শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলায় ফাঁসির
মঞ্চ বানিয়ে শফি উদ্দিন (৫৫) নামে এক কৃষকের আত্মহত্যার ঘটনায় স্থানীয় দুই ব্যক্তির
বিরুদ্ধে মামলা করেছেন নিহতের পরিবার।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে নালিতাবাড়ী থানায়
আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগে এ মামলা করেন নিহত কৃষকের বড় ছেলে আনোয়ার হোসেন।
নিহত শফি উদ্দিনের বাড়ি উপজেলার মানিকচাঁদ
পাড়া গ্রামে। মামলায় আসামি করা হয়েছে একই গ্রামের কৃষক আহাম্মদ আলী ও স্থানীয় ইউপি
সদস্য মজিবর রহমানকে।
স্থানীয়রা জানান, প্রায় পাঁচ বছর ধরে বাদলাকুড়া
গ্রামের প্রান্তিক চাষী আব্দুল মজিদ আশপাশের সামান্য জমিতে সেচ দিয়ে জীবিকা নির্বাহ
করতেন। কিন্তু ছোট ও অগভীর নলকূপ হওয়ায় আরও কিছু জমি সেচের আওতায় আনতে ছোট ভাই শফি
উদ্দিনের সাথে শেয়ারে মাসখানেক আগে আরও একটি অগভীর সেচ পাম্প স্থাপন করেন।
সম্প্রতি পার্শ্ববর্তী মানিকচাঁদপাড়া গ্রামের
আহাম্মদ আলী একই মাঠে এবং ওই অগভীর নলকূপ দু’টির পাশে আরও একটি সেচ পাম্প বসাতে বোরিংয়ের
উদ্যোগ নেয়। একইসঙ্গে আব্দুল মজিদ ও শফি উদ্দিনের দু’টি নলকূপ সরিয়ে
নিতে চাপ প্রয়োগ করে। এ নিয়ে একাধিকবার গ্রাম্য শালিস বসে এবং সবশেষ ক্ষতিপূরণ হিসেবে
শফি উদ্দিনের ব্যয়িত ৭০ হাজার টাকার মধ্যে ২০ হাজার টাকা দিয়ে তার বোরিং সরিয়ে ফেলতে
সিদ্ধান্ত দেন স্থানীয় ইউপি সদস্য মজিবর রহমান। কিন্তু মঙ্গলবার সকালে ক্ষতিপূরণ হিসেবে
দেওয়া ওই ২০ হাজার টাকা ফেরত এবং বোরিং সরিয়ে নিতে শফি উদ্দিনকে চাপ প্রয়োগ করা হয়।
পরে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বাড়ি থেকে বেড়িয়ে আর বাড়ি ফিরেনি শফি উদ্দিন।
এ ঘটনায় বুধবার (২ ফেব্রুয়ারি) ভোরে বাড়ির
অদূরে বাদলাকুড়া মাঠে বাঁশ-রশি দিয়ে বিশেষভাবে তৈরি ফাঁসির মঞ্চে শফি উদ্দিনের মরদেহ
ঝুলে থাকতে দেখেন এলাকাবাসী। পরে খবর পেয়ে পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য
মর্গে প্রেরণ করা হয়।
ধারণা করা হচ্ছে, নিজের সেচ পাম্প সরিয়ে
ফেলার চাপ এবং অর্থনৈতিক ক্ষতিপূরণের হতাশায় তিনি আত্মহত্যা করে থাকতে পারেন।
ছেলে আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘মৃত্যুর আগে বাবা
বলে গেছেন তার যদি মৃত্যু হয়, তবে এর জন্য মজিবর মেম্বার ও আহাম্মদ আলী দায়ী থাকবে।
আমার বাবাকে আত্মহত্যা করতে বাধ্য করা হয়েছে।’
প্রাথমিকভাবে আত্মহত্যা বলে মনে হয়েছে জানিয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বছির আহমেদ বাদল জানান, ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পাওয়ার পর প্রকৃত কারণ জানা যাবে।