পিটিআই নেতা ইমরান খানকে ক্ষমতা থেকে না
সরালে পাকিস্তানকে একঘরে করার হুমকি দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। গত বছর এক পাকিস্তানি কূটনীতিকের
সঙ্গে দুই মার্কিন কূটনীতিকের বৈঠকে এই হুমকি দেওয়া হয়েছিল। সেখানে বলা হয়েছিল, পিটিআই
নেতা প্রধানমন্ত্রী থাকলে পাকিস্তানকে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে একঘরে করে ফেলা হবে।
সম্প্রতি পাকিস্তান সরকারের একটি গোপন সরকারি নথিতে এমন তথ্য পাওয়ার দাবি করেছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক
সংবাদমাধ্যম দ্য ইন্টারসেপ্ট। তাদের সংবাদের ভিত্তিতে বিশদ প্রতিবেদন করেছে ভয়েস অব
আমেরিকা।
প্রকাশিত সংবাদের বিষয়ে মার্কিন প্রশাসন
বুধবার (৯ আগস্ট) বলেছে, পাকিস্তানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান গত বছর রাশিয়া
সফর করেছিলো। এ নিয়ে ব্যক্তিগতভাবে এবং প্রকাশ্যে আপত্তি জানিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র।
তবে কয়েক সপ্তাহ পরে তাকে ক্ষমতা থেকে অপসারণে ওয়াশিংটনের ভূমিকা ছিল, এমন অভিযোগ
অস্বীকার করেছে তারা।
সাইফার নামে পরিচিত পাকিস্তানি কূটনৈতিক
নথির সূত্রে দ্য ইন্টারসেপ্ট বুধবার পাকিস্তানকে যুক্তরাষ্ট্র হুমকি দেওয়ার বিষয়ে প্রথমবার
সংবাদপ্রকাশ করে। এতে জানানো হয়, ২০২২ সালের ৭ মার্চ যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত তৎকালীন
পাকিস্তানি রাষ্ট্রদূত আসাদ মজিদ খানের সঙ্গে দুই মার্কিন কূটনীতিকের বৈঠক হয়েছিল।
তাদের মধ্যে একজন ছিলেন ডোনাল্ড লু যিনি যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক
সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
নথি অনুযায়ী, ইউক্রেনে রুশ আক্রমণ শুরুর দিনই তৎকালীন পাকিস্তানি প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান রাশিয়া সফরে যাওয়ায় প্রচণ্ড অসন্তোষ প্রকাশ করে যুক্তরাষ্ট্র। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে ইমরান খানের নিরপেক্ষ অবস্থানও পছন্দ হয়নি তাদের। এ কারণে পিটিআই চেয়ারম্যানকে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে উদ্বুদ্ধ করার জন্য রাষ্ট্রদূত আসাদকে উত্সাহিত করেছিলেন মার্কিন কূটনীতিকরা। তারা বলেছিলেন, ইমরান খানকে যদি প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়, তাহলেই ওয়াশিংটনের সঙ্গে উষ্ণ সম্পর্ক আশা করতে পারে ইসলামাবাদ।
আরও পড়ুন>> ভেঙে দেওয়া হলো পাকিস্তানের সংসদ
সরকারি নথিতে সাবেক পাকিস্তানি রাষ্ট্রদূত
জানিয়েছিলেন, বৈঠকে ডোনাল্ড লু তাকে বলেছিলেন, আমি মনে করি, প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে
যদি অনাস্থা ভোট সফল হয়, তাহলে ওয়াশিংটনে সবাইকে ক্ষমা করে দেওয়া হবে। কারণ, রাশিয়া
সফরকে প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্ত হিসেবে দেখা হচ্ছে।… অন্যথায়, আমার
মনে হয়, এটি (দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক) এগিয়ে যাওয়া কঠিন হবে।
ওয়াশিংটনে কথিত ওই বৈঠকের পরদিনই, অর্থাৎ
৮ মার্চ পাকিস্তানের বিরোধী দলগুলো ইমরান খানের বিরুদ্ধে ‘অর্থনৈতিক অপশাসন
ও অব্যবস্থাপনার’ অভিযোগ তুলে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে তার
অপসারণ চেয়ে অনাস্থা ভোটের প্রস্তাব দেয়।
পরবর্তীতে ইমরান খান পাকিস্তানের জাতীয়
নিরাপত্তা কমিটির একটি জরুরি বৈঠক ডেকেছিলেন। দেশটির শীর্ষ রাজনৈতিক ও সামরিক নেতাদের
অংশগ্রহণে ওই বৈঠকে সাইফারের বিষয়বস্তু নিয়ে আলোচনা করা হয়। বৈঠক-পরবর্তী বিবৃতিতে
পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ‘হস্তক্ষেপের’ নিন্দা জানানো
হয়। পরে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিবাদ জানাতে ইসলামাবাদে ওয়াশিংটনের রাষ্ট্রদূতকে তলব করে
পাকিস্তানি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ওয়াশিংটনে কথিত সেই বৈঠকের এক মাস পরেই অনাস্থা
ভোটে হেরে ক্ষমতাচ্যুত হন পিটিআই চেয়ারম্যান ইমরান খান।
দ্য ইন্টারসেপ্টের সংবাদে উঠে আসা অভিযোগ
প্রসঙ্গে বুধবার প্রশ্ন করা হয়েছিল মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলারকে।
জবাবে তিনি বলেন, এটি প্রকৃত পাকিস্তানি নথি কি না তা আমি বলতে পারবো না।... যেসব মন্তব্যের
কথা রিপোর্টে বলা হয়েছে, তাতে আমি ‘ব্যক্তিগত কূটনৈতিক
আলোচনা’ নিয়ে কথা বলতে
চাচ্ছি না।
মিলার বলেন, কথিত মন্তব্যগুলো যদি সঠিক
হয়েও থাকে, সেগুলো দেখাচ্ছে, পাকিস্তানের নেতৃত্বে কে থাকা উচিত তা নিয়ে ‘অভিরুচি’ প্রকাশ করার
পরিবর্তে ইমরান খানের ‘নীতিগত পছন্দ’ নিয়ে উদ্বেগপ্রকাশ
করছে যুক্তরাষ্ট্র।
তিনি বলেন, আমরা পাকিস্তান সরকারের কাছে
ব্যক্তিগতভাবেই উদ্বেগ জানিয়েছি। কারণ ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণের দিনই তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী
ইমরান খানের মস্কো সফর নিয়ে আমরা জনসমক্ষে উদ্বেগ প্রকাশ করেছি। আমরা সেই উদ্বেগ স্পষ্টও
করেছি।
পাকিস্তানের নেতৃত্ব সম্পর্কে অভ্যন্তরীণ
সিদ্ধান্তে হস্তক্ষেপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র- এমন অভিযোগ প্রসঙ্গে ম্যাথিউ মিলার বলেন,
সেগুলো ‘মিথ্যা, সবসময়
মিথ্যা ছিল এবং তা মিথ্যাই থেকে যাবে’।