অর্ধবাষিক পরীক্ষা চলছে। পরীক্ষার আগে কেউ বেতন দিয়েছে। কোন ছাত্র বেতন দেয়নি। একই সাথে বিদ্যালয়ের নির্ধারিত পোশাক (ড্রেস) পড়ে পরীক্ষার দিতে আসেনি শিক্ষার্থীদের কয়েকজন। উল্লেখিত বিষয়গুলো থেকে পুঞ্জীভূত ক্ষোভের সৃষ্ট থেকে রাগে ক্ষোভের বশবর্তী হয়ে ৪০ শিক্ষার্থীকে বেত দিয়ে পিটিয়ে গুরুতর আহত করার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি ঘটেছে আজ সকাল ১০টার দিকে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পৌর এলাকার কাপুড়িয়া সদরদী এমএম ওসমান মডেল স্কুলে। প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল করেছে শিক্ষার্থীরা। পরে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এসএম হাবিবুর রহমানের কার্যালয়ে ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার আজিম উদ্দিন এর কার্যালয়ে গিয়ে একটি লিখিত অভিযোগ ও শারীরিকভাবে আহত করার বিভিন্ন চিত্র তুলে ধরেন এম এম ওসমান স্কুলের শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের অভিযোগের বিষয়টি তারা ক্ষতিয়ে দেখবে বলে আশ্বস্ত করলে ঘরে ফিরে যায় শিক্ষার্থীরা। আহত শিক্ষার্থীরা ভাঙ্গা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা নেন।
স্কুলের শিক্ষার্থী শুভ জানান প্রতিদিনের মত তারা স্কুলে পরীক্ষা দিতে আসে। এসময় পরীক্ষা হলে প্রবেশ করার সময় প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকরা বকেয়া বেতনের কথা বললে তারা অনেকেই পারিবারিক বিভিন্ন সুবিধা অসুবিধার কথা শিক্ষকদের সামনে তুলে ধরে আগামী দিনের বেতন দিতে চাইলেই প্রধান শিক্ষক এম এম ওসমান (স্যার) ও সহকারী শিক্ষকরা কয়েকজন ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন। এক পর্যায়ে স্কুল কক্ষের ভিতরে আটকে রেখে ৪০ জনকে পিটিয়ে আহত করে বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের। এদিকে ঘটনার পর থেকেই এমএম ওসমান স্কুলে তালা ঝুলতে দেখা গেলেও কাউকে পাওয়া যায়নি।
নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থী নিশান শেখ জানান, প্রধান শিক্ষক তাদের উপর ক্ষিপ্ত হয়ে বেত্রাঘাত করছিল এসময় স্কুলের সহকারি শিক্ষক ওমর স্যার ঠেকাতে আসলে তাকেও মারধর করেন। পরে শিক্ষার্থীরা কান্নাকাটি করতে থাকে এবং ভয়ভীতি পেয়ে পরীক্ষা না দিয়ে স্কুল থেকে বেরিয়ে গিয়ে শিক্ষার্থীরা প্রধান শিক্ষক ওসমানের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেন।
মোবাইল ফোনে প্রধান শিক্ষক ওসমান শিক্ষক আজকের দর্পণকে জানান, তিনি বিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ প্রতিহিংসার রাজনীতির শিকারে পরিণত হয়েছেন। বিদ্যালয়ের বেশ কয়েকজন শিক্ষক তার নিজের এলাকার হওয়ায় ওই বিদ্যালয় থেকে তাকে অপসারিত করার জন্য অনেকদিন আগের থেকেই গভীর ষড়যন্ত্র চালিয়ে আসছিল। সেই ঘটনার সুত্রতায় তার বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের বেত্রাঘাতের ঘটনা দিয়ে আমাকে জোরানো হচ্ছে বলে দাবী করে বেত্রাঘাতের বিষয়টি অস্বীকার করেন।
ভাঙ্গা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার জালাল উদ্দিন বলেন, এম এম ওসমান স্কুলটি একটি বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। আমাদের নিয়ন্ত্রণাধীন নয়। এরপরেও শিক্ষার্থীদের পিটিয়ে আহত করার ঘটনার বিষয়টি উদ্বেগজনক বিধায় ভাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও আমি (শিক্ষা অফিসার মাধ্যমিক) বিষয়টি নিয়ে তদন্ত শুরু করেছি। তদন্তে সত্যাতা বেড়িয়ে আসলে এ ঘটনার সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান শিক্ষা অফিসার জালাল উদ্দিন।
ভাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আজিম উদ্দিন রুবেল বলেন, শিক্ষার্থীদের বেত্রাঘাতের আলামত আমাকে দেখিয়েছে। আমি মর্মাহত। শিক্ষার্থীদের গায়ে আঘাতের চিহ্ন দেখে সঙ্গে সঙ্গে আমি উপজেলা মাধ্যমিক কর্মকর্তা জালাল উদ্দিনকে তদন্ত করার নির্দেশ দিয়েছি। তদন্ত শেষে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তবে এই মুহূর্তে কোন শিক্ষার্থীর অভিযোগ পেলে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা হবে। কোন শিক্ষার্থী বা অভিভাবকের লিখিত অভিযোগ পাওয়া যায়নি।