আজঃ শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
শিরোনাম

ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়ার এমডিকে হত্যা চেষ্টা: সাংবাদিক নেতাদের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ

প্রকাশিত:বৃহস্পতিবার ১১ নভেম্বর ২০২১ | হালনাগাদ:বৃহস্পতিবার ১১ নভেম্বর ২০২১ | অনলাইন সংস্করণ
দর্পণ নিউজ ডেস্ক

Image

ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপ লিমেটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও বিশিষ্ট শিল্পপতি সায়েম সোবহান আনভীরকে হত্যা চেষ্টার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন সাংবাদিক নেতারা। তারা এই ঘটনার সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষ তদন্ত দাবী করে দায়ীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন।

রাজধানীর ভাটারা থানা পুলিশ ইস্টওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপ লিমেটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহান আনভীরকে হত্যা চেষ্টার অভিযোগে সাইফুল ইসলাম সাদ (২৩) নামে এক যুবককে গত ৫ নভেম্বর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা থেকে গ্রেফতার করে। সাদের বাড়ি চট্টগ্রামের পটিয়ায়। সাদ পুলিশকে বলেছে চট্টগ্রাম-১২ আসনের (পটিয়া) সংসদ সদস্য ও জাতীয় সংসদের হুইপ সামশুল হক চৌধুরী এবং তার ছেলে নাজমুল করিম  চৌধুরী ওরফে শারুণের নির্দেশে এই হত্যাকান্ডের ঘৃণ্য পরিকল্পনা নেয়া হয়। এজন্য শারুন সাদকে কিছু নগদ অর্থ ও একটি আগ্নেয়াস্ত্র দেওয়ার কথাও স্বীকার করেছেন। সাদকে পুলিশ তিন দিনের রিমান্ডে নিয়েছে। এবিষয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ অব্যাহত রয়েছে।

সাংবাদিক নেতারা এই ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান।

এ বিষয়ে দেশ বরেণ্য সাংবাদিক, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাবেক তথ্য উপদেষ্টা, অ্যাটকোর সিনিয়র সহ-সভাপতি ও ডেইলী অবজারভার এর সম্পাদক ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেন, আমি প্রথমত এই ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। আমি মনে করি এটা একটা বড় ধরনের ষড়যন্ত্র। যেহেতু পুলিশ একজনকে গ্রেফতার করেছে আশা করা যায় এর সুষ্ঠ সমাধানও হবে। এবং দায়ীরা দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি পাবে।

এছাড়া বসুন্ধরা গ্রুপের এমডি তো শুধু একজন গণমাধ্যম উদ্যোক্তাই নন। তিনি একজন শীর্ষ ব্যবসায়ীও। এমন কি সায়েম সোবহান আনভীর একজন ক্রীড়ামোদী মানুষ। দেশের একটি বড় ক্রীড়া ক্লাবের তিনি চেয়ারম্যান। ফলে এমন একজন ব্যক্তিকে যারা হত্যার পরিকল্পনা করেন অবশ্যই তারা দুস্কৃতিকারী। এছাড়া কোন ব্যক্তিকেই হত্যার হুমকি দেওয়া বা হত্যার পরিকল্পনা করা আমি সমর্থন করিনা। এক্ষেত্রেও আমি এর তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। আশা রাখি আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সুষ্ঠ তদন্তের মাধ্যমে এর প্রকৃত কারণ ও অপরাধীরা চিহ্নিত হবে এবং এর একটা দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হবে বলে তিনি মনে করেন।

এবিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, গণমাধ্যমের একজন মালিক ও একজন প্রতিষ্ঠিত শিল্পপতিকে হত্যার চেষ্টা আমাদের জন্য উদ্বেগ ও আতঙ্কের। শুধু তিনি কেন, যেকোন নাগরিককে হত্যাচেষ্টা অত্যন্ত নিন্দনীয় ও ফৌজদারি অপরাধ। আমি এই ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। এ ঘটনায় একজন গ্রেফতার হয়েছে, তাকে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে । পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে বের করা উচিত এর নেপথ্য ষড়যন্ত্রকারী হিসেবে কারা আছেন। নেপথ্য ষড়যন্ত্রকারীদের চিহ্নত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানাই। পাশাপাশি হত্যা চেষ্টার ঘটনায় থানায় দায়ের করা মামলার সুষ্ঠ তদন্তের জন্য পুলিশ প্রশাসনের কাছে অনুরোধ করছি।

ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি কুদ্দুস আফ্রাদ বলেন, একজন গণমাধ্যম উদ্যোক্তাকে হত্যা চেষ্টা অত্যন্ত উদ্বেগ ও উৎকন্ঠার, আমি এঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই। এই ষড়যন্ত্রের নেপথ্যে যারা আছেন তাদেরকে অবিলম্বে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনার জন্য প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ জানাচ্ছি। আমি প্রত্যাশা করছি ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়ার এমডি ন্যায় বিচার পাবেন।

বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) মহাসচিব দীপ আজাদ বলেন, এঘটনায় থানায় একটি এজহার দেওয়া হয়েছে। পুলিশ প্রশাসন মামলাটির সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষ তদন্ত করবে এমনটাই প্রত্যাশা করছি।

ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ আলম খান তপু বলেন, আমরা এই ষড়যন্ত্রের তীব্র নিন্দা জানাই। এই ঘটনায় থানায় একটি এজহার দেওয়া হয়েছে। আসামী রিমান্ডে আছেন। আমরা আশা করবো পুলিশ সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে ষড়যন্ত্রকারীদের চিহ্নিত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নিবে।

ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সহসভাপতি ওসমান গনি বাবুল বলেন, গণমাধ্যমের একজন মালিককে হত্যার চেষ্টা আমাদের জন্য উদ্বেগ ও আতঙ্কের। আমরা এই ঘটনার নিন্দা জানাই এবং থানায় দায়ের করা মামলার সুষ্ঠ ও নিরক্ষে তদন্তের জন্য পুলিশ প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানাই।

বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স এসোসিয়েশনের (ক্র্যাব) সভাপতি মিজান মালিক বলেন, আমরা গণমাধ্যমে দেখেছি সায়েম সোবহান আনভীরকে হত্যা চেষ্টার অভিযোগে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার একটি মাদ্রাসা থেকে একজন যুবককে গ্রেফতার করা হয়েছে। বুসন্ধরা গ্রুপের একজন কর্মকর্তা থানায় এজহার দিয়েছেন। এজহারের সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষ তদন্ত করার জন্য পুলিশ প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানাই।

বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক আলাউদ্দিন আরিফ বলেন, আমি এঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। সায়েম সোবহান আনভীর বাংলাদেশে প্রথম সারির একজন গণমাধ্যম উদ্যোক্তা। ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়ার অধীনে বাংলাদেশ প্রতিদিন, কালেরকন্ঠ, ডেইলী সান, নিউজ টুয়েন্টিফোর টেলিভিশন, বাংলা নিউজ টুয়েন্টিফোর, তিতাস টিভি ও ক্যাপিটাল রেডিওর মতো সাতটি গুরুত্বপূর্ণ গণমাধ্যম পরিচালিত হচ্ছে। এসব গণমাধ্যমে ক্র্যাবের অনেক সদস্য কর্মরত আছেন। তার মতো একজন গণমাধ্যম উদ্যোক্তকে হত্যা চেষ্টার ঘটনা আমাদের জন্য বড় ধরনের উদ্বেগ ও আতংকের পরিস্থিতি তৈরি করে। এই ঘটনায় বসুন্ধরা গ্রুপের প্রধান জনসংযোগ কর্মকর্তা মেজর (অব.) মিজানুর রহমান থানায় একটি অভিযোগ করার বিষয়ে আমরা জানতে পেরেছি। আমরা চাই ঘটনার সঠিক ও নিরপেক্ষ তদন্ত। সুষ্ঠ তদন্তের মাধ্যমে এই ঘটনার নেপথ্য ষড়যন্ত্রকারিদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনার জন্য প্রশাসনের কাছে অনুরোধ জানাই।


আরও খবর



ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে ১৭ কিলোমিটার যানজট

প্রকাশিত:বুধবার ০৬ মার্চ ২০২৪ | হালনাগাদ:বুধবার ০৬ মার্চ ২০২৪ | অনলাইন সংস্করণ
টাঙ্গাইল প্রতিনিধি

Image

ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে বাড়তি পরিবহনের চাপের কারণে প্রায় ১৭ কিলোমিটার যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। এতে চরম বিপাকে পড়েছেন চালক ও যাত্রীরা। বুধবার (০৬ মার্চ) ভোর থেকে ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কের বঙ্গবন্ধু সেতুপূর্ব হতে কালিহাতির রসুলপুর পর্যন্ত প্রায় ১৭ কিলোমিটার এলাকায় যানজটের সৃষ্টি হয়েছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, মহাসড়কের এলেঙ্গা হতে বঙ্গবন্ধু সেতুপূর্ব টোলপ্লাজা পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দুই লেনেই পরিবহনের চাপ রয়েছে। তবে এলেঙ্গা হতে ঢাকাগামী লেনে তেমন পরিবহন নেই। যানজটের কারণে উত্তরবঙ্গগামী এবং ঢাকাগামী পরিবহনগুলো এলেঙ্গা হতে ভুঞাপুর-তারাকান্দি-বঙ্গবন্ধু সেতুপূর্ব আঞ্চলিক সড়ক ব্যবহার করে সেতু গোলচত্বর হয়ে চলাচল করছে।

মহাসড়কের এলেঙ্গা হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মীর মো. সাজেদুর রহমান বলেন, যানজট নিরসনে হাইওয়ে পুলিশের পাশাপাশি জেলা পুলিশের সদস্যরা কাজ করছে। তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যানজট নিরসন হবে।


আরও খবর



খাজানা ও মেইনল্যান্ড চাইনিজ ব্লু সিলগালা

প্রকাশিত:রবিবার ১০ মার্চ ২০২৪ | হালনাগাদ:রবিবার ১০ মার্চ ২০২৪ | অনলাইন সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদক

Image

রাজধানীর উত্তরায় খাজানা রেস্টুরেন্ট ও পার্টি সেন্টার এবং মেইনল্যান্ড চাইনিজ ব্লু রেস্তোরাঁ সিলগালা করে দিয়েছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। রোববার (১০ মার্চ) সকালে অভিযান চালিয়ে অনিয়ম পাওয়ায় এই পদক্ষেপ নেয় রাজউক।

রাজউক কর্মকর্তারা জানান, বিনা অনুমোদনেই চলছে খাজানা রেস্টুরেন্ট ও পার্টি সেন্টার। একতলা এই রেস্তোরাঁ রাজউকের বাণিজ্যিক প্লট। এর পার্শ্ববর্তী বহুতল ভবনগুলোতে আগুন লাগার শঙ্কায় এই অভিযান চালানো হয়। এ সময় পার্শ্ববর্তী কিচেনে থাকা প্রতিষ্ঠানগুলোতেও অভিযান চালায় রাজউক। অভিযানের সময় প্রতিষ্ঠানটির মালিক কোনো প্রকার লিগ্যাল দলিল কিংবা ট্রেড লাইসেন্স দেখাতে পারেননি। রেস্তোরাঁটি পরিচালনার অনুমোদনও নেই।

রাজউক জানায়, ত্রুটি সংশোধনের জন্য ১৫ দিনের সময় দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে কোনো কার্যক্রম চালাতে পারবে না রেস্তোরাঁটি। এমনকি ভবনটি সিলগালও করে দেয়া হয়।

এছাড়া সিয়াম টাওয়ারে মেইনল্যান্ড চাইনিজ ব্লু রেস্তোরাঁয় অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা থাকলেও জরুরি প্রয়োজনে ছাদে কিংবা অন্য কোথাও নেই জমায়েত হওয়ার কোনো ব্যবস্থা। ১৪ তলার অনুমোদিত ভবনে রেস্টুরেন্ট ব্যবসা ১৫ তলায়। নেই রাজউকের অনুমোদন। ফলে এই রেস্তোরাঁও সিলগালা করে দেয় রাজউক।


আরও খবর



আজ ভয়াল ২৫ মার্চ, গণহত্যা দিবস

প্রকাশিত:সোমবার ২৫ মার্চ ২০২৪ | হালনাগাদ:সোমবার ২৫ মার্চ ২০২৪ | অনলাইন সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদক

Image

আজ ভয়াল ২৫ মার্চ, গণহত্যা দিবস। বাঙালি জাতির জীবনে ১৯৭১ সালের এইদিন শেষে এক বিভীষিকাময় ভয়াল রাত নেমে এসেছিল। এদিন মধ্যরাতে বর্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী তাদের পূর্ব পরিকল্পিত অপারেশন সার্চ লাইটের নীলনকশা অনুযায়ী বাঙালি জাতির কণ্ঠ চিরতরে স্তব্ধ করে দেয়ার ঘৃণ্য লক্ষ্যে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে নিরস্ত্র বাঙালীদের ওপর অত্যাধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে।

বাঙালির স্বাধীনতার আকাঙ্খা মুছে দেয়ার চেষ্টায় ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ গণহত্যা শুরু করেছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। তারপর নয় মাসের সশস্ত্র যুদ্ধের মধ্য দিয়ে এসেছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতা। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ দিবাগত রাতে ব্যাপক গণহত্যা চালিয়ে বাঙালি জাতিকে নিশ্চিহ্ন করার জন্য পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী যে সশস্ত্র অভিযান পরিচালনা করে, তারই নাম অপারেশন সার্চলাইট।

এই অভিযানের নির্দেশ নামা তৈরি করে পাকিস্তানের দুই সামরিক কর্মকর্তা মেজর জেনারেল খাদিম হোসেন রাজা ও মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলী। নির্দেশনামার কোনও লিখিত নথি রাখা হয়নি। গণহত্যার সেই পুরো নির্দেশ মুখে মুখে ফরমেশন কমান্ডার বা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের জানানো হয়।

অনেক পরে, ২০১২ সালে, মেজর জেনারেল খাদিম হোসেন রাজা এ স্ট্রেঞ্জার ইন মাই ওন কান্ট্রি নামে আত্মজীবনী প্রকাশ করেন। অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস প্রকাশিত সেই আত্মজীবনীতে প্রথমবারের মতো অপারেশন সার্চলাইট সম্পর্কে কিছু তথ্য প্রকাশিত হয়।

অপারেশন সার্চলাইট কিভাবে পরিকল্পিত হয়, ১৯৭১ সালের সেই স্মৃতিচারণ করে রাজা লিখেছেন, ১৭ মার্চ, সকাল প্রায় ১০টা বাজে। টিক্কা খান আমাকে ও মেজর জেনারেল ফরমানকে কমান্ড হাউসে গিয়ে তার সঙ্গে দেখা করতে খবর পাঠান। খবর পেয়ে আমরা দুজন টিক্কা খানের সঙ্গে দেখা করি। গিয়ে দেখি, সেখানে জেনারেল আবদুল হামিদ খানও রয়েছেন। টিক্কা খান আমাদের বলেন, প্রেসিডেন্টের সঙ্গে শেখ মুজিবের সমঝোতা আলোচনা ইতিবাচক দিকে এগোচ্ছে না। প্রেসিডেন্ট চান আমরা যেন সামরিক অভিযানের প্রস্তুতি গ্রহন করি এবং সে অনুযায়ী একটা পরিকল্পনা তৈরি করি। এ ছাড়া আর কোনো মৌখিক বা লিখিত নির্দেশনা আমরা পাইনি। আমাদের বলা হয়, পরদিন ১৮ মার্চ বিকেলে আমরা দুজন যেন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে ওই পরিকল্পনা চূড়ান্ত করি। পরদিন সকালেই খাদিম হোসেন রাজা তাঁর কার্যালয়ে রাও ফরমান আলীকে নিয়ে বসেন। তারাই গণহত্যার এ অভিযানের নাম দেন অপারেশন সার্চলাইট।

মার্কিন সাংবাদিক রবার্ট পেইন ২৫ মার্চ রাত সম্পর্কে লিখেছেন, সেই রাতে ৭০০০ মানুষকে হত্যা করা হয়, গ্রেপ্তার করা হলো আরও ৩০০০ লোক। ঢাকায় ঘটনার শুরু মাত্র হয়েছিল। এরপর সমস্ত পূর্ব পাকিস্তান জুড়ে সৈন্যরা বাড়িয়ে চললো মৃতের সংখ্যা। জ্বালাতে শুরু করলো ঘর-বাড়ি, দোকান-পাট। লুট আর ধ্বংস যেন তাদের নেশায় পরিণত হল। রাস্তায় রাস্তায় পড়ে থাকা মৃতদেহগুলো কাক-শেয়ালের খাবারে পরিণত হল। সমস্ত বাংলাদেশ হয়ে উঠলো শকুন তাড়িত শ্মশান ভূমি।

পাইকারি এই গণহত্যার স্বীকৃতি খোদ পাকিস্তান সরকার প্রকাশিত দলিলেও রয়েছে। পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্কট সম্পর্কে যে শ্বেতপত্র পাকিস্তান সরকার মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে প্রকাশ করেছিল তাতে বলা হয়, ১৯৭১ সালের পয়লা মার্চ থেকে ২৫ মার্চ রাত পর্যন্ত ১ লাখেরও বেশি মানুষের জীবননাশ হয়েছিল।

১৯৭০-এর সাধারণ নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে জয়লাভ করা সত্ত্বেও আওয়ামী লীগের কাছে পাকিস্তানি জান্তা ক্ষমতা হস্তান্তর না করার ফলে সৃষ্ট রাজনৈতিক অচলাবস্থা নিরসনের প্রক্রিয়া চলাকালে পাকিস্তানি সেনারা কুখ্যাত অপারেশন সার্চ লাইট নাম দিয়ে নিরীহ বাঙালি বেসামরিক লোকজনের ওপর গণহত্যা শুরু করে। তাদের এ অভিযানের মূল লক্ষ্য ছিল আওয়ামী লীগসহ তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের প্রগতিশীল রাজনৈতিক নেতা-কর্মীসহ সকল সচেতন নাগরিককে নির্বিচারে হত্যা করা। এদিন দুপুরের পর থেকেই ঢাকাসহ সারাদেশে থমথমে অবস্থা বিরাজ করতে থাকে। সকাল থেকেই সেনা কর্মকর্তাদের তৎপরতা ছিল চোখে পড়ার মত। হেলিকপ্টারযোগে তারা দেশের বিভিন্ন সেনানিবাস পরিদর্শন করে বিকেলের মধ্যে ঢাকা সেনানিবাসে ফিরে আসে।

ঢাকার ইপিআর সদর দফতর পিলখানাতে অবস্থানরত ২২তম বালুচ রেজিমেন্টকে পিলখানার বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নিতে দেখা যায়। মধ্যরাতে পিলখানা, রাজারবাগ, নীলক্ষেত আক্রমণ করে পাকিস্তানি সেনারা। হানাদার বাহিনী ট্যাঙ্ক ও মর্টারের মাধ্যমে নীলক্ষেতসহ বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা দখল নেয়। সেনাবাহিনীর মেশিনগানের গুলিতে, ট্যাঙ্ক-মর্টারের গোলায় ও আগুনের লেলিহান শিখায় নগরীর রাত হয়ে উঠে বিভীষিকাময়।

লেফটেন্যান্ট জেনারেল টিক্কা খান এবং লেফটেন্যান্ট জেনারেল এএকে নিয়াজীর জনসংযোগ অফিসারের দায়িত্বে থাকা সিদ্দিক সালিকের উইটনেস টু সারেন্ডার গ্রন্থেও এ সংক্রান্ত একটি বিবরণ পাওয়া যায়। সিদ্দিক সালিক বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় জেনারেল নিয়াজীর পাশেই ছিলেন। বাংলাদেশের মানুষের বিরুদ্ধে অনুগত পাকিস্তানি হিসাবে পাক সামরিক জান্তার চক্রান্ত তিনি খুব কাছে থেকেই দেখেছেন। ২৫ মার্চ, অপারেশন সার্চ লাইট শুরুর মুহূর্ত নিয়ে তিনি লিখেন নির্দিষ্ট সময়ের আগেই সামরিক কার্যক্রম শুরু হয়ে যায়। এমন আঘাত হানার নির্ধারিত মুহূর্ত (এইচ-আওয়ার) পর্যন্ত স্থির থাকার চিহ্ন বিলুপ্ত হয়ে গেল। নরকের দরজা উন্মুক্ত হয়ে গেল।

পাকিস্তানি হায়েনাদের কাছ থেকে রক্ষা পায়নি রোকেয়া হলের ছাত্রীরাও। ড. গোবিন্দ চন্দ্র দেব ও জ্যোতির্ময় গুহ ঠাকুরতা, অধ্যাপক সন্তোষ ভট্টাচার্য, ড. মনিরুজ্জামানসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের ৯ জন শিক্ষককে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা হয়। ঢাবির জগন্নাথ হলে চলে নৃশংসতম হত্যার সবচেয়ে বড় ঘটনাটি। এখানে হত্যাযজ্ঞ চলে রাত থেকে সকাল পর্যন্ত।

প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান অপারেশন সার্চ লাইট পরিকল্পনা বাস্তবায়নের সকল পদক্ষেপ চূড়ান্ত করে গোপনে ঢাকা ত্যাগ করে করাচি চলে যান। সেনা অভিযানের শুরুতেই হানাদার বাহিনী বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে তাঁর ধানমন্ডির বাসভবন থেকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারের আগে ২৬ মার্চ (২৫ মার্চ মধ্যরাতে) বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন এবং যে কোন মূল্যে শত্রুর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানান।

বঙ্গবন্ধুর এই আহ্বানে সাড়া দিয়ে বাঙালি পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং দীর্ঘ ৯ মাস সশস্ত্র লড়াই শেষে একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বর পূর্ণ বিজয় অর্জন করে। বিশ্বের মানচিত্রে অভ্যুদয় ঘটে নতুন রাষ্ট্র বাংলাদেশের।

যথাযোগ্য মর্যাদায় দিবসটি পালনের লক্ষ্যে জাতীয় পর্যায়ে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। এ উপলক্ষে আজ রাত ১১ থেকে ১১টা ৩১ মিনিট পর্যন্ত সারাদেশে প্রতীকী ব্ল্যাক আউট পালন করা হবে। তবে কেপিআই এবং জরুরি স্থাপনা এ কর্মসূচির আওতামুক্ত থাকবে। দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাণী দেবেন। এদিন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে গণহত্যা দিবসের ওপর আলোচনাসভার আয়োজন করা হয়েছে।

সারা দেশে গণহত্যা ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক গীতিনাট্য ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করা হবে। স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসাসহ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিশিষ্ট ব্যক্তি এবং বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কণ্ঠে ২৫ মার্চ গণহত্যার স্মৃতিচারণা ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। ঢাকাসহ সব সিটি করপোরেশনে গণহত্যার ওপর দুর্লভ আলোকচিত্র ও প্রামাণ্যচিত্র প্রচার করা হবে। এছাড়াও ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে নিহতদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে এদিন বাদ জোহর বা সুবিধাজনক সময় দেশের সব মসজিদে বিশেষ মোনাজাত এবং অন্যান্য উপাসনালয়ে প্রার্থনা করা হবে। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে এবং বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসেও দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে একই কর্মসূচি পালন করা হবে।


আরও খবর



জলদস্যুদের সঙ্গে সেকেন্ড পার্টির মাধ্যমে যোগাযোগের চেষ্টা চলছে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী

প্রকাশিত:বুধবার ১৩ মার্চ ২০২৪ | হালনাগাদ:বুধবার ১৩ মার্চ ২০২৪ | অনলাইন সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদক

Image

সোমালি জলদস্যুর কবলে পড়া বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ ও এর ভেতরে থাকা ২৩ জন নাবিকদের উদ্ধারে সেকেন্ড পার্টির মাধ্যমে যোগাযোগের চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।

বুধবার (১৩ মার্চ) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এক সেমিনার শেষে তিনি এ কথা জানান।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, জাহাজটি হাইজ্যাক করা জলদস্যুদের সঙ্গে এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে যোগাযোগ করা যায়নি। আমরা সেকেন্ড পার্টির মাধ্যমে চেষ্টা করছি এবং যেখানে জানানো প্রয়োজন, সেখানে জানিয়েছি। তাদের উদ্ধারে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো কাজ করছে। বিষয়টি মন্ত্রিসভায়ও আনুষ্ঠানিকভাবে আলোচনা হয়েছে।

তিনি বলেন, ইতোমধ্যে রিপোর্টিং সেন্টার ইন কুয়ালালামপুর, ইন্ডিয়ান ফিউশন সেন্টার ইন নিউ দিল্লি, সিঙ্গাপুর, ইউএসএ, ইউকে এবং চীনসহ সব এরিয়ার নেভাল শিপে আমরা রিপোর্ট করেছি। অন্যান্য সূত্রের মাধ্যমেও আমরা যোগাযোগ করার চেষ্টা করছি।

এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমাদের উদ্দেশ্য জাহাজটাকে এবং নাবিকদের মুক্ত করা। কিন্তু স্ট্র্যাটেজি কী হবে, এটা পাবলিক বলার বিষয় নয়। ইতোপূর্বে একই কোম্পানির একটি জাহাজ জলদস্যুরা নিয়ন্ত্রণে নিয়েছিল। তিন মাস পর সেই জাহাজ ও ক্রুদের উদ্ধার করা হয়েছিল।

এর আগে, ভারত মহাসাগরে এমভি আবদুল্লাহ নামের বাংলাদেশি জাহাজটি মঙ্গলবার (১২ মার্চ) দুপুরে জলদস্যুদের কবলে পড়ে। ৫৫ হাজার টন কয়লা নিয়ে আরব আমিরাতে যাওয়ার পথে সোমালিয়ার জলদস্যুরা জাহাজটির নিয়ন্ত্রণ নেয়। এরপর জাহাজে থাকা ২৩ বাংলাদেশি নাবিককে জিম্মি করে।

জানা গেছে, নাবিকদের ছাড়তে ৫০ লাখ মার্কিন ডলার চেয়েছে সোমালিয়ার জলদস্যুরা। মুক্তিপণ না পেলে বাংলাদেশি নাবিকদের মেরে ফেলা হবে বলে হুমকি দেওয়া হচ্ছে।

জাহাজটি প্রধান কর্মকর্তা (চিফ অফিসার) মো. আতিক উল্লাহ খান তার স্ত্রীকে পাঠানো সর্বশেষ এক অডিও বার্তায় বলেন, আমাদের কাছ থেকে মোবাইল নিয়ে নিচ্ছে। টাকা না দিলে তারা একে একে আমাদের সবাইকে মেরে ফেলবে। তাদের যত তাড়াতাড়ি টাকা দেবে, তত তাড়াতাড়ি ছাড়বে বলেছে। এই বার্তাটা সবদিকে পৌঁছে দিও।

দেশের শীর্ষ শিল্প গ্রুপ কেএসআরএমের মালিকানাধীন এসআর শিপিংয়ের জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ। ২০১৬ সালে তৈরি জাহাজটির দৈর্ঘ্য ১৮৯ দশমিক ৯৩ মিটার এবং প্রস্ত ৩২ দশমিক ২৬ মিটার। প্রথমে জাহাজটির নাম ছিল গোল্ডেন হক। পরে বাংলাদেশের কেএসআরএম গ্রুপের বহরে যুক্ত হওয়ার পর এর নাম হয় এমভি আবদুল্লাহ। এটি একটি বাল্ক কেরিয়ার।


আরও খবর



বঙ্গোপসাগরে ভাসতে থাকা ১২ জেলেকে জীবিত উদ্ধার

প্রকাশিত:রবিবার ২৪ মার্চ 20২৪ | হালনাগাদ:রবিবার ২৪ মার্চ 20২৪ | অনলাইন সংস্করণ
আবু বকর সিদ্দিক, মোংলা প্রতিনিধি

Image

ইঞ্জিন বিকল হয়ে ৪ দিন ধরে সাগরে ভাসতে থাকা ১২ জেলেকে জীবিত উদ্ধার করেছে কোস্টগার্ড। শনিবার (২৩ মার্চ) বিকাল সাড়ে ৪টার সময় জরুরি সেবা ৯৯৯ ফোন করে জেলেরা সহায়তা চাইলে রাতে কোস্টগার্ড জেলেদের উদ্ধার করে।

কোস্টগার্ড জানায়, পাথরঘাটা থেকে হানিফ মুন্সি নামক একটি ফিশিং বোট গত ১৫ মার্চ মাছ ধরার উদ্দেশ্যে সমুদ্রে যাত্রা করে। এরপরে গত ১৯ মার্চ বোটের ইঞ্জিন বিকল হয়ে সাগরে ভাসতে থাকে। পরবর্তীতে ৯৯৯ নম্বরে ফোন দেওয়া বোটের মাঝি মাসুম মৌলভি এর মোবাইল নাম্বার ট্রাকিং করে তাদের অবস্থান নিশ্চিত করে কোস্ট গার্ড। এরপর আজ রাতে ওইসব জেলেদের জীবিত উদ্ধার করে কোস্টগার্ড পশ্চিম জোনের দুবলা ও কচিখালী যৌথ অভিযানিক দল।

উদ্ধার হওয়া জেলেদের বাড়ি বরগুনা জেলার পাথরঘাটা এলাকায় বলে জানায় কোস্ট গার্ড।


আরও খবর