শেরপুরের গজনী বিনোদন কেন্দ্র- চারপাশে সারি সারি শালগজারীসহ বিভিন্ন প্রজাতির বৃক্ষ, উঁচুনিচু পাহাড়, ঝর্না, লেক, পাহাড়ের চূড়ায় ছবির মতো ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী (আদিবাসী) সম্প্রদায়ের আবাস। পাহাড়ের টিলায় দাঁড়িয়ে উত্তর দিকে তাকালে চোখে পরে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের তুরার পাহাড়।
যেখানে অবকাশ: শেরপুর জেলা সদর থেকে গজনী অবকাশের দূরত্ব ৩০ কিলোমিটার। শেরপুর থেকে ঝিনাইগাতী উপজেলার গজনী অবকাশে আসতে সময় লাগে ৪০ মিনিট। ঝিনাইগাতী উপজেলা সদর পেরিয়ে নকশী বিজিবি সীমান্ত ফাঁড়ির পর বিনোদন কেন্দ্র। ঢাকা মহাখালী বাসটার্মিনাল থেকে গজনীর দূরত্ব ২০০ কিলোমিটার। বাসে আসতে সময় লাগে ৪ থেকে সাড়ে চার ঘণ্টা।
এবার সেজেছে নতুন রূপে: বিনোদন কেন্দ্রটি চলতি শীত মৌসুমে দর্শনার্থীদের আগমনের অপেক্ষায় মনোরম পরিবেশে সাজিয়ে রাখা হয়েছে। প্রতিবছর শীত মৌসুমে এ বিনোদন কেন্দ্রটি দর্শনার্থীদের ভিড়ে মুখর থাকে। প্রতিদিনই দর্শনার্থীরা ভিড় করেন। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে চলতি বছর শীত মৌসুমে দর্শনার্থীদের আগমনের অপেক্ষায় আগেভাগে মনোরম পরিবেশে সাজিয়ে রাখা হয়েছে কেন্দ্রটি। দর্শনার্থীদের সুবিধার্থে নেয়া হয়েছে নানা উদ্যোগ।
আরো খবর
যেভাবে তৈরি হয় গজনী অবকাশ: ১৯৯৩ সালে তৎকালীন জেলা প্রশাসক আতাউর রহমান মজুমদার উপজেলার কাংশা ইউনিয়নের গজনী এলাকায় গড়ে তুলেন একটি পিকনিক স্পট। মৌজার নামানুসারে কেন্দ্রটির নাম রাখা হয় গজনী অবকাশ বিনোদন কেন্দ্র। ৫০ একর পাহাড়ি জমিতে এ পিকনিক স্পটটি গড়ে তোলা হয়। পিকনিক স্পটটি গড়ে ওঠার পর থেকেই সারাদেশ থেকে ভ্রমণপিপাসু ও পর্যটকদের আগমনে মুখরিত হয়ে উঠে। এ কেন্দ্র থেকে প্রতিবছর সরকারের ঘরে আসে বিপুল পরিমাণের রাজস্ব। এ কারণে জেলা প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণাধীন গজনী অবকাশ পিকনিক স্পটটির প্রতি আরও মনোযোগী হয়ে উঠে জেলা প্রশাসন। শুরু হয় কেন্দ্রটির সম্প্রসারণের কাজ। করা হয় সৌন্দর্য বর্ধণ।
যা দেখবেন: বিনোদন কেন্দ্রে আছে মন ভালো করার নানা আয়োজন। এখানে রয়েছে মিনি চিরিয়াখানা, লেক, লেকে রয়েছে ভাসমান পেডেল বোর্ড, এক পাহাড় থেকে অন্য পাহাড়ে যেতে ঝুলন্ত সেতু, শিশু পার্কে মিনি ট্রেন। জিরাফ, ডাইনোসর, হাতি, বানর, বাঘ, হরিনের ভাস্কর্য, রয়েছে গারো মার ভাস্কর্য, বাঘের মুখ দিয়ে এক পাহাড়ের নিচ দিয়ে অন্য পাহাড়ে যেতে নির্মাণ করা হয়েছে পাতালপুরী রাস্তা। পানির ফোঁয়ারা, কেবলকার ওয়াসটাউয়ার, নানা রং-বেরঙের ভাস্কর্য নির্মাণ করে মনোরম পরিবেশে সাজানো হয়েছে পর্যটন কেন্দ্রটি।
তারা বললেন: বিনোদন কেন্দ্রের ইজারাদার ফরিদ আহমেদ বলেন, জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে কেন্দ্রটির অনেকগুলো উন্নয়ন হয়েছে। বর্তমানেও উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড অব্যাহত আছে। এর পরেও কিছু কাজ জরুরিভাবে করা প্রয়োজন। তন্মধ্যে কেন্দ্রের মাঝ খান দিয়ে যাতায়াতের রাস্তাটি চলাচলের অনুপযোগী। এতে কেন্দ্রে আগত দর্শনার্থীদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। কেন্দ্রে প্রবেশ পথে গেইট ও টোল আদায়ের ঘর নেই। ফলে দর্শনার্থীদের কাছ থেকে টোল আদায়ের ক্ষেত্রে নানা জটিলতার সৃষ্টি হয়। তার দাবি কাজগুলো যেন দ্রুত করে দেন প্রশাসন।
ঝিনাইগাতী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারুক আল মাসুদ বলেন, সমস্যাগুলো সমাধানের বিষয়ে এলজিইডির সঙ্গে কথা হয়েছে রাস্তাটি সংস্কার করে দেয়ার জন্য। জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে গেইটটি করে দেয়ার আশ্বাস পাওয়া গেছে। অন্যান্য সমস্যাগুলো পর্যায়ক্রমে দ্রুতই সমাধানের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
জেলা প্রশাসন সাহেলা আক্তার বলেন, করোনাকালে পর্যটন কেন্দ্রটি বন্ধ থাকায় ভ্রমণপিপাসুদের আগমন ঘটেনি। এতে সরকারসহ ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। চলতি বছর শীত মৌসুমে দর্শনার্থীদের আকৃষ্ট করতে পর্যটন কেন্দ্রের সৌন্দর্য বর্ধনের কাজ করা হয়েছে। চলতি শীত মৌসুমে দর্শনার্থীদের আগমন ঘটবে বিনোদন কেন্দ্রটিতে। তারা যেন পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা ও আনন্দ উপভোগ করতে পারে।