নালিতাবাড়ী (শেরপুর) প্রতিনিধি
শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার নাকুগাঁও গ্রামের ভারতের সীমান্তঘেঁষা এলাকায় প্রায় ১৫০ একর জমিতে বোরো ধান আবাদ করেছেন শতাধিক কৃষক। ওই এলাকায় ধান পাকতে আরও এক থেকে দুই সপ্তাহ সময় লাগবে। কিন্তু জমির পশ্চিমে পোড়াগাঁও ইউনিয়নের চৌকিদার টিলা ও বুরুঙ্গায় পাহাড়ি জঙ্গলে এক সপ্তাহ ধরে ৪০-৪৫টি বন্য হাতির একটি পাল অবস্থান করছে। স্থানীয় কৃষকরা আশঙ্কা করছেন যেকোন সময় ওই হাতির পাল ফসলের ক্ষেতে হানা দিতে পারে৷ তাই হাতির পালকে প্রতিরোধ করতে তাঁরা রাত জেগে পাহাড়া দিচ্ছেন। দিনে এসব আধা পাকা অবস্থায় ধান কাটতে বাধ্য হচ্ছেন৷
নাকুগাও এলাকার কৃষক আব্দুল কাদির বলেন, হাতি পাল প্রতিবছর ধানের ক্ষেতে হানা দেয়, পাও দিয়া মাড়িয়ে নষ্ট করে৷ ক্ষেতের ধান লইয়া খুবই দুচিন্তায় আছি৷ কোন বছরই ঠিকমতো ফসল তুলবার পারিনা৷ রাত-দিনে পাহারা দিয়াও আত্তির (হাতি) হাত থাইকা ফসল রক্ষা হইতেছে না ৷ ফসল ঘরে তুলবার না পাইলে তো বউ পোলাপাইন নিয়া না খাইয়া থাহন লাগবো। তাই হাতির ডরে আধা পাহা ধান কাডুন লাগতাছে৷
কৃষক ইয়াকুব আলী জানান, কোন বছরই ঠিক মতো আবাদ তুলতে পারিনা৷ ধান পাকা শুরু হলেই পাহাড় থেকে বন্যহাতির পাল ধান ক্ষেতে নেমে খেয়ে নষ্ট করে চলে যায়৷ তাই এইবার ধান পাকা হওয়ার আগেই, আধা পাকা ধান কাটছি৷
স্থানীয় তোতা মিয়া, সাইদুল ইসলাম, দুলাল মিয়াসহ কয়েকজন কৃষক জানান, বন্য হাতির অত্যাচার থেকে ফসল রক্ষা করতে দিনরাত পাহারা দিতে হচ্ছে তাদের। ফসল পাকতে ও কাটতে আরও এক থেকে দেড় সপ্তাহ সময় দরকার। কিন্তু হাতির আক্রমণের ভয়ে নিরুপায় হয়ে আধা পাকা ফসল কেটে আনতে বাধ্য হয়েছেন।
এদিকে গত মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে উপজেলার মধুটিলা ইকোপার্ক ও পূর্ব শমশ্চূড়া এলাকায় হাতির পাল পাহাড় থেকে ধানখেতে নেমে আসে। টের পেয়ে এলাকাবাসী মশাল জ্বালিয়ে, ঢাকঢোল পিটিয়ে হাতির দলকে প্রতিরোধ করেন। পরে হাতির পালটি আবার জঙ্গলে চলে যায়। পরদিন বুধবার সকাল থেকে ফসল রক্ষায় স্থানীয় কৃষকেরা তাঁদের জমি থেকে আধা পাকা ধান কেটে নিয়ে আসছেন।
বন বিভাগের মধুটিলা ইকোপার্কের রেঞ্জার মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, হাতির পালটি পাঁচ দিন ধরে উপজেলার বুরুঙ্গা, চৌকিদারটিলা ও ডালুকোনা পাহাড়ি জঙ্গলে অবস্থান করছে। তাই ফসল রক্ষায় স্থানীয় কৃষকেরা তাঁদের খেত থেকে আধা পাকা ধান কেটে নিয়ে যাচ্ছেন। যদি হাতির আক্রমণে ফসলের কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়, তাহলে ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সরকারিভাবে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়। হাতি রক্ষায় তাঁদের নজরদারি আছে।