বাংলাদেশ কারিগরি
শিক্ষা বোর্ড এর আদেশে পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলার সদ্য সমাপ্ত “এসএসসি ভোকেশনাল” পরীক্ষার লড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের ভেন্যু পরিবর্তন হওয়ায়
পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেনি দুইতৃতীয়াংশ পরীক্ষার্থী। নতুন কেন্দ্র “নাজিরপুর টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড
কলেজ” ৩০ কিলোমিটার
দুরত্ব ও যাতায়াত ব্যাবস্থা ভালো না থাকায় এমনটি হয়েছে।
শিক্ষক ও শিক্ষার্থী
সূত্রে জানা গেছে, এবারের “এসএসসি ভোকেশনাল” পরীক্ষায় জেলার নাজিরপুরের মালিখালী ইউনিয়নের এসএসসি
ভোকেশনাল” পরীক্ষার “লড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র
(কোড-৩৭০৩৬) ভেন্যু বাতিল করা হয়। এতে ওই এলাকার আশেপাশের তিনটি স্কুল “লড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়, দীর্ঘা
এম এল মাধ্যমিক বিদ্যালয়, মানিক নগর কারিগরি ইনষ্টিটিউট এর কারিগরি পরীক্ষার্থীরা বিপাকে
পরে । এই তিন স্কুল থেকে প্রতি বছর ৫০ থেকে ৬০ জন কারিগড়ি পরীক্ষা দিতো “লড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে
। পরীক্ষা কেন্দ্র ভেন্যু পরিবর্তন হওয়ার আদেশ আসায় ওই স্কুল গুলোর দশম শ্রেণির (কারিগরি)
২৫ থেকে ৩৫ জন শিক্ষার্থী রেজিষ্ট্রেশন করেনি। এ কারনে এবার এস এস সি ভোকেশনাল পরীক্ষার
জন্য ফর্মফিলাপ করে মাত্র ৩১ জন শিক্ষার্থী।
নির্ধারিত নতুন
পরীক্ষা কেন্দ্র “নাজিরপুর টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজ”, বাতিল হওয়া কেন্দ্র থেকে ৩০ থেকে ৩২ কিলোমিটার দূরে হওয়ায় ভোগান্তিতে
পরে ৩১ পরীক্ষার্থী। স্কুল গুলোর শিক্ষকদের কাছ থেকে জানা গেছে, এসএসসি ভোকেশনাল ” পরীক্ষার প্রথমদিনে পরীক্ষার্থীরা
মধুমতি নদী পারি দিয়ে চড়াই উৎরাই পার হয়ে পরীক্ষা দিতে আসলেও দ্বিতীয় দিনে পরীক্ষার্থীর
সংখ্যা কমে অনুপস্থিত হয় ৩জন। এভাবে শেষ পরীক্ষায় অনুপস্থিতির সংখ্যা দাঁড়ায় ১৮ জনে। শেষ পর্যন্ত ১৩ জন পরীক্ষার্থী অংশ নেয়। এতে করে
১৮ জন পরীক্ষার্থী শিক্ষা জীবন থেকে ঝরে পড়ে। এ নিয়ে বিদ্যালয় গুলোর শিক্ষকরা উদ্বিগ্ন
হয়ে পড়েছে।
এ বিষয়ে দীর্ঘা
এম এল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের (অনুপস্থিত) পরীক্ষার্থী অশোক কির্তনিয়া বলেন, নতুন কেন্দ্র
“নাজিরপুর
টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজ” ৩০ থেকে ৩২ কিলোমিটার দুরত্বের কারনে এবার পরীক্ষা
দিতে যেতে পারিনি। তাছাড়া আমি ওখানে থেকে যে পরীক্ষা দিবো তার ব্যায় আমার বাবা বহন
করতে পারবে না। যদি আবারও “লরা মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে” পরীক্ষা হয় তাহলে আগামী বছর পরীক্ষা দিবো।
লড়া মাধ্যমিক
বিদ্যালয়ের পরীক্ষার্থী লাবন্য মল্লিক বলেন, আমি পরীক্ষা দেয়ার জন্য প্রস্তুতি নিয়ে
ছিলাম। কিন্তু হঠাৎ করে কেন্দ্র পরিবর্তন হয়ে নাজিরপুর টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজ
হওয়ায় আমি আর পরীক্ষা দিতে পারলাম না। ৩৪/৩৫ কিলো মিটার দূরে গিয়ে পরীক্ষা দেয়া সম্ভব
না। এখানে যাতায়াত ব্যবস্থা খুবই খারাপ। তাছাড়া বড় একটি নদী খেয়া পার হয়ে যেতে হয়।
আমরা সকালে রওয়ানা দিয়ে পরীক্ষার হলে যেতে ৩ ঘন্টা লেগে যেতো। এভাবে পরীক্ষা দেয়া সম্ভব
না। যদি কখনও “লড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে” পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় ,তাহলে আবার পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নেবো। না
হলে আর পরীক্ষা দেয় হবে না।
এ বিষয়ে মানিক
নগর কারিগরি ইনষ্টিটিউট এর পরীক্ষায় অনুপস্থিত শিক্ষার্থী রনজিত বিশ্বাস বলেন, শিক্ষার্থীদের
কাছ থেকে জানতে পারছি এতো দূরে গিয়ে পরীক্ষা দেয়ার খরচ মেটাতে না পারায় পরীক্ষা দেয়
নাই। এবার লড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এবার এসএসসি ভোকেশনাল ১৮ জন পরীক্ষার্থী ছিলো।
শেষ পর্যন্ত আমাদের মাত্র ৭ জন পরীক্ষা দিয়েছে।
এ বিষয়ে লড়া
মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ট্রেড ইন্সট্রাক্টর (ইলেকট্রিক্যাল)
দিপঙ্কর সমাদ্দর বলেন, এভাবে কেন্দ্র কেটে নেয়ায় পরীক্ষার্থীরা বিপাকে পড়েছে। তিনটি
স্কুল দিয়ে এবার সব ক’টি পরীক্ষা
দিয়েছে মাত্র ১৩ জন। আর গত দশ বছর লড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র থাকায় প্রতি বছর প্রায়
৫০/৬০ পরীক্ষা দিতো। ফলাফলও ভালো করতো।
এ বিষয়ে লড়া
মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক প্রভাষ কান্তি বিশ্বাস বলেন, আমার বিদ্যালয়ের ভোকেশনাল
পরীক্ষার রেজিষ্ট্রেশন করেছিলো ৩৪ জন। পরীক্ষা কেন্দ্র নাজিরপুর সদরে চলে যাওয়ায় মাত্র
১৭ জন শিক্ষার্থী ফর্মফিলাপ করে। ১৩ শিক্ষার্থী আর ফর্মফিলাপ করে নাই। এ থেকে শেষ পর্যন্ত
মাত্র ৭ জন পরীক্ষার্থী অংশ নেয়।
এ বিষয়ে পিরোজপুর
মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো.ইদ্রিস আলী আযিযী বলেন, আমার এই বিষয়টা জানা ছিলো না। এ
ব্যাপারে খোঁজ খবর নিবো। আমি খোঁজ খবর নিয়ে এ ব্যাপারে উধ্বর্তন কর্তৃপক্ষকে অবহিত
করবো।
উল্লেখ্য ,
২০১৩ সালে “লরা মাধ্যমিক বিদ্যালয় “ কেন্দ্র অনুমোদন দেয়া হয়। ২০২৩ সাল পর্যন্ত এসএসসি ভোকেশনাল পরীক্ষা
অনুষ্ঠিত হয়। এ কেন্দ্রে লড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়, দীর্ঘা এম এল মাধ্যমিক বিদ্যালয়, মানিক
নগর কারিগরি ইনষ্টিটিউট এর কারিগরি পরীক্ষার্থীরা পরীক্ষা দিতো।