কক্সবাজার সমুদ্র উপকূলে জেলেদের জালে ধরা পড়েছে একটি সামুদ্রিক বিষধর সাপ। এটি কর্ডাটা পর্বের ইলাপিডা পরিবারের বিষধর সামুদ্রিক সাপ, যাকে সাধারণত অ্যানুলেটেড সামুদ্রিক সাপ বা নীল ব্যান্ডেড সামুদ্রিক সাপ বলা হয়।
গত মঙ্গলবার বিকালে কক্সবাজার উপকূলের পেঁচার দ্বীপে এই সাপটি জেলেদের টানা জালে ধরা পড়ে। সাপটি এখন বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিওআরআই) মেরিন স্পেসিমেন মিউজিয়ামে সংরক্ষিত রয়েছে।
কক্সবাজারের সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউটের সমুদ্রবিজ্ঞানী তারিকুল ইসলাম বলেন, জেলেদের টানা জালে ধরা পড়া সামুদ্রিক সাপটি বিওআরআইর মেরিন স্পেসিমেন মিউজিয়ামে সংরক্ষিত আছে। এটি হাইড্রোফিস সায়ানোসিক্টাস; প্রধানত কর্ডাটা পর্বের ইলাপিডা পরিবারের বিষধর সামুদ্রিক সাপ। যাকে সাধারণত অ্যানুলেটেড সামুদ্রিক সাপ বা নীল ব্যান্ডেড সামুদ্রিক সাপ বলা হয়। এদের গায়ে হলুদ ও কালোর মিশ্রণে ডোরাকাটা দাগ থাকে।
তারিকুল ইসলাম বলেন, ‘ভারত মহাসাগরের ইরান, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, ফিলিপাইন এবং কোরিয়া, জাপান, সলোমন দ্বীপপুঞ্জ, দক্ষিণ চীন সাগর, পূর্ব চীন সাগর, পারস্য উপসাগরের ওমান, সংযুক্ত আরব আমিরাত, দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া এবং নিউগিনি অঞ্চলে এ জাতের সাপ বিচরণ করে। এটি অগভীর উপকূলীয় জলে বসবাস করে। এটি প্রায়ই চিংড়ি ট্রলার বা উপকূলীয় অঞ্চলে জেলেদের টানা জালে দুর্ঘটনাক্রমে ধরা পড়ে। এরা বিভিন্ন সামুদ্রিক অমেরুদণ্ডী প্রাণী এবং বিভিন্ন প্রজাতির মাছ প্রধান খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে। প্রজাতিটি সমুদ্রের সঙ্গে খুব অভিযোজিত।’
এই সমুদ্রবিজ্ঞানী আরও বলেন, এটি উপকূলীয় অগভীর এবং গভীর সমুদ্রে ভালোভাবে সাঁতার কাটতে পারে। ম্যানগ্রোভ অঞ্চলেও এদের দেখা পাওয়া যায়। স্থলভাগে এদের চলাফেরার গতি অত্যন্ত ধীর। তবে অন্যান্য সামুদ্রিক সাপের তুলনায় ভালো কাজ করে। তারা অত্যন্ত সতর্ক অবস্থায় চলাফেরা করে, তবে হুমকিতে থাকলে বা আক্রান্ত হলে আক্রমণাত্মক হয়ে উঠতে পারে। সাপটি বিষধর হলেও এদের কামড়ে মানুষের মৃত্যুর হার অত্যন্ত কম। এটি সরাসরি একসঙ্গে ৩ থেকে ১৮টির মতো বাচ্চা জন্ম দেয়। সদ্য জন্ম নেওয়া বাচ্চাটি প্রায় ২৮ সেমি লম্বা হতে পারে। এদের প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষের দৈর্ঘ্য প্রায় ১১৭ সেমি এবং নারীর দৈর্ঘ্য ১৬০ সেমি পর্যন্ত এবং দৈহিক ওজন প্রায় ১১০০ গ্রাম হতে পারে। বর্ষা-পরবর্তী মৌসুমে বিশেষ করে জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে এদের নারীদের বেশি দেখা যায়। মেয়ে বাচ্চাটি পুরুষ বাচ্চার তুলনায় আকারে বড় হয়।