আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের জনপ্রিয়তার চেয়ে
বহুগুণে এগিয়ে ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগগুলো। অর্থের ছড়াছড়ি, পুরস্কার এবং চাকচিক্যে আন্তর্জাতিক
ম্যাচের দাপট কমতে শুরু করেছে। অল্প সময়ে অধিক মুনাফার লোভে তারকা ক্রিকেটাররাও ঝুঁকছেন
এসব টুর্নামেন্টে। এছাড়া দীর্ঘমেয়াদ কিংবা স্থায়ীভাবে ক্রিকেটারদের ক্রয়ের পরিকল্পনাও
করছে ফ্র্যাঞ্চাইজি দলগুলো। এতে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট একরকম সংকটের মধ্যেই পড়ে গেছে।
ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগের এমন দাপট কমাতে এবার পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে আইসিসি।
ব্রিটিশ পত্রিকা ডেইলি টেলিগ্রাফ এক প্রতিবেদনে
এসব তথ্য জানিয়েছে। তারা বলছে, ফ্র্যাঞ্চাইজি টি–টোয়েন্টি লিগগুলোতে প্রথম একাদশে
বিদেশি ক্রিকেটারের সংখ্যা নির্দিষ্ট করে দেওয়ার পরিকল্পনা করছে বিশ্ব ক্রিকেটের সর্বোচ্চ
সংস্থা আইসিসি। একইসঙ্গে ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে কোনো দেশের ক্রিকেটার চুক্তিবদ্ধ হওয়ার
সময় ওই দেশের ক্রিকেট বোর্ড যেন অর্থলাভ করতে পারে সেই ব্যবস্থাও নেওয়া হবে।
প্রতিবেদনটি জানিয়েছে, আইসিসি আগামী মাসেই
ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে প্রতিটি দলে বিদেশি খেলোয়াড়ের সংখ্যা ৪–এ বেঁধে রাখার
নিয়ম করে দিতে যাচ্ছে। প্রতি খেলোয়াড়ের চুক্তির বিনিময়ে সংশ্লিষ্ট ক্রিকেট বোর্ডের
নির্দিষ্ট অঙ্কের অর্থপ্রাপ্তিও আইসিসি বাধ্যতামূলক করতে পারে আগামী মাসেই।
আরও পড়ুন<< টসে হেরে ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশ
সম্প্রতি ইন্টারন্যাশনাল টি–টোয়েন্টি লিগ
চালু করেছে সংযুক্ত আরব আমিরাত। আগামী মাসে যুক্তরাষ্ট্রে চালু হতে যাচ্ছে নতুন টি–টোয়েন্টি ফ্র্যাঞ্চাইজি
লিগ। এমনকি সৌদি আরবেও টি–টোয়েন্টি ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ চালু হচ্ছে
বলে গুঞ্জন আছে। ভারতের আইপিএল, অস্ট্রেলিয়ার বিগ ব্যাশ টি–টোয়েন্টি, পাকিস্তানের
পিএসএল, বাংলাদেশের বিপিএল ছাড়াও এ বছরের শুরুতে দক্ষিণ আফ্রিকা চালু করেছে নতুন টি–টোয়েন্টি ফ্র্যাঞ্চাইজি
লিগ।
প্রথম একাদশে বিদেশি ক্রিকেটারের সংখ্যা
নির্দিষ্ট করার পেছনে মূলত আছে নতুন কিছু লিগই। আরব আমিরাতের লিগে এক দলে সর্বোচ্চ
৯ জন বিদেশি খেলোয়াড় রাখার অনুমতি ছিল। যুক্তরাষ্ট্রের লিগে এই সংখ্যাটা হতে যাচ্ছে
৬।
আরও পড়ুন<< ঢাকা টেস্ট শুরু আজ, দলে নেই সাকিব-তামিম
অন্যদিকে, আইপিএলে প্রতি ম্যাচে সর্বোচ্চ
চারজন বিদেশি খেলোয়াড় খেলাতে পারে দলগুলো। আপাতত সেটিকেই মানদণ্ড ধরে এগোতে চায় আইসিসি।
ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থার শঙ্কাটা মূলত সৌদি আরবের প্রস্তাবিত টি–টোয়েন্টি লিগ
নিয়েই। এতে ইউরোপীয় ফুটবলের মতো বিদেশি খেলোয়াড়ের নির্দিষ্ট কোনো কোটা থাকবে না বলেই
মনে করা হচ্ছে। আইপিএলের মতো ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগগুলোতে যদি প্রতি ম্যাচে চারজন বিদেশি
খেলোয়াড় নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়, তাহলে এই লিগগুলোতে স্থানীয় খেলোয়াড়দের সুযোগও অনেক
বেড়ে যাবে স্বাভাবিকভাবেই।
লিগগুলোতে প্রতি ম্যাচে বিদেশি খেলোয়াড়ের
সংখ্যা ৪–এ বেঁধে রাখা
হলে ক্রিকেটারদের বোর্ডের কেন্দ্রীয় চুক্তি ছেড়ে দেওয়ার ঝুঁকিও অনেকটাই কমে যাবে বলে
মনে করে আইসিসি। এতে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট যে সম্প্রতি হুমকির মধ্যে পড়ে যাচ্ছে, সেই
ঝুঁকিও অনেকটাই কমবে বলে ধারণা তাদের। আইসিসি চায়, ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগগুলোর দলগুলো বিদেশি
ক্রিকেটারদের দলভুক্ত করার সঙ্গে সঙ্গে সেই ক্রিকেটার যে বোর্ডের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ,
তাদের যেন মোট অর্থের ১০ শতাংশ দেয়।
আরও পড়ুন<< কেন ভারত হারের দায়ভার আনুশকার ওপর?
তবে ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে প্রতি ম্যাচে চার
বিদেশি খেলোয়াড়ের সংখ্যা বেঁধে দেওয়ার ব্যাপারটি টেস্ট খেলুড়ে দেশগুলোর খেলোয়াড়দের
মধ্যেই রাখতে চায় আইসিসি। সেক্ষেত্রে আইসিসি সহযোগী সদস্যদেশের ক্রিকেটার এই কোটার
মধ্যে পড়বেন না। এতে আইসিসি সহযোগী সদস্যদেশগুলোর ক্রিকেটাররা এসব লিগে খেলে নিজেদের
দেশের ক্রিকেটকে লাভবান করতে পারবেন।
এর আগে ২০১৮ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট
বোর্ডের প্রধান নির্বাহী জনি গ্রেভ আইসিসিকে এ ধরনের একটি প্রস্তাব দিয়েছিলেন। কিন্তু
সে সময় তার প্রস্তাব বিভিন্ন ক্রিকেট বোর্ডের কাছে খুব একটা পাত্তা পায়নি। কিন্তু মাত্র
পাঁচ বছরের ব্যবধানে বিশ্বব্যাপী ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগগুলোর দাপটে খেলোয়াড়দের দেশের হয়ে
খেলার ব্যাপারে অনীহা ও তাদের কেন্দ্রীয় চুক্তি থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে নেওয়ার
প্রবণতার মুখে গ্রেভের প্রস্তাবটি নিয়ে সবাই গভীরভাবে চিন্তাভাবনা শুরু করেছে।