ইউক্রেনের অলভিয়া সমুদ্রবন্দরে আটকেপড়া
বাংলাদেশি জাহাজ ‘এম ভি বাংলার সমৃদ্ধি’র ২৮ নাবিককে
নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ সময় বৃহস্পতিবার (৩ মার্চ) রাত ৮টায় তাদের
জাহাজ থেকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়। বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের (বিএসসি) মহাব্যবস্থাপক
ক্যাপ্টেন মো. মুজিবুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
তিনি বলেন, ওই ২৮ নাবিককে এখন যুদ্ধকালীন
নিরাপদ স্থান অর্থাৎ বাংকারে নেওয়া হচ্ছে।
এর আগে বাংলাদেশ সময় বুধবার (২ মার্চ)
দিবাগত রাত সাড়ে ৯টার দিকে এম ভি বাংলার সমৃদ্ধিতে হামলার ঘটনা ঘটে। এতে জাহাজে লাগা
আগুন তাৎক্ষণিকভাবে নাবিকদের প্রচেষ্টায় নেভানো হয়। এ ঘটনায় জাহাজের থার্ড ইঞ্জিনিয়ার
মো. হাদিসুর রহমান আরিফ (২৯) মৃত্যুবরণ করেন।
হাদিসুরের বাড়ি বরগুনার বেতাগী উপজেলার
হোসনাবাদ ইউনিয়নের কদমতলা বাজার এলাকায়। তিনি ওই এলাকার চেয়ারম্যান বাড়ির বাসিন্দা
মো. আবদুর রাজ্জাক (অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক) ও আমেনা বেগম দম্পতির বড় ছেলে।
তবে অক্ষত থাকেন জাহাজের ২৮ নাবিক। তাদের প্রতিটি মুহূর্ত কাটে আতংকের মধ্যেই। মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে আসা নাবিকরা প্রিয়জনদের কাছে ভিডিও বার্তা পাঠান বাঁচার আকুতি নিয়ে। এসব ভিডিওতে কান্নাজড়িত কণ্ঠে সরকারকে তাদের উদ্ধারের জন্য যথাযথ পদক্ষেপ নিতে আহ্বান জানান।
যাদের উদ্ধার করা হলো:
জিএম নুর ই আলম। মাস্টার। সিডিসি নম্বর
৪৭৪২। ১০ মার্চ ২০২১ থেকে তিনি সেই জাহাজে কর্মরত।
মো. মনসুরুল আমিন। এডিশনাল মাস্টার। সিডিসি
৪২৭১। ১৯ জানুয়ারি ২০২২ থেকে কর্মরত।
সেলিম মিয়া। এসিও। সিডিসি নম্বর ৬ অক্টোবর
২০২১ থেকে কর্মরত।
রামাকৃঞ্চ বিশ্বাস। সেকেন্ড অফিসার। সিডিসি
নম্বর ৬৩৭০। ২০২২ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি কর্মরত।
মো. রুকনুজ্জামান রাজিব। থার্ড অফিসার।
সিডিসি নম্বর ৯৬৩৭। ৬ অক্টোবর ২০২১ থেকে কর্মরত।
ফারিয়াতুল জান্নাত তুলি। ডিসি-১। সিডিসি
নম্বার ১০৬৯৮। ৬ অক্টোবর ২০২১ থেকে কর্মরত।
ফয়সাল আহমেদ সেতু। ডিসি-২। সিডিসি নম্বর
১০৮৭৬। ৬ অক্টোবর ২০২১ থেকে কর্মরত।
মোহাম্মদ ওমর ফারুক। চিফ ইঞ্জিনিয়ার। সিডিসি
নম্বার ৪১০৪। ১৬ মার্চ ২০২১ থেকে কর্মরত।
সৈয়দ আসিফুল ইসলাম। এডিশনাল চিফ ইঞ্জিনিয়ার।
সিডিসি নম্বার ৬৩৪৮। ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২২ থেকে কর্মরত।
রবিউল আউয়াল। সেকেন্ড ইঞ্জিনিয়ার। সিডিসি
৬৬৩২। ৬ অক্টোবর ২০২১ থেকে কর্মরত।
সালমান সারোয়ার সামি। চতুর্থ ইঞ্জিনিয়ার।
সিডিসি ৯৪২১। ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২২ থেকে কর্মরত।
ফারজানা ইসলাম মৌ। ইসি-১। সিডিসি ১০৮১৪।
২০ ফেব্রুয়ারি ২০২২ থেকে কর্মরত।
মো. শেখ সাদি। ইসি-২। সিডিসি ১০৮৯৬। ৬
অক্টোবর ২০২১ থেকে কর্মরত।
মো. মাসুদুর রহমান। ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার।
সিডিসি ৫৬৯০। ৮ ফেব্রুয়ারি ২০২২ থেকে কর্মরত।
মো. জামাল হোসাইন। বসুন। বিএসসি টি ১১২০।
১২ ডিসেম্বর ২০২১ থেকে কর্মরত।
মো. হানিফ। এবি-১। সিডিসি ১৩৮১৩। ১৯ জানুয়ারি ২০২২ থেকে কর্মরত।
মো. আমিনুর ইসলাম। এবি-২। সিডিসি ৩২২৩৬।
১৯ জানুয়ারি ২০২২ থেকে কর্মরত।
মো. মহিন উদ্দিন। এবি-৩। বিএসসি ১১১২।
৮ ফেব্রুয়ারি ২০২২ থেকে কর্মরত।
হোসাইন মোহাম্মদ রাকিব। ওএস-১। টি ৩৩৮৮৫।
১৯ জানুয়ারি ২০২২ থেকে কর্মরত।
সাজজাদ ইবনে আলম। ওএস-২। টি ৩৩৭৬১। ১৯
জানুয়ারি ২০২২ থেকে কর্মরত।
নাজমুল উদ্দিন। ফিটার। টি ৩৩৭২৪। ১৯ জানুয়ারি
২০২২ থেকে কর্মরত।
মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম। ইলেকট্রিশিয়ান।
বিএসসি ১১২০। ৬ অক্টোবর ২০২১ থেকে কর্মরত।
সারোয়ার হোসাইন। অয়েলার-১। বিএসসি ১১১৫।
৬ অক্টোবর ২০২১ সাল থেকে কর্মরত।
মো. মাসুম বিল্লাহ। অয়েলার-২। বিএসসি ৩২৯২৬।
১৯ জানুয়ারি ২০২২ থেকে কর্মরত।
মোহাম্মদ হোসাইন। অয়েলার-৩। সিও ৭৫১৪।
৬ অক্টোবর ২০২১ থেকে কর্মরত।
মো. আতিকুর রহমান। ফায়ারম্যান। টি ৩৪২১৮।
৬ অক্টোবর ২০২১ থেকে কর্মরত।
মো. শফিকুর রহমান। চিফ কুক। টি ২৯৬১২।
৮ ফেব্রুয়ারি ২০২২ থেকে কর্মরত।
মো. সাইফ উদ্দিন। জিএস। টি ১৪২০৮। ৮ ফেব্রুয়ারি ২০২২ থেকে কর্মরত।
এ বিষয়ে বৃহস্পতিবার (৩ মার্চ) সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, আমরা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে যোগাযোগ রাখছি। ইতোমধ্যে আমাদের পোল্যান্ডের দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছে। আমাদের সচিবের সঙ্গে বেশ কয়েকবার কথা হয়েছে, জাহাজের ক্যাপ্টেনের সঙ্গে তিনি কথা বলেছেন। তারাও চাচ্ছেন, তাদের নিরাপত্তাটা নিশ্চিত হোক। যদি জাহাজ থেকে নেমে যায়, তবে নিরাপত্তা ঝুঁকি বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। আমরা চেষ্টা চালাচ্ছি, আরও নিরাপদ রাস্তা বের করতে পারি। কূটনৈতিক পর্যায়ে ব্যাপক তৎপরতা চালাচ্ছি। তাহলে হয়তো তাদের সেখান থেকে নিয়ে আসতে পারবো।
বিএসসি সূত্রে জানা গেছে, যুদ্ধ শুরুর আগে ২২ ফেব্রুয়ারি এম ভি বাংলার সমৃদ্ধি জাহাজটি ইউক্রেনের অলভিয়া বন্দরে পৌঁছায়। ওই বন্দর থেকে পণ্য আনার কথা থাকলেও যুদ্ধের কারণে সেটি আটকে যায়। এরপর থেকে ২৯ জন নাবিক নিয়ে জাহাজটি ওই বন্দরে অবস্থান করে। চীনে তৈরি ‘এম ভি বাংলার সমৃদ্ধি’ জাহাজ ২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর বিএসসির বহরে যুক্ত হয়।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে হামলা চালায়
রাশিয়া। টানা কয়েকদিন ধরেই দুপক্ষের মধ্যে চলছে লড়াই।