আজঃ শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪
শিরোনাম

ইউরোপে যাচ্ছে সাতক্ষীরার হিমসাগর

প্রকাশিত:শনিবার ২২ মে ২০২১ | হালনাগাদ:শনিবার ২২ মে ২০২১ | অনলাইন সংস্করণ
দর্পণ নিউজ ডেস্ক

Image

সাতক্ষীরা থেকে দিলীপ কুমার দেব

সাতক্ষীরার হিমসাগর আম ইউরোপের বাজারে পাড়ি জমিয়েছে। গোবিন্দভোগ ও গোপালভোগ আমের পর এবার সাতক্ষীরার নামকরা সুমিষ্টি আম হিমসাগর যাচ্ছে লন্ডন ও ইটালিতে। আম চাষীরা এবার ইউরোপের যুক্তরাজ্য ও ইতালি ছাড়াও ফ্রান্স, জার্মানি, পর্তুগালসহ মধ্যপ্রাচ্যর দেশগুলোতে আম রপ্তানি করছেন। ১৪টি বায়ার কোম্পানি এসব আম সংগ্রহ করছে এবং সাতক্ষীরার মেসার্স ইসলাম ট্রেডার্স-এর মাধ্যমে এই আম বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে। করোনা পরিস্থিতির কারণে এক বছর আম বিদেশে রপ্তানি বন্ধ থাকার পর আবারও বিদেশে আম পাঠাতে পেরে বেশ খুশি সাতক্ষীরার আম চাষিরা।


আম চাষ বদলে দিচ্ছে সাতক্ষীরার আম চাষিদের জীবনযাত্রা। ধানের পরিবর্তে সেই জমিতেই আম চাষ করে লাখ লাখ টাকা আয় করছেন কৃষকরা। জেলার এই আম অর্থনীতির চাকা বদলে দিয়েছে। সারাদেশে সাতক্ষীরা জেলার হিমসাগর আমের সুখ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছে। দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিদেশে যাচ্ছে সাতক্ষীরার আম। এবছর আম মৌসুমে বড় ধরণের প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে না পড়ায় আম চাষে লাভের মুখ দেখছে চাষিরা। কৃষক, দিনমজুর থেকে অনেকেই হয়েছেন আমচাষী। প্রতি বছরই বাড়ছে আম চাষের পরিধি। তবে যাতায়াত ব্যবস্থার কারণে আমের পরিবহণ খরচ বেশি পড়ায় আমের প্রকৃত মূল্য পাচ্ছে না চাষিরা। রাজশাহী থেকে ঢাকা পৌঁছাতে কেজি প্রতি আমের খরচ পড়ছে মাত্র এক টাকা ১৭ পয়সা। সেখানে সাতক্ষীরা থেকে ঢাকা পৌঁছাতে আমের কেজি প্রতি খরচ পড়ছে ১২ টাকা থেকে ১৫ টাকা। এরপরও গতকাল শুক্রবার থেকে ইউরোপের পথে সাতক্ষীরার আম। এদিকে দ্বিতীয় দফায় দেশের গন্ডি পেরিয়ে ইউরোপে যাচ্ছে সাতক্ষীরার আম। ৫ হাজার কেজি হিমসাগর আম ইতালি, ফ্রান্স ও লন্ডনে রফতানির জন্য সাতক্ষীরা থেকে যাত্রা শুরুর মাধ্যমে এ মৌসুমে এই সাতক্ষীরা থেকে আম রফতানি শুরু হলো। আম চাষিরা বলছেন, বিদেশে আম পাঠাতে পেরে তাঁরা খুবই খুশি।


সাতক্ষীরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্র জানায়, আগের দুই বছর প্রথমবার যে দামে আম রফতানি হয়েছিল, এবার তার চেয়ে অনেক বেশি আম রফতানি হচ্ছে সাতক্ষীরা থেকে। শুক্রবার সকালে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার মাধবকাটি ছয়ঘরিয়া গ্রামের কৃষক মোঃ হাফিজুর রহমানের আম বাগান থেকে সরকারি নিয়ম মেনে ৫ মেট্রিক টন হিমসাগর আম পাঠানো হয়েছে। রফতানি কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক এসএম মোস্তফা কামাল। এসয় তাঁকে সহযোগিতা করেন সাতক্ষীরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর উপপরিচালক কৃষিবিদ মোঃ নূরুল ইসলাম। সাতক্ষীরার মেসার্স ইসলাম ট্রেডার্স-এর মাধ্যমে এই আম বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে। ১৪টি বায়ার কোম্পানি জেলার প্রান্তিক পর্যায় থেকে এসব আম সংগ্রহ করছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর রপ্তানিকৃত আমের জন্য সাড়ে ৩শ চাষীকে আলাদা প্রশিক্ষণ দিয়েছে। রপ্তানিকারকরা ন্যায্য মুল্যে আম ক্রয় করে সকল প্রস্তুতি শেষে বিদেশে পাঠাচ্ছে। ফলে চাষী ও ব্যবসায়ী উভয় লাভবান হওয়ার পাশাপাশি দেশে রেমিটেন্স আসবে বলে জানায় সাতক্ষীরা কৃষি অধিদপ্তর।

সাতক্ষীরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, এর আগে সাতক্ষীরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও এফএও এর যৌথ কারিগরী সহায়তায় গত ৯ মে জার্মানীতে রপ্তানীর উদ্দেশ্যে সাতক্ষীরা ছাড়ে এক হাজার কেজি গোবিন্দভোগ ও গোপালভোগ জাতের আম। সাতক্ষীরার মাটি ও আবহাওয়া অনুকূলে হওয়ায় অন্যান্য স্থানের তুলনায় আগেই বাজারজাত করা যায় সাতক্ষীরার আম। আমের স্বাদও বেশ ভালো। এসব কারণে ২০১৪ সাল থেকে সাতক্ষীরার আম রপ্তানি হচ্ছে ইউরোপের ফ্রান্স, জার্মানি, যুক্তরাজ্য, ইতালি ও পর্তুগালে। গত মৌসুমে ঘূর্ণিঝড় আম্পানের কারণে রপ্তানি বিঘ্নিত হলেও কৃষি বিভাগের প্রচেষ্টায় এবং বেসরকারি সংস্থা উত্তরণ ও সলিডারিডাড নেটওয়ার্ক এশিয়ার সফল প্রকল্পের সহযোগিতায় চলতি মৌসুমে ৮ মে থেকে গোবিন্দভোগ ও গোপালভোগ জাতের আম পাঠানোর মাধ্যমে বিদেশে আম রপ্তানি কার্যক্রম শুরু হয়। এদিকে নির্ধারিত সময়ের আগেই অপরিপক্ক হিমসাগর আম বিক্রির অভিযোগ উঠেছে। ২১ মে থেকে সরকারী ভাবে হিমসাগর আম পাড়ার কথা থাকলেও গত ১৫ দিন ধরে সাতক্ষীরার বাজারে দেদারসে হিমসাগর আম বিক্রি হচ্ছে। এসব অপরিপক্ক আমের রং বাড়াতে ক্ষতিকর রাসায়নিক (ক্যামিকেল) মিশিয়ে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্নস্থানে পাঠাচ্ছে মুনাফালোভী আম চাষী ও ব্যবসায়ীরা। বিভিন্ন আম চাষী ও আড়তদারদের সাথে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। বাজার মনিটরিং কমিটিও নিয়মিত তদারকি করলেও আম বাগান বা গাছ তলায় কোন তদারকি না থাকায় আমে ক্যামিকেল মেশানো সহজ কাজ বলে মনে করেন আম চাষীরাও। বেশী লাভের আশায় অনেক আম চাষী অপরিপক্ক আম পেড়ে রাসায়নিক দ্রব্য মিশিয়ে তা বাজারে বিক্রি করছে। গত কয়েকদিনে বেশ কয়েকটি বাজার ঘুরে তথ্যানুন্ধানে এসব জানা গেছে।


ব্যবসায়িরা জানান, ক্ষতিকর ক্যামিকেল মেশানো আম সাতক্ষীরার বাজারে বিক্রি হয় না। বাজারে বর্তমানে আমের ভিতরে ৫০ ভাগ কাঁচা ও ৫০ ভাগ পাকা দেখেই পাইকাররা আম কিনে থাকে। ক্রয় করা আম ট্রাকে লোড দিয়ে ঢাকা বা তার বাইরে যেতে ৩/৪ দিন সময় লাগবে। ট্রাক থেকে তিন চার দিন পর আম আনলোড করার পর আমটি সম্পূর্ন পেকে যাবে। এ অবস্থায় আমে ক্ষতিকর কেমিকেল মেশানোর প্রয়োজনই নেই। তারা আরও জানান, বাজারে বর্তমানে প্রতি মন হিমসাগর আম ১৪ থেকে দুই হাজার টাকা, গোবিন্দভোগ ১৬ থেকে ১৮শ টাকায়, গোপালভোগ ১৪ থেকে ১৬শ টাকায় ও আটিগুটি সাত থেকে আটশ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

আমচাষীরা জানান, আম বেচাকেনার জন্য সাতক্ষীরার বিভিন্ন স্থানে সৃষ্টি হয়েছে পাইকারি হাটবাজার ও আড়ত। আমের মৌসুমে ওই আম বাজারের আড়তে স্থানীয় ও পার্শ্ববর্তী এলাকার আমগাছের আম বেচাকেনা হচ্ছে। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে পাইকররা এখানে এসে ট্রাক ট্রাক আম কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। আবার স্থানীয়দের পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন এলাকার আম ব্যবসায়ী অনেকে কয়েক মাস আগে থেকেই এখানে এসে গাছ দেখে অগ্রিম আমসহ গাছ কিনে নেন। অনেকে এখন একেকটি আম গাছ কয়েক বছরের জন্য কিনে নেন, যা ফলন হবে সেটার জন্য। ওই সকল আম গাছের পরিচর্যা, দেখভাল, আমভাঙা, বাজারজাতকরণ, বেচাকেনাসহ সার্বিক এই আমকে ঘিরে তৈরি হয়েছে অনেকের কর্মসংস্থান।

কলারোয়া উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মোঃ রফিকুল ইসলাম বলেন, বাইরে থেকে যারা আম কিনতে আসবেন, তাদেরকে কমপক্ষে তিন দিন কোয়ারিন্টিনে থাকতে হয়। এছাড়া আম চাষিদের সুবিধার্থে ২১ মে হিমসাগর, ২৭ মে ল্যাংড়া, ৪ জুন আম্রপালি ভাঙার তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। তিনি আরো জানান, আমের মৈৗসুমের শুরু থেকে মাঝামাঝি পর্যন্ত কলারোয়ায় ঝড়-বৃষ্টি হয়নি। তবে তাপদাহে আম কিছুদিন আগে থেকে পরিপক্ক হয়েছে। তাই আমভাঙার দিন ও তারিখও এগিয়ে আনা হয়েছে।

সাতক্ষীরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক কৃষিবিদ মোঃ নুরুল ইসলাম বলেন, এবার সাতক্ষীরা জেলায় ৪ হাজর ১শ হেক্টর জমিতে ৪০ হাজার মেট্রিক টন আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। এর মধ্যে বিভিন্ন জাতের ৫০০ মেট্রিক টন আম বিদেশে রফতানি করা হবে।

সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক এসএম মোস্তফা কামাল বলেন, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের সহযোগিতায় সফল প্রল্পের মাধ্যমে সাতক্ষীরা অঞ্চল থেকে নিরাপদ স্বাস্থ্যসম্মত আম রফতানি হচ্ছে। আশা করছি এই আম রফতানি ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকবে।


আরও খবর



ময়মনসিংহে দুই বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে প্রাণ গেল ২ জনের

প্রকাশিত:মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪ | হালনাগাদ:মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪ | অনলাইন সংস্করণ
ময়মনসিংহ প্রতিনিধি

Image

ময়মনসিংহের তারাকান্দায় দুই বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে দুইজন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও ২৫ জন।

মঙ্গলবার (১৬ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ৮টার দিকে ময়মনসিংহ-তারাকান্দা সড়কের কোদালধর বাজারের রামচন্দ্রপুর এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।

তারাকান্দা থানার ওসি ওয়াজেদ আলী গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পের এসআই জাহাঙ্গীর আলম বলেন, তারাকান্দায় দুই বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে এখন পর্যন্ত হাসপাতালে অন্তত ১০-১২ জনকে আনা হয়েছে। এদের মাঝে ছয়জনকে ভর্তি করা হয়েছে।

নিউজ ট্যাগ: ময়মনসিংহ

আরও খবর



ভারতে লোকসভা নির্বাচনের প্রথম দফার ভোটগ্রহণ চলছে

প্রকাশিত:শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪ | হালনাগাদ:শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪ | অনলাইন সংস্করণ
আন্তর্জাতিক ডেস্ক

Image

ভারতে চলছে ১৮তম লোকসভা নির্বাচনের প্রথম দফার ভোটগ্রহণ। স্থানীয় সময় সকাল সাতটা থেকে এই ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে। সাত দফার এই নির্বাচনে আজ প্রথম দফায় ২১টি রাজ্য এবং‌ কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল মিলিয়ে দেশের ১০২টি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে। সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত চলবে ভোটগ্রহণ। খবর হিন্দুস্তান টাইমসের।

এই রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলোর মধ্যে রয়েছে অরুণাচল, আসাম, বিহার, ছত্তিশগড়, মধ্যপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র, মণিপুর, মেঘালয়, মিজোরাম, নাগাল্যান্ড, রাজস্থান, সিকিম, তামিলনাড়ু, ত্রিপুরা, উত্তরপ্রদেশ, উত্তরাখণ্ড এবং পশ্চিমবঙ্গ।

নির্বাচন কমিশন ১ লাখ ৮৭ হাজার ভোটকেন্দ্র জুড়ে ১৮ লাখেরও বেশি ভোটকর্মী মোতায়েন করেছে। নির্বাচনের প্রথম ধাপে ১৬ কোটি ৬৩ লাখ ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। এর মধ্যে ৮ কোটি ৪০ লাখ পুরুষ, ৮ কোটি ২৩ লাখ নারী এবং ১১ হাজার ৩৭১ জন তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার রয়েছেন।

২০ থেকে ২৯ বছর বয়সী ৩ কোটি ৫১ লাখ তরুণ ভোটার ছাড়াও প্রথমবারের মতো ভোট দেবেন ৩৫ লাখ ৬৭ হাজার ভোটার।


আরও খবর



পাকিস্তানে কয়লাখনিতে ভয়াবহ বিস্ফোরণ, নিহত ১২

প্রকাশিত:বুধবার ২০ মার্চ ২০24 | হালনাগাদ:বুধবার ২০ মার্চ ২০24 | অনলাইন সংস্করণ
আন্তর্জাতিক ডেস্ক

Image

পাকিস্তানের একটি কয়লাখনিতে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। দেশটির বেলুচিস্তান প্রদেশের হারনাই জেলায় বুধবারের (২০ মার্চ) ওই ঘটনায় ১২ জন খনি শ্রমিক নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। আট জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে।

খনি পরিদর্শক আব্দুল রশিদ জানিয়েছেন, ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা পড়া সব মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। মিথেন গ্যাসের কারণে খনিতে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। তদন্তকারীরা এখনও বিস্ফোরণের কারণ নির্ধারণে কাজ করছেন।

খনি দুর্ঘটনায় নিহতদের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ।


আরও খবর



বাপ-দাদার শেখানো পেশায় যাদের জীবন জীবিকা

প্রকাশিত:রবিবার ২৪ মার্চ 20২৪ | হালনাগাদ:রবিবার ২৪ মার্চ 20২৪ | অনলাইন সংস্করণ
মামুন হোসেন, পাবনা

Image

এক সময় মাটির তৈরি হাঁড়ি-পাতিল, থালা-বাসন, ঘটি, মটকা, সরা, চারি, কাসা, কলস, ব্যাংক, প্রদীপ, পুতুল, কলকি, দেবদেবীর মূর্তি ও ঝাঝরের বিকল্প ছিল না তবে আধুনিকতার ছোঁয়ায় মানুষের রুচির পরিবর্তনে মাটির তৈরি সামগ্রীর স্থান দখল করে নিয়েছে প্লাস্টিক, মেলামাইন, স্টিল আর অ্যালুমিনিয়ামের তৈরি নানা রকম আধুনিক সামগ্রী। তাই বর্তমানে বাজারে চাহিদা কম থাকায় এবং কাঁচামালের চড়ামূল্য ও পুঁজির অভাবে টিকতে না পাড়ায় সংকটে পড়েছে পাবনার ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্পীরা।

মৃৎশিল্পীরা জানান, বর্তমান মানুষের ব্যবহারিক জীবনে মৃৎশিল্পের তেমন কোন আর ভূমিকা নেই। প্রযুক্তি বিকাশের এ যুগে এই শিল্পের প্রযুক্তিগত উন্নয়ন সাধিত না হওয়ায় বর্তমানে এই পেশায় টিকে থাকা অনেক কঠিন হয়ে পড়েছে। তবে কালের আবর্তে বাপ-দাদার পেশা হারিয়ে যেতে চললেও এখনোও টিকিয়ে রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন পাবনা চাটমোহর উপজেলার নিমাইচড়া ইউনিয়নের গৌড়িপুর পালপাড়া গ্রামের মৃৎশিল্পীরা।

সরেজমিনে গৌড়িপুর পালপাড়ায় গিয়ে দেখা যায়, ভোরের আলো ফুটতেই মাটির হাঁড়ি পাতিল তৈরি করে রোদে শুকাতে দিচ্ছে কুমাররা, কেউ বা ব্যস্ত সময় পার করছেন বিভিন্ন সামগ্রী তৈরীতে, কেউ বা করছেন রং এভাবেই সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত চলছে তাদের কর্মব্যস্ততা।

পালপাড়ায় গিয়ে কথা হয় মায়া রাণীর সাথে তিনি জানান, দীর্ঘ ৫০ বছর ধরে মাটির তৈজসপত্র তৈরী করে আসছেন তিনি। আগে মাটির সামগ্রীর প্রচুর চাহিদা থাকলেও এখন আর তেমন কোন চাহিদা নেই, তাই শীত মৌসুমে পিঠাপুলির সামগ্রী তৈরী করেই কোনোমতে চলছে তার সংসার।

এমনিতেই ব্যবসা চলে কম তার উপরে নেই রাস্তাঘাট তাই গৌড়িপুর পালপাড়া থেকে নিমাইচড়া বাজার পর্যন্ত পাকা সড়কের দাবি জানান তিনি।

মৃৎপাত্র পোড়ানোর সময় কথা হয় দুলাল পালের সাথে কথা হইলে তিনি জানান, প্রায় ৪০ বছর ধরে বাপ-দাদার শেখানো পেশায় কাজ করছেন। আগের দিনে বাজারে মৃৎপাত্রের প্রচুর চাহিদা থাকলেও এখন অনেকটাই কম। অন্য কোন কাজ না জানায় এই পেশাই আঁকড়ে ধরে জীবিকা নির্বাহ করছেন তিনি।

দুলাল পাল আরও বলেন, পেশাগত প্রয়োজনে ব্যাংক ঋণ পাননা তারা। সহজ শর্তে ব্যাংক ঋণ পেলে নতুন করে ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখেন তিনি। স্থানীয় মৃৎশিল্পীরা মনে করেন, ঐতিহ্যবাহী এই মৃৎশিল্পকে বাঁচাতে সরকারের বহুমুখী উন্নয়ন কর্মসূচি গ্রহণ করা খুবই প্রয়োজন।

কথা হয় বিকাশ পাল, সম্বল পাল, দরদী পাল ও সুবর্ণা পালের সঙ্গে, তারা এই প্রতিবেদককে জানান, এক সময়ে এই গ্রামে মৃৎশিল্পের রমরমা ব্যবসা ছিল। আগে গৌড়িপুর গ্রামে প্রায় ১১০টি ঘর মৃৎশিল্পের কাজ করতো কিন্তু বর্তমানে বেশির ভাগ পালরা দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ায় এখন ১০-১৫ টি ঘরে প্রায় ৩০-৩৫ জন পাল এই কাজের সাথে জড়িত বলে জানান তারা।

তারা আরও জানান, মৃৎশিল্পের সঙ্গে জড়িতরা সরকারি কোনো ধরনের সুযোগ-সুবিধা বা প্রণোদনা কোন দিন পেয়েছেন কি না তা তাদের জানা নেই। তারা বলেন, এই শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে হলে সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে। এছাড়াও মৃৎশিল্পীদের শিল্প জ্ঞান এবং অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে যদি আধুনিক করে গড়ে তোলা যায় তা হলেই কেবল গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যবাহী এই মৃৎশিল্পকে বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব বলে তারা মনে করেন।

কথা হয় গোপাল চন্দ্রপালের সঙ্গে তিনি বলেন, আগের দিনে মৃৎশিল্পের প্রয়োজনীয় উপকরণ যেমন এঁটেল মাটি, রঙ, যন্ত্রপাতি ও জ্বালানি ছিল সহজলভ্য। কিন্তু বর্তমানে এসব প্রয়োজনীয় উপকরণের দাম বেড়ে যাওয়ায় তারা এখন হিমশিম খাচ্ছেন। তারা জানান, পূর্বে যেখানে বিনামূল্যে মাটি সংগ্রহ করা যেত বর্তমানে সেই মাটি ১০-১২ হাজার টাকায় কিনতে হয়। আগে খড় কিনতে তাদের কোন টাকা পয়সা লাগতো না, এখন সেই এক বুঝা খড় ৩০০ টাকায় কিনতে হয় তাদের।

গোপালচন্দ্র পাল বলেন, বর্ষা মৌসুমে তাদের হাতে তেমন কোন কাজ না থাকায় সে সময় বিভিন্ন জায়গা থেকে মাটি সংগ্রহ করে থাকেন তারা। তবে অনেক সময় মাটি কিনতে আইনি জটিলতায় পড়তে হয় তাদের।

বাড়ির উঠোনে পাত্রগুলোতে রং করতে দেখা যায় উজ্জ্বল কুমার পালকে, তার সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, সাধারণত মৃৎপাত্রগুলো কুমার পরিবারের নারী-পুরুষ উভয়ে মিলেমিশে তৈরি করে থাকেন। এই তৈরিকৃত সামগ্রী বিভিন্ন এলাকার পাইকাররা এসে কিনেন। অনেকে আবার বাড়ি বাড়ি ফেরি করেও বিক্রি করেন। বর্ষা মৌসুমে কাজ বন্ধ থাকায় কুমারদের অবস্থা সবচেয়ে বেশি খারাপ যায়। সে সময় কুমাররা সারা বছর কাজ করার জন্য এঁটেল মাটিসহ প্রয়োজনীয় কাঁচামাল সংগ্রহে নেমে পড়েন। শুধু পাবনা নয়, গোটা দেশে এ পেশায় নেমে এসেছে চরম বিপর্যয়। এই ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে কারও যেন কোন মাথাব্যথাই নেই।

বাড়ির উঠোনে মাটির পাত্র তৈরি করছেন অনিতা পাল ও প্রার্থনা পাল তাদের সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, আগের দিনে তাদের ব্যবসা অনেক ভালো চলতো বর্তমানে মানুষ প্লাস্টিক, এ্যালুমিনিয়াম ব্যবহার করায় এখন কম চলে। তারা বলেন, আগে কলসিসহ বিভিন্ন তৈজসপত্র তৈরী করলেও বর্তমানে তা ব্যবহার কম হওয়ায় এখন শুধু ঝাঁঝর, কাসা, হাঁড়ি পাতিল তৈরী করে থাকেন তারা। 

এবিষয়ে নিমাইচড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পারভিন সুলতানা মুক্তি বলেন, তারা কখনও আমার কাছে কোন দাবি নিয়ে আসেনি। আমি আমার এলাকার অনেক সড়কের কাজ করেছি, তাদের সড়কের বিষয়েও কাজ করার চেষ্টা করবো এবং আমি সবসময় তাদের পাশে থাকবো।


আরও খবর



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জিয়া রহমান মারা গেছেন

প্রকাশিত:শনিবার ২৩ মার্চ ২০২৪ | হালনাগাদ:শনিবার ২৩ মার্চ ২০২৪ | অনলাইন সংস্করণ
বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি

Image

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন এবং ক্রিমিনোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. জিয়া রহমান মারা গেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।

শনিবার (২৩ মার্চ) ভোর পৌনে ৪টার দিকে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে তিনি মারা যান। মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের কারণে তার মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গেছে। আজ (২৩ মার্চ) বাদ জোহর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে তার নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হবে।

ঢাবির নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. হাসান আল শাফী বলেন, স্যার রাত ৩টার দিকে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে আমরা উনাকে হাসপাতালে নিয়ে আসি। এরপর হঠাৎ তার অবস্থার অবনতি হয় এবং কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।’

অধ্যাপক জিয়া রহমান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান। এছাড়া ২০২২ সালের ১৩ জানুয়ারি থেকে তিনি সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের নীল দলের সিনিয়র সদস্য ছিলেন।


আরও খবর