দিনাজপুর হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় দিনাজপুর জেলার বাঁশেরহাট নামক স্থানে অবস্থিত একটি সরকারি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। ২০২৩ সালের ১১ সেপ্টেম্বর হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (হাবিপ্রবি) এর ২৪ বছর পূর্তি এবং ২৫তম বছরে পদার্পণ করেছে।
দিনাজপুর হাবিপ্রবির গণসংযোগ বিভাগের পরিচালক অধ্যাপক শ্রীপতি শিকদার স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে সোমবার এই তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে। তিনি জানান, বাংলাদেশের দ্বিতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং এটি উত্তর বাংলার সেরা বিদ্যাপীঠ যা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মাঝে শীর্ষস্থানীয়। দেশের সবচেয়ে বেশি বিদেশি শিক্ষার্থী পড়াশোনা করেন এই বিদ্যাপীঠে।
সূত্রটি জানায়, তেভাগা আন্দোলনের নেতা দিনাজপুরের সন্তান হাজী মোহাম্মদ দানেশের নামে এর নামকরণ করা হয়। হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রা শুরু ১৯৭৬ সালে এগ্রিকালচারাল এক্সটেনশন ট্রেনিং ইনিস্টিটিউট হিসেবে যা কৃষিতে ডিপ্লোমা ডিগ্রী প্রদান করতো।
গত ১৯৮৮ সালের ১১ নভেম্বর এটিকে স্নাতক পর্যায়ে কৃষি কলেজে উন্নীত করা হয়। এটি তখন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ এর অধিভুক্ত কলেজ ছিল। গত ১১ সেপ্টেম্বর ১৯৯৯ এই কলেজকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয় করার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা করেন। এই থেকে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রা শুরু এবং এই দিনটি প্রতিবছর বিশ্ববিদ্যালয় দিবস হিসেবে উদযাপন করা হয়। গত ২০০০ সালে কলেজটিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নীত করার লক্ষে “বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন প্রকল্প” গ্রহণ করা হয়।
গত ৮ জুলাই ২০০১ হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় আইন পাশ করা হয়। গত ২০০২ সালের ৮ এপ্রিল মহামান্য রাষ্ট্রপতি প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হয়। ১৬ই এপ্রিল আনুষ্ঠানিক শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়। বিশিষ্ট মৃত্তিকা বিজ্ঞানী প্রফেসর ড: মো: মোশাররফ হোসাইন মিঞাঁ এ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম উপাচার্য। এটি উত্তরবঙ্গ তথা রংপুর বিভাগের প্রথম বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মাধ্যম ইংরেজি। কোর্স-ক্রেডিট-সেমিস্টার পদ্ধতিতে পরিচালিত।
বর্তমানে ৯ টি অনুষদের অধীনে ২৩ টি বিষয়ে সনদ প্রদান করা হয়, এর মধ্যে স্নাতক পর্যায়ে ৮ টি অনুষদে ২২ টি বিষয় এবং স্নাতকোত্তর পর্যায়ে একটি অনুষদে ২৮ টি বিষয় রয়েছে। বর্তমানে ক্যাম্পাসের আয়তন ১৩৫ একর। ক্যাম্পাস এর পাশেই ঢাকা -দিনাজপুর মহাসড়ক অবস্থিত। দিনাজপুর শহর হতে ক্যাম্পাস এর দূরত্ব মাত্র ১০ কি.মি.। এ বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে সবুজ গাছপালার সমারোহ। আছে লাল-সাদা ইটের দৃষ্টিনন্দন সুবিশাল ভবন, আছে শহীদদের স্মরণে শহীদ মিনার, জিমন্যাশিয়াম, টিএসসি, ক্যান্টিন আছে।
অবকাঠামোর মধ্যে রয়েছে বৃহৎ কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, ৫টি অ্যাকাডেমিক ভবন, একটি প্রশাসনিক ভবন, ৫টি ছাত্র হোস্টেল (একটি বিদেশী শিক্ষার্থীদের), ৩টি ছাত্রী হোস্টেল, আধুনিক সাজসজ্জা বিশিষ্ট ১০০ আসনের একটি ভিআইপি সেমিনার কক্ষ, ৬০০ ও ২৫০ আসন বিশিষ্ট আরও দুটি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত অডিটরিয়াম। এছাড়াও একটি বিশ্ববিদ্যালয়কে পূর্ণাঙ্গ করতে রয়েছে শিক্ষক-কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ক্লাব, ২টি মসজিদ, ১৩৬টি আবাসিক ইউনিট/ভবন, ১টি শিশুপার্ক, পোষ্ট অফিস, রূপালী ব্যাংক শাখা, মেঘনা ব্যাংক শাখা, শ্রমিক ব্যারাক, সার্বাক্ষণিক ইন্টারনেট সুবিধা, নিজস্ব বৈদ্যুতিক লাইন, বৃহৎ খেলার মাঠ, ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপ এবং ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব পরিবহন ব্যবস্থা। গবেষণা ও প্রশিক্ষণের সমন্বয় ও সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য ইনস্টিটিউট অব রিসার্চ এন্ড ট্রেনিং (আই.আর.টি)। আছে একটি ভি. আই. পি গেস্ট হাউস, হাবিপ্রবি স্কুল, ডাক্তার ও এ্যাম্বুলেন্সসহ ১২ শয্যার একটি মেডিক্যাল সেন্টারও। গবেষণালব্ধ থিসিস, রিপোর্ট, জার্নালের পাশাপাশি রয়েছে ২৫ হাজার বইয়ের সমৃদ্ধ লাইব্রেরি। দুষ্প্রাপ্য গাছ-গাছালির আকর্ষণীয় সংগ্রহ নিয়ে গড়ে উঠেছে একটি সমৃদ্ধ বোটানিক্যাল গার্ডেন এবং বিভিন্ন বিভাগের তত্ত্বাবধানে গবেষণার জন্য জামপর্স্নাজম সেন্টার।
উল্লেখ্য, গত ২০২১ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে নিযুক্ত হয়েছিলেন অধ্যাপক ড.এম কামরুজ্জামান। দায়িত্বে আসার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাপক পরিবর্তন নিয়ে এসেছেন।