ইন্দুরকানী উপজেলার তিন দিকেই নদী। ফলে এখানে জলাধারের আধিক্য অনেক। তাই এই এলাকায় পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যুর হারও বেশি। এ কারণেই কোল খালি হচ্ছে অনেক মায়ের। বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে এ হৃদয় বিদারক ঘটনাগুলো বেশি ঘটে থাকে এই এলাকায়। যা প্রতিরোধ করতে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন ইন্দুরকানীর উপজেলা নির্বাহী অফিসার লুৎফুন্নেসা খানম।
তিনি উপজেলার বিভিন্ন এলাকায়, প্রতিষ্ঠানে গিয়ে জনসেচতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। বিশেষ করে নদী তীরবর্তী এলাকার আশ্রয়ণ প্রকল্প ও প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য বেশি সময় দিচ্ছেন তিনি। প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে মা সমাবেশ করে তাদেরকে এ বিষয়ে সচেতন করে তুলছেন। এমনকি প্রতিটি ইউনিয়নের চেয়ারম্যানদের সহযোগিতায় মাইকিং করেও সবাইকে সতর্ক থাকার জন্য আহবান জানাচ্ছেন লুৎফুন্নেসা খানম।
কারণ গত এক বছরে ইন্দুরকানীতে পানিতে ডুবে অন্তত চব্বিশ জনেরও বেশি শিশুর মৃত্যু হয়েছে। আর এজন্যই উপজেলা নির্বাহী অফিসার সবাইকে সচেতন থাকতে বার বার অনুরোধ করে যাচ্ছেন। উপজেলার বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃস্থানীয়দের নিয়ে একটি বড় কর্মশালা করেছেন উপজেলা হল রুমে। সেখানে উপস্থিত ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা, শিক্ষক, ইমামসহ উপজেলার বিভিন্ন দপ্তরের প্রধান, জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ। কর্মশালায় শিশুদের পানিতে ডুবে মৃত্যুর হার কমাতে বাড়ির জলাশয়ের পাশে বেরা দেয়া, যতটা সম্ভব অল্প বয়সে সাতার শিখন, মসজিদে জুম্মার নামাজের পূর্বে আলোচনা, ইউনিয়ন পরিষদের ওয়ার্ড সভায় আলোচনা, এনজিওর মাধ্যমে আশ্রয়ন প্রকল্পসহ ওয়ার্ড পর্যায়ে সচেতনতা মূলক সভার আয়োজন করা, বিশেষ করে প্রাথমিক পর্র্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মা সমাবেশের মাধ্যমে অভিভাবকদের সচেতন করার জন্য সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। যার প্রেক্ষিতে ইউএনও সভায় গৃহীত সিদ্ধান্ত সমূহ বাস্তবায়নের জন্য একটি লিখিত নোটিশ করেছেন উপজেলার সকল ইউপি চেয়ারম্যান, উপজেলার সকল কর্মকর্তা, উপজেলার সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানদের।
মসজিদের ইমামরা ইতোমধ্যে মুসল্লিদের সচেতন করা শুরু করেছেন। রেডক্রিসেন্টের সদস্যরা উপজেলার বিভিন্ন বাজারে গিয়ে মাইকিং করে সবাইকে সচেতন করছেন। এগিয়ে এসেছেন এনজিও কর্মীরাও।
সম্প্রতি উপজেলার পাড়েহাটের একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মা সমাবেশে পিরোজপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহেদুর রহমান মায়েদেরকে সচেতন থাকতে বলেছেন। তিনি ইন্দুরকানী উপজেলা নির্বাহী অফিসারের মত করে সকলকে এগিয়ে আসার জন্য আহবান জানান।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার লুৎফুন্নেসা খানম জানান, যখন কোন মায়ের শিশু সন্তান পানিতে ডুবে মারা যায় তখন সে-ই একমাত্র বুঝে সে কি হারিয়েছে। তাই কোন মায়ের বুক যেন অনাকাঙ্খিত ভাবে আর খালি না হয় সে জন্যই আমার এ চেষ্টা চলমান থাকবে। আমার একার চেষ্টায় সফলতা আসবে না। সবাইকে ঐক্যবদ্ধ চেষ্টার মাধ্যমেই সফল হতে হবে।
পাড়েরহাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান শাওন তালুকদার জানান, আমাদের উপজেলার তিন দিকেই নদী। তাই এখানে পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যুর হার তুলনা মূলক অনেক বেশি। এ জন্য উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নির্দেশনায় নিয়মিত মাইকিং করে সবাইকে সচেতন থাকতে অনুরোধ করেছি।
এ বিষয়ে রূপসী বাংলা উন্নয়ন সংস্থার নির্বাহী পরিচালক আজাদ হোসেন বাচ্চু জানান, উপজেলা নির্বাহী অফিসারের উপস্থিতিতে আমরা নদী তীরবর্তী এলাকাগুলোর অভিভাবকদের সচেতন করতে কাজ করে যাচ্ছি। ইতোমধ্যে বলেশ্বর নদ তীরের চাড়াখালী আশ্রয়ন প্রকল্প এলাকায় গণজমায়েত করে একটি সভা করেছি। এখানে প্রতি বছরই পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে।