হবিগঞ্জের লাখাইয়ে
হাওর অঞ্চলে বোরো মৌসুমে ২৮ বা কিছু আগাম জাতের পাকা ধান কাটা শুরু হলেও কয়েক দিনের
মধ্যেই পোরোদমে পাকা ধান গোলায় তোলার প্রস্তুতি নিচ্ছিল হাওর অঞ্চলের কৃষকরা। এক মাত্র
ফসলকে ঘিরে কৃষকের পরিবারের অভাব দূর হবে সে স্বপ্ন ছিল তাদের। কিন্তু আকস্মিক পার্শ্ববর্তী
দেশ ভারতে অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢলে নেমে আসা পানিতে হঠাৎ করে কালনী, ধলেশ্বরী
সুতাং নদ-নদীর পানি বৃদ্ধিতে কেড়ে নেয় তাদের মুখের হাসি। উপজেলা প্রশাসনের তাগিদ ও
পানি বৃদ্ধির কারণে কাঁচা ও আধা পাকা ধান কেটেছে হবিগঞ্জের হাওরাঞ্চল হিসেবে পরিচিত
লাখাই উপজেলার কৃষকরা। এতে আর্থিকভাবে ক্ষতির শিকার হওয়া ভাটি এলাকার কৃষকের চোখে-মুখে
এখন হতাশার ছাপ। মহাজনদের টাকা পরিশোধ ও ঘরের খাবার নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছে ভাটি এলাকার
কৃষকরা।
লাখাই ইউনিয়নের
শিবপুর স্বজনগ্রাম, কামালপুর, সন্তোষপুর, বুল্লা ইউনিয়নের সামান্য কিছু জমি, বামৈ ইউনিয়নের
নয়াগাঁওসহ প্রায় ৫০০ একর জমির ধান নষ্ট হয়েছে পানিতে।
সরেজমিন দেখা
যায়, পানিতে থাকা আধা পাকা ধান কাটছে কৃষকরা। তাদের চোখে-মুখে অনিশ্চয়তার ছাপ। যে
ধান কাটা হচ্ছে তার বেশির ভাগই কাজে লাগবে না। তবু উপায় না থাকাই এসব ধান কাঁচা কাটতে
হচ্ছে তাদের। নদীর দুই পাশে ধানের জমিগুলোর অধিকাংশই আধা পাকা ধান। এসবের মধ্যে ৫০০
একর জমির ২৯ জাতের ধান তলিয়ে গেছে আবার কোনটির শীষ পর্যন্ত পৌঁছে গেছে পানি।
উপজেলার শিবপুর
গ্রামের এনামুল হক চৌধুরীসহ কয়েকজন কৃষক জানিয়েছেন, এক কানি জমি আবাদ করতে তাদের খরচ
হয়েছে ৫-৬ হাজার টাকা। অসময়ে ধান কাটতে বাধ্য হওয়ায় কাঙ্ক্ষিত ফলন পাবেন না। আর্থিকভাবে
ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে এখন তারা দিশেহারা। স্বজনগ্রামের কৃষক আনজব আলী বলেন, অনেক ধার-দেনা
করে আটাশ ধান চাষ করেছি। জমি থেকে প্রায় পাঁচ শ মণ ধান পাওয়ার কথা থাকলেও অসময়ে কেটে
ফেলায় এখন এক থেকে দেড় শ মণ ধান পাওয়া যেতে পারে।
অপর কৃষক কালা
মিয়া বলেন, বিঘা প্রতি ১৫ থেকে ১৮ মণ ধান পাওয়ার কথা থাকলে এখন পাওয়া যাবে অর্ধেকেরও
কম। তাছাড়া ধান কাঁচা কাটতে প্রতি বিঘাতে দিতে হচ্ছে ২৫০০ থেকে ৩০০০ টাকা করে। ফলে
আর্থিকভাবে অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। কৃষক রতম বৈষ্ণব বলেন, প্রতিবছর চলতি সময়ের চেয়ে
দুই সপ্তাহ পর পানি আসে কিন্তু এবার আকস্মিকভাবে আগেই পানি চলে আসায় কয়েক শ ধানি জমির
ফসল হুমকির মুখে।
বুল্লা ইউনিয়ন
মাদনা গ্রামের কৃষক অমূল্য রায় বলেন, ২৮ ধান নষ্ট হয়ে গেছে। তবে উজান থেকে নেমে আসা
পানিতে আমাদের এলাকায় তেমন ক্ষতি হবে না। লাখাই উপজেলা কৃষি অফিসার শাকিল খন্দকার বলেন,
সরকার বলেছে পানিতে তলিয়ে যাওয়া ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের প্রণোদনার আওতায় আনা হবে। তবে
প্রকৃত ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করতে আমরা চেষ্টা করছি। উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি মো. রুহুল
আমিন, উপজেলা কৃষি অফিসার শাকিল খন্দকার ইউনিয়ন কৃষি অফিসার অমিত ক্ষতিগ্রস্ত হাওরের
জমি পরিদর্শন করেন। অন্যদিকে কৃষি অফিসের দেওয়া তথ্যমতে, ভারতের বৃষ্টির পানি সুনামগঞ্জের
নদ-নদীতে বৃদ্ধি পাওয়ায় লাখাইয়ে বিভিন্ন হাওর ও নদীতে পানি বেড়েছে। উপজেলার লাখাই ইউনিয়নের
শিবপুর স্বজনগ্রাম, কামালপুর, সন্তোষপুর, বুল্লা ইউনিয়নের সামান্য কিছু জমি, বামৈ ইউনিয়নের
নয়াগাঁওসহ প্রায় ৪০০ একর জমির ধান নষ্ট হয়েছে পানিতে।