বাংলা সিনেমা যেন নতুন করে প্রাণ ফিরে পাচ্ছে। সম্প্রতি মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমাগুলোর দিকে তাকালেই তা অনেকটা স্পষ্ট হয়ে যায়। সিনেমার শোগুলোতে হলভর্তি দর্শক আর ব্ল্যাকে টিকিট বিক্রি যেন চলমান প্রেক্ষাপট বদলে দিয়েছে। তবে সিনেমা ইন্ডাস্ট্রির মানুষজনের আচরণ যেন বারবার প্রশ্নবিদ্ধ করছে ইন্ডাস্ট্রিকে। গেল ঈদে মুক্তিপ্রাপ্ত তারকা দম্পতি অনন্ত জলিল ও বর্ষার নতুন সিনেমা ‘দিন: দ্য ডে’ আর বিদ্যা সিনহা মিম, ইয়াশ রোহান ও শরিফুল রাজ ‘পরাণ’ নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা কম হয়নি। এ নিয়ে কথা বলেছেন সিনেমা ইন্ডাস্ট্রির অনেক গুণী নির্মাতা ও অভিনেতারাই। আহ্বান জানিয়েছেন, নিজেদের মধ্যে কাদা ছোঁড়াছুড়ি বন্ধ করার।
এদিকে, সদ্য মুক্তি পেয়েছে মেজবাউর রহমান সুমনের আলোচিত সিনেমা ‘হাওয়া’। যা দেখার আহ্বান জানিয়েছেন ‘দিন: দ্য ডে’ সিনেমার প্রযোজক ও অভিনেতা অনন্ত জলিল। এক ভিডিওবার্তায় তিনি বলেন, “সাদা সাদা কালা কালা” এই গানটি “হাওয়া” সিনেমার। গানটি আমার খুব ভালো লেগেছে; দর্শক আপনাদেরও ভালো লেগেছে। “অসম্ভবকে সম্ভব করাই অনন্তর কাজ” জিপির এই টিভিসিটি নির্মাণ করেছিলেন মেজবাউর রহমান সুমন। “হাওয়া” সিনেমাটিও তিনিই নির্মাণ করেছেন, আমার প্রিয় একজন মানুষ। দর্শক আপনারা পরিবারের সবাই মিলে এই সিনেমাটি দেখতে যাবেন। আমি সিনেমাটির জন্য শুভকামনা জানাচ্ছি।
যেখানে অনন্ত তার ভক্ত-দর্শকদের ‘হাওয়া’ সিনেমাটি দেখার আহ্বান জানালেন সেখানে ‘হাওয়া’র নায়িকা নাজিফা তুষি জন্ম দিলেন নতুন বিতর্কের। সম্প্রতি শ্যামলী সিনেমা হলে এসে ‘পরাণ’ ও ‘দিন: দ্য ডে’ সিনেমার পোস্টার সরাতে বললেন এই অভিনেত্রী। যার একটি ভিডিও ইতোমধ্যেই ভাইরাল হয়েছে নেটদুনিয়ায়। আর সেটি নিয়ে চলেছে তুমুল সমালোচনা।
ভিডিওতে দেখা যায়, তুষি সিনেমা হলে ঢুকেই সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার আগে ‘দিন: দ্য ডে’ ও ‘পরাণ’ সিনেমার পোস্টার সরাতে বললেন। তার কথা বলার ধরণও অনেকেই সহজভাবে মেনে নিতে পারেননি। আর ‘হাওয়া’ সিনেমার পোস্টারের সামনে দাঁড়িয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছেন তিনি। যেখানে ইন্ডাস্ট্রির মানুষজন একে-অপরের সিনেমা দেখার আহ্বান করছে সেখানে তুষির এমন আচরণ অনেকের মেনে নিতে পারেনি। বিষয়টি সম্পর্কে জানতে যোগাযোগ করা হলে তুষি সাফ জানিয়ে দেন, তিনি এ বিষয়ে কথা বলতে ইচ্ছুক নন।
তবে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন অনন্ত জলিল। তার ভাষ্য, আমাদের সিনেমার সুদিন ফিরে আসছে। আমরা প্রাণপণ চেষ্টা করছি সেই সোনালি দিন ফিরে আনার। আমরা কথায় কথায় সুপারস্টার বলি। একজন নায়ক বা নায়িকার ছবি হিট হলেই কী তিনি সুপারস্টার? না, সুপারস্টার তিনি যার কথাবার্তা, আচরণ, চলাফেরা সব কিছুই মার্জিত। শিল্পীদের অনেক সতর্ক থাকতে হয়। তারা সমাজের আইকন। তাদের অনেক ভক্ত-দর্শক তাদের ফলো করে। তাই তাদের অনেক কিছু ছাড় দিতে হয়। আমরাই যদি আমাদের সম্মান না করি, তাহলে অন্যরা কীভাবে আমাদের সম্মান করবে? একজন শিল্পীর কাজ থেকে আমরা এ ধরনের আচরণ আশা করি না। আমি বাংলা ছবির জয়ধ্বনি শুনতে চাই। তাই আমি আমার ভক্ত-দর্শকদের বারবার আহ্বান করছি হলে গিয়ে যেন তারা বাংলা ছবি দেখে। সেটা যার ছবিই হোক, আমার বা অন্যের। আমার মনে হয়, অন্যদের আচরণও এমন হওয়া উচিত।
একই প্রসঙ্গে যোগাযোগ করা হয় ‘পরাণ’ সিনেমার নির্মাতা রায়হান রাফির সঙ্গে। কিন্তু তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি। তবে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন এর অন্যতম প্রযোজক ইয়াসির আরাফাত। তার ভাষ্য, এটা হয়তো তিনি করেছেন তার সিনেমার প্রচারণার জন্য। আমি আমার ছবিকে প্রমোট করব-এটা স্বাভাবিক। কিন্তু অন্যের ছবিতে হেয় করব এটা ঠিক না। ইন্ডাস্ট্রিকে চাঙ্গা করতে আমাদের সবার সহযোগিতা লাগবে- এটা সবার মনে রাখা উচিত।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ‘হাওয়া’ মুক্তির পর নায়িকা আচরণে অনেকেই সন্তুষ্ট নন। সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময়ও তাকে বেশ রাগান্বিত অবস্থায় দেখা গেছে। অথচ দীর্ঘ অভিনয় জীবনে জনপ্রিয় অভিনেতা হওয়ার পরও চঞ্চল চৌধুরীর কথাবার্তা ও চালচলনে বিন্দুমাত্র অহংকারের দেখা নেই, সেখানে নাজিফা তুষির স্বল্প ক্যারিয়ারে এরই মধ্যে নেতিবাচক কথা উঠেছে শোবিজ অঙ্গনে। অনেকেই মনে করছেন, নায়িকার এমন আচরণের প্রভাব পড়বে ‘হাওয়া’ সিনেমার কাটতিতে।
এর আগে, গত বছর ফেব্রুয়ারি মাসে বইমেলায় গিয়ে বিতর্কে পড়েছিলেন নাজিফা তুষি। স্বাস্থ্যবিধি না মেনে মেলায় প্রবেশের কারণে তাকে জরিমানা করেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। ওই সময় ম্যাজিস্ট্রেটের সঙ্গেও বাগবিতণ্ডায় জড়ান তুষি। এমনকি ভ্রাম্যমাণ আদালতের জরিমানাকে ‘হেনস্তা’ বলেও দাবি করেছিলেন তিনি।