রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) হলের ক্যান্টিনে
বসাকে কেন্দ্র করে দুই শিক্ষার্থীকে কক্ষে গিয়ে মারধর করার অভিযোগ উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয়
শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ ভাস্কর সাহার বিরুদ্ধে।
শুক্রবার (২৪ নভেম্বর) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের
মতিহার হলের ক্যান্টিনে এ ঘটনা ঘটে।
মারধরের শিকার দুই শিক্ষার্থী জাহিদ ও
মাহফুজুর রহমান রিফাত বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইন্যান্স বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী।
এদের মধ্যে রিফাত মতিহার হল ছাত্রলীগের উপ-গণশিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক। রিফাত শাখা ছাত্রলীগের
পদবঞ্চিত নেতা সাকিবুল হাসান বাকির অনুসারী বলে জানা গেছে।
এরপর বিকেলে শাখা ছাত্রলীগের পদবঞ্চিত
নেতা সাকিবুল হাসান বাকিসহ তার সঙ্গে থাকা বেশ কয়েকজনের উপর হামলা চালায় রাবি ছাত্রলীগের
যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ভাস্কর সাহার নেতৃত্বে তার অনুসারীরা।
অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা ভাস্কর সাহা বিশ্ববিদ্যালয়ের
শিক্ষা ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ছাত্রলীগের
যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লা-হিল-গালিবের অনুসারী।
এ প্রসঙ্গে সাকিবুল হাসান বাকি বলেন,
"মতিহার হলে আমার তিন ছোট ভাইকে ভাস্কর সাহা মারধর করে। ওরা আমার সাথে সম্মেলন
করেছিল, তাই বারবার ফোন দিচ্ছিল। আমরা ছোট ভাইদের নিয়ে বিকেলে পরিবহণে বসেছিলাম। এমন
সময় ভাস্করের নেতৃত্বে তার অনুসারীরা আমাদের উপর অতর্কিত হামলা চালায়। আমাদের সবার
অভিভাবক খায়রুজ্জামান লিটন চাচা রাজশাহীতে নেই। উনি আসার পর এ বিষয়ে আমরা তার কাছে
অভিযোগ জানাব।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, ক্যান্টিনে
খাবার খেতে গিয়ে জায়গায় ফাঁকা পেয়ে খেতে বসেন জাহিদ। খাবারের এক পর্যায়ে ভাস্কর সাহার
এক কর্মী এসে জাহিদকে বলে এটা তার জায়গা। কিন্তু জাহিদ তাকে অন্য জায়গায় বসতে বলায়
তাদের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। পরে খাওয়া শেষ করে জাহিদ তার বন্ধু রিফাতের ১২৯ নং
রুমে যান। পরে সেখানে ভাস্করের সাহার নেতৃত্ব কয়েকজন ওই রুমে ঢুকে তাদের দুজনকেই মারধর
করেন।
হামলার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের
যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ভাস্কর সাহাকে একাধিকবার ফোন দেওয়া হলেও তিনি সাড়া দেননি।
বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ
সম্পাদক আসাদুল্লা-হিল-গালিব বলেন, "ক্যাম্পাসের মতিহার হলের খাবার টেবিলে বসা
নিয়ে ঘটনার সূত্রপাত হয়। আমি জানতে পেরে আমার সভাপতিকে জানাই। কিন্তু তারা অপেক্ষা
না করে ছাত্রলীগের হল শাখা সেক্রেটারির গায়ে হাত তুলেন। তারপরেও সমস্যা সমাধান করার
জন্য সভাপতি তাদেরকে বারবার কল দিয়ে মতিহার হলের গেস্ট রুমে আসার জন্য বলেন। আমরা প্রায়
৪৫ মিনিট বসে থাকার পরেও তারা না এসে উল্টো বলে তারা তাদের মতো ব্যবস্থা নিবে। তারপরে
মতিহার হলের সেক্রেটারি ভাস্কর সাহা পরিবহনে দাড়ানো ছিল তখন বহিরাগত সন্ত্রাসীর এসে
আবার ভাস্করের গায়ে হাত দেয়। পরে দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয়।"
এদিকে, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিসিপ্লিনারি
বোর্ডের গৃহীত সুপারিশ এবং ৫২৫-তম সিন্ডিকেট সভা সূত্রে জানা যায়, মতিহার হলের আবাসিক
শিক্ষার্থীকে আটকে রেখে শারীরিক নির্যাতন ও ছিনতাইয়ের অভিযোগে শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম-সাধারণ
সম্পাদক ভাস্কর সাহাকে সতর্ক করা হয়।
রেজিস্ট্রার অধ্যাপক আবদুস সালাম স্বাক্ষরিত
আদেশে বলা হয়, ভবিষ্যতে আইন শৃঙ্খলা পরিপন্থী কোনো কর্মকাণ্ড করলে ভাস্কর সাহার বিরুদ্ধে
আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক
আসাবুল হক বলেন, আমি বিষয়টি শুনেছি। মতিহার হলের প্রাধ্যক্ষের সাথে কথা হয়েছে; তিনি
ইতোমধ্যেই সেখানে পৌঁছেছেন বলে জানিয়েছেন। কোনো শিক্ষার্থীকে মারধরের বিষয়টি প্রমাণিত
হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি মোতাবেক অভিযুক্ত শিক্ষার্থীকে শাস্তি প্রদান করা হবে।
ভাস্কর সাহার বিরুদ্ধে আগের অভিযোগগুলোর
প্রসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর জানান, "আমরা তাকে সতর্ক করেছিলাম; মূলত যে
শিক্ষার্থী অভিযোগটি করেছিল সে পরবর্তীতে অভিযোগ প্রত্যাহার করে নেওয়ায় আমাদের পক্ষে
তাকে শাস্তির আওতায় আনা সম্ভব হয়নি।"