বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপের প্রভাবে অতিবৃষ্টি ও পূর্ণিমার জোয়ারের চাপে স্বাভাবিকের তুলনায় কয়েক ফুট উচ্চতার জ্বলোচ্ছাসে প্লাবিত হচ্ছে উপকূলের বিভিন্ন এলাকা। লোকালয়ে পানি প্রবেশ করায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন হাজারো মানুষ। এ ছাড়া অনেক বাঁধে ফাটল দেখা দেওয়ায় তৈরি হয়েছে ভাঙন আতঙ্ক। অতিরিক্ত পানিতে এরই মধ্যে তলিয়ে গেছে ফসলের ক্ষেত, মাছের ঘের ও পুকুর। বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বেশ কিছু নদনদীর পানি।
বাগেরহাটের পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মাসুম বিল্লাহ বলেন, দড়াটানা ও ভৈরব নদীর পানি বিপদসীমার ১২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ ছাড়াও জেলার বিভিন্ন নদী ও খালের পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। যেসব এলাকায় বেড়িবাঁধ নেই, সেসব এলাকার নিম্নাঞ্চল জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হওয়ার খবর পেয়েছি।
জানা যায়, শুক্রবার (৪ আগস্ট) দুপুরে জোয়ারের পানির চাপে বাগেরহাট সদর উপজেলার ভৈরব নদীর তীরে থাকা গ্রামরক্ষা বাঁধ ভেঙে তিনটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। ভদ্রপাড়া নামকস্থান থেকে গ্রামরক্ষা বাঁধ ভেঙে যায়। মুহূর্তের মধ্যে ভৈরবের পানিতে প্লাবিত হয় ভদ্রপাড়া, বৈটপুর ও বেমরতা গ্রামের অধিকাংশ স্থান। অতিরিক্ত পানিতে ২০ থেকে ২৫টি ঘের ও বেশকিছু পুকুর তলিয়ে মাছ ভেসে গেছে। তিন গ্রামে তিন শতাধিক পরিবার পানিবন্দি রয়েছে। অনেকের বাড়িঘর ও রান্নাঘরে পানি উঠে যাওয়ায় খাওয়াদাওয়া বন্ধ রয়েছে।
ভদ্রপাড়া এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত চিংড়িঘের শেখ ওমর আলী বলেন, দুপুরে জোয়ারের পানির চাপে গ্রামরক্ষা বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি ঢোকে। পানিতে তিনটি মাছের ঘের ডুবে আমার ১০ লাখ টাকার মাছ বের হয়ে গেছে। এ ছাড়াও সদরন উপজেলার হাড়িখালি, মাঝিডাঙ্গা, মোরেলগঞ্জ উপজেলার ঘষিয়াখালী, বহরবুনিয়া, সানকিভাঙ্গা, খাওলিয়া, গাবতলা, মোংলার জয়মনির ঘোলসহ বেশকিছু এলাকা জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এসব এলাকায় সহস্রাধিক পরিবার পানিবন্দি রয়েছেন।
টানা ৪ দিন ধরে অস্বাভাবিক জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের দুবলার চর ও দেশের একমাত্র বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্র এবং পর্যটন কেন্দ্র করমজল। সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের শরণখোলা রেঞ্জের দুবলা জেলে পল্লীর ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. হারুন অর রশিদ জানান, অস্বাভাবিক জোয়ারে দুবলার চরে ৫/৬ফুট পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। আর সুন্দরবনের অভ্যন্তরে কোথাও ২ ফুট আবার কোথাও কোথাও কমবেশি পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে। ভাটা হলে আবার পানি নেমে যাচ্ছে। তবে এ জ্বলোচ্ছ্বাসে দুবলার কোথাও এখনও পর্যন্ত কোনো ক্ষয়ক্ষতি তার নজরে আসেনি।
এদিকে সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার গাবুরা ইউনিয়নে আবারও নদীভাঙন দেখা দেওয়ায় স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। পূর্ণিমার জোয়ারে অতিরিক্ত পানি বৃদ্ধির প্রভাবে বিচ্ছিন্ন দ্বীপ ইউনিয়ন গাবুরায় ৯ নং সোরা গ্রামে ৫০০ মিটারের মতো এলাকাজুড়ে খোলপেটুয়া নদী সংলগ্ন বেড়িবাঁধে ভয়াবহ ভাঙন সৃষ্টি হয়েছে।
স্থানীয় ইউপি সদস্য মঞ্জুর হোসেন জানান, সোরা গ্রামের হাসান মালীর বাড়ি সংলগ্ন প্রায় ৫০০ মিটার এলাকায় ভেঙে নদী ভাঙন শুরু হয়েছে। বড় বড় মাটির স্তূপ ও গাছপালা নদীতে চলে যাচ্ছে। এতে আমরা আতঙ্কিত হয়ে পড়ছি ।
সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড পোল্ডার-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী সালাউদ্দিন জানান, কিছু জিওব্যাগ আগেই ছিল। নতুন করে আরও কিছু পাঠানো হবে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও পানি উন্নয়ন বোর্ড ভাঙন রোধে কাজ করছে।
শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আক্তার হোসেন জানান, গাবুরা ইউনিয়নের ভাঙনের কথা শোনামাত্রই পানি উন্নয়ন বোর্ডকে ভাঙন রোধে কাজ করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। দ্রুত ভাঙন রোধ করা সম্ভব হবে।