২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায় দ্রুত
কার্যকর করা উচিত বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সোমবার
(২১ আগস্ট) গ্রেনেড হামলার ১৯তম বার্ষিকীতে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে
এক আলোচনা ও স্মরণ সভায় তিনি এ কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘২১ আগস্ট প্রকাশ্য
দিবালোকে আমাদের নেতাকর্মীদের নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। তার বিচার হয়েছে, বিচারের
রায় হয়েছে। এই বিচারের রায় দ্রুত কার্যকর করা উচিত। কিছু আসামি জেলে, মূলহোতা (তারেক
রহমান) তো বাইরে। ওর সাহস থাকলে আসে না কেন বাংলাদেশে? আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ করেছি,
সেটা ব্যবহার করে বড় বড় কথা বলে। কিছু লোক হয়, এজন্য লম্ফঝম্ফ করে। কিন্তু বাংলাদেশের
মানুষকে চিনে নাই। বাংলাদেশের মানুষ তাদের ছাড়বে না। বাংলাদেশে খুনিদের রাজত্ব চলবে
না। জিয়া পরিবার খুনি পরিবার।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যে গ্রেনেড রণক্ষেত্রে
ব্যবহার হয়, যুদ্ধে ব্যবহার হয়, সে গ্রেনেড মারা হয়েছে আওয়ামী লীগের ওপর। সেদিন আহত
এক নারী কর্মীকে তার স্বামী ভ্যানে তুলে নিতে চান, কিন্তু এক পুলিশ সদস্য তাকে লাথি
মেরে ফেলে দেয়। পুলিশ তো নাগরিকদের জন্য হয়। কিন্তু তাদের আচরণ দেখে তো তখনই সন্দেহ
হয়। সেদিনকার সব আলামত নষ্ট করা হয়। কোনো আলামত রাখতে দেয়নি। একজন সেনা অফিসার আলামত
রাখতে চেষ্টা করলে তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়।’
তিনি বলেন, ‘তখন তো খালেদা
জিয়া প্রধানমন্ত্রী, কী ভূমিকা ছিল তার? আহতদের চিকিৎসায়ও বাধা দিয়েছে। এতে কী প্রমাণ
হয়? খালেদা-তারেক এটার সঙ্গে জড়িত। তদন্তেও প্রমাণ হয়েছে। ১৫ আগস্টে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডে
জিয়াউর রহমান জড়িত। খুনিদের জবানবন্দিতে ফুটে উঠেছে। আর ২১ আগস্টে খালেদা-তারেক জড়িত,
এটাও প্রমাণ হয়েছে।’
আরও পড়ুন>> গ্রেনেড হামলায় নিহতদের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘বিএনপি-জামায়াত
২০০১ সালে ক্ষমতায় এসে এত অর্থ কামায়! এফবিআই অফিসার হায়ার করে জয়কে অপহরণ করার জন্য।
আমরা তো বুঝিনি। পরে মার্কিন সরকার ওই এফবিআই অফিসারের বিরুদ্ধে মামলা করে, তদন্তে
বেরিয়ে আসে শফিক রেহমান ও মাহমুদুর রহমানের নাম।’
তিনি বলেন, ‘খুনের রাজনীতি
বিএনপি ও খালেদা জিয়া করে, এটা তো মানুষের কাছে স্পষ্ট। যে দলের উত্থানই হয়েছে হত্যা
ও ষড়যন্ত্রের রাজনীতির জন্য। তাদের হাতে রক্ত। আমি একটা বই লিখেছি, সবকিছু লিখেছি।
এগুলো মানুষের জানা দরকার। ১৫ আগস্টে কী হয়েছে? আমার বাবা-মা, ভাইবোন সবাইকে হত্যা
করেছে। বারবার আঘাত করেছে আমাকে হত্যার জন্যও।’
২০১৩-১৪ এর চিত্র তুলে ধরে শেখ হাসিনা
বলেন, ‘তারা আগুন দিয়ে
মানুষ মেরেছে। এই ছবিগুলো মানুষকে দেখানো উচিত।’ এসময় একটা অ্যালবামের ছবি দেখিয়ে
তিনি বলেন, ‘কত বীভৎস ছবিগুলো! এগুলো আমাদের মানুষকে দেখাতে হবে।’
দেশীয় ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলোকে
প্রশ্ন করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘যারা আজ মানবাধিকারের
কথা বলে, তাদের কাছে আমার প্রশ্ন- এদেশে বারবার মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়েছে। যার মূলহোতা
জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া, তারেক রহমান ও জামায়াত। ৩৩ বছর লেগেছে আমাদের বাবার হত্যার
বিচার পেতে। আমরা কী অপরাধ করেছিলাম? আমাদের বাবার হত্যার বিচার চাওয়ারও অধিকার কেড়ে
নেওয়া হয়।’
এসময় গ্রেনেড হামলায় আহতদের উদ্দেশে তিনি
বলেন, ‘মানুষের কাছে
যান। বলেন, কীভাবে তারা আপনাদের জীবন ধ্বংস করেছে। কীভাবে দেশের অর্থ লুট করে বিদেশে
পাচার করেছে। অথচ দেশের মানুষকে ক্ষুধার্ত রেখেছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এদেশের মানুষ
যেন আর তাদের অগ্নিসন্ত্রাসের শিকার না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। বিশ্বের বুকে মর্যাদা
নিয়ে বাংলাদেশকে এগিয়ে যেতে হবে। খুনি-সন্ত্রাসী ও মানিলন্ডারিংকারীরা যেন বাংলাদেশের
মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে না পারে, সে বিষয়ে সজাগ থাকতে হবে।’
সভায় আরও স্বাগত বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের
সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। দোয়া ও মুনাজাত করেন বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের জ্যেষ্ঠ
পেশ ইমাম মুফতি মিজানুর রহমান। সভায় আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা অংশ নেন।