ব্যয় সংকোচন
নীতির পথে হাঁটলেও আগামী বাজেটে সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন-ভাতায় বরাদ্দ বাড়ছে। একইভাবে
দেশি ও বিদেশি ঋণের সুদ পরিশোধেও বড় অঙ্ক গুনতে হবে। আর চলমান ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের
প্রভাবে বিশ্ববাজারে বেড়ে যাওয়া জ্বালানি তেল, সার, গ্যাসের বর্ধিত মূল্য সমন্বয় করতে
হচ্ছে সরকারকে।
এ পরিস্থিতি
মোকাবিলায় আগামী বছরের জন্য ভর্তুকি ও প্রণোদনা খাতে বড় ধরনের বরাদ্দ বাড়াতে হচ্ছে।
ফলে উল্লেখিত তিনটি খাতে নতুন বাজেটের ৪৯ শতাংশই ব্যয় হবে। টাকার অঙ্কে এটি ৩ লাখ ৩৩
হাজার ৮৩২ কোটি টাকা। অবশ্য ৬ লাখ ৭৭ হাজার ৮৬৪ কোটি টাকা ব্যয়ের লক্ষ্য ধরে আগামী
অর্থবছরের (২০২২-২৩) বাজেটের রূপরেখা প্রণয়ন করেছে অর্থ বিভাগ। সংশ্লিষ্ট সূত্রে পাওয়া
গেছে এসব তথ্য। আগামী ৯ জুন জাতীয় সংসদে ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপন করবেন অর্থমন্ত্রী
আ হ ম মুস্তফা কামাল। অর্থ বিভাগ এরই মধ্যে বাজেটের রূপরেখা প্রণয়ন করেছে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের
ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানান, সরকার ব্যয় সংকোচন নীতির আলোকে বাজেট প্রণয়ন করছে। করোনা
পরিস্থিতি উন্নতি হওয়ার সঙ্গে অর্থনীতির সংকট কাটছে ধীরে ধীরে। তবে এখনো সরকারের করোনামুখী
ব্যয় নানাভাবে হচ্ছে। এসব দিক বিবেচনা করেই সব খাতে বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু কিছু
এরিয়া আছে যেখানে ব্যয় কমানো কোনোভাবেই সম্ভব নয়। সেখানে বরাদ্দ বাড়ানো হবে।
আগামী বাজেটের
যে রূপরেখা প্রণয়ন করেছে সেটি বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, সরকারের পরিচালনা ব্যয়ের জন্য
লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৪ লাখ ৩১ হাজার ৬৫৭ কোটি টাকা। এটি জিডিপির ৯ দশমিক
৮ শতাংশ। এই ব্যয়ের মধ্যে দেশি ও বিদেশি ঋণের সুদ পরিশোধ, সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন-ভাতা
প্রদান এবং ভর্তুকি, প্রণোদনা ও নগদ ঋণ বাবদ ব্যয় করতে হবে ৩ লাখ ৩৩ হাজার ৮৩২ কোটি
টাকা। এ ব্যয় নতুন বাজেটের ৪৯.২৪ শতাংশ।
সূত্র জানায়,
আগামী বাজেটে সবচেয়ে বেশি চাপ থাকছে ভর্তুকিতে। চলমান রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে
এটি হয়েছে। এই যুদ্ধের প্রভাবে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের মূল্য প্রতি ব্যারেল
১০০ মার্কিন ডলার পর্যন্ত অতিক্রম করেছিল। এখন কিছুটা কমছে। পাশাপাশি সার, গ্যাস ও
নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দামও বিশ্ববাজারে অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু এসব পণ্যের দাম
দেশের বাজারে খুব বেশি বাড়ানো হয়নি। বিশেষ করে কৃষকের সারের মূল্য আগের অবস্থায় আছে।
গ্যাসের মূল্যও বাড়ানো হয়নি। শুধু জ্বালানি তেলের মূল্য এক দফা সমন্বয় করা হয়েছে।
মূল্য সমন্বয়
না করায় সরকারের ভর্তুকি ও প্রণোদনা খাতে ব্যয় বেড়েছে। নতুন বাজেটে ভর্তুকি, প্রণোদনা
ও নগদ ঋণে বরাদ্দ থাকছে ১ লাখ ৭৭ হাজার ১৪৫ কোটি টাকা। এটি জিডিপির ৪ শতাংশের সমান।
চলতি বছরের তুলনায় এ খাতে বরাদ্দ বাড়ানো হচ্ছে ২৭ হাজার ৯১০ কোটি টাকা। এ বছর ভর্তুকি,
প্রণোদনা ও নগদ ঋণ বাবদ বরাদ্দ দেওয়া আছে ১ লাখ ৪৯ হাজার ২৩৫ কোটি টাকা।
এদিকে কৃষি
ও জ্বালানি খাতে ভর্তুকি না কমানোর পরামর্শ দিয়েছেন সাবেক সিনিয়র অর্থ সচিব মাহবুব
আহমেদ। তিনি বলেন, খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কৃষিতে ভর্তুকি অব্যাহত রাখতে হবে।
রাজস্ব আহরণ বাড়িয়ে ভর্তুকি বরাদ্দ সমন্বয় করার প্রতি জোর দিয়েছেন। তিনি আরও বলেন,
রপ্তানির সব খাতে প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে। আদৌ সব খাতে প্রয়োজনীয়তা আছে কিনা সেটি খতিয়ে
দেখা উচিত। তবে কিছু এরিয়াতে এই মুহূর্তে ব্যয় সংকোচন করতে হবে। বিশেষ করে কম গুরুত্বপূর্ণ
প্রকল্পে অর্থ ব্যয় কমাতে হবে। এদিক থেকে কিছু অর্থ সাশ্রয় হবে।
জানা গেছে,
অর্থনীতির নানা দিক থেকে চাপের মধ্যে আছে সরকার। ফলে ব্যয় সংকোচন নীতি কৌশল নেওয়া হয়েছে।
কিন্তু কিছু বরাদ্দ খাত আছে যেখানে ব্যয় কাটছাঁট করা সম্ভব নয়। এর একটি হচ্ছে সরকারি
চাকরিজীবীদের বেতন-ভাতা। আগামী বছরে এ খাতে বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে ৭৬ হাজার ৪১২ কোটি টাকা।
এটি চলতি বছরের চেয়ে ৬ হাজার ৬৬৬ কোটি টাকা বেশি। চলতি বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ আছে ৬৯
হাজার ৭৪৬ কোটি টাকা। অর্থ বিভাগ মনে করছে করোনার কারণে দীর্ঘদিন জনবল নিয়োগ প্রক্রিয়া
বন্ধ থাকলেও সম্প্রতি তা শুরু হয়েছে। এজন্য আগামী বছরে অতিরিক্ত অর্থের প্রয়োজন হবে।
এছাড়া চাকরিজীবীদের বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট দেওয়া হয়। সেজন্যও অতিরিক্ত অর্থ গুনতে হবে।
যে কারণে বেতন-ভাতা খাতে বরাদ্দ বাড়ছে।
ব্যয়ে একটি
বড় খাত ঋণের সুদ পরিশোধে। আগামী অর্থবছরে শুধু সুদ পরিশোধে ব্যয় হবে ৮০ হাজার ২৭৫ কোটি
টাকা। এটি অর্থনীতিতে এক ধরনের চাপ সৃষ্টি করবে বলে ধারণা সংশ্লিষ্টদের। এই সুদ পরিশোধ
হবে মূলত দেশি ও বিদেশ থেকে ঋণ গ্রহণের বিপরীতে। নতুন বছরে সুদ খাতে চলতি বছরের তুলনায়
বেশি ব্যয় হবে ১১ হাজার ৬৮৬ কোটি টাকা। এ বছর সুদ পরিশোধে বরাদ্দ আছে ৬৮ হাজার ৫৮৯
কোটি টাকা।