পটুয়াখালীতে এক কিলোমিটার খালে ৮ টি বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ করেছে প্রভাবশালীরা। যার ফলে কৃষকদের জমিতে জলাবদ্ধতা ও চাষাবাদ ব্যাহত হচ্ছে। ঘটনাটি ঘটেছে পটুয়াখালী সদর উপজেলার মাদারবুনিয়া ইউনিয়নের পশ্চিম হেতালিয়া ও বিরাজলা গ্রামের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত ১ কিলোমিটার খালে।
বৃহস্পতিবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পশ্চিম হেতালিয়া ও দক্ষিণ বিরাজলা গ্রামের মাঝখান দিয়ে প্রবাহিত ইয়াকুব হাওলাদার বাড়ি থেকে জিন্নাত খার বাড়ি পর্যন্ত এক কিলোমিটার সংযোগ খালটিতে ৮ টি বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ করেছে স্থানীয় আলামিন খাঁ, হানিফ খান হালিম খানসহ বেশ কয়েকজন স্থানীয় প্রভাবশালী। এতে বর্ষাকালে ওই এলাকার কৃষি জমি থেকে পানি অপসারণ বন্ধ হয়ে যায় এবং প্রায় ৫০০ একর জমিতে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। এছাড়াও এসব জমিতে আমন চাষাবাদ নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা। ওছাড়া খালটির মধ্য জায়গা ভরাট করে কেউ আবার গড়ে তুলছেন গোয়াল ঘর।
বিরাজলা এলাকার বাসিন্দা শাহজাহান বিশ্বাস বলেন, খালের মধ্যে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ করার কারণে খালের পানি ব্যবহার করতে পারছেন না তারা। ওজু, গোসল এমনকি রান্নাবান্নার কাজেও খালের পানি ব্যবহার করতে পারছেন না তারা কারণ পানি প্রতিদিন জোয়ার ভাটায় ওঠা নামা করতে না পারায় পানি নষ্ট হয়ে গেছে।
স্থানীয় কৃষক আব্দুল খালেক বলেন, খালটিতে অবৈধভাবে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ করার কারণে আমাদের কৃষি জমি বর্ষাকালে পানিতে তলিয়ে থাকে। পানি অপসারণ না হওয়ার ফলে আমরা জমিতে আমন চাষাবাদ করতে পারব না।এই অবৈধ বাধ অপসারণের জন্য উপজেলা প্রশাসন বরাবর অভিযোগ দিয়েও এখন পর্যন্ত কোন প্রতিকার পাইনি।
অবৈধ বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ করা আল-আমিন নামে জানান, প্রায় দেড় বছর আগে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ শুরু করেন তিনি। তার আগে অনেকেই বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ শুরু করেন। তবে অন্য সবাই যদি বাঁধ কেটে দেয় তখন তিনিও বাঁধ কেটে দিবেন বলে জানান।
মাদারবুনিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম মাসুম মৃধা বলেন, খালের মধ্যে বাঁধ কাটার মূল সমস্যা হলো স্থানীয় লোকজনের মধ্যে কোন্দল। কারণ এই বাঁধ গুলো একদিনে তৈরি হয়নি। একেকটা বাঁধ প্রায় দু বছর থেকে তিন বছর আগে থেকেই বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ করছেন তারা। এখন অনেকেই মনে করছেন বাঁধ গুলো কেটে দেয়া দরকার। আমরাও সকলে বাঁধ কাটার বিষয়ে একমত। তবে আল-আমিন নামে যে ছেলেটা বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ করছে সে আমার কাছে লিখিতভাবে বলছে যে সে দুই মাসের মধ্যে মাছ ধরে বাঁধ কেটে দিবে। তাছাড়া এখন যদি বাঁধ কাটা হয় তবে ওদের অনেক টাকার ক্ষতি হবে। তাই ওদের যাতে ক্ষতি না হয় সেজন্য দুমাস সময় দেয়া হয়েছে। তবে সকল বাঁধই কেটে খাল দখলদারদের হাত থেকে মুক্ত করা হবে।
পটুয়াখালী সদর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান জানান, ২০ জুলাই উপজেলার মাসিক উন্নয়ন ও সমন্বয় সভায় এ বিষয়টি আমি উপস্থাপন করেছি এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আমাকে সরেজমিনে তদন্ত পূর্বক বিষয়টি তাকে অবহিত করতে বলেছেন। আমি ইতোমধ্যেই ওই এলাকা পরিদর্শন করেছি এবং খালটিতে অবৈধভাবে বাধ দিয়ে মাছ চাষের অভিযোগের সত্যতা পেয়েছি। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সাথে আলোচনা করে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইফুর রহমান জানান, প্রবাহমান খালে বাঁধ দেয়ার কোন নিয়ম নেই, এটি একটি অপরাধ। স্থানীয় কৃষকদের আবেদনের প্রেক্ষিতে আমরা খুব শীঘ্রই খালের বাঁধগুলো অপসারণ করবো।