ফরিদপুরের নগরকান্দার চাঞ্চল্যকর রওশন
আলী মিয়া ও মিরাজুল ইসলাম তুহিন হত্যা মামলায় তিন জনকে মৃত্যুদণ্ড, দুই জনকে যাবজ্জীবন ও চার জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। রোববার সকালে ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-৪ এর
বিচারক জেসমিন আরা বেগমের আদালত এ রায় ঘোষণা করেন।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন, হানিফ ওরফে হৃদয়, এনামুল হাসান মিয়া ও কাইয়ুম মিয়া। মৃত্যুদণ্ডের পাশাপাশি প্রত্যেককে এক লাখ টাকা করে অর্থদণ্ড করা হয়েছে। এদের মধ্যে হানিফ ও হাসান আপন দুই ভাই। যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন, আউয়াল মোল্লা ও রেজাউল মাতুব্বর। কারাদণ্ডের পাশাপাশি প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা করে অর্থদণ্ড করেছে আদালত।
এছাড়া আরও ৪ আসামিকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেন আদালত। আসামি দুলাল মিয়াকে এক ধারায় ১০ বছরের কারাদণ্ডের পাশাপাশি ২০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড ও অনাদায়ে তাকে আরও ৬ মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। আরেক ধারায় তাকে সাত বছরের কারাদণ্ড, ২০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড ও অনাদায়ে আরও ৬ মাস কারাদণ্ড দেওয়া হয়। দুই ধারার সাজা একত্রে চলবে বলে আদেশে উল্লেখ করেছেন আদালত। আসামি হাবিবুর রহমানকে দুই ধারায় সাত বছরের কারাদণ্ড ও ২০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড অনাদায়ে ৬ মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
আসামি পাচু মিয়াকে তিন বছরের কারাদণ্ডের
পাশাপাশি ৫ হাজার টাকা জরিমানা ও অনাদায়ে এক মাস কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। রবিন শিকদার
নামে এক আসামিকে এক বছরের কারাদণ্ডের পাশাপাশি ৫ হাজার টাকা অর্থদণ্ড ও অনাদায়ে আরও
এক মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
মামলায় পারভেজ মিয়া, হাফিজুর রহমান, তুহিন
মিয়া, রবিউল ইসলাম, কে. এম রাজু আহমেদ ও শহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত না
হওয়ায় তারা খালাস পেয়েছেন। মামলার বিচার চলাকালে আসাদুজ্জামান সিকদার নামে এক আসামি
মারা গেছেন। সংশ্লিষ্ট আদালতের বেঞ্চ সহকারী মিজানুর রহমান খান এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
গত ৩ আগস্ট রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে আদালত রায়ের এ তারিখ
ঠিক করেন।
মামলার আসামিরা হলেন, আউয়াল মোল্লা, পাচু
মিয়া, কে এম রাজু ওরফে কোরবান মিয়া, রবিউল ইসলাম ওরফে মশিউর মিয়া, হানিফ ওরফে হৃদয়,
এনামুল হাসান মিয়া, রেজাউল মাতুব্বর, কাইয়ুম মিয়া, রিকুল ইসলাম ওরফে রবিন শিকদার, দুলাল
মিয়া, হাবিবুর রহমান ওরফে হাবিব মিয়া, পারভেজ মিয়া, হাফিজুর রহমান ওরফে তুষার মিয়া,
তুহিন মিয়া, শহিদুল ইসলাম ওরফে শহিদ মিয়া। আসামিদের মধ্যে আউয়াল জামিনে, পাচু, রাজু
ও রবিউল কারাগারে এবং শেষের ১১ জন পলাতক।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, নগরকান্দার কাইচাইল
ইউনিয়নের হানিফ মিয়া হৃদয়ের সঙ্গে বিরোধ ছিল একই এলাকার রওশন মিয়ার। বিরোধের সূত্র
ধরে ২০১৯ সালের ১০ আগস্ট বিকেলে মসজিদ থেকে নামাজ শেষে বাড়ি ফেরার পথে হানিফ মিয়ার
নেতৃত্বে সন্ত্রাসীরা এলোপাথাড়ি গুলি চালিয়ে হত্যা করে রওশন আলী মিয়া ও মিরাজুল ইসলাম
তুহিনকে। এ ঘটনার পরদিন রায়হান উদ্দিন মিয়া বাদী হয়ে ১৬ জনকে আসামি করে নগরকান্দা থানায়
হত্যা মামলাটি দায়ের করেন।
মামলাটি তদন্ত করে পিবিআই (ফরিদপুর) এর
সাব-ইন্সপেক্টর আব্দুল মজিদ ১৬ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। মামলার
বিচার চলাকালে আদালত ৩৬ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করেন।
এ বিষয়ে রওশন আলী মিয়া ও মিরাজুল ইসলাম
তুহিন এর পরিবারের অভিভাবক ভাঙ্গা সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা মনিরা
বেগম আজকের দর্পণকে মোবাইলফোনে জানান, আমাদের পরিবার থেকে একটি প্রেস ব্রিফিং করার
মাধ্যেমে আমাদের প্রতিক্রিয়া তুলে ধরা হবে। এর আগে আমরা কিছু বলতে চাচ্ছিনা।