ঈশ্বরগঞ্জ (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি:
থরে থরে সাজানো জামা, শাড়ি, লুঙ্গি, প্যান্ট। তবে তার কোনোটিই নতুন নয়। মানুষের ব্যবহার্য এসব পোশাক ধুয়ে ব্যবহার উপযোগী কাপড় নিয়ে পসরা সাজিয়ে দোকানিরা। পুরোনো কাপড়ের হাটেও ক্রেতার অভাব নেই। নিম্ম আয়ের মানুষ নিজের সন্তানের ঈদের আনন্দ দেওয়া কিংবা নিজের প্রয়োজন মেটাতে কিনছেন পছন্দসই পুরোনো কাপড়। পুরোনো কাপড়েই তাদের যেনো ঈদের নতুন আনন্দ। এমন এক হাট রয়েছে ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জে।
ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার আঠারবাড়ি ইউনিয়নে পবিত্র ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে পুরাতন কাপড়ের বেচা-কেনা প্রতিনিয়ত বাড়তে শুরু করেছে। নিম্ন আয়ের মানুষদের ঈদে নতুন কাপড়ের স্বাদ এনে দেওয়ার একমাত্র ভরসা পুরাতন পোশাকের দোকানগুলো। এ হাটে ঈদ উপলক্ষে নানান রকমের পুরাতন কাপড় রয়েছে।
এ বাজারে ৫০ থেকে ৭০ টাকায় মিলছে লুঙ্গি, ৩০ টাকায় প্যান্ট, কামিজ ২৫ থেকে ৩০ টাকা, বিছানার চাদর ৫০ টাকা ও শাড়ি মিলছে ৫০ থেকে ৮০ টাকায়। অবশ্য কাপড়ের প্রকার ভেদে দাম কম বেশি হয়। এছাড়াও বিভিন্ন রকমের জামা কাপড়ের সমাহার এই হাটে। যে যার পছন্দ মতো পোশাক নিচ্ছেন বেছে বেছে। নারী পুরুষসহ সব বয়সী ক্রেতারা কিনছেন তাদের পছন্দের কাপড়।
বিক্রেতারা নানা ধরনের পুরাতন কাপড়ের পসরা সাজিয়ে বসেছেন। ছোট বাচ্চাদের কাপড়, বোরকা, শাড়ি, কামিজ, থ্রি পিছ, লেহেঙ্গা, পাঞ্জাবী, প্যান্ট, শার্ট, বিছানার চাদরসহ শতাধিক আইটেম রয়েছে।
সচ্ছল জনগোষ্ঠীদের পুরোনো জামা-কাপড়, হাড়িপাতিলের বিনিময়ে ফেরিওয়ালাদের সংগৃহীত বস্ত্রগুলোকেই একত্রিত করে কম দামে খুচরা ও পাইকারি দরে বিক্রি করেন আঠারবাড়ির এই ব্যবসায়ীরা। আঠারবাড়ি ইউনিয়নের ঐতিহ্যবাহী পুরাতন বাজারে এই হাট বসে প্রতি শুক্রবার ও সোমবার। সপ্তাহে দুদিন জমে উঠে এই হাট। হাটে পুরাতন কাপড়ের দোকান রয়েছে শতাধিক।
শুক্রবার (২২ এপ্রিল) দুপুরে পর সরজমিনে হাটে গিয়ে দেখা যায়, বিভিন্ন ধরনের পুরাতন কাপড়ের পসরা সাজিয়ে বসেছেন ব্যবসায়ীরা। ক্রেতারাও তাদের পছন্দের কাপড়টি বেছে বেছে কিনছেন। কাপড় পছন্দ হলে তবেই চলে দরদাম। মূলত স্বল্প আয়ের মানুষরাই অধিকাংশ ক্রেতা। পছন্দের কাপড় কিনে খুশি মনে বাড়ি ফিরছেন তারা। কাপড় ভেদে একেকটির দাম হয়। এ সময় একাধিক বিক্রেতা ও ক্রেতাদের সাথে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
বিক্রেতা হজরত আলী বলেন, ২০ বছর ধরে এই ব্যবসার সাথে জড়িত। পৈতৃক ব্যবসার ধারাবাহিকতায় তিনিও এটি করে আসছেন।' হজরত আলী বলেন, আগে আরো বেশি বিক্রি করতাম। এখন বিক্রি কম হয়। এখন দিনে তিন থেকে দুই হাজার টাকার মতো বিক্রি করি। সবকিছু খরচ বাদ দিয়ে পাঁচশত থেকে একহাজার টাকা লাভ থাকে। একেকদিন একেক বাজারে যাই।
আরেক ব্যবসায়ী মোস্তাকিম বলেন, আমরা ঢাকা থেকে পরিচ্ছন্ন কর্মীদের থেকে কাপড় কিনি। তারাই পরিস্কার করে আইরন দিয়ে দেয়। গ্রামের খেটে খাওয়া কম রোজগারের মানুষ আমাদের থেকে বেশি জামা কাপড় কিনে।
ক্রেতা আনোয়ার হোসেন, রতন মিয়া, জামিলা খাতুন, হোসনে আরা বলেন, এখানে কম টাকায় ভালো জিনিস পাই। নতুন কাপড় কেনার ইচ্ছে আছে কিন্তু সাধ্য নাই। দোকানে তো অনেক দাম রাহে। মনে ইচ্ছে থাকলেও মার্কেট থেকে জামা কাপড় কিনার সাধ্য নাই। তাই এখান থেকে অল্প টাকার মধ্যে পছন্দের কাপড়টি কিনে নিলাম।