বিএনপি সিটি নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিলেও গাজীপুরে বিএনপি পরিবারের ছেলে সরকার শাহ নুর ইসলাম রনি প্রার্থী হওয়ায় নতুন করে আলোচনার জন্ম হয়েছে। বিএনপিতে রনির কোন পদ নেই, মনোনয়ন পত্র জমা দেয়ার সময় তিনি বিএনপির পরিবারের সদস্য বলে পরিচয় দিয়েছেন।
অনেকেই মনে করছেন এটি বিএনপির নির্বাচনী একটি কৌশল। পদ পদবী ছাড়া কাউকে নির্বাচনে প্রার্থী করলে নির্বাচনে অংশ নেয়ার বিষয়টা অনেকটা এড়িয়ে যাওয়া যাবে। এদিকে বিএনপির অনেকেই সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে প্রার্থী হয়েছেন। স্বাভাাবিকভাবেই সরকার শাহনুর ইসলাম রনিই বিএনপির প্রার্থী হয়ে উঠবেন এমন গুঞ্জন রয়েছে নগর জুড়েই।
সরকার শাহনুর ইসলাম রনি টঙ্গীর সরকার পরিবারের নুরুল ইসলাম সরকারের ছেলে। নুরুল ইসলাম সরকার প্রয়াত সংসদ সদস্য আহসান উল্লাহ মাষ্টার হত্যা মামলায় অভিযুক্ত মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত আসামী। রনির চাচা হাসান উদ্দিন সরকার বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য। গতবার মেয়র নির্বাচনে হাসান সরকার জাহাঙ্গীর আলমের সাথে ধানের শীষ প্রতিকে প্রতিদ্বন্ধিতা করে পরাজিত হয়েছিলেন। গত রমজানে একটি ইফতার মাহফিলে হাসান সরকার বিনা চ্যালেঞ্জে আওয়ামী লীগ প্রার্থীকে ছেড়ে না দেয়ার কথা বলেছিলেন, পরে নির্বাচনে তার ভাতিজা প্রার্থী হওয়ায় মধ্য দিয়ে তার কথার সত্যতা অনেকটা বেড়িয়ে আসলো।
ভাতিজার প্রার্থী হওয়ার বিষয়ে হাসান উদ্দিন সরকার বলেন, এখনও তিনি এ বিষয়ে কোন মন্তব্য করবেন না, আগে নির্বাচনের প্রচারণাটা শুরু হোক, তারপর সবই সামনে আসবে।
বিএনপির সূত্র জানায় রনির বাবা নুরুল ইসলাম সরকার যুবদলের কেন্দ্রীয় নেতা ছিলেন। ২০০৫ সালে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য আহসান উল্লাহ মাষ্টারকে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যার ঘটনায় মৃতুদণ্ডের রায় পেয়েছেন। দণ্ড এখনও কার্যকর হয়নি। ১৮বছর ধরেই তিনি কারাবন্দি। ২০০৬ সালে কারাবন্দি থাকা অবস্থায় টঙ্গী পৌরসভার নির্বাচনে মেয়র পদে অংশ নিয়ে আজমত উল্লা খানের কাছে পরাজিত হন। আর টঙ্গীর সরকার পরিবার গাজীপুরে রাজনৈতিক ভাবে অনেকটা প্রভাবশালী হলেও বেশ কয়েকবছরে তাদের ক্ষমতা ও প্রভাব অনেকটা কমে এসেছে।
বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, গাজীপুর মহানগরে বিএনপির উল্লেখযোগ্য ভোটব্যাংক রয়েছে। সেই ভোটব্যাংকের উপর নির্ভর করে ২০১৩সালে বিএনপির প্রার্থী অধ্যাপক এমএ মান্নান জয়লাভ করেন। সে ভোট ব্যাংক নিজের বাক্সে আনতেই সরকার শাহনুর ইসলাম প্রার্থী হয়েছেন। ২০১৮সালে রনির চাচা হাসান উদ্দিন সরকার যখন নির্বাচন করেন তখন রনি চাচার হয়ে নির্বাচন করেছিলেন। বিএনপির সংগঠন সেচ্ছাসেবক দলের পরিচয় দিলেও সেই সংগঠনে তার কোন পদ পদবী ছিল না। চাচা নির্বাচনে হেরে গেলে তিনি সুইডেন চলে যান। নির্বাচনে অংশ নিতে মাস ছয়েক আগে স্ত্রী সন্তান নিয়ে দেশে ফিরেন।
এ বিষয়ে সরকার শাহ নুর ইসলাম রনি বলেন, বিএনপি কেন সবাই আমার পাশে রয়েছেন। আমার চাচাও আছেন। আমি তো বিএনপি পরিবারের ছেলেই। নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার পর সাধারণ মানুষের পক্ষ থেকে ব্যাপক সারা পাচ্ছি, সুষ্ঠ ভোট হলে ইনশাল্লাহ আমি জয়ী হবো। তার বাবা একজন হত্যাকারী হিসেবে জেলে আছেন, আপনি তার ছেলে আপনাকে কেন নগরবাসী ভোট দিবে এ বিষয়ে তিনি বলেন, আমার বাবা ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছেন, তাকে ফাঁসানো হয়েছে বলে অভিমত তার।
নিজের পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করে রনি বলেন, তিনি যদি জয়ী হতে পারেন তাহলে নগরের প্রতিটি মানুষকে সাথে নিয়ে উন্নয়ন করবেন। সাথে সচ্ছ আধুনিক ও পরিবেশসম্মত বাসযোগ্য নগরী প্রতিষ্ঠা করবেন।
এ বিষয়ে গাজীপুর মহানগর বিএনপির সদস্যসচিব শওকত হোসেন সরকার বলেন, সরকার শাহ নুর ইসলাম রনি আমাদের বিএনপির কেউ না। আমরা এই নির্বাচনে নেই তা স্পষ্ট। তবে রনিকে যদি কেউ সমর্থন দেয় বা পিছন থেকে ইন্ধন দেয় সে বিষয়টি দল দেখে ব্যবস্থা নিবে এমন প্রত্যাশা করি। আর খালি মাঠে সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে ছেড়ে দেয়া হবে না এমন বক্তব্য দেয়ার বিষয়টি নিয়ে তিনি বলেন, এটা তার ব্যক্তিগত বক্তব্য ছিল।