চট্টগ্রামের কালুরঘাট সেতু সংস্কারে ঠিকাদার নিয়োগ দিয়েছে রেলওয়ে। ৪৩ কোটি টাকায় আট মাসের মধ্যে সেতুটি ভারী ট্রেন ও যানবাহন চলাচলের উপযোগী করবে ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড।
চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার ট্রেন চালুতে প্রধান বাধা এখন কালুরঘাট সেতু। এ সেতুর উপর দিয়ে ১৫ এক্সেল লোডের ইঞ্জিনের ট্রেন চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ। যে কারণে পরামর্শক টিমের তিনটি প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার পর কালুরঘাট সেতুর সংস্কারে গত এপ্রিল মাসে টেন্ডার করা হয়। গত ১৮ মে টেন্ডার উম্মুক্ত করা হয়।
যাবতীয় প্রক্রিয়া শেষে ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেডকে ঠিকাদার নিয়োগ দেয়া হয়। প্রতিষ্ঠানটি ৪৩ কোটি টাকা ব্যয়ে সংস্কার কাজ করবে। যদিও সেপ্টেম্বরে ঢাকা-কক্সবাজার ট্রেন সার্ভিস উদ্বোধনের কথা। সে হিসেবে ট্রেন চলাচল ও সেতুর মূল কাঠামো সংস্কারে তিন মাস সময় পাবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
সেতুটির কাজের মধ্যে অনেককিছু পরিবর্তন করা হবে। এছাড়াও আলাদাভাবে পথচারী পারাপারে ডেডিকেটেড ওয়াকওয়ে করা হবে। যেটি শহর অংশ থেকে পারাপারে ডান পাশে করা হবে।
রেলওয়ের প্রকৌশল বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, পর্যটন নগরী কক্সবাজারে রেলপথ সংযোগ প্রকল্পটির মেয়াদ শেষ হবে চলতি বছরের ডিসেম্বরে। যদিও গত ১৬ মে রেলপথমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন কক্সবাজার সফরে গিয়ে আগামী সেপ্টেম্বরে পর্যটন নগরী পর্যন্ত ঢাকা থেকে ট্রেন সার্ভিস উদ্বোধনের ঘোষণা দেন। প্রকল্পের ১৫ শতাংশ কাজ বাকি থাকায় এবং ২০ কিলোমিটার রেলপথ বসানোর কাজ শেষ না হওয়ায় প্রতিশ্রুত সময়ের মধ্যে ট্রেন সার্ভিস উদ্বোধনের বিষয়টি জটিলতার মধ্যে পড়ে। তাছাড়া সরাসরি কক্সবাজার পর্যন্ত ট্রেন সার্ভিস চালু করতে প্রধান প্রতিবন্ধকতা ছিল মেয়াদোত্তীর্ণ প্রায় শতবর্ষী কালুরঘাট সেতু।
কালুরঘাট পুরনো সেতুর পরিবর্তে নতুন সেতু নির্মাণ প্রকল্পটি বিলম্বিত হওয়ায় বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) এক দল শিক্ষককে পরামর্শক নিয়োগ করে রেলওয়ে। বুয়েটের পরামর্শে নতুন সেতু নির্মাণ পর্যন্ত বিদ্যমান সেতু দিয়ে ভারী ট্রেন চলাচলের জন্য অন্তত ৬০ কোটি টাকার একটি প্রস্তাব দেয়া হয়। প্রস্তাব অনুযায়ী দরপত্র আহ্বান করা হলে কয়েকটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান অংশ নেয়। রোববার সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেডকে যোগ্য দরদাতা নির্বাচিত করে চুক্তি স্বাক্ষর করে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল কর্তৃপক্ষ।
এ বিষয়ে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী মো. আবু জাফর মিঞা বলেন, আগামী আট মাসের মধ্যে চুক্তি অনুযায়ী সেতুটি সংস্কার করবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। তবে সেপ্টেম্বরে কক্সবাজার পর্যন্ত সরাসরি ট্রেন যোগাযোগ স্থাপনের জন্য আপাতত সেতুর স্প্যান ও রেলপথ সংস্কারের কাজটি অগ্রাধিকার দেবে ম্যাক্স। আমরা সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেডের সঙ্গে চুক্তি করেছে রেলওয়ে। সড়ক যোগাযোগের পথ, ওয়াকওয়েসহ অন্যান্য কাজ নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শেষ করবে প্রতিষ্ঠানটি।
কালুরঘাট সেতু সংস্কারে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে পরামর্শক সংস্থা হিসেবে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) বিশেষজ্ঞ দল কাজ করেছে। বিশেষজ্ঞরা প্রতিবেদনে সেতুর স্পেনগুলো পুরানো হয়ে গেছে বলে জানান। এছাড়াও সেতুর স্পেন, পাটাতনসহ সব অংশের চিত্রে দেখা গেছে, সেতুর মূল ১৯টি স্পেনের মধ্যে ৮টির অবস্থা খুবই খারাপ। এগুলো অনেকটা ক্ষয়ে গেছে। সেতু সংস্কার কাজ শুরু হলে ট্রেন চলাচল উপযোগী করতে সময় লাগবে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। তবে পুরোপুরি সংস্কার শেষ করতে ডিসেম্বর পর্যন্ত লাগতে পারে। সেতু সংস্কারকালে দুটি ফেরী চালু করে যান চলাচল স্বাভাবিক রাখা হবে।
এর আগে রেলওয়ে চলতি জুনে সেতু মেরামতের প্রয়োজনে কালুরঘাট সেতু দিয়ে ট্রেন ও যানবাহন চলাচল বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছিল। তবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষরে বিলম্ব এবং আসন্ন কোরবানির ঈদের কারণে সেতু দিয়ে সাধারণ যানবাহন চলাচল আপাতত বন্ধ করা হচ্ছে না। চুক্তি স্বাক্ষরের পর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এরই মধ্যে সেতু এলাকায় আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতি স্থাপনের কাজ শুরু করেছে। ঈদের পর যানবাহন চলাচল বন্ধ রেখে সেতু সংস্কারের মূল কাজ শুরু করা হবে। বিকল্প হিসেবে কর্ণফুলী নদীর সেতুসংলগ্ন অংশে এরই মধ্যে ফেরি চলাচলের জেটি নির্মাণ করেছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ।
প্রসঙ্গত, কালুরঘাট রেল সেতুটি ১৯৩১ সালে চালু করা হয়েছিল। ১৯৬২ সালে রেলের পাশাপাশি সড়কও চালু করা হয়। জরাজীর্ণ এ সেতুতে ট্রেনের বর্তমান গতি থাকে সর্বোচ্চ ১০ কিলোমিটার। দোহাজারি-কক্সবাজার রেললাইন চালু হলে ট্রেনের সর্বোচ্চ গতি হবে ৮০ থেকে ১০০ কিলোমিটার। বিকল্প সেতু না হওয়ায় কালুরঘাট সেতু সংস্কার করেই কমপক্ষে ৪০ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চালাতে হবে। বুয়েটের সুপারিশ অনুসারে সেতুটি সংস্কার করা হলে কমপক্ষে ১০ বছর ঝুঁকি ছাড়া ট্রেন চালানো সম্ভব হবে। ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেললাইনে গতি ফেরাতে আগামীতে কালুরঘাট সেতু নির্মাণের বিকল্প নেই।