও কবিরা কবিতা লিখেছেন। বঙ্গবন্ধু ছিলেন বাংলার মানুষের কবি ও কবিতা। কবি কামাল চৌধুরী বাংলার কবি কবিতায় লিখেছেন-

একটি কবিতা রক্ত পলাশে লেখা

একটি মানুষ পতাকায় আঁকা ছবি

বুকে একতারা শ্যামা দোয়েলের গান

মুজিব আজ সারা বাংলার কবি।

বঙ্গবন্ধুকে জাদুকর বলে অভিহিত করেছেন কবি আনজীর লিটন। জাদুকর যেমন জাদুর সাহায্যে সবকিছু সম্ভব করে তোলে; বঙ্গবন্ধু তেমনি বাংলার মানুষের জন্য স্বাধীনতা নামক সোনার হরিণটিকে ছিনিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছেন। কবির ভাষায়-

বলল হেসে বঙ্গবন্ধু-

আমি হলাম সেই জাদুকর

বাংলার অন্তরে

রাঙা স্বপন দেই জাগিয়ে

বাঙালিদের ঘরে।

১৫ আগস্ট বাঙালীর জন্য এক দুঃস্বপ্নের দিন। বঙ্গবন্ধু নেই- একথা কবিরা ভাবতে পারেন না। বঙ্গবন্ধু মিশে আছেন এই বাংলার অস্তিত্বের সঙ্গে। কবি শিহাব সরকারও ভাবতে পারেন না বঙ্গবন্ধু নেই। তিনি মনে করেন, বঙ্গবন্ধু জীবিত আছেন তাঁর অস্তিত্বের মায়া ছড়িয়ে কোলাহল থেকে দূরে, নিভৃত কুটিরে। পাখিরা তার হাত থেকে শস্যদানা খুটে খাচ্ছে। তিনি যখন দিঘির কিনারে এসে দাঁড়ান- তখন লাল নীল মাছেরা তাঁর কাছে ঝাঁকে ঝাঁকে ছুটে আসে। তিনি আমাদের স্বপ্ন ও বাস্তবে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছেন। তাঁকে ছাড়া আমরা অসহায়। তিনি আমাদের শক্তপায়ে দাঁড়াতে শিখিয়েছেন। তিনি পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী-পরিতৃপ্ত পিতা। কবির কাছে পনেরো আগস্ট তাই ভীষণ দুঃস্বপ্নের-

এমনও হতে পারতো নাকি-

পনেরো আগস্ট পঁচাত্তরের ভোররাতে

ভীষণ দুঃস্বপ্ন নিশ্চুপ বসে থেকে তারপর

এসে দাঁড়ালেন ব্যালকনিতে:

এ কী দেখলাম বাংলা মাগো, মানুষ আমাকে মেরেছে?

আমার এ পোড়া বুকে যে মানুষেরই ঠাঁই

অনেক দিন পর সময় নিয়ে তিনি সূর্য ওঠা দেখলেন।

বঙ্গবন্ধু ছিলেন গণতন্ত্রের অতন্দ্র সৈনিক, বাঙালীর স্বাধীনতা ও মুক্তির প্রতীক। পাকিস্তানী শোষক গোষ্ঠীর শোষণ-নির্যাতনে অতিষ্ঠ বাঙালীর আশ্রয়স্থল ছিলেন বঙ্গবন্ধু। বাঙালীকে ভাবতে শিখিয়েছেন, অধিকার আদায় করতে শিখিয়েছেন বঙ্গবন্ধু। বঙ্গবন্ধু দ্বারা প্রভাবিত হননি এমন বাঙালী পাওয়া দুষ্কর। কিশোর থেকে যুবক, যুবক থেকে বৃদ্ধ সবাইকে সম্মোহিত করেছেন বঙ্গবন্ধু। কবি ইকবাল আজিজ তার কিশোর বয়সে দেখা বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে লিখেছেন বঙ্গবন্ধুকে প্রথম দেখার স্মৃতি কবিতা। ১৯৬৪ সালে বঙ্গবন্ধু ফাতেমা জিন্নাহর নির্বাচনী প্রচারণা সভায় ভাষণ দিয়েছেন। অধিকাংশ নেতা উর্দুতে ভাষণ দিলেও বঙ্গবন্ধু বাংলায় ভাষণ দিয়েছেন। সেই স্মৃতিকে তুলে ধরেছেন কবি  

বেশিরভাগ নেতাই উর্দুতে ভাষণ দিলেন;

কিন্তু মুজিব দাঁড়ালেন বাংলা ভাষার প্রতিটি বর্ণকে সঙ্গে নিয়ে-

সারাদেহে বিদ্রোহের জয়গাথা এক সুদর্শন মহামানব।

শেখ মুজিবুর রহমান একটি মহাকাব্যের নায়ক ছিলেন। এই মহাকাব্য জাতীয়তাবাদের। আরো নির্দিষ্টার্থে এ হচ্ছে পাকিস্তানি রাষ্ট্র-কাঠামোর অধীনে বাঙালি জাতীয়তাবাদের অভ্যুত্থান ও পরিণতিতে নতুন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার। সবাইকে তিনি ছাড়িয়ে গেছেন, ছাপিয়ে উঠেছেন। সেই নায়ককে নিয়ে সাহিত্যিকরা কবিতা-গল্প-উপন্যাস লিখবেন, গীতিকার গান তুলবেন, শিল্পী ছবি আঁকবেন সেটাই স্বাভাবিক। মননশীলের চিন্তায়, শিল্পীর ক্যানভাসে  বঙ্গবন্ধু অমলিন আছেন এবং থাকবেন চিরকাল।


আরও খবর



হাসপাতালে ভর্তি অভিনেতা সব্যসাচী

প্রকাশিত:বুধবার ২০ মার্চ ২০24 | হালনাগাদ:বুধবার ২০ মার্চ ২০24 | অনলাইন সংস্করণ
বিনোদন ডেস্ক

Image

অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি আছেন অভিনেতা সব্যসাচী চক্রবর্তী। এমনটাই জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজার পত্রিকা।

এদিকে, টলিপাড়ায় এ খবর জানার সাথে সাথেই চিন্তা পরে গেছেন সবাই।

সব্যসাচীর কী হয়েছে তা জানতে সব্যসাচীর স্ত্রী মিঠু চক্রবর্তীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে, এ বিষয়ে খুব বেশি কথা বলতে রাজি হননি। তবে সব্যসাচী যে হাসপাতালে ভর্তি সেই বিষয়ে নিশ্চিত করেছেন।

সম্প্রতি পুত্র গৌরব ও পুত্রবধূ ঋদ্ধিমা ঘোষের সন্তান ধীরের অন্নপ্রশনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সব্যসাচী। নিজে দাঁড়িয়ে থেকে সব কিছুর তদারকি করেছেন। নাতির সঙ্গে সময় কাটাতে যে পছন্দ করেন সব্যসাচী, সে কথাও এর আগে আনন্দবাজার অনলাইনকে জানিয়েছিলেন গৌরব। আপাতত সব্যসাচীর শারীরিক অসুস্থতার খবরে চিন্তিত অনুরাগীদের একাংশ।

গত বছর শোনা গিয়েছিল, সব্যসাচী নাকি আর অভিনয় করবেন না। বাংলাদেশের একটি সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি জানিয়েছিলেন অবসর নেয়ার কথা। তবে, পরে তিনি আনন্দবাজার অনলাইনকে জানান, তার বক্তব্যের অন্য মানে বার করা হয়েছে। অভিনয় কম করলেও তিনি যে অবসর গ্রহণ করেননি, সে কথাও স্পষ্ট করেছিলেন অভিনেতা। সম্প্রতি জানা গিয়েছে, তিনি শুভ্রজিৎ মিত্র পরিচালিত দেবী চৌধুরাণী ছবিতে অভিনয় করছেন।


আরও খবর



অর্জিত হচ্ছে না রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা

প্রকাশিত:সোমবার ২৫ মার্চ ২০২৪ | হালনাগাদ:সোমবার ২৫ মার্চ ২০২৪ | অনলাইন সংস্করণ
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক

Image

চলতি অর্থবছরের প্রথম ৮ মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) রাজস্ব ঘাটতি ১৮ হাজার ২২১ কোটি টাকা। লক্ষ্যমাত্রা ২ লাখ ৪৪ হাজার ৮০৮ কোটি টাকার বিপরীতে রাজস্ব পাওয়া গেছে ২ লাখ ২৬ হাজার ৫৮৬ কোটি টাকা। যদিও গেল বছরের তুলনায় প্রবৃদ্ধি ১৫ দশমিক ৫৮ শতাংশ। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

এনবিআরের সাময়িক হিসাব অনুসারে, ৮ মাসে আয়কর আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭৯ হাজার ১৫৫ কোটি টাকা। এর বিপরীতে আয় হয়েছে ৭২ হাজার ৩১১ কোটি টাকা। পাশাপাশি মূল্য সংযোজন কর (মূসক) আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৯২ হাজার ৩৬৮ কোটি টাকা। বিপরীতে আয় হয়েছে ৮৮ হাজার ৭০১ কোটি টাকা। এছাড়া শুল্ক আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭৩ হাজার কোটি টাকা। এর বিপরীতে আয় হয়েছে ৬৫ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকা।

চলতি ২০২৩-২০২৪ অর্থবছর শেষে ৮২ হাজার কোটি টাকা ঘাটতি হতে পারে বলে মনে করছে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। গত ১৬ মার্চ জাতীয় বাজেট ২০২৪-২৫ এর প্রস্তাবনা উপস্থাপন অনুষ্ঠানে প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন এ তথ্য জানান।

তিনি বলেন, এমন একটা সময় বাজেট প্রণয়ন হতে যাচ্ছে যখন সামষ্টিক অর্থনীতি নেতিবাচক ধারায় রয়েছে। দেশে উচ্চ মূল্যস্ফীতি, ব্যাংকের তারল্য সংকট, বাজেট বাস্তবায়নে নিম্ন ও শ্লথ গতি, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ নিম্নগামী এবং রপ্তানি আয় ও রেমিট্যান্স নিচের দিকে। এই পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা যেটা আমরা দেখতে চাই বিশেষ করে উচ্চ প্রবৃদ্ধি ও নিম্ন মূল্যস্ফীতিসহ অন্যান্য সূচক যেখানে থাকার কথা সেটা নেই। বরং চরমভাবে চাপের মুখে পড়েছে। এর কারণ আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ দুটোই।

ফাহমিদা খাতুন বলেন, আগামী ২০২৪-২০২৫ অর্থ বছরের মূল বাজেটই হবে কীভাবে সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা যায়। ওই চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করে কীভাবে অর্থনীতি পুনরুদ্ধার করা যায়, সেটা বড় বিষয়। যেমন: গত ছয় মাসের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩৬ দশমিক ৩ শতাংশ। কিন্তু ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রাপ্তি মাত্র ১৩ দশমিক ৯ শতাংশ। আমরা যদি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে চাই, তাহলে বাকি ৬ মাসে রাজস্ব আহরণে ৫৪ দশমিক ৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে হবে। যা অত্যন্ত কঠিন বিষয়। বিগত দিনের ধারা লক্ষ্য করলে দেখা যায় রাজস্ব ঘটতি আগের মতোই চলমান থাকবে। যার পরিমাণ ৮২ হাজার কোটি টাকা হবে বলে মনে করছি।

মূল্যস্ফীতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত আমরা দেখতে পাচ্ছি মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশের বেশি ছিল। যেখানে খাদ্য মূল্যস্ফীতি শহর ও গ্রামে দুটোই জায়গায় বেশি ছিল। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ ব্যাংকের পদক্ষেপ খুব বেশি প্রভাবে ফেলতে পারিনি।

গত ৬ মাসের রাজস্ব আহরণের চিত্র বিশ্লেষণ করে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) পর্যবেক্ষণ বলছে, চলতি অর্থবছরে সরকার বড় অঙ্কের রাজস্ব ঘাটতির মুখোমুখি হতে যাচ্ছে। সিপিডি মনে করে, অর্থবছর শেষে ৮২ হাজার কোটি টাকা ঘাটতি হবে।


আরও খবর
ফের বাড়ল স্বর্ণের দাম

বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪




ইস্তাম্বুলে নাইটক্লাবে আগুন, নিহত বেড়ে ২৯

প্রকাশিত:মঙ্গলবার ০২ এপ্রিল 2০২4 | হালনাগাদ:মঙ্গলবার ০২ এপ্রিল 2০২4 | অনলাইন সংস্করণ
আন্তর্জাতিক ডেস্ক

Image

তুরস্কের বৃহত্তম শহর ইস্তাম্বুলের একটি নাইটক্লাবে আগুন লেগে কমপক্ষে ২৯ জন নিহত হয়েছে। এর আগে এ ঘটনায় ১৫ জন নিহত ও আরও ৮ জন আহত হয়েছে বলে জানানো হয়েছিল।

মঙ্গলবার (২ এপ্রিল) ১৬ তলা আবাসিক ভবনের বেজমেন্টে অবস্থিত মাস্করাড নাইটক্লাবে আগুন লাগে। অগ্নিকাণ্ডের সময় নাইট ক্লাবটি বন্ধ ছিল এবং সেখানে সংস্কারকাজ চলছিল। পরে অগ্নিনির্বাপক কর্মীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে এবং হতাহতদের হাসপাতালে নিয়ে যায়।

এর আগে ইস্তাম্বুলের মেয়র একরেম ইমামোগ্লু বলেন, দিনে সংস্কারকাজ চলাকালীন নাইটক্লাবে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এতে ১৫ জন নিহত এবং ৮ জন আহত হয়। আহতদের মধ্যে ৭ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।

মেয়র একরেম ইমামোগ্লু আরও বলেন, আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে। আহতদের কাছের হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। অগ্নিকাণ্ডের কারণ জানতে তদন্ত শুরু হয়েছে।


আরও খবর



সূর্যগ্রহণ সম্পর্কে যেসব ‘ভুল ধারণা’ পরিবর্তন জরুরি

প্রকাশিত:সোমবার ০৮ এপ্রিল ২০২৪ | হালনাগাদ:সোমবার ০৮ এপ্রিল ২০২৪ | অনলাইন সংস্করণ
জীবন ধারা ডেস্ক

Image

৫০ বছরের মধ্যে দীর্ঘতম সূর্যগ্রহণ ঘটবে আজ। বিরল এ সূর্যগ্রহণ দেখা যাবে  যুক্তরাষ্ট্র, মেক্সিকো এবং কানাডা থেকে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে আজ যেভাবে পূর্ণ সূর্যগ্রহণ দেখা যাবে ২০৪৪ সালের মধ্যে এমনটি আর দেখা যাবে না। সূর্যকে পুরোপুরি ঢেকে ফেলবে চাঁদ। স্থানীয় সময় ১১টা ৭ মিনিটে মেক্সিকোর প্রশান্ত মহাসাগরীয় উপকূলে দেখা যাবে প্রথম সূর্যগ্রহণ। এরপর চাঁদের ছায়া আস্তে আস্তে সরে যাওয়ার কারণে যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসে স্থানীয় সময় দুপুর ১টা ২৭ মিনিটে দৃশ্যমান হবে সূর্যগ্রহণ।

মহাজাগতিক এ ঘটনা ঘিরে যুগ যুগ ধরে বাংলাদেশ সহ পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গাতেই নানারকম ধারণা চালু রয়েছে। ঢাকা বিশ্যবিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপক নওরীন আহসান বলছেন, এসব ধারণার প্রায় সবগুলোই সম্পূর্ণ ভুল এবং এসবের কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই।

সূর্যগ্রহণ সম্পর্কে এরকম কয়েকটি ভুল ধারণা তুলে ধরা হলো এই প্রতিবেদনে:

রান্না করা, খাবার খাওয়া : এরকম একটি কুসংস্কার প্রচলিত রয়েছে যে, সূর্যগ্রহণের সময় কোনো ধরণের খাবার বা পানীয় গ্রহণ করলে তা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। অনেক জায়গায় এরকমও ধারণা রয়েছে যে সূর্যগ্রহণের সময় রান্না করা হলে সেটিও অমঙ্গলজনক। কিন্তু এরকম ধারণার কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি বিজ্ঞানীরা কখনোই পাননি।

গর্ভবতী নারীদের বাইরে বের হওয়া : প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী, সূর্যগ্রহণের সময় গর্ভবতী নারীরা ঘরের বাইরে বের হলে গর্ভের সন্তানের শরীরে বিশেষ ধরণের জন্মদাগ থাকতে পারে। এমনকি সন্তানের হৃৎপিণ্ডে ছিদ্র থাকা বা বিকলঙ্গতা নিয়েও সন্তান জন্ম নিতে পারে। তাই, 'সংস্কার' আছে, সূর্যগ্রহণের সময়ে গর্ভবতী নারীদের ঘরের বাইরে যাওয়া ঠিক হবে না। এই ধারণাও বৈজ্ঞানিকভাবে ভিত্তিহীন হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে অনেক আগেই।

ভ্রমণ না করা : সূর্যগ্রহণ চলাকালীন ভ্রমণ করলে তা অমঙ্গলজনক - এমন একটি ধারণা প্রচলিত রয়েছে অনেক মানুষের মধ্যেই। আরেকটি ধারণা রয়েছে যে, সূর্যগ্রহণের সময় ভ্রমণ করলে গ্রহণের সময় সূর্য থেকে নিঃসৃত ক্ষতিকর রশ্মি গায়ে লেগে ত্বকের ক্ষতি করতে পারে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপক নওরীন আহসান বলেন, গ্রহণের সময় সূর্য থেকে আলাদা কোনো ক্ষতিকর রশ্মি নিঃসরণ হয় না, কাজেই আলাদাভাবে কোনো ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না।

গ্রহণের পর গোসল করা : সূর্যগ্রহণের ফলে তথাকথিত যেসব ক্ষতিকর রশ্মি শরীরের সংষ্পর্শে আসে, সেসব রশ্মির ক্ষতিকর প্রভাব থেকে ত্বককে রক্ষা করতে গ্রহণের শেষে গোসল করার উপদেশ দেয়া হয়ে থাকে কিছু ক্ষেত্রে। এই ধারণাটিও সম্পূর্ণ অবৈজ্ঞানিক বলে মন্তব্য করেন অধ্যাপক নওরীন আহসান।

তিনি বলেন, সাধারণ অবস্থায় সূর্যের রশ্মি গায়ে লাগলে যতটা ক্ষতি হোতো, সূর্যগ্রহণের সময় তার চেয়ে বেশি ক্ষতির সম্ভাবনা নেই। কাজেই সূর্যগ্রহণের সময় যে আলাদাভাবে অতিরিক্ত ক্ষতি হবে, এই ধারণার কোনো ভিত্তি নেই।

বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করে সূর্যগ্রহণ দেখা : সূর্যগ্রহণ দেখার ক্ষেত্রে চোখের সুরক্ষার জন্য বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করার উপদেশ দেয়া হয়ে থাকে। যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ বিষয়ক সংস্থা নাসা খালি চোখে সূর্যগ্রহণ দেখা থেকে বিরত থাকতে উপদেশ দিয়েছে। সামান্য সময়ের জন্যও খালি চোখে সূর্যগ্রহণ দেখলে চোখের ক্ষতি হতে পারে বলে সতর্ক করেছে তারা।

তবে পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপক নওরীন আহসানের মতে, শুধু সূর্যগ্রহণের দিনই যে সূর্যের দিকে খালি চোখে তাকানো উচিত নয় - এমনটা নয়। তিনি বলেন, সূর্যগ্রহণের দিন মানুষ সূর্যের দিকে খালি চোখে তাকায়, কারণ সেদিন সূর্যের প্রখরতা অন্যান্য সময়ের চেয়ে অনেক কম থাকে। তাই মানুষের অনেকক্ষণ যাবৎ তাকিয়ে থাকার সম্ভাবনা ও সুযোগ থাকে - যেটি ক্ষতির কারণ হতে পারে।

অধ্যাপক নওরীন আহসান আরও বলেন, যে কোনো সাধারণ দিনে মানুষ সূর্যের দিকে কিছুক্ষণ তাকালেও চোখের ক্ষতি হবে। পার্থক্যটা হলো, সাধারণ দিনে মানুষ তাকায় না, সূর্যগ্রহণের সময় মানুষ তাকায়, তাই বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে বলা হয়।

নিউজ ট্যাগ: সূর্যগ্রহণ

আরও খবর



ব্লগার নাজিম হত্যা মামলা : আট বছরেও শুরু হয়নি বিচার

প্রকাশিত:শনিবার ০৬ এপ্রিল ২০২৪ | হালনাগাদ:শনিবার ০৬ এপ্রিল ২০২৪ | অনলাইন সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদক

Image

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ছাত্র ব্লগার নাজিমুদ্দিন সামাদ। আজ থেকে আট বছর আগে ২০১৬ সালের ৬ এপ্রিল ক্লাস শেষে মেসে ফেরার পথে লক্ষ্মীবাজারের একরামপুর মোড়ে জঙ্গিরা হত্যা করেন তাকে। সেই ঘটনায় দায়ের করা মামলার বিচার ৮ বছরেও শুরু হয়নি।

চার বছর তদন্ত শেষে চাকরিচ্যুত মেজর সৈয়দ জিয়াউল হক জিয়াসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেয় কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট। পরবর্তী সময়ে আরো সাড়ে তিন বছর কেটে গেলেও আলোচিত এ হত্যা মামলার বিচার শুরু হয়নি।

এদিকে আসামিদের আদালতে হাজির না করায় এ মামলার বিচার শুরু করতে পারেননি বলছেন রাষ্ট্রপক্ষ। তবে আশা করছেন, অতি শিগগিরই মামলার বিচার শুরু হবে এবং এ মামলার আসামিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হবে।

নাজিমুদ্দিনকে হত্যার পরদিন সূত্রাপুর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) নুরুল ইসলাম বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন। মামলাটি বর্তমানে ঢাকার সন্ত্রাস বিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. মজিবুর রহমানের আদালতে অভিযোগ গঠন শুনানির পর্যায়ে রয়েছে। সর্বশেষ গত ২৫ মার্চ এ মামলার অভিযোগ গঠনের জন্য দিন ধার্য ছিল। তবে ওইদিন নিরাপত্তা জনিত কারণে কারাগারে আটক থাকা আসামিদের আদালতে না পাঠিয়ে কারা কর্তৃপক্ষ চিঠি পাঠান। পরে আদালত অভিযোগ গঠন শুনানির জন্য আগামী ১৬ মে দিন ধার্য করেন।

মামলা সম্পর্কে জানতে চাইলে সংশ্লিষ্ট আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী গোলাম ছারোয়ার খান জাকির বলেন, ব্লগার নাজিমুদ্দিন হত্যা মামলাটি অভিযোগ গঠন শুনানির পর্যায়ে রয়েছে। আসামিদের আদালতে হাজির করতে পর্যাপ্ত পুলিশ সদস্য না পাওয়ায় কয়েক দফায় তাদের আদালতে হাজির করতে পারেনি কারা কর্তৃপক্ষ। এজন্য মামলায় অভিযোগ গঠনে শুনানি হচ্ছে না। আশা করছি, আগামী তারিখে আসামিদের আদালতে হাজির করা হবে এবং তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে বিচার শুরু হবে। পরে দ্রুত সাক্ষ্য নিয়ে মামলাটি নিষ্পত্তি করা হবে। বিচার দ্রুত শেষ করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো।

জানা যায়, ২০১৬ সালের ৬ এপ্রিল জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস শেষে পুরান ঢাকার গেন্ডারিয়ার মেসে ফেরার পথে লক্ষ্মীবাজারের একরামপুর মোড়ে জঙ্গিরা কুপিয়ে এবং গুলি করে হত্যা করেন ব্লগার নাজিমুদ্দিনকে। এ ঘটনায় পরদিন সূত্রাপুর থানার উপ-পরিদর্শক নুরুল ইসলাম বাদী হয়ে মামলা করেন।

২০২০ সালের ২০ আগস্ট বহিষ্কৃত মেজর সৈয়দ মো. জিয়াউল হক জিয়াসহ ৯ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের (সিটিটিসি) পরিদর্শক মুহাম্মদ মনিরুল ইসলাম। আসামিদের মধ্যে আনসার আল ইসলামের সামরিক শাখার প্রধান চাকরিচ্যুত মেজর সৈয়দ জিয়াউল হক জিয়া, আকরাম হোসেন, মো. ওয়ালিউল্লাহ ওরফে ওলি ওরফে তাহেব ওরফে তাহসিন, সাব্বিরুল হক চৌধুরী ওরফে আকাশ ওরফে কনিক ও মাওলানা জুনেদ আহাম্মেদ ওরফে সাব্বির ওরফে জুনায়েদ ওরফে তাহের পলাতক রয়েছেন। এছাড়া অপর চার আসামি রশিদুন নবী ভূইয়া ওরফে টিপু ওরফে রাসেল ওরফে রফিক ওরফে রায়হান, মোজাম্মেল হুসাইন ওরফে সায়মন, মো. আরাফাত রহমান ও মো. শেখ আব্দুল্লাহ কারাগারে আটক রয়েছেন।

এরপর ২০২২ সালের ১৭ জানুয়ারি মেজর জিয়াসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে পুলিশের দেওয়া অভিযোগপত্র আমলে নেন ট্রাইব্যুনাল। পলাতক পাঁচ আসামির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত। একই বছরের ২৩ ফেব্রুয়ারি পলাতক পাঁচজনের সম্পত্তি ক্রোকের আদেশ দেন আদালত।

মামলার সূত্রে জানা যায়, ব্লগে লেখালেখি করার কারণে আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সদস্যরা নাজিম উদ্দিনকে হত্যার পরিকল্পনা করেছিল। আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের শীর্ষ নেতা ও সামরিক শাখার প্রধান সেনাবাহিনী থেকে বহিষ্কৃত মেজর জিয়ার পরিকল্পনায় নাজিম উদ্দিনকে হত্যা করা হয়। আসামি মোজাম্মেল হুসাইন ওরফে সায়মনের নেতৃত্বে একটি টিম নাজিম উদ্দিনকে হত্যার উদ্দেশ্যে তার অবস্থান রেকি করে। মো. শেখ আব্দুল্লাহ এ হত্যার ভিডিও ধারনের জন্য এবং হত্যাকারীদের হত্যাকাণ্ড সংঘটেনর পর পালাতে সহযোগিতার জন্য ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকেন। হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হওয়ার পর জিয়াকে জানানো হয়।

আসামিপক্ষের আইনজীবী নজরুল ইসলাম বলেন, মামলাটি অভিযোগ গঠন শুনানির জন্য দিন ধার্য থাকলেও আসামিদের কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয় না। যেকারণে এ মামলায় অভিযোগ গঠন শুনানি আটকে রয়েছে। আদালতের উচিত মামলাটি ত্বরান্বিত করা। অনেক দিন তো হয়ে গেছে। আসামিরাও হয়রানির শিকার হচ্ছে। বাদীপক্ষও বিচার দেখার অপেক্ষায় আছে।


আরও খবর
আজ বিশ্ব পানি দিবস

শুক্রবার ২২ মার্চ ২০২৪