ফরিদপুরের ভাঙ্গায় সরকারী জমিতে ধানকাঁটা কেন্দ্র করে সংঘাতে প্রতিপক্ষের হামলায় আলমগীর মাতুব্বর (৬০)নামে একজন বৃদ্ধা নিহত হয়েছেন।
রোববার সকালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ভাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে তার মৃত্যু হয় বলে পুলিশ ও হাসপাতাল সূত্রে নিশ্চিত করা হয়েছে। খবর পেয়ে পুলিশ নিহতের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য জেলা মর্গে পাঠিয়েছে।
এদিকে আলমগীর মাতুব্বরের মৃত্যুর খবর তার গ্রামের বাড়ি আলগী ইউনিয়নের ছোট খারদিয়া এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে তার দলের সমর্থকেরা প্রতিপক্ষ ১৫টি প্রবাসী পরিবারসহ প্রায় ২৫টি ঘর-বাড়িতে ভাংচুর ও ঘরের মালামাল লুটের ঘটনায় গোটা এলাকায় একটি থমথমে অবস্থা বিরাজ করার পাশাপাশি খারদিয়া গ্রামের পুরুষ শুন্য প্রবাসী ১৫টি পরিবারের মাঝে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে পুনরায় হামলার আশঙ্কায়। নিহত আলমগীর মাতুব্বর আলগি ইউনিয়নের ছোটখারদিয়া গ্রামের মৃত্যু হাজী লাল মিয়ার ছেলে।
স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, আলগী ইউনিয়নের ছোট খারদিয়া গ্রামে বিবদমান দুটি দল রয়েছে। একটি পক্ষের নেতৃত্ব দেন ছানু মাতুব্বর, বাবলু মাতুব্বর ও সরো মাতুব্বর। অপর পক্ষের নেতৃত্ব দেন আদম ব্যবসায়ী কাওসার মাতুব্বর ও জলিল মাতুব্বর। দুটি পক্ষের লোকজনের সাথে গ্রামের সরকারি একটি হালট নিয়ে দীর্ঘদিন কোন্দল চলে আসছিল। সম্প্রতি সরকারি হালটটি বের করার জন্য গ্রামবাসী সেখানে একটি মাপঝোপ করে সমাধানের জন্য এগিয়ে আসেন। মাপের সময় হালটের কিছু অংশ জলিল মাতব্বরের বাড়িতে ঢুকে গেলে গত চার মাস যাবৎ ছানু মাতুব্বর দলের লোকজন হালট উদ্ধার করতে বেশ মরিয়া হয়ে ওঠেন।
আরও পড়ুন>> ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পারিবারিক কলহে স্বামীর হাতে স্ত্রী খুন
অবশেষে ভাঙ্গা সহকারী কমিশনার ভূমি অফিসে অভিযোগ করার পরে ভূমি অফিস একাধিকবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে সরকারি বিধি মোতাবেক একটি সমাধানের চেষ্টা করেন। কিন্ত নিজেদের মধ্যে আধিপত্য বিস্তারের খোলা গরম জানাতে দুই দলের মাঝে বিবিধ সময়ে উত্তেজনা বাড়তে থাকে। ঈদুল ফিতরের পরের দিন সরো মাতুব্বর নামের একজন নাসিরকে মারধোর করায় সরোয়ার মাতুব্বরকে মারধর করে। পূর্ব এঘটনার প্রতিশোধ নিতে ছানু, সরোয়ার পক্ষের লোকজন প্রতিশোধ নিতে ফের সুযোগ খুঁজতে থাকে।
অতপর শনিবার (১৩ মে) বিকেলে আদম কাওসার দলের আক্কাস মোল্লা তাদের নিজের জমিতে পাকা ধান কাটতে জমিতে গেলে ছানুর দলের লোকজন তাদের ধাওয়া করে। তখন উভয় পক্ষের লোকজন দেশীয় অস্ত্র নিয়ে সঙ্গবদ্ধ হয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। সংঘাতে উভয় পক্ষের প্রায় ৩০ জন আহত হয়ে। গুরুতর আহত পাঁচজন আলমগীর মাতুব্বর, নুরু মোল্লা, কিফায়েত মোল্লা, সোলেমান মুন্সী ও রেজাউল মাতুব্বরকে ভাঙ্গা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে, ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতলে ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন। গুরুতর আহতদের মাঝে আলমগীর মাতুব্বর রবিবার সকালে ভাঙ্গা হাসপাতালে চিকিৎসা অবস্থায় মারা যান।
অন্যান্যেদের মধ্যে আহতরা হলেন কুদ্দুস মাতুব্বর(৬৫), মিসরী বেগম(৩৫), রাঙ্গা মাতুব্বর(৬০), শাহজাহান মাতুব্বর(৪০), আক্কাস মোল্লা(৪০), সেকেন শেখ(৫৫), তুহিন শেখ(২৫), মামুন সেখ (৩০), পচা মাতুব্বর(৬০), হাকিম মাতুব্বর(২৩), রবি মাতুব্বর(৩৫), শহিদ শেখ(৪০), রাসেল মোল্লা(২৬), হাসিব মোল্লা(২৮)সহ আরো অনেকে। সংঘর্ষকালে নিহত আলমগীর মোল্লার বাড়ি লুটপাট ও ভাংচুর চালায় ছানু গ্রুপের লোকেরা। অভিযোগ প্রতিপক্ষের বিভিন্ন ঘর বাড়িতে হামলা ও ভাংচুরসহ মহিলাদের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণের অভিযোগ করেন প্রবাসী পরিবারের মহিলারা।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ভাঙ্গা সার্কেল ) মোঃ হেলাল উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন,পূর্ব শত্রুতার জের ধরে ধান কাটাকে কেন্দ্র করে সংঘাতে গুরুতর আহত আলমগীর মোল্লা রোববার সকালে হাসপাতালে মারা যান। নিহতের লাশ উদ্ধার করে মর্গে প্রেরণ পাঠিয়েছে পুলিশ। মামলার প্রস্তুতি চলছে। ফের সংঘর্ষ ও লুটতরাজ এড়াতে দাঙ্গা প্রবণ এলাকা হিসেবে পরিচিত আলগী ইউনিয়নের ছোট খারদিয়ায় গোটা এলাকায় তৎপরতা চালিয়ে পুলিশ নিয়ন্ত্রণ রাখার পাশাপাশি সেখানে অতিরিক্ত পুলিশও মোতায়েন করা হয়েছে বলে জানান।