গাজীপুরের চন্দ্রায় ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রির ইফতার খেয়ে তিন শ্রমিকের মৃত্যুর ঘটনায় শোক প্রকাশ করা হয়েছে। পাশাপাশি নিহতদের পরিবারকে যথোপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন কারখানা কর্তৃপক্ষ।
গতকাল রোববার রাতে প্রতিষ্ঠানটির ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর মো. হুমায়ুন কবীর স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, গাজীপুরের চন্দ্রায় ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজের হেডকোয়ার্টারে রোববার এক অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা ঘটে। পবিত্র মাহে রমজান উপলক্ষে কারখানায় প্রতিদিন প্রায় ১৩ হাজার জনবল ইফতার গ্রহণ করে থাকেন। বরাবরের মতো রোববারও প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরে সবার জন্য স্বাস্থ্যসম্মত ইফতারের আয়োজন করা হয়। ইফতার গ্রহণের সময়ে পাঁচজন শ্রমিক নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় মূল ডাইনিংয়ের বাইরে শরবত জাতীয় পানীয় তৈরি করে পান করেন। এর কিছুক্ষণ পর ওই পাঁচজন শ্রমিকের মধ্য থেকে তিনজন অসুস্থ্য বোধ করেন।
আরও পড়ুন: কালিয়াকৈরে ইফতার খেয়ে তিন শ্রমিকের মৃত্যু, মহাসড়ক অবরোধ
তাৎক্ষণিকভাবে ওয়ালটনের মেডিকেল টিম তাদেরকে প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদান করে কারখানার নিজস্ব অ্যাম্বুলেন্সে করে দ্রুত পাশ্ববর্তী শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব মেমোরিয়াল কেপিজে বিশেষায়িত হাসপাতাল ও নার্সিং কলেজে নিয়ে যান। সেখানে চিকিৎসারত অবস্থায় ওই তিনজন শ্রমিক মৃত্যুবরণ করেন। (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাহি রাজিউন)। পরবর্তী সময়ে আরেকজন শ্রমিক অসুস্থ্য বোধ করলে তাকেও জরুরি ভিত্তিতে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তিনি বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তার সুচিকিৎসার সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
তার আশু সুস্থ্যতার জন্য সবার কাছে দোয়া প্রার্থনা করে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘তিনজন সদস্যের আকস্মিক অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যুতে ওয়ালটন পরিবার গভীরভাবে শোকাহত। তাদের অকাল প্রয়াণ ওয়ালটন পরিবারের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি। আমরা তাদের বিদেহি আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি। মহান আল্লাহ তাদের বেহেস্ত নসীব করুন। ওয়ালটন সবসময়ই ক্ষতিগ্রস্ত সদস্যদের প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদানে অঙ্গীকারাবদ্ধ। ওয়ালটন কর্তৃপক্ষ প্রয়াত শ্রমিকদের পরিবারের পাশে আছে এবং থাকবে। ’
ওয়ালটন কর্তৃপক্ষ ওই শ্রমিকদের প্রত্যেকের পরিবারকে যথোপযুক্ত ক্ষতিপূরণ প্রদানের ঘোষণা দিয়েছেন। পাশাপাশি কোম্পানির পলিসি অনুযায়ী কমপ্লায়ান্স মেনে (ইনস্যুরেন্স, প্রভিডেন্ট ফান্ড, গ্র্যাচুইটি ইত্যাদি) যথাযথ সুবিধাসহ তাদের পরিবারকে অতিরিক্ত আরও আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হবে।
উল্লেখ্য, ওয়ালটন কারখানায় নিয়োজিত সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীর সুস্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা রক্ষায় সূচনালগ্ন থেকেই নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় স্বাস্থ্যকর ও নিরাপদ খাবার সরবরাহ করে আসছে। কোম্পানির নিজস্ব তত্ত্বাবধানে যে খাবার সরবরাহ করা হয়, তা ব্যতিরেকে অন্য খাবার গ্রহণ না করার জন্য ওয়ালটনের সকল সদস্যকে বিশেষভাবে অনুরোধ করা হয়ে থাকে।
উপরোক্ত অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনার বিষয়ে অধিকতর তদন্তের জন্য ওয়ালটন কর্তৃপক্ষ একটি উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন বলেও বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এতে আরও বলা হয়, তদন্ত সাপেক্ষে পরবর্তী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এদিকে এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে বহিরাগতরা কারখানা ও এর আশপাশে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি করে। তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পদক্ষেপে সার্বিক পরিস্থিতি বর্তমানে স্বাভাবিক রয়েছে।
ওয়ালটন পরিবারের তিনজন সদস্যের আকস্মিক প্রয়াণে এক দিনের শোক দিবস ঘোষণা করেছে কারখানা কর্তৃপক্ষ। এ উপলক্ষে আজ সোমবার কারখানা বন্ধ রাখা হয়েছে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।