পুরাতন বছরকে বিদায় আর নতুন বছরকে বরণ করে নিতে বান্দরবানে মারমা সম্প্রদায়ের নববর্ষ বরণ উৎসব সাংগ্রাই। মারমা সমপ্রদায়ের লোকজন বৈসাবিকে সাংগ্রাই উৎসব হিসেবে পালন করে থাকে। পুরনো বছরের শেষ দিন এবং নতুন বছরের প্রথম দিনই সাংগ্রাই উৎসবের দিন হিসেবে তাদের কাছে বেশ গুরুত্বপূর্ণ।
শুক্রবার (১৫ এপ্রিল) বিকালে তিন দিন ব্যাপী সাংগ্রাই উৎসবের শেষ দিনে সাঙ্গু নদীর তীরে উৎসব উদযাপন পরিষদ আয়োজন করে জলকেলি উৎসব।
সরেজমিনে দেখা যায়, এসময় মারমা তরুণ-তরুণীরা সাজোয়া নৌকা থেকে একে অপরকে পানি ছিটাচ্ছেন। জল ছিটিয়ে একে অপরে শুদ্ধ হচ্ছেন। উৎসবে যোগ দিয়েছেন অনেক বিদেশি পর্যটকও । তারাও মারমা তরুণ তরুণীদের সঙ্গে সমবেত হয়ে একে অপরকে জল ছিটাচ্ছেন। এদিকে জলকেলি উৎসবের পাশাপাশি চলে ঐতিহ্যবাহী গান আর নৃত্য। মঞ্চের গান আর নৃত্যর তালে তালে দলে ভাগ হয়ে বালুর চরে নাচ আর গান করছেন সব বয়সীর মানুষ। শুধু মারমা সম্প্রদায়ের মানুষ নয় সব ধর্মের মানুষের উপস্থিতিতে উৎসবস্থল হয়ে উঠে আনন্দমুখর।
বন্ধু বান্ধব নিয়ে অনুষ্ঠানস্থলে আসা সিমে উ জানান, অনেক মজা করছি। করোনার কারণে মজা করতে পারি নাই। বন্ধুদেও সাথে নাচছি, গান করছি। অনেক ভালো লাগছে।
তুমব্রু পাড়া থেকে আসা এসিমে জানান, অনেক ভালো লাগছে। আজ আমাদেও আনন্দেও দিন। অনেক নাচলাম। নিজে ভিজলাম, বন্ধুদেরকে ভিজিয়ে দিলাম।
এদিকে শেষে দিনের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সিনিয়র সচিব মো: তোফাজ্জল হোসেন মিয়া জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি, পার্বত্য জেলা পরিষদের সদস্য ক্যসাপ্রু, সদস্য লক্ষীপদ দাশ, উৎসব উদ্যাপন পরিষদের সভাপতি থেওয়াং (হ্লাএমং), সাধারণ সম্পাদক শৈটিং ওয়াই সহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সম্প্রদায়ের জনসাধারণ।
উৎসব উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শৈটিং ওয়াই জানান, পুরনো বছরের শেষ তিনদিনের প্রথম দিন নারী-পুরুষ সবাই মিলে বৌদ্ধ মূর্তিগুলোকে নদীর ঘাটে নিয়ে পানি ও দুধ দিয়ে স্নান করায়। পরের দু'দিন মারমা জনপদে নেমে আসে আনন্দের বন্যা। ওই দুইদিন পাড়ায় পাড়ায় চলে পানি খেলা বা জল উৎসব। একে অপরের গায়ে পানি ছিটিয়ে পুরনো বছরের ব্যর্থতা, গ্লানি ও দুঃখকে ধুয়েমুছে দেয়। এবারো পাড়ায় পাড়ায় ওই উৎসবের আয়োজন করা হয়।
উল্লেখ্য, পাহাড়ের আদিবাসীরা ভিন্ন ভিন্ন নামে বর্ষবরণের এই উৎসব পালন করে থাকে। ত্রিপুরাদের বৈসুর (বৈ), মারমাদের সাংগ্রায়ের (সা) চাকমাদের বিঝুর (বি) থেকে বৈসাবি হলেও বান্দরবানের মারমারা বর্ষবরণের এই উৎসবকে সাংগ্রাই বলে থাকে। ১৪ এপ্রিল বিকালে জেলা শহরের সাঙ্গু নদীতে মঙ্গল জল দিয়ে বুদ্ধ মূর্তি স্নানের পরেই শুরু হয়ে যায় জলকেলি উৎসবের।