স্থায়ী খাতের প্রায় ২৫ কেজি সোনা বিক্রি
করতে চায় বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে নিলাম ডেকেও কাঙ্ক্ষিত দাম মেলেনি। এই সোনা বিক্রি
করতে গত বছরের অক্টোবরে দ্বিতীয় দফায় নিলাম ডাকা হয়। সন্তোষজনক দাম না পাওয়ায়
বিক্রির সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেনি কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের
সিনিয়র ম্যানেজমেন্ট টিমের এক সভায় বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। সেখানে
সিদ্ধান্ত হয়, সর্বশেষ নিলামের সর্বোচ্চ দরদাতা প্রতিষ্ঠানকে দাম আরও বাড়ানোর প্রস্তাব
দেওয়া হবে। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত সপ্তাহে ওই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বৈঠক করে দাম বাড়ানোর
প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে প্রতিষ্ঠানটি প্রাথমিক সম্মতি দিয়েছে বলে জানা গেছে।
তবে চূড়ান্তভাবে প্রতিষ্ঠানটি রাজি না হলে পুনরায় নিলাম ডাকার সিদ্ধান্ত নেবে কেন্দ্রীয়
ব্যাংক।
জানা গেছে, বিভিন্ন সময়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর
হাতে ধরা পড়া সোনা বাংলাদেশ ব্যাংকের অস্থায়ী খাতে জমা করা হয়। এর পর মামলা নিষ্পত্তি
হলে তা স্থায়ী খাতে নেওয়া হয়। স্থায়ী খাতে নেওয়া স্বর্ণ আন্তর্জাতিক মানের হলে
তা কেন্দ্রীয় ব্যাংক কিনে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে যোগ করে। আর আন্তর্জাতিক
মানের না হলে সেটি নিলাম করে বিক্রি করে দেওয়া হয়।
২৫ কেজি সোনা বিক্রির সবশেষ নিলামে ডায়মন্ড
ওয়ার্ল্ড, ভেনাস জুয়েলার্সসহ মাত্র তিনটি প্রতিষ্ঠান অংশ নেয়। তবে কোনো প্রতিষ্ঠানই
বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি হারের কাছাকাছি দাম প্রস্তাব করেনি। অর্থাৎ বৈধ সোনাও কাক্সিক্ষত
দামে কিনতে নারাজ ব্যবসায়ীরা। সূত্রগুলো বলছে, ব্যবসায়ীদের মধ্যে সিন্ডিকেটের কারণে
নিলামে প্রত্যাশিত দামের দেখা পাচ্ছে না বাংলাদেশ ব্যাংক। ফলে বিক্রিরও সিদ্ধান্ত নেওয়া
যাচ্ছে না।
তবে ব্যবসায়ীদের কোনো সিন্ডিকেট থাকার
কথা জানা নেই বলে দাবি করেছেন বাংলাদেশ জুয়েলারি সমিতির (বাজুস) নির্বাহী সদস্য ও
মুখপাত্র ডা. দেওয়ান আমিনুল ইসলাম। তিনি আমাদের সময়কে বলেন, ব্যাংক বেশি দামে বিক্রি
করতে চাইবে, আর ক্রেতা যতটা কমে সম্ভব কিনতে চাইবে। ফলে আমরা নিজেদের প্রফিটের দিক
খেয়াল করেই সেটা কিনব।
নিলাম প্রক্রিয়া দ্রুত শেষ করার পরামর্শ
দিয়ে এই ব্যবসায়ী বলেন, বিশ্ববাজারে প্রতিনিয়ত সোনার দাম ওঠানামা করছে। ফলে স্বল্প
সময়ের মধ্যে নিলাম প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা না গেলে ব্যবসায়ীদের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার
আশঙ্কাও রয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও
মুখপাত্র মেজবাউল হক বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সোনা বিক্রির নির্ধারিত একটা প্রক্রিয়া
আছে। সেই প্রক্রিয়ায় একটা প্রজেকশন প্রাইস থাকে। সেই প্রাইস যদি আমরা না পাই, তাহলে
সেক্ষেত্রে রি-অকশন করা হয়। এ ধরনের অকশন আগেও একবার হয়েছিল।
জানা গেছে, স্থায়ী খাতে নেওয়া সোনার
প্রায় ২ হাজার ৪২৯ কেজি ইতোমধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক কিনে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে
যোগ করেছে। এ ছাড়া এখন পর্যন্ত মালিককে ফেরত বা নিলামে বিক্রি করা হয়েছে ১ হাজার
৮৭ কেজি ৪০০ গ্রাম। সর্বশেষ ২০০৮ সালের জুলাই মাসে প্রায় ২২ কেজি সোনা নিলামে বিক্রি
করেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। এর পর ২০২২ সালের নভেম্বরে স্থায়ী খাতের আরও ২৫ কেজি ৩১২
গ্রাম সোনা বিক্রির উদ্যোগ নেওয়া হয়। বিভিন্ন প্রক্রিয়া শেষে ওই বছরের নভেম্বরে
নিলাম অনুষ্ঠিত হয়। কয়েকটি প্রতিষ্ঠান এ নিলামে অংশ নিলেও অপেক্ষাকৃত কম দর প্রস্তাব
করে। যে কারণে সে সময় বিক্রি না করে আবার নিলামের উদ্যোগ নেওয়া হয় গত বছরের মে মাসে।
এর পর বিভিন্ন প্রক্রিয়া শেষে গত অক্টোবরে নিলাম অনুষ্ঠিত হয়। এতে মাত্র ৩টি প্রতিষ্ঠান
অংশ নেয়। প্রতিষ্ঠাগুলোর প্রস্তাবিত দর গত মাসে মূল্যায়ন করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
এতে সর্বোচ্চ দরদাতা প্রতিষ্ঠান যে দামের প্রস্তাব করেছে, তাতে ২৫ কেজি সোনার মূল্য
দাঁড়িয়েছে ১৭ কোটি টাকার কিছু বেশি। কিন্তু এই দাম কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রজেকশন
রেটের চেয়ে কম হওয়ায় বিক্রির সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি নিলাম কমিটি। এর পর বিষয়টি
নিয়ে গত মাসে সিনিয়র ম্যানেজমেন্ট টিমের সভায় বিস্তারিত আলোচনা হলেও বিক্রির সিদ্ধান্ত
হয়নি।
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়,
বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস) প্রদত্ত রেটের (বাজার রেট) চেয়ে অন্তত ১০ থেকে
২০ শতাংশ কম ধরে সোনা বিক্রির প্রজেকশন রেট ঠিক করে বাংলাদেশ ব্যাংক। যদি নিলামে ওই
রেটের সমান বা বেশি পাওয়া যায়, তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এ সংক্রান্ত কমিটি সোনা বিক্রি
করে দেয়।
চলতি বছরও বাংলাদেশে সোনার দামে আরও রেকর্ড
হয়েছে। বাজুসের সর্বশেষ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, দেশের বাজারে বর্তমানে ভালো মানের প্রতি
ভরি সোনা বিক্রি হচ্ছে ১ লাখ ১০ হাজার ৬৯১ টাকা।