সুনামগঞ্জের হাওর অধ্যুষিত মধ্যনগর উপজেলার বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে অনেক জমি পতিত ছিল। তেল ফসলের আবাদ বৃদ্ধির লক্ষ্যে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কার্যালয়ের সহযোগিতায় এই পতিত জমিতে চাষ হচ্ছে সরিষা। যেদিকে চোখ যায় শুধু সরিষা ক্ষেত। সেইসাথে সরিষা ক্ষেতে হচ্ছে মৌচাষ। এই কৃতিত্বের দাবিদার ধর্মপাশা উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কার্যালয়।
এবারই প্রথম সরিষা ক্ষেতের পাশে মৌচাষের বাক্স বসিয়েছেন মৌচাষীরা। সরিষা ফুলে ঘুরে ঘুরে মধু সংগ্রহ করছে মৌমাছির দল। সংগৃহীত মধু জমা করছে মৌ বাক্সে। এতে করে মৌমাছির মাধ্যমে সরিষা ফুলের পরাগায়নের ফলে একদিকে যেমন সরিষার উৎপাদন বাড়ছে অপরদিকে মধু আহরণ করা যাচ্ছে। সমন্বিত এই চাষে সরিষা চাষী ও মৌচাষীরা উভয়েই লাভবান হচ্ছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার বংশিকুন্ডা দক্ষিণ ইউনিয়নের চান্দালীপাড়া এলাকার বিস্তৃর্ণ মাঠে হলুদের সমারোহ। এ যেন হলুদ বিপ্লব। চারদিকে শুধু সরিষা ক্ষেত আর সরিষা ক্ষেত। সরিষা ক্ষেতের পাশে ১৫০টি মৌ বাক্স স্থাপন করেছেন শাহ আলম নামের এক মৌ চাষী। শাহ আলমের বাড়ি নেত্রকোনা জেলার সদর উপজেলায়। তিনি মধু সংগ্রহের জন্য সেখানে এসেছেন।
শাহ আলম জানান, এ মৌসুমে এ পর্যন্ত ১৫০টি বাক্স থেকে প্রায় ৫০০ লিটার মধু পেয়েছেন। আগে সরিষা চাষীরা ক্ষেতের পাশে মৌ বাক্স স্থাপন করতে দিতনা। কিন্তু এবার কৃষি বিভাগের সহযোগিতায় মৌ বাক্স স্থাপন করতে পেরেছি। এবার সরিষা চাষীরাও বেশ উৎসাহী।
সরিষা চাষীরা জানান, সরিষা ক্ষেতে মৌমাছি এক ফুল থেকে আরেক ফুলে ঘুরে বেড়ায়। এতে পরাগায়ন ভালো হয়। উৎপাদও বাড়ে। বিষয়টি নিয়ে আমাদের মাঝে ভ্রান্ত ধারণা ছিল। কিন্তু এবার কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা সেই ভ্রান্ত ধারণা দূর করে দিয়েছেন।
বংশিকুন্ডা দক্ষিণ ইউনিয়নের দায়িত্বে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আকমল হোসেন বলেন, এবারই প্রথম সরিষা ক্ষেতে মৌ চাষের সমন্বিত চাষাবাদ শুরু হয়েছে। মৌমাছি সরিষা ফুলের ওপর বসলে ফুলের পরাগায়নে ফসলের পুষ্টি বৃদ্ধি পায়। ফলে ফলন বৃদ্ধি পায় ২০ ভাগ। সমন্বিত চাষাবাদের ফলে এবার সরিষার বাম্পার ফলন হবে বলে জানিয়েছেন ওই কর্মকর্তা।
ধর্মপাশা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মীর হাসান আল বান্না জানান, এবার ধর্মপাশা ও নবগঠিত মধ্যনগর উপজেলায় ৬৯৫ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছে। যা গত বছর ছিল ৫২০ হেক্টর। ৪০ ভাগ সরিষার আবাদ বৃদ্ধি করতে সক্ষম হয়েছি। এতে কৃষি বিভাগ থেকে বিণামূল্যে বীজ ও সার দেয়া হয়েছে। এবছর সরিষার উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৯০০ মেট্রিক টন। যার বাজার মূল্য ১০ কোটি টাকা। এতে করে স্থানীয়ভাবে যেমন তেলের চাহিদা পূরণ হবে আবার সামগ্রিকভাবে সয়াবিনের আমদানি হ্রাস পাবে।
তিনি আরো জানান, এবারই প্রথম মধ্যনগর উপজেলায় চলতি বছর থেকে সরিষা ক্ষেতে মৌ চাষ শুরু করা হয়েছে। সমন্বিত এ চাষে কৃষক ও মৌ চাষী উভয়েই লাভবান হচ্ছেন। সরিষা ও মৌ চাষ বৃদ্ধির লক্ষ্যে যথাযথ পরামর্শ ও পরিচর্যার বিষয়ে চাষীদের দিক নির্দেশনাসহ সরকারি প্রণোদনা দেয়া হয়েছে।