নালিতাবাড়ী (শেরপুর) প্রতিনিধি:
শেরপুরের নালিতাবাড়ী, ঝিনাইগাতি ও শ্রীবরদী এলাকার পাহাড়ি জনপদে বন্য হাতির তাণ্ডব যেন থামছেই না। বরং সাম্প্রতিক কালে মানুষ-হাতি দ্বন্দ্ব প্রকট আকার ধারণ করেছে।
হাতির পাল আগে সন্ধ্যার দিকে লোকালয়ে নেমে এসে কৃষকদের ফসলের মাঠ ও বাড়িঘরে হামলা চালাতো। কিন্তু সম্প্রতি এসব বন্য হাতির পাল দিন-রাত সবসময় তাণ্ডব চালাতে শুরু করেছে বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ৪০/৫০টি বন্য হাতি একসঙ্গে আক্রমণ করে মানুষের বাড়িঘরে। হাতির তাণ্ডবে ফসলের মাঠ ও গাছ পালা ক্ষতিগ্রস্থ হয়। গত প্রায় এক সপ্তাহে ধরে হাতির একটি দল অবস্থান করছে নালিতাবাড়ীর বাতকুচি, বুরুঙ্গা কালাপানি, লক্ষীকুড়া গ্রামের পাহাড়ে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, হাতির এমন একাধিক দল রয়েছে পাহাড়ে দুপুরের পরপরই এসব বন্য হাতি জঙ্গল থেকে বেরিয়ে আসে লোকালয়ে। মৎস্য খামারের পুকুরে নামতে চেষ্টা করে হাতির দল। মানুষ ও হাতির মধ্যে চলে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া। হাতির অত্যাচারে অতিষ্ঠ পাহাড়ি জনপদের মানুষ। হাতি নেমে আসলে উৎসুক মানুষের ভিড়ও চোখে পড়ার মতো। এসব হাতি এক নজর দেখতে ভিড় করেন দর্শনার্থীরা। এভাবেই দিনরাত হাতি মানুষের খেলা চলছে পাহাড়ি অঞ্চলে।
গত কয়েক দিনে হাতির অত্যাচারে ঘর ছাড়া হয়েছেন জসিম উদ্দীন, মালেকা খাতুন। মৎস্য খামার ধ্বংস করেছে হাতির দল উসমান ও জসিম উদ্দীনের। হাতির আক্রমণে ধ্বংস হয়েছে মধুটিলা ইকোপার্কের শিশুপার্ক ও মিনি চিড়িয়াখানা। প্রতি বছর হাতির আক্রমণে মরছে মানুষ। সম্প্রতি হাতি প্রাণ কেড়ে নিয়েছে নালিতাবাড়ী উপজেলার সমশ্চুড়া গ্রামের বিজয় সাংমার।
নালিতাবাড়ী ও ঝিনাইগাতী উপজেলার হাতি উপদ্রুত এলাকার কয়েকটি গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, প্রায় প্রতিটি বাড়িতই মশাল, বাঁশি, ঢোল-প্যাটরা রাখা আছে। টিলা ও ফসলের জমিতে ডেরা তৈরি করে ছোট ছোট গ্রুপে বিভক্ত হয়ে পাহারার ব্যবস্থা করা হয়েছে। পাহাড় থেকে হাতি নেমে এলেই পাহারায় থাকা লোকজন চিৎকার শুরু করে। এরপরই হাতির পাল আশপাশের এলাকায় নষ্ট করছে ফসলের মাঠ ফলের বাগান। এসময় গ্রামবাসিরা মিলে মশাল, ভেঁপু, ঢোল প্যাটরা নিয়ে হাতি তাড়াতে ছুটে আসে।
নালিতাবাড়ী সীমান্তের বুরুঙ্গা কালাপানি এলাকার এন্ডারসন সাংমা জানান, আগে মশাল জালিয়ে, হই-হুল্লোড় করে হাতি তাড়ানো যেত। কিন্তু এখন হাতি এগুলো পরোয়া করে না। উল্টো মানুষকেই ধাওয়া করে।
পোড়াাগাঁও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি বন্দনা চাম্বুগং জানান, পাহাড়ে হাতি খাদ্য ও পানীয় জলের চরম সংকটে পড়েছে। তাই তৃষ্ণা মেটাতে পাহাড়ি কোনো জলাশয় কিংবা নদীতে নেমে পড়ছে।
ময়মনসিংহ বন বিভাগের মধুটিলা রেঞ্জের রেঞ্জ কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, হাতিগুলোকে কেউ যাতে বিরক্ত না করে, সেজন্য আমরা মানুষকে সচেতন করি। হাতি জানমালের ক্ষতি করলে সরকার ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করে। এখন যে পরিস্থিতি তাতে মানুষের শান্তিপূর্ণ বসবাসের জন্য হাতির অভয়াশ্রম তৈরি ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই।
শেরপুরের বন বিভাগের বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কর্মকর্তা সুমন সরকার বলেন, হাতির আক্রমণে ক্ষতিগ্রস্থদের সরকার নগদ আর্থিক সহায়তা প্রদানসহ বৃহৎ পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। এরই অংশ হিসেবে বন্যহাতির আক্রমণে নিহত ব্যক্তির পরিবারের জন্য তিন লাখ, আহতকে এক লাখ এবং ঘরবাড়ি ও ফসলের ক্ষতিগ্রস্থ হওয়া ব্যক্তিকে ৫০ হাজার টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া বিভিন্ন সচেতনতামূলক কর্মশালা পরিচালনা করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।