
জয়পুরহাট প্রতিনিধি:
আলু উৎপাদনে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম জেলা হিসেবে পরিচিত জয়পুরহাটে চলতি ২০২২-২৩ মৌসুমে ৩৮ হাজার ৩৬৫ হেক্টর জমিতে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করা হয়েছে। আলু চাষ সফল করতে ব্যাপক কর্মসূচি হাতে নিয়েছে স্থানীয় কৃষি বিভাগ।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, নিবিড় বার্ষিক ফসল উৎপাদন কর্মসূচির আওতায় চলতি ২০২২-২৩ মৌসুমে জেলায় ৩৮ হাজার ৩৬৫ হেক্টর জমিতে আলু লাগানোর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এখনও জমিতে আলুর বীজ রোপণের কাজ শেষ হয়নি। পাঁচটি উপজেলাতেই সরেজমিনে দেখা গেছে কৃষকেরা নিবিড়ভাবে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত আলু রোপনের কাজ করছে। ইতোমধ্যেই জেলার ৭৫ ভাগ আলু রোপন করা হয়েছে।
ক্ষেতলাল উপজেলার কৃষি অফিসার মো. জাহিদুল ইসলাম বলেন, ক্ষেতলাল উপজেলায় ৯০ ভাগ আলু রোপন করা হয়েছে। আক্কেলপুর উপজেলার জামালগঞ্জ এলাকায় জমিতে উচ্চ ফলনশীল জাতের আলু বীজ বোপনের জন্য মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে বলে জানায় কৃষি বিভাগ। উপজেলা ভিত্তিক আলু লাগানোর লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে রয়েছে জয়পুরহাট সদর উপজেলায় ৬ হাজার ৭৬০ হেক্টর, পাঁচবিবি উপজেলায় ৭ হাজার ১৫৫ হেক্টর, ক্ষেতলাল উপজেলায় ৮ হাজার ১০৫ হেক্টর, কালাই উপজেলায় ১০ হাজার ৬১০ হেক্টর ও আক্কেলপুর উপজেলায় ৫ হাজার ৭৩৫ হেক্টর জমি। এতে আলু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৯ লাখ ২০ হাজার ৭৬০ মেট্রিক টন। যা জেলার চাহিদা মিটিয়ে অন্যান্য জেলায় পাঠানো সম্ভব হবে। এবার হেক্টর প্রতি গড় উৎপাদন ধরা হয়েছে ২৪ মেট্রিক টন আলু।
এবার বিঘা প্রতি আলু খরচের কথা জানতে চাইলে ক্ষেতলাল উপজেলার ফকিরপাড়া গ্রামের কৃষক শাহারুল ইসলাম দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, প্রতি বিঘায় ২২ থেকে ২৫ হাজার টাকা খরচ হচ্ছে ভালো ফলন হলে এবং দাম ভালো থাকলে প্রতি বিঘায় ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকার আলু বিক্রি করবেন বলে জানান তিনি। অন্যদিকে কৃষি বিভাগ জানায়, আলু চাষ সফল করতে জেলায় সারের মজুদ পর্যাপ্ত রয়েছে। নভেম্বর মাসের মজুদ সারের পরিমান ছিল ইঊরিয়া ৩ হাজার ৭৫৭ মেট্রিক টন, টিএসপি ২ হাজার ৩৬৬ মেট্রিক টন, এমওপি ৩ হাজার ৩৫০ মেট্রিক টন ও ডিএপি ২ হাজার ১৭৫ মেট্রিক টন। এর সঙ্গে ডিসেম্বর মাসের চাহিদার মধ্যে রয়েছে ইঊরিয়া ৫ হাজার ৩৪৫ মেট্রিক টন, টিএসপি এক হাজার ৩১৮ মেট্রিক টন, এমওপি এক হাজার ৯৩১ মেট্রিক টন ও ডিএপি এক হাজার ৭৮৮ মেট্রিক টন সার। সরকারের আগাম প্রস্তুতি গ্রহণের ফলে রাসায়নিক সারের সংকট নেই জয়পুরহাটে।
কিন্তু মাঠ পর্যায়ে সরেজমিনে ক্ষেতলাল উপজেলার দাসরা খানপাড়া গ্রামের কৃষক আলাউদ্দিন বলেন, তিনি পাঁচ বিঘা জমিতে আলু লাগাবেন কিন্তু প্রয়োজন মতো সার ডিলারের কাছে পাচ্ছেন না। তাই বিভিন্ন জায়গা থেকে সার সংগ্রহ করতে হচ্ছে তাকে।
বিএডিসি’র বীজ বিপণন বগুড়া ও জয়পুরহাট অঞ্চলের উপ-পরিচালক মোহা. জাকির হোসেন বলেন, উন্নত জাতের আলুর বীজ ডিলার পর্যায়ে প্রতি কেজি প্রকার ভেদে ২৫ থেকে ৩০ টাকা এবং কৃষক পর্যায়ে প্রতি কেজি প্রকার ভেদে সাড়ে ৩০ টাকা থেকে সাড়ে ৪২ টাকা পর্যন্ত বিক্রির জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে। ডিলারদের চাহিদা অনুযায়ী এবার বীজ সরবরাহ করা হচ্ছে এবং বাজারে পর্যাপ্ত বিএডিসি আলুবীজ সরবরাহ রয়েছে।
ভালো মানের কারণে বিএডিসির উচ্চ ফলনশীল এ্যাস্টোরিক জাতের আলুবীজের চাহিদা একটু বেশি বলে জানান, উপ-পরিচালক মো. জাকির হোসেন।
জেলায় আলু চাষ সফল করতে কৃষক পর্যায়ে প্রশিক্ষণসহ উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তারা সার্বক্ষনিক মনিটরিং ও কৃষকদের পরামর্শ প্রদান করছেন বলে জানান, জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো. শফিকুল ইসলাম। জয়পুরহাটের আলু উন্নত মানের হওয়ায় গত বছর দেশের গন্ডি পেরিয়ে ৯টি দেশে রপ্তানী করা হয়েছিল। প্রাচীন বরেন্দ্র অঞ্চল হিসেবে পরিচিত জয়পুরহাট জেলায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অধিক পরিমাণ জমিতে আলুর চাষ হয়ে থাকে। গত বছর আলু উৎপাদন হয়েছিল ৮ লাখ ১৫ হাজার মেট্রিক টন। ফলন ভালো হওয়ায় জেলায় গ্যানোলা, মিউজিকা, ডায়মন্ড, এস্টোরিকস, কার্ডিনাল, ও রোজেটা জাতের আলু বেশি চাষ করে থাকেন কৃষকরা। জেলার ১৫টি হিমাগারে প্রায় দেড় লাখ মেট্রিক টন আলু সংরক্ষণ করা সম্ভব, বলে জানিয়েছেন জয়পুরহাট কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ।