এক সময়ে জনপ্রিয়
মডেল ছিলেন গীতাঞ্জলি। কেরিয়ারের মধ্যগগনে থাকার সময়ই মাদকের নেশা ভর করে তাঁর উপর।
তারপর ক্রমে তলিয়ে গিয়েছিল তাঁর জীবন। মাদক শুধু তাঁর জনপ্রিয়তাই কেড়ে নেয়নি। নিজের
ছেলে, স্বামীকেও তাঁর থেকে দূরে সরিয়ে নিয়েছিল। র্যাম্প থেকে রাস্তায় নিয়ে এনে ফেলেছিল
তাঁকে।
গীতাঞ্জলি দিল্লির
মেয়ে। দিল্লিতে কলেজে পড়ার সময়ই তিনি মডেলিংয়ে আসেন। সে সময় কলেজ পড়ুয়াদের কাছে মডেলিং
ছিল খুবই জনপ্রিয় পেশা। হাত খরচের টাকার জন্য অনেকেই টুকটাক মডেলিং করে থাকতেন। গীতাঞ্জলিও
তাই ছিলেন।
কলেজ জীবনে তাঁর
সবচেয়ে কাছের বন্ধু ছিলেন সন্দেলি সিন্হা। ২০০১ সালের ছবি ‘তুম বিন’-এর জন্যই পরিচিত মুখ সন্দেলি। তিনি তখন
মডেলিং এবং বলিউড— দু’জায়গাতেই কাজ পাওয়ার চেষ্টা করছিলেন। বন্ধুকে
দেখেই মূলত মডেলিংয়ে আসা তাঁর। যাতে ইন্ধন জুগিয়েছিলেন আমির রাজপাল নামে এক চিত্রগ্রাহক।
ওই চিত্রগ্রাহকই
গীতাঞ্জলির ব্যক্তিত্ব, চেহারা দেখে তাঁকে মডেলিংয়ে আসার উপদেশ দিয়েছিলেন। খুব অল্প
সময়ে জনপ্রিয় মডেল হয়ে গিয়েছিলেন তিনি। দিল্লি থেকে ব্যাগ গুছিয়ে মুম্বই চলে আসেন গীতাঞ্জলি।
বলিউডে ছবির প্রস্তাবও পেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু সে দিকে না গিয়ে মডেলিং করছিলেন।
কিন্তু সময় যত
এগিয়েছে, মডেলিং এবং গ্ল্যামারের পিছনে অন্ধকার জগতের মধ্যে ডুবে যেতে শুরু করেছিলেন
তিনি। ক্রমে মাদকের নেশা তাঁকে নিয়ন্ত্রণ করতে শুরু করেছিল। অত্যন্ত পেশাদার এই মডেল
ক্যামেরা চালু হওয়ার পরও অনেক সময় মাদকের জন্য ছটফট করতেন। মাদক নিয়ে তবে তিনি শ্যুট
করতেন।
ইতিমধ্যেই জার্মানির
এক ব্যক্তির সঙ্গে কর্মসূত্রে তাঁর পরিচয় হয়েছিল। তাঁর সঙ্গে কয়েক বছর ডেট করার পর
দু’জনে বিয়ে করেন। তাঁদের এক ছেলেও হয়। কিন্তু
এই সম্পর্ক বেশি দিন টেকেনি। মাদকের নেশা তাঁর কাছ থেকে স্বামী-সন্তানকে দূরে সরিয়ে
নিয়ে যায়। তাঁর স্বামী গীতাঞ্জলির উপর বিরক্ত হয়েই ছেলেকে নিয়ে জার্মানি ফিরে যান।
সে সময় ভীষণ একা হয়ে পড়েছিলেন তিনি।
আর বেশি করে মাদক
সেবন করতে শুরু করেছিলেন। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছিল যে, মডেলিং কেরিয়ারও
হাতছাড়া হয়ে গিয়েছিল। এ দিকে মাদকের নেশায় অর্থাভাবও প্রকট হয়ে উঠতে শুরু করেছিল।
বাধ্য হয়েই গীতাঞ্জলি
তখন দেহব্যবসায় নামেন। কিছু দিন পরিচারিকার কাজও করেছিলেন। তাঁর পাশে নিজের বলতে কেউ
ছিলেন না। গীতাঞ্জলির একমাত্র সঙ্গী হয়ে উঠেছিল মাদক। মাথার উপর ছাদটুকুও খুইয়ে ফেলেছিলেন
তিনি।
কখনও রাস্তায়,
কখনও কোনও মন্দিরে আশ্রয় নিতেন তিনি। পরিস্থিতি এতটাই করুণ হয়ে উঠেছিল যে তাঁকে দেখে
ভিখারি ছাড়া আর কিছু ভাবতেই পারতেন না পথচলতি মানুষ। মাদক কিনতে ভিক্ষাও করতে হয়েছে
তাঁকে।
এক সাংবাদিকের
সূত্রেই গীতাঞ্জলির এই পরিস্থিতির কথা জানাজানি হয়। তারপর তাঁকে একটি মানসিক হাসপাতালে
চিকিৎসার জন্য ভর্তি করানো হয়। বহু দিন চিকিৎসার পর সুস্থ হন তিনি।
সুস্থ হওয়ার পর বেশ কিছু সময় মায়ের সঙ্গে হরিদ্বারে কাটিয়েছিলেন। তাঁর সেই জার্মান স্বামী তাঁকে ফেরাতে চাইলেও গীতাঞ্জলি সেই সম্পর্কে ফিরতে চাননি। ২০০৮ সালে ‘ফ্যাশন’ নামে একটি ছবি মুক্তি পায়। শোনা যায়, গীতাঞ্জলিকে মাথায় রেখেই এই ছবিতে কঙ্গনা রানওয়াতের চরিত্র এঁকেছিলেন পরিচালক। যদিও পরিচালক মধুর ভান্ডারকর কখনও তা মানতে চাননি।