দুচোখ একটু সবুজ খুঁজে বেড়ায়। অথচ চোখ মেললেই দেখা যায় সারি সারি দালানকোঠা। সবুজের সান্নিধ্য পাওয়া তাই কঠিন বটে। কংক্রিটের এ শহরে সবুজের অভাব মেটাতে অনেকেই এখন ছোট্ট ফ্ল্যাট বাসাতেও রাখছেন নানা রকম ইনডোর প্ল্যান্ট। সবুজের অভাব তো মিটছেই, সেই সঙ্গে ঘরের চেহারাতেও সৌন্দর্য যোগ হচ্ছে। ঘরে ইনডোর প্ল্যান্ট রাখার ব্যাপারে যারা একদমই নতুন, তারা জেনে নিন ইনডোর প্ল্যান্টের আদ্যোপান্ত—
আলো: ঘরে আলো একটু কম আসে, তাহলে জিজি প্ল্যান্ট, সবুজ ন্সেক প্ল্যান্ট, মানি প্ল্যান্ট, ইঞ্চ, ফিলোডেনড্রোন, জেইড, ল্যাকি বাম্বু, অ্যাগ্নোনিমা, ড্রাসিনা ইত্যাদি গাছ লাগাতে পারেন। সে ক্ষেত্রে সপ্তাহে এক দিন গাছগুলোকে কিছুটা সময়ের জন্য রোদে রাখা যেতে পারে। অতিরিক্ত আলো অনেক ইনডোর প্ল্যান্ট সহ্য করতে পারে না, পাতা পুড়ে যায়। সে ক্ষেত্রে শেডের ব্যবস্থা করা যেতে পারে।
পানি: মনে রাখতে হবে যখন মাটি শুকিয়ে যাবে, তখন পানি দিতে হবে। পানি বেশি দিলে গাছ খুব ভালো হবে ব্যাপারটা একদমই তা নয়। বেশি পানি দিলে গাছের গোড়া পচে যাবে। তবে ফিটোনিয়া, সাকুলেন্ট এরা পাতায় পানি ধরে রাখে। এদের কম পানি দিলেও চলে। কোকোপিট, বালু এরা পানি ধরে রাখতে পারে।
গাছ কিনেই লাগাতে নেই: ইনডোর প্ল্যান্ট কিনেই লাগাতে নেই। দিন পনেরো রেখে দিন। নতুবা গাছ মারা যেতে পারে। যেকোনো গাছকেই পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নেয়ার সময়টুকু দিতে হয়। ছত্রাকনাশক ব্যবহার করা ভালো। সে ক্ষেত্রে ম্যানসার, মেটারিল সহজলভ্য দুটি ছত্রাকনাশক।
মাটি তৈরি: সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। মাটিতে পানি নিষ্কাশনের উপাদান থাকে। আবার প্রয়োজনীয় পুষ্টিগুণও রয়েছে। এ দুই উপাদানের মিশ্রণে উত্তম মাটি/মিডিয়া তৈরি হবে। ২৫ শতাংশ বাগানের ঝুরঝুরে মাটি, ২৫ শতাংশ কেঁচো সার, ২৫ শতাংশ ককোপিট, ২৫ শতাংশ সিলেটি মোটা বালু। এই মিশ্রণ সহজ, বেশ জনপ্রিয়। এর সংঙ্গে হাড়ের গুঁড়া, একটু পটাশ, একটু ছত্রাকনাশক দেয়া উত্তম। ছত্রাকনাশক মাটিকে ক্ষতিকর জীবাণুমুক্ত রাখবে। মাটি তৈরি করে কিছুদিন রোদে রাখুন। মাটিতে কিছু মাইক্রো নিউটেন্ড থাকে, যা গাছ গ্রহণ করতে পারে। মাটির জায়গায় বালু দিলে এই উপকারটুকু হবে না। বালু ধুয়ে শুকিয়ে নেয়া ভালো। মাটি ঝুরঝুরে হালকা হতে হবে।
কীভাবে কোথায় রাখবেন: বারান্দায় গ্রিলের সঙ্গে অনেকেই লাগোয়া তাক করে নেন। যেটা ভেতরের অংশে থাকে । সেখানে টব রাখেন। আবার গ্রিলের সঙ্গে ঝুলন্ত টবও খারাপ লাগবে না। বাজারে স্টিলের, কাঠের, রডের স্ট্যান্ড কিনতে পাওয়া যায় নানা রকম ডিজাইনের। এ রকম স্ট্যান্ডে টব রাখা যায়। যদি বাজেট কম থাকে সে ক্ষেত্রে ফ্লোরের ওপর লাইন ধরে টব রাখতে পারেন। কৃত্রিম ঘাস কিনতে পাওয়া যায়। গাছের সঙ্গে বেশ মানাবে। ফ্লোরটা এমন ঘাসে ঢেকে দিতে পারেন। টব কীভাবে সাজিয়েছেন, এসবও কিন্তু সৌন্দর্যের বহিঃপ্রকাশ ঘটায়। অনেক সুন্দর গাছ অথচ এলোমেলোভাবে রাখা, উপযুক্ত পটে রাখলেন না, তাহলে কিন্তু পুরো সৌন্দর্যই ম্লান হবে।
অল্প যত্নের ইনডোর প্ল্যান্ট: যারা প্রথম প্রথম ইনডোর প্ল্যান্ট লাগাবেন তারা লাকি বাম্বু, জেজে প্ল্যান্ট, মানি প্ল্যান্ট বেছে নিন। অভিজ্ঞতা হোক, তারপর না হয় ধীরে ধীরে বাড়াবেন। অতি যত্নে ইনডোর প্ল্যান্ট বেশি মারা যায়- এমনটাই অভিজ্ঞরা বলেন। ইনডোর প্ল্যান্ট এক্সপার্ট সুষমা ইকবালের মতে, শুরুটা অল্প গাছ দিয়ে করা ভালো।
টবের রকমফের: মাটি, সিরামিক, প্ল্যাস্টিক টব কিনতে পাওয়া যায়। গাছ অনুযায়ী টব পছন্দ করতে হবে। গাছ ছোট অথচ অনেক বড় টব দেখতে যেমন ভালো লাগবে না, তেমনি বড় গাছ ছোট টব হলেও ভালো লাগবে না। তাই গাছ বুঝে টব বাছাই করুন। কেউ চাইলে একরঙা টব কিনে নিজেও কালার করে নিতে পারেন। টব হালকা হলেই ভালো, এতে স্থানান্তরে সুবিধা।
খোঁজখবর: পৃথিবীটা এখন হাতের মুঠোয়। মোবাইলের স্ত্রিনে হাত রাখলেই হলো। টব, স্ট্যান্ড, গাছ আর যা কিছু চাই সবই আপনি অনলাইনে কিনতে পারবেন। তবে দেখে কিনতে চাইলে যেতে পারেন নার্সারিতে। ঢাকার আগারগাঁও, শাহবাগ, মিরপুর-১০, মিরপুর-১, কাকলী মোড়সহ অনেক জায়গায় নার্সারি রয়েছে।