ওয়েস্ট ইন্ডিজের
মাটিতে পূর্ণাঙ্গ সিরিজ খেলতে গত মাসে দেশটিতে পাড়ি জমায় বাংলাদেশ। এরপর একমাত্র প্রস্তুতি
ম্যাচে তামিম ইকবালের শতক ছাড়া আর কিছুই চাওয়ামতো যাচ্ছিলো না টিম টাইগারের। দুই টেস্টের
পর তিন টি-টোয়েন্টিতে স্বাগতিক উইন্ডিজের কাছে বারবার ধরাশায়ী হচ্ছিলো বাংলাদেশ।
প্রায় এক মাসের
লম্বা এই সময়ে ঈদ উল আজহা ছাড়া আনন্দের খুব একটা সুযোগ ছিলো না টিম টাইগারের সামনে।
অবশেষে ঈদের আনন্দকে সঙ্গী করে নিজেদের প্রিয় ফরম্যাট ওয়ানডেতে মাঠে নামে টিম টাইগার।
আর ওয়ানডেতে ফিরেই ওয়েস্ট ইন্ডিজকে উড়িয়ে দিয়ে ঈদের খুশি আরও রাঙিয়ে তুললো তামিম ইকবালের
দল। দেশের মানুষের ঈদের আনন্দও বাড়িয়ে দিলো টাইগাররা।
গায়ানার প্রভিডেন্স
স্টেডিয়ামে বৃষ্টিবিঘ্নিত ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ছয় উইকেটে হারিয়েছে বাংলাদেশ। সহজ
জয়ে তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজের প্রথমটি নিজেদের করে নিয়ে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেলো তামিম
ইকবালের দল। এই নিয়ে উইন্ডিজদের বিপক্ষে টানা ৯ ওয়ানডে জিতলো টাইগাররা।
বৃষ্টির কারণে
মাঠ ভেজা থাকায় এদিন খেলা ৪১ ওভারে নেমে আসে। স্বাগতিক উইন্ডিজ টসে হেরে আগে ব্যাটিংয়ে
নেমে নির্ধারিত ৪১ ওভারে ৯ উইকেট হারিয়ে ১৪৯ রান তুলতে পারে। জবাবে ৫৫ বল হাতে রেখে
লক্ষ্য তাড়া করে বাংলাদেশ।
লক্ষ্য তাড়া করতে
নেমে অবশ্য শুরুতেই উইকেট হারায় বাংলাদেশ। আকিল হোসেনের বলে ১ রান করে এলবির শিকার
হয়ে ফেরেন লিটন। তবে আম্পায়ারের সিদ্ধান্তে ক্ষোভ জানাতে দেখা যায় এই ডানহাতি ওপেনারকে।
লিটন ফিরলেও নাজমুল
হোসেন শান্তকে নিয়ে ৪০ রানের জুটি গড়ে বিপর্যয় কাটিয়ে দলকে এগিয়ে নেন অধিনায়ক তামিম।
তবে ২৫ বলে ৪ চার ও ১ ছয়ে ৩৩ রান করে রান আউটের শিকার হয়ে ফেরেন তিনি। তামিমের বিদায়ে
মাঠে আসেন আরেক অভিজ্ঞ ক্রিকেটার মাহমুদউল্লাহ।
শান্তর সঙ্গে
তিনি গড়েন আরেকটি ৪৯ রানের জুটি। যেটি ভাঙে শান্ত উইন্ডিজের অভিষিক্ত স্পিনার গুড়াকেশ
মোতিয়ের বলে নিকোলাস পুরানকে ক্যাচ অনুশীলন করালে। ৫ চারে ৩৭ রান করে ফেরেন তিনি। যা
তার ক্যারিয়ার সর্বোচ্চও।
শান্তর বিদায়ের
পর মাত্র ৯ রান করে অহেতুক শট খেলে বিদায় নেন আফিফ হোসেনও। তাকে ফেরান উইন্ডিজ অধিনায়ক
পুরান। তবে এরপরে আর কোনো বিপর্যয় ঘটতে দেননি মাহমুদউল্লাহ ও নুরুল হাসান সোহান।
দুইজনে অবিচ্ছিন্ন
৪০ রানের জুটি গড়ে দলকে জিতিয়ে মাঠ ছাড়েন। মাহমুদউল্লাহ ৬৯ বলে ২ চার ও ১ ছয়ে অপরাজিত
৪১ রান করেন। তারসঙ্গে সোহান ১টি করে চার ও ছয়ে ২০ রানে অপরাজিত থেকে মাঠ ছাড়েন।
এর আগে দিনের
শুরুতে বৃষ্টির কারণে মাঠ ভেজা থাকায় ২ ঘণ্টা ১৫ মিনিট পর খেলা শুরু হয়। সাকিব আল হাসানের
অনুপস্থিতিতে এদিন অভিষেক করানো হয় নাসুম আহমেদকে।
অভিষেকেই ইনিংসের
প্রথম ওভারে বল হাতে তুলে নেন নাসুম। একপ্রান্তে রান না দিয়ে চাপ সৃষ্টি করেন এই বাঁহাতি
স্পিনার। প্রথম স্পেলে ৬ ওভারে ৩ মেডেনে রান দেন মোটে ৪। তার এই বোলিংয়ের ফলে অপরপ্রান্তে
উইকেট হারাতে থাকে উইন্ডিজ ব্যাটসম্যানরা।
ইনিংসের দ্বিতীয়
ওভারে বল হাতে নিয়েই শেই হোপকে ফিরিয়ে যার শুরু করেন মুস্তাফিজুর রহমান। শূন্য রানে
মুস্তাফিজের ইনসুইঙ্গারে পরাস্ত হয়ে বোল্ড হয়ে ফেরেন হোপ। এরপর কাইল মায়ার্স মিরাজের
বলে বোল্ড হওয়ার আগে করেন মাত্র ১০ রান।
শামারাহ ব্রুকস
কিছুটা প্রতিরোধ গড়লেও ৩৩ রান করে ফেরেন শরিফুল ইসলামের বলে। ৯ রান করে ব্রেন্ডন কিংও
শরিফুলের শিকার হন। এরপর ৯ রান করে মিরাজের বলে এলবির শিকার হয়ে ফেরেন রোভম্যান পাওয়েল।
ইনিংসে এক বলে
দুইবার আউট থেকে বেঁচে যাওয়া উইন্ডিজ অধিনায়ক নিকোলাস পুরানও ১৮ রানের বেশি করতে পারেননি।
মিরাজের বলে বোল্ড হয়ে ফেরেন তিনি। এরপর আকিল হোসেন মিরাজের দারুণ থ্রোতে ৩ রান করে
রান আউটের শিকার হয়ে প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন।
৯৬ রানে ৭ উইকেট
হারিয়ে ফেলা উইন্ডিজদের তখন শতক পার করান রোমারিও শেফার্ড। ১৬ রান করে শরিফুলের বলে
আফিফের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন। একই ওভারে গুড়াকেশ মোতিয়ে ফেরেন ৭ রান করে।
শেষ উইকেটে অ্যান্ডারসন
ফিলিপ ও জেডন সিলস উইন্ডিজ ইনিংসের সেরা জুটি গড়েন। দুইজন শেষ উইকেটে অবিচ্ছিন্ন ৩৯
রান তুলে দেড়শ রানের লক্ষ্য দাঁড় করান। ফিলিপ ২১ ও সিলস ১৬ রান করে অপরাজিত থাকেন।
ম্যাচে বাংলাদেশের
পক্ষে সবচেয়ে সফল বোলার ছিলেন শরিফুল। এই বাঁহাতি পেসার ৮ ওভারে ৩৪ রান দিয়ে নেন ৪
উইকেট। যা তার ক্যারিয়ারসেরাও। মিরাজ ৯ ওভারে ৩৬ রান দিয়ে নেন ৩ উইকেট। অভিষিক্ত নাসুম
উইকেট না পেলেও ৮ ওভারে দেন মাত্র ১৬ রান। অভিষেকে করেন ৪০টা ডট বল।