রাজধানীর মালিবাগে বৃদ্ধ এক গৃহকর্ত্রীকে
বিবস্ত্র করে নির্যাতনের পর স্বর্ণালংকার ও টাকা লুটের ঘটনায় গৃহকর্মী রেখাকে (২৮)
গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গতকাল বুধবার দিবাগত রাত ৩টার দিকে ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈল
উপজেলা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তারের পর রেখা পুলিশের কাছে দাবি
করেন, স্বামী ফরহাদ হোসেনের নির্দেশে তিনি ওই গৃহকর্ত্রীকে মারধরের পর টাকা ও স্বর্ণালংকার
ছিনতাই করেন। এই টাকা ও স্বর্ণালংকার বিক্রি করে তিনি বিদেশ যেতে চান বলেও জানিয়েছেন।
ঢাকা মহানগর পুলিশের শাহজাহানপুর থানার
উপপরিদর্শক (এসআই) রেজাউল করিম আজ বৃহস্পতিবার এসব তথ্য জানিয়েছেন। গত সোমবারের ওই
নির্যাতনের ঘটনায় পরের দিন মঙ্গলবার শাহজাহানপুর থানায় একটি মামলা করা হয়।
মামলার পর রেখাকে খুঁজতে থাকে পুলিশ। এর
মধ্যে তাঁর স্বামীকে গ্রেপ্তার করা হয়। রেখার অবস্থান জানার পর শাহজাহানপুর থানার যে
দল ঢাকা থেকে ঠাকুরগাঁও গিয়ে রেখাকে গ্রেপ্তার করে, রেজাউল করিম সে দলের নেতৃত্বে ছিলেন।
রেজাউল করিম বলেন, ‘গৃহকর্ত্রীকে নির্যাতন করে স্বর্ণসহ টাকা লুট করার পর রেখা প্রথমে তাঁর স্বামী ফরহাদ হোসেনের (৩৭) সঙ্গে দেখা করেন। সেখানে এক জোড়া কানের দুল আর একটি মোবাইলফোন রেখে আবার অন্য একটি স্থানে যান। সেখানেও কিছু জিনিসপত্র রাখেন বলে আমরা জানতে পেরেছি। তারপর গত সোমবার বা মঙ্গলবারের দিকে নিজের বাড়ি ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার বড়পলাশবাড়ী ইউনিয়নের বেলসাড়া গ্রামে না গিয়ে তাঁর মামা কফিল উদ্দিনের বাড়িতে চলে যান।
এসআই রেজাউল বলেন, ‘এ খবর জানতে পেরে আমরা গতকাল ঢাকা থেকে রওনা দেই। সেখানে পৌঁছানোর পর রাত ৩টার দিকে রেখার মামার বাড়িতে অভিযান চালাই। সেখান থেকে রেখাকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারের সময় রেখার কাছে থাকা ৪৯ হাজার ৭০০ টাকাসহ একটি গলার চেইন, চারটি স্বর্ণের চুড়ি, দুটি আংটি ও একটি নাকের নথ উদ্ধার করি।
এর আগে রেখার স্বামী ফরহাদ হোসেনকে গ্রেপ্তার
করা হয় জানিয়ে রেজাউল করিম বলেন, ‘স্বামীর দেওয়া তথ্যে ও প্রযুক্তির সহায়তা নিয়ে আমরা রেখাকে
অনুসরণ করছিলাম। ফরহাদকে গ্রেপ্তারের সময় ওই বাসা থেকে লুট করা একটি মুঠোফোন ও কানের
দুল উদ্ধার করি।
গ্রেপ্তারের পর রেখা কী জানিয়েছেন, এমন প্রশ্নে রেজাউল করিম বলেন, ‘রেখা জানিয়েছেন, তিনি তাঁর স্বামীর নির্দেশে গৃহকর্ত্রীকে মারধর করে ছিনতাই করেন। রেখা জানিয়েছেন, তিনি আগে সৌদি আরব ছিলেন। পরে সেখান থেকে দেশে ফিরে আসেন। কিন্তু তিনি পুনরায় সৌদি আরব যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। যেতে হলে টাকার দরকার। এদিকে রেখার স্বামীও টাকার জন্য রেখাকে মারধর করতেন। ফলে রেখা স্বামীর নির্দেশ অনুযায়ী এই ছিনতাই করেন বলে আমাকে জানিয়েছেন।
এসআই রেজাউল আরো বলেন, ‘রেখা আমাদের কাছে যে তথ্যগুলো দিয়েছেন,
তা যাচাই করব আমরা। এসব তথ্য সত্য নাও হতে পারে। তবে রেখা আমাদের আরো একটি বাসার তথ্য
দিয়েছেন, ঢাকায় ফিরে আমরা সেখানে অভিযান পরিচালনা করব। এখন আমরা আসামিকে নিয়ে যমুনা
সেতু পার হয়ে ঢাকার দিকে ফিরছি।
টুয়েন্টি ফোর। এর পরই ইন্টারনেটে ভিডিওটি
ভাইরাল হয়ে যায়।
ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যায়, বছর তিনেক
ধরে কিডনিসহ নানা সমস্যায় ভোগা বৃদ্ধা শুয়ে আছেন বিছানায়। পরম যত্নে তার সেবা করছেন
গৃহকর্মী রেখা। এর পরই দেখা যায় রেখার ভয়ংকর রূপ। তিনি বৃদ্ধাকে বিবস্ত্র করে তাকে
জোর করে বাথরুমে ঢোকান। শীতের সকালে বৃদ্ধার গায়ে ঢালা হয় ঠাণ্ডা পানি। কিন্তু ভেতরে
বৃদ্ধাকে আটকাতে না পেরে বেরিয়ে আসে রেখার আসল চেহারা।
যে লাঠিতে ভর করে বৃদ্ধা চলাফেরা করতেন
সেই লাঠি দিয়েই তাকে মারতে শুরু করেন রেখা। একের পর এক আঘাতে বৃদ্ধা মাটিতে লুটিয়ে
পড়লেও থামেননি রেখা। মাথায়ও আঘাত করেন। একপর্যায়ে হাতের কাছে যা পেয়েছেন তা দিয়েই চালিয়েছেন
নির্যাতন। আলমারির চাবির জন্য বুকের ওপর পা তুলে দেন রেখা। বঁটি হাতেও তেড়ে যান। একসময়
অসহায়ের মতো আত্মসমর্পণ করেন বৃদ্ধা। গলা থেকে চেইন খুলে নিজের গলায় পরে নেন রেখা।
হাতের বালাও পরেন।
চাবি দিয়ে আলমারি খুলতে ব্যর্থ হন রেখা।
তার পরই অসুস্থ বৃদ্ধাকে টেনে নিয়ে বাধ্য করেন আলমারি খুলে দিতে। ড্রয়ার খুলে স্বর্ণ,
টাকা ও মোবাইল ফোন নিজের কব্জায় নেন রেখা। সবকিছু ব্যাগে ভরে বৃদ্ধাকে বাসায় তালা মেরে
দেন রেখা। পরে বাসার গেট খুলে ব্যাগসহ বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান তিনি।
ব্যবসায়িক কাজে বৃদ্ধার ছেলে ঢাকার বাইরে
গেলে এই ঘটনা ঘটান গৃহকর্মী রেখা।