১১ অক্টোবর শুরু হচ্ছে দুর্গাপূজা। শেষ
সময়ে রঙ তুলির আঁচড়ে প্রতিমা সাজাতে তাই দারুণ ব্যস্ত প্রতিমা শিল্পীরা। পুরান ঢাকার
শাঁখারিবাজার, নর্থব্রুক হল রোড, শ্রী শ্রী কালী মন্দিরসহ বেশ কয়েকটি জায়গায় শতাধিক
শিল্পী গত একমাস ধরেই প্রতিমা তৈরি করে চলেছেন।
তাদেরই একজন পল্টন পাল। বয়স ষাটের কাছাকাছি।
থাকেন পুরান ঢাকার শাঁখারিবাজারে। শৈশব থেকেই নাকি তিনি প্রতিমা সাজিয়ে আসছেন।
পল্টন বললেন, ‘পিতার কাছ থেকে
প্রতিমা তৈরি শিখেছি। বংশ পরম্পরায় প্রতিমা তৈরি করে আসছি। প্রতিমাই আমার জীবিকা।
সারা বছর টুকটাক অন্যান্য প্রতিমা তৈরি করলেও মূলত দুর্গাপূজাকে ঘিরেই চলে আমাদের সারা
বছর। এবারও ভালো অর্ডার পেয়েছি। যে প্রতিমা তৈরির জন্য ২৫-৩০ হাজার টাকা পাই, তাতে
লাভ থাকে ৫-১০ হাজার টাকা। এতে পরিশ্রম আছে বেশ। গত এক মাস রাত-দিন কাজ করে যাচ্ছি।
আরেক প্রতিমা শিল্পী বলাই পাল (৪৫) বলেন,
‘২০ বছর ধরে প্রতিমা
তৈরি করছি। এটা বাবার কাছ থেকে শিখেছি। পূর্বপুরুষেরাও এই কাজ করতেন। বছরের এ সময়টা
আমাদের ব্যস্ততার সময়। এক মিনিট অপচয় করার সুযোগ নেই। গতবছর করোনার সময়টা আমাদের মতো
প্রতিমা শিল্পীদের বেশ কষ্টে কেটেছিল। এবার ঈশ্বরের আশীর্বাদে সুসময় ফিরেছে। এখন পর্যন্ত
দেড় লাখ টাকার অর্ডার পেয়েছি। সাধারণত ১০ থেকে ১৫ ধরনের প্রতিমা তৈরি করে থাকি।’
শিল্পীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেলো, ‘প্রতিমা তৈরির
মূল কাঁচামাল মাটি, খড়, লাঠি অথবা বাঁশ। সঙ্গে বিপুল পরিমাণ পানিও লাগে। কিন্তু দুর্গা
নির্মাণ করতে বিশেষ পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়। দুর্গার জন্য গঙ্গা মাটি, গোবর ও গোমূত্রও
ব্যবহার করা হয়।
প্রতিমা তৈরির ধাপ সম্পর্কে জানতে চাওয়া
হয় পল্টন পালের কাছে। তিনি জানান, প্রথমে মূর্তির আকৃতি অনুযায়ী লাঠি বা বাঁশ নেওয়া
হয়। পরে সেটার ওপর মাটি ও গো-মূত্রের সংমিশ্রণে খড়ের আস্তর দেওয়া হয়। পরে পরিমাণ অনুযায়ী
পানি দিয়ে মূর্তির আদল দেওয়া হয়। অনেকেই মনে করে থাকনে, প্রতিমা তৈরী করতে হলে পতিতালয়ের
মাটি ব্যবহার করতে হয়। তবে এটি এখন আর প্রচলিত নয়। প্রতিমা তৈরির জন্য বাংলাদেশের বিভিন্ন
অঞ্চল থেকে খড় ও মাটি সংগ্রহ করা হয়। এর মধ্যে ময়মনসিংহ, রাজশাহী, বগুড়া ও নোয়াখালী
অন্যতম।